<p>বিএনপি ও দলটির সঙ্গে যুক্ত আন্দোলনে থাকা দলগুলোর ডাকা ৪৮ ঘণ্টার হরতালের আগের রাতে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোট ঠেকাতে ও অস্থিরতা সৃষ্টি করতে রাজধানীর গোপীবাগে শুক্রবার (৫ জানুয়ারি) রাতে বেনাপোল এক্সপ্রেস ট্রেনে আগুন দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। এই ঘটনায় দুই শিশুসহ চারজন নিহত এবং ৩০ জনের বেশি আহত ও দগ্ধ হয়েছে। ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মাইন উদ্দিন হতাহতদের তথ্য নিশ্চিত করেছেন।</p> <p>হওয়ার খবর জানিয়েছে ফায়ার সার্ভিস ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর সদস্যরা। ফায়ার সার্ভিসের আটটি ইউনিট প্রায় দুই ঘণ্টা কাজ করে আগুন নির্বাপন করে।</p> <p>এদিন রাত ৯টা ৫ মিনিটের দিকে ট্রেনের পাওয়ার কারে আগুন লাগে বলে জানা গেছে। পরে চারটি বগিতে আগুন ছড়িয়ে পড়ার তথ্য পাওয়া যায়। বেনাপোল থেকে যাত্রী নিয়ে ট্রেনটি পদ্মা সেতু হয়ে ঢাকায় আসছিল। কমলাপুর রেলস্টেশনে পৌঁছনোর কিছুক্ষণ আগে গোপীবাগ কাঁচাবাজারের সামনে ট্রেনে আগুন লাগে।</p> <p>বিষয়টি নিশ্চিত করে ফায়ার সার্ভিসের ডিউটি অফিসার রাকিবুল হাসান বলেন, রাত ৯টা ৫ মিনিটে আগুন লাগার খবর পায় ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স। রাত ৯টা ২৫ মিনিটে ঘটনাস্থলে পৌঁছন ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা। ১০টা ১০ মিনিটের দিকে আগুনের মাত্রা যখন কমে আসে তখন ফায়ার সার্ভিসের উদ্ধারকারীদল ট্রেনের ভেতরে প্রবেশ করে৷ পরে ১০ টা ২০ মিনিটে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। এ ঘটনায় ফায়ার সার্ভিসের সঙ্গে ডিএমপি, রেলওয়ে পুলিশ, র‍্যাব, বিজিবি ও আনসার সদস্যরা সমন্বিতভাবে আগুন নিয়ন্ত্র্রণ ও উদ্ধারে কাজ করে।</p> <p>পৌনে ১০টার দিকে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, ট্রেনের কয়েকটি বগিতে দাউ দাউ করে আগুন জ্বলছে। ফায়ার সার্ভিসের সঙ্গে এলাকাবাসী যে যার মতো করে পানি দিয়ে আগুন নেভানোর চেষ্টা করেছে।</p> <p>রাত সাড়ে ১১ টার দিকে ঘটনাস্থল থেকে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশনস) ড. খন্দকার মহিদ উদ্দিন বলেন, এ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা যে নাশকতা সেটি স্পষ্ট। এটা ইচ্ছাকৃত ও পরিকল্পিতভাবে করা হয়েছে। যারা এটি করেছে তাদের অবশ্যই আইনের আওতায় আনা হবে। কারণ এ ধরনের ঘটনা অমানবিক, সহিংসতায় আগুনে পুড়ে মারার ঘটনা কোনো মানুষ গ্রহন করতে পারে না। যারা এ ঘটনা ঘটিয়েছে তাদের শিগগিরই খোজে বের করে আইনের আওতায় আনা হবে। তদন্ত শুরু হয়েছে।  </p> <p>এদিকে ফায়ার সার্ভিসের পরিচালক (অপারেশন ও মেনটেনেন্স) লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, এ ঘটনায় চারজনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। আগুনের সূত্রপাত কিভাবে এবং ক্ষয়ক্ষতি ও আহত-দগ্ধের সংখ্যা বিস্তারিত তদন্ত সাপেক্ষ জানা যাবে। </p> <p>আগুনে চারটি বগি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার কথা জানিয়ে রেলওয়ে পুলিশের ঢাকা বিভাগীয় নিয়ন্ত্রণ কক্ষের অপারেটর মোখলেছুর রহমান বলেন, “সায়দাবাদ এলাকা অতিক্রমকালে বেনাপোল এক্সপ্রেসের ‘চ’ বগিতে প্রথমে আগুন দেখা যায়। এরপর পাওয়ার কার এবং আরো দুটি বগিতে আগুন ছড়িয়ে যায়।”