<p>সাহাবি আবু হুরায়রা (রা.) নবীজি (সা.) থেকে সবচেয়ে বেশি হাদিস বর্ণনা করেছেন। তার বর্ণিত হাদিসের সংখ্যা ৫৩৪৭টি। হাদিস শাস্ত্রের বিশুদ্ধতম ছয় গ্রন্থের সংকলকদের সবাই তাঁর থেকে হাদিস বর্ণনা করেছেন। এর মধ্যে সহিহ বুখারি ও সহিহ মুসলিমে ৩২৫টি হাদিস স্থান পেয়েছে। আর পৃথকভাবে ইমাম বুখারি (রহ.) ৭৯টি এবং ইমাম মুসলিম (রহ.) ৯৩ হাদিস বর্ণনা করেছেন। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে আট শ রাবি (হাদিস বর্ণনাকারী) হাদিস বর্ণনা করেছে।</p> <p>আবু হুরায়রা (রা.) সপ্তম হিজরিতে ইসলাম গ্রহণ করেন। নবীজি (সা.) ইন্তেকাল করার মাত্র তিন বা সাড়ে তিন বছর আগে তিনি মুসলিম হন। তার পরও এত বেশিসংখ্যক হাদিস কিভাবে বর্ণনা করলেন, তা নিয়ে অনেকেই প্রশ্ন তোলেন। শুধু এই যুগে না; বরং তাঁর জীবদ্দশায়ও তাঁকে এই প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হয়েছিল। তিনি প্রশ্নকারীদের উত্তরে জ্ঞানার্জনে তাঁর অসামান্য আত্মত্যাগের বর্ণনা তুলে ধরেন। এতে এটাও স্পষ্ট হয়ে যায় যে তিনি কিভাবে এত বিপুলসংখ্যক হাদিস বর্ণনার সক্ষমতা অর্জন করলেন।</p> <p>তিনি বলেন, তোমরা বলে থাকো, আল্লাহর রাসুল (সা.) থেকে আবু হুরায়রা (রা.) বেশি বেশি হাদিস বর্ণনা করে থাকে এবং আরো বলেন, মুহাজির ও আনসারদের কী হলো যে তারা তো আল্লাহর রাসুল (সা.)-এর হাদিস বর্ণনা করে না? আমার মুহাজির ভাইয়েরা বাজারে ক্রয়-বিক্রয়ে ব্যস্ত থাকত আর আমি কোনো প্রকারে আমার পেটের চাহিদা মিটিয়ে আল্লাহর রাসুল (সা.)-এর দরবারে পড়ে থাকতাম। তাঁরা যখন অনুপস্থিত থাকত তখন আমি উপস্থিত থাকতাম। তাঁরা যা ভুলে যেত আমি তা মুখস্থ করতাম। আর আমার আনসার ভাইয়েরা নিজেদের ক্ষেত-খামারের কাজে ব্যস্ত থাকতেন। আমি ছিলাম সুফফার মিসকিনদের একজন মিসকিন। তাঁরা যা ভুলে যেত, আমি তা মুখস্থ রাখতাম। আল্লাহর রাসুল (সা.) তাঁর এক বর্ণনায় বললেন, আমার এ কথা শেষ না হওয়া পর্যন্ত যে কেউ তার কাপড় বিছিয়ে দেবে এবং পরে নিজের শরীরের সঙ্গে তার কাপড় জড়িয়ে নেবে, আমি যা বলছি সে তা স্মরণ রাখতে পারবে। তিনি আরো বলেন, আমি আমার গায়ের চাদরখানা বিছিয়ে দিলাম যতক্ষণ না আল্লাহর রাসুল (সা.) তাঁর কথা শেষ করলেন, পরে আমি তা আমার বুকের সঙ্গে জড়িয়ে ধরলাম। ফলে আমি আল্লাহর রাসুল (সা.)-এর সে কথার কিছুই ভুলে যাইনি। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ২০৪৭)</p> <p>অপর এক হাদিসে এসেছে, একবার রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে প্রশ্ন করা হলো, হে আল্লাহর রাসুল! কিয়ামতের দিন আপনার সুপারিশ লাভের ব্যাপারে কে সবচেয়ে অধিক সৌভাগ্যবান হবে? আল্লাহর রাসুল (সা.) বললেন, আবু হুরায়রা! আমি মনে করেছিলাম, এ বিষয়ে তোমার আগে আমাকে আর কেউ জিজ্ঞাসা করবে না। কেননা আমি দেখেছি হাদিসের প্রতি তোমার বিশেষ লোভ আছে। কিয়ামতের দিন আমার শাফাআত লাভে সবচেয়ে সৌভাগ্যবান হবে সেই ব্যক্তি, যে একনিষ্ঠচিত্তে বলে, আল্লাহ ছাড়া কোনো উপাস্য নেই। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৯৯)</p> <p>উল্লিখিত হাদিস দ্বারাও জ্ঞানার্জনে আবু হুরায়রা (রা.)-এর তীব্র আকাঙ্ক্ষা ও আগ্রহ প্রকাশ এবং বোঝা আল্লাহর রাসুল (সা.)-এর কাছ থেকে তিনি জিজ্ঞাসা করে করেও বহু বিষয়ের জ্ঞান লাভ করেছেন।</p> <p> </p>