<p><span style="font-size:11pt"><span style="text-autospace:none"><span style="vertical-align:middle"><span style="line-height:115%"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">কাগজে-কলমে পুকুর আছে অথচ বাস্তবে নেই। বৃষ্টি হলে কিংবা অন্য কোনোভাবে ওই পুকুরে পানি সংরক্ষণ করতে চাইলে কোনোভাবেই তা আর সম্ভব না। কারণ দখল করে বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণ এবং বাসাবাড়ির ময়লা-আবর্জনা, কারখানার বর্জ্য ফেলে পুকুরটি করে তোলা হয়েছে রীতিমতো উঁচু ভূমি। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ২৪ নম্বর ওয়ার্ড এলাকার লালবাগ পুষ্প সাহা পুকুরটির এমন করুণ দশা করা হয়েছে। দেড় যুগের বেশি সময় ধরে দখলদাররা ৫০ কাঠার পুকুরটি ধীরে ধীরে দখল করেছেন। রাজধানীর অসংখ্য পুকুর দখলের বাস্তব এক চিত্র এই পুষ্প সাহা পুকুর। </span></span></span></span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="text-autospace:none"><span style="vertical-align:middle"><span style="line-height:115%"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black"><img alt="লালবাগের পুষ্প সাহা পুকুর কোথায় হারাল?" height="281" src="https://cdn.kalerkantho.com/public/news_images/share/photo/shares/1.Print/2024/04.April/27-04-2024/Untitled-1.jpg" style="float:left" width="342" />নগর বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রাজধানীর পুকুরগুলো রক্ষায় বড় ধরনের উদ্যোগ নেওয়া জরুরি। যেগুলো দখল হয়ে গেছে সেগুলো উদ্ধারে যেমন উদ্যোগ নিতে হবে, তেমনি উদ্ধারের পর পুকুরগুলো খনন করে আগের অবস্থায় ফিরিয়ে নিতে হবে। তাহলে রাজধানী আবারও অনেক পুকুর ফিরে পাবে।</span></span></span></span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="text-autospace:none"><span style="vertical-align:middle"><span style="line-height:115%"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">সরেজমিনে লালবাগের জগন্নাথ সাহা রোডে ঐতিহ্যবাহী পুষ্প সাহা পুকুর এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, পুকুরটির যেটুকু অস্তিত্ব আছে তা-ও বাসাবাড়ির ময়লা-আবর্জনা এবং কারখানার বর্জ্য ফেলে ভরাট করা হয়েছে। কয়েক বছর আগেও পুকুরটির সামান্য চিহ্ন দেখা গেলেও বর্তমানে তা-ও আর খুঁজে পাওয়া যায় না। দখল আর ময়লা-আবর্জনায় ঠাসা এটি যে পুকুর ছিল সেটিও বোঝার উপায় নেই। পুকুরটির তিন পাশে গড়ে তোলা হয়েছে ছোট-বড় স্থাপনা। এর মধ্যে রয়েছে আওয়ামী শ্রমিক লীগের অফিস, চারটি রিকশা গ্যারেজ আর কিছু ছোট ছোট একচালা ঘর। পুকুরের দক্ষিণ-পশ্চিম পাশে রিকশার গ্যারেজসহ বড় তিনটি টিনের ঘর রয়েছে। একটি ঘরের সামনে ঝুলছে </span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif""><span style="color:black">‘</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">জাতীয় শ্রমিক লীগ, লালবাগ থানার প্রধান কার্যালয়</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Arial Unicode MS Bold""><span style="color:black">’</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black"> লেখা সাইনবোর্ড। উত্তর পাশে রয়েছে তালাবদ্ধ আরেকটি ঘর। উত্তর-পূর্ব কোণে দুটি স্টিলের কারখানা। এ সবই গড়ে তোলা হয়েছে পুকুরটি ভরাট করে।</span></span></span></span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="text-autospace:none"><span style="vertical-align:middle"><span style="line-height:115%"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নানাভাবে পুকুরটি যে কেবল ভরাট করা হয়েছে তাই নয়, পুকুরের পাশের সড়ক থেকে অন্তত ছয় ফিট উঁচু করা হয়েছে। পুকুরটির উত্তর পাশে রয়েছে দৃষ্টিনন্দন পুরনো একটি রাজবাড়ী। স্থানীয়রা জানান, আগে পুকুরটির উত্তর ও পশ্চিম পারে দুটি পাকা ঘাট ছিল। একসময় চৌধুরী বাজার, শহীদনগর, বালুঘাট ও নবাবগঞ্জ এলাকার মানুষ এই পুকুরে গোসল ও গৃহস্থালি সামগ্রী ধোয়া-মোছার কাজ সারত।