জরুরি ওষুধের নামে মাদক আমদানি

ফারজানা লাবনী
ফারজানা লাবনী
শেয়ার
জরুরি ওষুধের নামে মাদক আমদানি

করোনা রোধে ব্যবহৃত সরঞ্জাম বা জরুরি চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় ওষুধ আমদানির মিথ্যা তথ্য দিয়ে বিদেশি সিগারেট, মদসহ বিভিন্ন মাদকদ্রব্য ও যৌন উত্তেজক পণ্য আনা হয়েছে। গত তিন অর্থবছরে বিভিন্ন বন্দর দিয়ে মিথ্যা তথ্যে আমদানি করা এ ধরনের পণ্যের ১৩৭টি চালান আটক করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। এসব চালানে প্রায় এক হাজার ৫০৯ কোটি টাকার রাজস্ব জড়িত ছিল।

একসময় চালু থাকলেও এখন বন্ধ রয়েছে অথবা কাগজে-কলমে থাকলেও বাস্তবে অস্তিত্ব নেই এমন সব প্রতিষ্ঠানের নামে এসব চালানের বেশির ভাগ এসেছে।

এ ছাড়া দেশের নামিদামি হাসপাতাল, ওষুধ কম্পানি বা তৈরি পোশাক শিল্পের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নাম ব্যবহার করেও অবৈধ ওই সব পণ্য আনা হয়েছে। অথচ এ বিষয়ে সেসব প্রতিষ্ঠান কিছুই জানে না।

শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. আব্দুর রউফ কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘কেউ মিথ্যা তথ্যে বন্দর দিয়ে সমাজের জন্য ক্ষতিকর পণ্য আনলেই ওই সব পণ্য আটকাতে শুল্ক গোয়েন্দারা কাজ করছেন। আমাদের লোকবল স্বল্পতার কারণে অনেক সময় সব কনটেইনার যাচাই করা সম্ভব হয় না।

এনবিআর সব বন্দরে স্ক্যানার ব্যবহারের উদ্যোগ নিয়েছে। এই উদ্যোগ বাস্তবায়িত হলে ক্ষতিকর পণ্য আটকানো সম্ভব হবে।’

এনবিআর সূত্রে জানা গেছে, গত বছরের মার্চে তাইওয়ান থেকে করোনা রোধে ব্যবহৃত সরঞ্জামের মিথ্যা তথ্য দিয়ে দুই কনটেইনারে প্রায় ৩৭ কোটি টাকার বিদেশি সিগারেট ও মদ আনা হয়। বন্দরে উপস্থিত শুল্ক গোয়েন্দাদের সন্দেহ হওয়ায় তাঁরা কনটেইনার খুলে যাচাই করে মিথ্যা তথ্যে এসব পণ্য আনার বিষয় জানতে পারেন।

সংস্থার তদন্তে দেখা যায়, রাজধানীর প্রথম সারির একটি হাসপাতালের নাম ব্যবহার করে পণ্যগুলো আমদানি করা হলেও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এ সম্পর্কে কিছুই জানে না। একই বছরের জুনে চট্টগ্রাম বন্দরে পণ্যভর্তি পাঁচটি কনটেইনার পৌঁছানোর পর দুই ব্যক্তি দ্রুত খালাসের চেষ্টা করতে থাকে। কাস্টমস কর্মকর্তারা তল্লাশি করে দেখেন যে একসময় চালু থাকলেও পরে বন্ধ হয়ে গেছে এমন প্রতিষ্ঠানের নামে জরুরি ওষুধ তৈরির রাসায়নিক আমদানির তথ্য দিয়ে কনটেইনারে বিভিন্ন ধরনের মাদকদ্রব্য ও মাদক তৈরির সরঞ্জাম আনা হয়েছে। ওই একই প্রতিষ্ঠানের নামে ২০১৯ সাল থেকেই জরুরি ওষুধ তৈরির রাসায়নিকের নামে ২১টি চালান খালাস হয়েছে। ২২ নম্বর চালানটি আটক করা হয়।
ব্যাংকের হিসাব পরীক্ষা করে দেখা যায়, এক ব্যক্তির ছবি ও পরিচয়পত্র দিয়ে আরেক ব্যক্তি হিসাব পরিচালনা করে আসছেন।