</p> <p>র‍্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন রাত সাড়ে ১০ ঘটনাস্থলে সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা আনুমানিক সোয়া ৯টার দিকে জানতে পারি আগুন লেগেছে। দুর্বৃত্তরা আগুন দিয়েছে না কি নাশকতাকারীরা দিয়েছে, না কি অন্য কোনোভাবে আগুন লেগেছে, তা আমাদের গোয়েন্দারা তদন্ত করছেন। ট্রেনের চালকসহ ট্রেনে থাকাদের সঙ্গে কথা বলে জানার চেষ্টা করছি, কিভাবে আগুনটি লেগেছে।’</p> <p>তবে আইন-শৃঙ্খলাবাহিনী জানিয়েছে, দুইজনকে সন্দেহের তালিখা রেখে তদন্ত কাজ শুরু হয়েছে। এছাড়া ট্রেনের আলামত সংগ্রহ করে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে বিস্তারিত বলা যাবে। </p> <p>রেলওয়ে পুলিশের ঢাকা জেলা পুলিশ সুপার আনোয়ার হোসেন বলেন, এটি নাশকতা নাকি ট্রেনে গোলযোগ, বিষয়টি যাচাই করা হচ্ছে। </p> <p>এ ঘটনায় শেখ হাসিনার জাতীয় বান এন্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ভর্তি অনন্ত দুজন—ডা. কৌশিক ও আসিফ মো. খান (৩০)। ডা. সামন্ত লাল সেন বলেন, দগ্ধ আসিফের শ্বাসনালী পুড়ে গেছে, তাই তাঁর অবস্থা আশঙ্কাজনক মনে করছেন তাঁরা।</p> <p>ঢামেক হাসপাতাল পুলিশ ফাড়ির ইনচার্জ পরিদর্শক মো. বাচ্চু মিয়া বলেন, দগ্ধ আসিফ চিকিত্সাধীন রয়েছেন। ছেলে বের হতে পারলেও তার স্ত্রী নাতাশা বের হতে পারেনি—এমনটি জানান দগ্ধ আসিফের বাবা সাবেক ব্যাংক কর্মকর্তা আবু সিদ্দিক খান। তাদের গ্রামের বাড়ি নেত্রকোনা জেলায়। বর্তমানে তারা ৭৬ শরৎ গুপ্ত রোড গেন্ডারিয়ার নারিন্দায় থাকেন।</p> <p>সিদ্দিক খান জানান, আসিফ ও তাঁর স্ত্রী নাতাশা ফরিদপুরের ভাঙ্গায় আত্মীয়র বাসায় বেড়াতে গিয়েছিলেন। সেখান থেকে ফেরার পথে এ ঘটনার শিকার হন। আগুন লাগার পর তারা দরজা দিয়ে বের হতে না পেরে ছেলে জানালা দিয়ে মাথা বের করেন। সে সময়ে লোকজন তাকে টেনে বের করতে পারলেও তার স্ত্রী নাতাশা বের হতে পারেনি। ধারনা করা হচ্ছে, নাতাশা ট্রেনে রয়ে গেছে।</p> <p>এদিকে এ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ঢাকা থেকে ট্রেন চলাচলে বিঘ্ন ঘটে। এতে অনেরক যাত্রী ভোগান্তিতে পড়েছে বলে জানা গেছে।</p> <p>এ অগ্নিকাণ্ডে হতাহতের সংবাদে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন রেলপথ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী মো. নূরুল ইসলাম সুজন। এক শোকবার্তায় অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনায় নিহতদের বিদেহী আত্মার মাগফিরাত এবং আহতদের দ্রুত সুস্থতা কামনা করেছেন। এ ছাড়া শোকাহত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন রেলপথমন্ত্রী। একই সঙ্গে অগ্নিকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত সন্ত্রাসীদের জঘন্যতম কর্মকাণ্ডের নিন্দা জানিয়েছেন তিনি।</p>