</span></span></span></span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="text-autospace:none"><span style="vertical-align:middle"><span style="line-height:115%"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">জানা গেছে, পুকুরটির বিভিন্ন অংশ দখল করা ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে যে মামলা হয়েছে তা চলমান আছে। নাজিম উদ্দিন নামের একজন দখলদার পুকুরের জমি দখল করে ছয় তলা ভবন নির্মাণ করেছেন। পরে তিনি কোর্ট থেকে স্থগিতাদেশ নেন। এক পর্যায়ে ভবনটি বিক্রি করে দেন দিদার হোসেন সেন্টু নামে আরেক ব্যক্তির কাছে। তিনিও পরে আরেক ব্যক্তির কাছে বিক্রি করে দেন। চার মাস আগে ডিএসসিসি জেলা প্রশাসনের অনুমতি নিয়ে পুকুরটির চার পাশে দেয়াল তোলার কাজ শুরু করে। তবে কয়েক দিন কাজ করার পর বর্তমানে সেটি বন্ধ আছে। </span></span></span></span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="text-autospace:none"><span style="vertical-align:middle"><span style="line-height:115%"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">কাগজে-কলমে পুকুরটির আয়তন ৫০ কাঠা। তবে বর্তমানে পুকুরটির অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায় না। পুকুরটি রক্ষায় পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা), পুষ্প সাহা পুকুর রক্ষা কমিটিসহ বিভিন্ন পরিবেশবাদী ও সামাজিক সংগঠন অনেক কর্মসূচি পালন করলেও এখনো পর্যন্ত কোনো সুফল পাওয়া যায়নি। </span></span></span></span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="text-autospace:none"><span style="vertical-align:middle"><span style="line-height:115%"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">পুষ্প সাহা পুকুর রক্ষা কমিটির আহ্বায়ক সায়েমুল ইসলাম কালের কণ্ঠকে বলেন, </span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif""><span style="color:black">‘</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">এই পুকুরটি রক্ষা করার জন্য বহু বছর ধরে চেষ্টা করছি। ছয়তলা ভবন নির্মাণ করে নাজিম উদ্দিন নামের এক ব্যক্তি পরে দিদার হোসেন সেন্টু নামে আরেক ব্যক্তির কাছে বিক্রি করে দেন। তিনিও পরে আরেক ব্যক্তির কাছে বিক্রি করে দিয়েছেন। এটি মোটা দাগের দখল। তবে অস্থায়ী দখল উচ্ছেদ করে কেন পুকুরটি খনন করা হচ্ছে সেটি আমাদের বুঝে আসে না। কয়েক মাস আগে সিটি করপোরেশন উদ্যোগ নিলেও আবার থেমে গেছে।</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Arial Unicode MS Bold""><span style="color:black">’</span></span></span></span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="text-autospace:none"><span style="vertical-align:middle"><span style="line-height:115%"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের এক নেতা জানান, পুষ্প সাহা পুকুর দখল করে অস্থায়ী গ্যারেজ এবং টিনশেড ঘরসহ বেশির ভাগ গোডাউন এই ওয়ার্ডের আওয়ামী লীগ সভাপতি ইকরাম উল্লাহ সোহরাওয়ার্দীর। তাঁর কাছের কয়েকজন লোক এসব স্থাপনা থেকে ভাড়া তোলেন। </span></span></span></span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="text-autospace:none"><span style="vertical-align:middle"><span style="line-height:115%"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">স্থানীয় ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি ইকরাম উল্লাহ সোহরাওয়ার্দী কালের কণ্ঠকে বলেন, </span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif""><span style="color:black">‘</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">আমি বা দলীয় কোনো নেতাকর্মী এখান থেকে লাভবান হচ্ছেন না। যারা বলছে, তারা ভুল জেনে ভুল বলছে। সিটি করপোরেশন ওয়াল নির্মাণ শুরু করেছে। এখানকার সব স্থাপনা ভেঙে দেবে তারা।</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Arial Unicode MS Bold""><span style="color:black">’</span></span></span></span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="text-autospace:none"><span style="vertical-align:middle"><span style="line-height:115%"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর মোকাদ্দেস হোসেন জাহিদ বলেন, </span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif""><span style="color:black">‘</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">পার্ক থেকে খেলার মাঠ, সবই করে দিতে পেরেছি। এই পুকুরটি খনন করে আগের রূপে ফিরিয়ে দিতে পারলে খুব ভালো লাগত। সীমানাপ্রাচীরের কাজ কেন বন্ধ রয়েছে আমার জানা নেই। তবে এই কাজ ঠিকাদার ছাড়া করা সম্ভব না।