এর আগে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে তেলের ড্রামে করে প্রায় তিন হাজার কোটি টাকার কোকেন আনার ঘটনা ঘটে। তার আগে বেনাপোল বন্দর দিয়ে মিথ্যা ঘোষণায় আনা দুই চালানে প্রায় দুই হাজার ৫০০ কোটি টাকার যৌন উত্তেজক পণ্য ভায়াগ্রা ও ভায়াগ্রা তৈরির সরঞ্জাম আটক করা হয়। তদন্তে দেখা যায়, এই চক্রটি বছরের পর বছর ভায়াগ্রা ও ভায়াগ্রা তৈরির সরঞ্জাম আমদানি করে আসছিল।

মোংলা বন্দর দিয়ে ৫৩৯ কোটি টাকার মাদকদ্রব্য তৈরির সরঞ্জাম জীবনরক্ষাকারী ওষুধের নামে আমদানি করে খালাসের সময় এক ব্যক্তিকে আটক করে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। আটক ব্যক্তিকে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর হাতে তুলে দেওয়া হয়। ওই ব্যক্তি অস্তিত্বহীন তিন প্রতিষ্ঠানের নামে আসা ৩৪টি পণ্যের চালান এক বছরে খালাস করেছেন। প্রকৃত আমদানিকারক কে বা কারা সেটা ওই ব্যক্তি জানেন না। শুধু মোবাইল ফোনে নির্দেশ পেয়ে তিনি পণ্য খালাসের কাজ করতেন। বিনিময়ে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে প্রতি চালান খালাস করে দেওয়ার জন্য ৮-১০ হাজার টাকা পেতেন।

বেনাপোল বন্দরের তৎকালীন কমিশনার বেলাল হোসেন চৌধুরী কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘কঠোর নজরদারির কারণে ভায়াগ্রা ও ভায়াগ্রা বানানোর সরঞ্জাম আটক করা সম্ভব হয়। এসব পণ্য ইয়াবা বানাতেও ব্যবহার করা হয়। একাধিক চক্র এ কাজে জড়িত ছিল। এরা বছরের পর বছর এই অপকর্ম করে আসছিল। এই চক্রের সদস্যরা বিভিন্ন বন্দর দিয়ে একই ধরনের পণ্য এনেছে বলেও তদন্তে জানা যায়।’

কোন দেশ থেকে আসছে : চট্টগ্রাম ও মোংলা সমুদ্রবন্দর, তিনটি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর শাজজালাল, শাহ আমানত, শাহ মখদুমসহ দেশের বিভিন্ন স্থলবন্দর দিয়েই মিথ্যা ঘোষণায় সিগারেট, মদসহ বিভিন্ন মাদকদ্রব্য ও মাদক তৈরির সরঞ্জাম আসছে। চীন, ভারত, তাইওয়ান, ফিলিপাইন, ভিয়েতনাম, কোরিয়া, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, মিয়ানমার, দুবাই থেকে এসব পণ্য দেশে আসছে।

কারা জড়িত : ব্যবসায়ী নামধারী অসাধু ব্যক্তিদের একাধিক সিন্ডিকেট এই অপকর্মে জড়িত। এরা পণ্য সংগ্রহে অর্থের বিনিময়ে বিদেশি চক্রের সহযোগিতা নিয়েছে। এদের ভাড়া করা লোক দিয়ে বন্দর থেকে পণ্য খালাস করা হয়েছে। একবার পণ্য খালাসের জন্য ৫-১০ হাজার টাকা দেওয়া হয়েছে। এসব ব্যক্তি দলের নেতা সম্পর্কে জানে না। মোবাইল ফোনে নির্দেশ পেয়ে তারা পণ্য খালাসের কাজ করেছে। মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে লেনদেন হয়েছে। তথ্য-প্রমাণসহ এসব সিন্ডিকেট চিহ্নিত করতে এনবিআর ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর সদস্যরা জোরালো পদক্ষেপ নিয়েছেন। এরই মধ্যে এসব সিন্ডিকেটের অনেক সদস্যকে আটক করা হয়েছে। এসব পণ্যের আমদানিকারকদের অনেকের অন্য অবৈধ ব্যবসাও আছে।

