<p>কথিত হিজরতের নামে জঙ্গিবাদে জড়িয়ে গত দুই বছরে শতাধিক তরুণের বাড়ি ছাড়ার তথ্য পেয়েছে র‌্যাব। তাঁরা সবাই নতুন জঙ্গি সংগঠন ‘জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া’র সদস্য। তাঁদের মধ্যে ৩৮ জনের নাম-পরিচয়সহ বিস্তারিত একটি তালিকাও প্রকাশ করেছে এ বাহিনী। এঁরা প্রত্যেকেই র‌্যাবের গোয়েন্দা নজরদারির মধ্যে আছেন।</p> <p>গতকাল সোমবার দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র‌্যাব কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক খন্দকার আল মঈন।</p> <p>সংবাদ সম্মেলনে নিরুদ্দেশ তরুণদের মধ্যে ৩৮ জনের নামের তালিকা প্রকাশ করা হয়। তাঁরা হলেন মো. দিদার, তাহিয়াত চৌধুরী, আহাদ, মশিউর রহমান, সাখাওয়াত হোসাইন, আরিফুর রহমান, মো. নঈম হোসেন, শামীম মিয়া, আল আমিন ফকির, আমিনুল ইসলাম, মো. নাজমুল আলম নাহিদ, আল আমিন, শেখ আহমদ মামুন, মো. আস সামি রহমান, সাদিক, হাসান সাঈদ, বায়েজিদ, জুয়েল মুসল্লী, ইমরান রহমান শিথিল, সাইফুল ইসলাম তুহিন, আল আমিন, ইমরান, শিব্বির আহমদ, হাবিবুর রহমান, মুহাম্মদ আবু জাফর, যুবায়ের, নিহাদ আব্দুল্লাহ, মাহমুদ ডাকুয়া, আমির হোসেন, নাহিদ, সালেহ আহমাদ, রাব্বী আবদুস সালাম, ইয়াছিন ব্যাপারী, মো. মিরাজ সিকদার, ওবায়দুল্লাহ সাকিব, জহিরুল ইসলাম, আবু হুরায়রা ও আবুল বাশার মৃধা।</p> <p>এঁদের মধ্যে চারজন নারায়ণগঞ্জের, নেত্রকোনার একজন, নোয়াখালীর একজন, পটুয়াখালীর একজন, ফরিদপুরের দুজন, বরিশালের তিনজন, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার একজন, ময়মনসিংহের একজন, মাগুরার একজন, মাদারীপুরের দুজন, সিলেটের সাতজন, সুনামগঞ্জের একজন, কুমিল্লার ১৫ জন, খুলনার একজন, চাঁদপুরের একজন, ঝালকাঠির দুজন, ঝিনাইদহের একজন, টাঙ্গাইলের একজন এবং ঢাকার চার তরুণ নিখোঁজ রয়েছেন।</p> <p>র‌্যাব বলছে, নতুন জঙ্গি দলের কথিত আমিরের নাম-পরিচয়ও জানতে পেরেছে তারা। তিনি একসময় দেশের একটি মাদরাসার শিক্ষক ছিলেন। তিনি দীর্ঘদিন ধরে উগ্রবাদের সঙ্গে জড়িত। দেশের বিভিন্ন জেলায় বিচরণ রয়েছে তাঁর। এ ছাড়া নতুন জঙ্গি দলের ছয়জন শুরা সদস্য, দাওয়াতি শাখার ১১ জন, সামরিক শাখার আটজন এবং অর্থ শাখার কয়েকজনের নাম পেয়ে তথ্য যাচাই-বাছাই করছে র‌্যাব।</p> <p>এদিকে নতুন জঙ্গি সংগঠন জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়ার অন্যতম অর্থ জোগানদাতাসহ আরো পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব)। কথিত হিজরতের নামে কুমিল্লা থেকে নিখোঁজ মসজিদের সেই ইমাম এই অর্থ জোগানদাতা। গত রবিবার রাজধানীর যাত্রাবাড়ী ও কেরানীগঞ্জ এলাকা থেকে তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়।</p> <p>গ্রেপ্তার করা পাঁচজনের মধ্যে অর্থ জোগানদাতা শাহ মো. হাবিবুল্লাহ হাবিব (৩২)। অন্য চারজন হলেন নেয়ামত উল্লাহ (৪৩), মো. হোসাইন (২২), রাকিব হাসনাত (২৮) ও মো. সাইফুল ইসলাম (২৩)। তাঁদের কাছ থেকে উগ্রবাদী পাঁচটি পুস্তিকা, প্রায় ৩০০ প্রচারপত্র (লিফলেট) এবং পাঁচটি ব্যাগ উদ্ধার করা হয়েছে।</p> <p>র‌্যাবের সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, ২৩ আগস্ট কুমিল্লা সদর এলাকা থেকে আট তরুণ নিখোঁজের ঘটনা ঘটে। এ বিষয়ে ২৫ আগস্ট কুমিল্লার কোতোয়ালি থানায় সাধারণ ডায়েরি করে স্বজনরা। ওই ঘটনায় র‌্যাব নিখোঁজ ও ভুক্তভোগীদের উদ্ধারে এবং জড়িতদের আটকে গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ায়। ৬ সেপ্টেম্বর ঘর ছাড়ার প্রস্তুতিকালে চার তরুণকে হেফাজতে নিয়ে পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দেয় র‌্যাব। এর আগে ১ সেপ্টেম্বর কুমিল্লা থেকে নিখোঁজ আট তরুণের মধ্যে শারতাজ ইসলাম নিলয় (২২) নামের এক তরুণ রাজধানীর কল্যাণপুরের নিজ বাড়িতে ফিরে আসেন।</p> <p>নিলয়ের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে ৬ অক্টোবর মুন্সীগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ ও ময়মনসিংহ এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে জঙ্গি সংগঠনের দাওয়াতি, তত্ত্বাবধানকারী, আশ্রয় প্রদান কার্যক্রমের সঙ্গে যুক্ত তিনজন এবং নিরুদ্দেশ চার তরুণসহ সাতজনকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব।</p> <p><strong>কক্সবাজারের হোটেল থেকে জঙ্গি গ্রেপ্তার</strong></p> <p>কক্সবাজার প্রতিনিধি জানান, সাগরপারের একটি হোটেলে অভিযান চালিয়ে নুরুল আবছার হাওলাদার (৪০) নামের এক জঙ্গিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। র‌্যাবের তথ্য মতে, তিনি জঙ্গি সংগঠন আমির হামজা ব্রিগেডকে পুনরায় সংগঠিত করার লক্ষ্যে চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার এলাকায় তৎপরতা চালাচ্ছিলেন। নুরুল আবছার ছদ্মবেশে কিছুদিন ধরে কক্সবাজারে অবস্থান করছিলেন। গত রবিবার রাতে র‌্যাব-১৫-এর সহকারী পরিচালক (মিডিয়া) ও সহকারী পুলিশ সুপার মো. বিল্লাল উদ্দিনের পাঠানো বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, গত শুক্রবার রাতে কক্সবাজারের হোটেল-মোটেল জোন এলাকার একটি হোটেল কক্ষ থেকে ওই জঙ্গিকে গ্রেপ্তার করা হয়।</p>