কোথায় বিক্রি করা হচ্ছে : মাদক কারবারি আমদানিকারকরা মিথ্যা ঘোষণায় মাদকদ্রব্য ও মাদকদ্রব্য তৈরির সরঞ্জাম আমদানি করে নিজস্ব প্রতিনিধিদের মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন এলাকায় পৌঁছে দিয়ে মোটা অঙ্কে বিক্রি করছে। সাম্প্রতিক সময়ে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর মাদকবিরোধী বিভিন্ন অভিযানের পর জানা যায়, শহরের অভিজাত এলাকায় বাসা-বাড়ি, বিভিন্ন হোটেল-রেস্তোরাঁয় বিদেশ থেকে আনা মাদকদ্রব্য বিক্রি করা হচ্ছে। এ কাজে মোটা অঙ্কের অর্থ দিয়ে নারীদের ব্যবহার করা হয়। এরা সমাজের প্রভাবশালীদের টার্গেট করে ফাঁদে ফেলে মাদকদ্রব্য বা যৌন উত্তেজক পণ্য ব্যবহারে আসক্ত করছে। ক্রেতা হিসেবে মাদকদ্রব্য সম্পদশালী পরিবারের তরুণ-তরুণী ও কিশোর-কিশোরীরা আমদানিকারক সিন্ডিকেটের লক্ষ্য। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বা কোচিং সেন্টারগুলোর পাশের দোকানেও গোপনে মাদকদ্রব্য রেখে বিক্রি করা হয়।

সিসার সঙ্গে মিশিয়ে বিক্রি : আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীসহ সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, মিথ্যা ঘোষণায় আনা ইয়াবা, গাঁজাসহ বিভিন্ন ধরনের মাদক রাজধানীসহ দেশের বিভাগীয় শহরের অনেক রেস্তোরাঁয় সিসার সঙ্গে মিশিয়ে বিক্রি করা হচ্ছে। ১২ থেকে ১৭-১৮ বছরের কিশোর-কিশোরীদের কৌশলে মাদক মেশানো সিসায় আসক্ত করা হচ্ছে। মাদক মেশানো সিসা সেবনকারী তরুণ-তরুণীর সংখ্যা দ্রুত বাড়ছে। ২০-২৫ মিনিটের জন্য মাদকদ্রব্য মেশানো সিসা সেবনের জন্য ৫০০-৭০০ থেকে শুরু করে দুই-আড়াই হাজার টাকা পর্যন্ত নেওয়া হয়।

মন্তব্য

সম্পর্কিত খবর

নতুন শুল্ক স্থগিত : ট্রাম্পকে ধন্যবাদ জানালেন প্রধান উপদেষ্টা

অনলাইন ডেস্ক
অনলাইন ডেস্ক
শেয়ার
নতুন শুল্ক স্থগিত : ট্রাম্পকে ধন্যবাদ জানালেন প্রধান উপদেষ্টা

আগামী ৯০ দিনের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের ঘোষিত নতুন শুল্ক স্থগিত করায় দেশটির প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মোহাম্মদ ইউনূস। বুধবার (৯ এপ্রিল) দিবাগত রাতে প্রধান উপদেষ্টার ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এ ধন্যবাদ জ্ঞাপন করা হয়।

ফেসবুক স্ট্যাটাসে বলা হয়, ‘আমাদের অনুরোধে ৯০ দিনের জন্য নতুন শুল্ক স্থগিত করার সিদ্ধান্তে সম্মতি জানানোর জন্য আপনাকে ধন্যবাদ, মি. প্রেসিডেন্ট (ডোনাল্ড ট্রাম্প)। আমরা আপনার বাণিজ্যনীতি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে প্রশাসনের সঙ্গে সহযোগিতা অব্যাহত রাখব।

এর আগে বাংলাদেশি পণ্যের ওপর নতুন করে ৩৭ শতাংশ রেসিপ্রোকাল ট্যারিফ বা পাল্টা শুল্ক আরোপ করে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন। নতুন শুল্কের কারণে বাংলাদেশের রপ্তানি পণ্যের বড় বাজারটিতে পণ্য রপ্তানি, বিশেষ করে তৈরি পোশাক রপ্তানিতে বড় ধাক্কার আশঙ্কাও করেন রপ্তানিকারকরা।

এতদিন বাংলাদেশের মোট পণ্য রপ্তানির ১৮ শতাংশের গন্তব্য যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশি পণ্যের ওপর গড়ে ১৫ শতাংশ শুল্ক ছিল।

মন্তব্য

জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টার দায়িত্বও পেলেন খলিলুর রহমান

অনলাইন ডেস্ক
অনলাইন ডেস্ক
শেয়ার
জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টার দায়িত্বও পেলেন খলিলুর রহমান

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার রোহিঙ্গাবিষয়ক হাই রিপ্রেজেন্টেটিভ খলিলুর রহমানকে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা পদেও নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।

বুধবার (৯ এপ্রিল) মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে জারি করা এক প্রজ্ঞাপনে খলিলুর রহমানকে এই নতুন দায়িত্ব দেওয়ার কথা জানানো হয়। রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে এই প্রজ্ঞাপনে সই করেছেন মন্ত্রিপরিষদসচিব (সমন্বয় ও সংস্কার) জাহেদা পারভীন।

এখন থেকে খলিলুর রহমানের পদবি হবে ‘জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা এবং রোহিঙ্গা সমস্যা বিষয়ক হাই রিপ্রেজেন্টেটি’।

পাশাপাশি তিনি প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসকে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত দায়িত্ব পালনেও সহযোগিতা করবেন।

২০২৪ সালের ১৯ নভেম্বর অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার রোহিঙ্গা সমস্যা ও অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত বিষয়াবলি সংক্রান্ত হাই রিপ্রেজেন্টেটিভ হিসেবে নিয়োগ পান খলিলুর রহমান।

ড. খলিলুর রহমান ১৯৭৯ সালে বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস (পররাষ্ট্র) কাডারে যোগদান করেন। ১৯৮৩-৮৫ সময়কালে তিনি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দক্ষিণ এশিয়া বিভাগে এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ব্যক্তিগত সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

১৯৮৫ সালে তাকে নিউইয়র্কে জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী মিশনে বদলি করা হয়। সেখানে তিনি জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অর্থনৈতিক ও আর্থিক কমিটিতে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করেন এবং স্বল্পোন্নত দেশগুলোর (এলডিসি) মুখপাত্র হিসেবে এ কমিটি ও জাতিসংঘের অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিষদে দায়িত্ব পালন করেন।

খলিলুর রহমান ১৯৯১ সালে জেনেভায় জাতিসংঘের বাণিজ্য ও উন্নয়ন সম্মেলনে (আংকটাড) বিশেষ উপদেষ্টা হিসেবে জাতিসংঘ সচিবালয়ে যোগ দেন। জাতিসংঘে পরবর্তী ২৫ বছরে তিনি নিউইয়র্ক ও জেনেভায় বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে কর্মরত ছিলেন।

 

২০০১ সালে খলিলুর রহমান তৃতীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা বিচারপতি লতিফুর রহমানের একান্ত সচিব হিসেবে কাজ করেন। তিনি ঢাকায় অবস্থিত ইস্ট ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা।

মন্তব্য

সৌদির বিদায়ি রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার সৌজন্য সাক্ষাৎ

অনলাইন ডেস্ক
অনলাইন ডেস্ক
শেয়ার
সৌদির বিদায়ি রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার সৌজন্য সাক্ষাৎ

স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী (অব.)-এর সঙ্গে সৌদি আরবের বিদায়ি রাষ্ট্রদূত ঈসা বিন ইউসুফ বিন আলদুহাইলানের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ অনুষ্ঠিত হয়েছে। এ সময় বাংলাদেশ থেকে আরো বেশি জনশক্তি নিতে সৌদি রাষ্ট্রদূতকে আহ্বান জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা। 

বুধবার (৯ এপ্রিল) সকালে সচিবালয়ে এ আহ্বান জানানো হয়।

বৈঠকে সৌদি আরবে বসবাসরত বৈধ পাসপোর্টবিহীন ৬৯ হাজার বাংলাদেশি নাগরিকদের অনুকূলে পাসপোর্ট ইস্যু/রি-ইস্যুসংক্রান্ত বিষয়াদিসহ পারস্পরিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা করা হয়।

বৈঠকের শুরুতে উপদেষ্টা বলেন, সৌদি আরব বাংলাদেশের উন্নয়নে অন্যতম বৃহৎ অংশীদার। একক দেশ হিসেবে সৌদি আরবে সবচেয়ে বেশি বাংলাদেশি কাজ করছে। বর্তমানে সৌদি আরবে ৩.২ মিলিয়ন বাংলাদেশি বিভিন্ন সেক্টরে কর্মরত রয়েছে। এটিকে চার মিলিয়নে উন্নীত করতে তিনি রাষ্ট্রদূতের সহযোগিতা কামনা করেন।

বাংলাদেশের উন্নয়নে সৌদি আরবের সর্বাত্মক সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে উল্লেখ করে সৌদি রাষ্ট্রদূত বলেন, জনশক্তি রপ্তানির পাশাপাশি দুই দেশের মধ্যে ব্যবসা, বাণিজ্য, বিনিয়োগ, পর্যটন ও সংস্কৃতিসহ বিভিন্ন খাতে প্রভূত সহায়তা বিদ্যমান। তিনি বলেন, সৌদি আরব সব সময় বাংলাদেশের পাশে ছিল, অদূর ভবিষ্যতেও থাকবে।

রাষ্ট্রদূত আরো বলেন, রাজকীয় সৌদি সরকারের গৃহীত নীতি অনুযায়ী সে দেশে বসবাস ও চাকরি করাসহ আইনগত সুযোগ-সুবিধা পাওয়ার জন্য বৈধ পাসপোর্ট থাকা আবশ্যক। সৌদি সরকারের তথ্য অনুযায়ী বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর থেকে বিভিন্ন সময় বাংলাদেশি পাসপোর্ট/ট্রাভেল ডকুমেন্ট নিয়ে সে দেশে প্রবেশ করেছেন কিন্তু বর্তমানে কোনো বৈধ পাসপোর্ট নেই—এমন লোকের সংখ্যা আনুমানিক ৬৯ হাজার।

সরকারি বিভিন্ন পর্যায়ের আলোচনায় ৬৯ হাজার ব্যক্তির পাসপোর্ট ইস্যু /নবায়নের জন্য সৌদি কর্তৃপক্ষ বাংলাদেশ সরকারকে অনুরোধ জানিয়ে আসছিল।

উপদেষ্টা বলেন, এ বিষয়ে দুই দেশের মধ্যে একটি প্রটোকল স্বাক্ষরিত হয়েছিল এবং এতে বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে সব ধরনের সহযোগিতা করা হবে।

মন্তব্য

মার্চে রাজনৈতিক সহিংসতায় ২৩ জন নিহত, ১৮ জনই বিএনপির

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
মার্চে রাজনৈতিক সহিংসতায় ২৩ জন নিহত, ১৮ জনই বিএনপির
সংগৃহীত ছবি

দেশে গত মার্চ মাসে ৯৭টি রাজনৈতিক সহিংসতায় ২৩ জন নিহত হয়েছেন। নিহতের এ সংখ্যা গত ফেব্রুয়ারি মাসের চেয়ে দ্বিগুণেরও বেশি। এর মধ্যে সহিংসতার ৮৮টি ঘটনা ঘটেছে বিএনপির অন্তঃকোন্দলে। বিএনপির সঙ্গে অন্যান্য দলের সহিংসতায় নিহতদের মধ্যে ১৮ জন বিএনপি নেতা, কর্মী ও সমর্থক।

মানবাধিকার পর্যবেক্ষণ সংস্থা হিউম্যান রাইটস সাপোর্ট সোসাইটির (এইচআরএসএস) মাসিক প্রতিবেদনে এমন তথ্য উঠে এসেছে। বুধবার সংস্থাটি এ প্রতিবেদন প্রকাশ করে। 

এক মাসের মানবাধিকার পরিস্থিতি তুলে ধরে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, মার্চ মাসেও মানবাধিকার পরিস্থিতির প্রকৃত অবস্থা ছিল হতাশাজনক। পবিত্র মাহে রমজান মাসে বিগত বছরগুলোর তুলনায় দ্রব্যমূল্য ও ঈদযাত্রা কিছুটা স্বস্তিদায়ক হলেও আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির আশানুরূপ উন্নতি হয়নি।

আরো পড়ুন
ট্রান্সশিপমেন্ট বাতিলে বাংলাদেশের রপ্তানিতে কোনো প্রভাব পড়বে না : ভারত

ট্রান্সশিপমেন্ট বাতিলে বাংলাদেশের রপ্তানিতে কোনো প্রভাব পড়বে না : ভারত

 

মার্চে ৯৭টি রাজনৈতিক সহিংসতার ঘটনায় অন্তত ২৩ জন নিহত হয়েছে জানিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়, এ সময়ে আহত হয়েছে কমপক্ষে ৭৩৩ জন। আধিপত্য বিস্তার, রাজনৈতিক প্রতিশোধপরায়ণতা, চাঁদাবাজি ও বিভিন্ন স্থাপনা দখলকেন্দ্রিক অধিকাংশ সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। নিহত ২৩ জনের মধ্যে বিএনপির ১৮ জন, আওয়ামী লীগের ৩ জন এবং ইউপিডিএফের ২ জন রয়েছে।

৯৭টি সহিংসতার ঘটনার ৮৮টিই ঘটেছে বিএনপির অন্তঃকোন্দলে ও বিএনপির সাথে অন্যান্য রাজনৈতিক দলের মধ্যে হয়েছে জানিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়, মার্চ মাসে সহিংসতার ৯৭টি ঘটনার মধ্যে বিএনপির অন্তঃকোন্দলে ৬৪টি ঘটনায় ১৭ জন নিহত ও আহত হয়েছে ৫০২ জন।

বিএনপি-আওয়ামী লীগের মধ্যে ১১টি সংঘর্ষে ২ জন নিহত ও ৫২ জন আহত হয়েছে। আর বিএনপি-জামায়াতের মধ্যে ১০টি সংঘর্ষে ১ জন নিহত ও ৮১ জন আহত হয়েছে। এ ছাড়া বিএনপি-এনসিপির মধ্যে ৩টি সংঘর্ষে ২ জন নিহত ও ৩১ জন আহত হয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, মার্চ মাসে রাজনৈতিক সহিংসতার সংখ্যা ফেব্রুয়ারি মাসের তুলনায় কিছুটা কমলেও নিহতের সংখ্যা দ্বিগুণের বেশি বেড়েছে। গত ফেব্রুয়ারি মাসে ১০৪টি রাজনৈতিক সহিংসতার ঘটনায় ৯ জন নিহত ও ৭৫৫ জন আহত হয়েছিল।

এতে বলা হয়, মার্চে রাজনৈতিক মামলায় কমপক্ষে ১ হাজার ৬৬৫ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, যেখানে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী অন্তত ১ হাজার ৬৪৪ জন। ওই সময় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর কমপক্ষে ৩টি হামলার ঘটনায় ২ জন আহত এবং ২টি প্রতিমা ভাঙচুর করা হয়েছে।

কমপক্ষে ২৮৪ জন নারী ও কন্যাশিশু নির্যাতনের শিকার হয়েছে জানিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়, এর মধ্যে ধর্ষণের শিকার হয়েছে কমপক্ষে ১৩৩ জন, যাদের মধ্যে ৩০ জন দলবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হয়েছে। ধর্ষণের পর হত্যার শিকার হয়েছে ২ জন। যৌন নির্যাতনের শিকার ১৩৩ জনের মধ্যে ৮৩ জন ১৮ বছরের কমবয়সী শিশু। প্রতিবেদনে মাগুরায় ৮ বছরের এক শিশুকে তার বোনের শ্বশুর কর্তৃক ধর্ষণ এবং শিশুটি ৮ দিন পর চিকিত্সাধীন অবস্থায় মৃত্যুর ঘটনাটি উল্লেখ করা হয়।

এইচআরএসএসের তথ্য অনুযায়ী, গেল মাসে অন্তত ২৯টি ঘটনায় কমপক্ষে ৪১ জন সাংবাদিক নির্যাতন ও হয়রানির শিকার হয়েছেন। এসব ঘটনায় আহত হয়েছেন অন্ততপক্ষে ২৩ জন সাংবাদিক। এ ছাড়া ৩টি মামলায় ৭ জন সাংবাদিককে অভিযুক্ত করা হয়েছে। মার্চে গণপিটুনির অন্তত ৪০টি ঘটনায় ১২ জন নিহত ও ৪৪ জন আহত হয়েছে।

একই সময়ে ২১টি শ্রমিক নির্যাতনের ঘটনায় ৭ জন নিহতের তথ্য জানানো হয়। এর মধ্যে ১ জন শিশু গৃহকর্মী মালিকের নির্যাতনে নিহত হয়। এ ছাড়া মার্চ মাসে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে ৬টি হামলার ঘটনায় ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) গুলিতে ২ জন বাংলাদেশি নিহতের তথ্য উল্লেখ করা হয়েছে।

সার্বিক বিষয়ে এইচআরএসএসের নির্বাহী পরিচালক ইজাজুল ইসলাম বলেন, মার্চে রাজনৈতিক সহিংসতায় মৃত্যুর ঘটনা উদ্বেগজনক। নারী ও শিশুদের ওপর নির্যাতন, সাংবাদিক নিপীড়নও তুলনামূলক বেড়েছে। আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে জনগণের মৌলিক ও সাংবিধানিক অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। ব্যত্যয় হলে দেশের সার্বিক মানবাধিকার পরিস্থিতি অবনতির দিকে যাবে।

প্রাসঙ্গিক
মন্তব্য

সর্বশেষ সংবাদ