</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Arial Unicode MS Bold""><span style="color:black">’</span></span></span></span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="text-autospace:none"><span style="vertical-align:middle"><span style="line-height:115%"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">নগর বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. আদিল মোহাম্মদ খান কালের কণ্ঠকে বলেন, </span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif""><span style="color:black">‘</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">একটি শহরকে বাসযোগ্য করে গড়ে তুলতে হলে অবশ্যই জলাধার প্রয়োজন। একটি শহরে যত বেশি জলাধার থাকবে, ওই শহরের পরিবেশ তত ভালো হবে। এ ছাড়া আগুন লাগার মতো ঘটনার সময় জলাধার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু রাজধানীর জলাধারগুলো ধীরে ধীরে হারিয়ে যাচ্ছে। মনে রাখতে হবে, একটি শহরের ১৫ থেকে ২০ শতাংশ জলাধার থাকা জরুরি। এই অনুপাতের ধারে কাছেও আমরা নেই।</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Arial Unicode MS Bold""><span style="color:black">’</span></span></span></span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="text-autospace:none"><span style="vertical-align:middle"><span style="line-height:115%"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">ঢাকা জেলার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মো. শিবলী সাদিক কালের কণ্ঠকে বলেন, </span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif""><span style="color:black">‘</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">রাজধানীর পুকুর রক্ষায় আমরা রাজউক, সিটি করপোরেশনসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কাজ করছি। এরই মধ্যে রাজউকের সঙ্গে আমরা ৩৫টি পুকুর রক্ষা এবং সংস্কারের বিষয়ে কাজ শুরু করেছি। লালবাগের পুষ্প সাহা পুকুরটির বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য নিয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। দখলদারদের উচ্ছেদে অভিযান পরিচালনা করা হবে। অবশ্যই পুকুরটি আদি রূপে ফিরিয়ে আনা হবে।</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Arial Unicode MS Bold""><span style="color:black">’</span></span></span></span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="text-autospace:none"><span style="vertical-align:middle"><span style="line-height:115%"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""> </span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="text-autospace:none"><span style="vertical-align:middle"><span style="line-height:115%"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><b><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">রাজধানীর হারিয়ে যাওয়া যত পুকুর</span></span></span></b></span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="text-autospace:none"><span style="vertical-align:middle"><span style="line-height:115%"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">গত তিন দশকে রাজধানী থেকে হারিয়ে গেছে কয়েক শ পুকুর। এসব পুকুর ভরাট করে নির্মাণ করা হয়েছে আবাসিক ভবন, মার্কেটসহ নানা স্থাপনা। বর্তমানে হাতে গোনা যে কটি পুকুর টিকে আছে, সেগুলোরও প্রাণ যায় দশা। ১৯২৪ সালের টপোগ্রাফি মানচিত্রে উত্তরে শাহবাগ, দক্ষিণে চর ইউসুফ ও চর কামরাঙ্গী, পশ্চিমে ধানমণ্ডি এবং পূর্বে মতিঝিল ও ইংলিশ রোড এলাকায় অন্তত ১২০টি পুকুর ছিল। এরপর ১৯৮৫ সালে রাজধানীর পুকুর নিয়ে মৎস্য বিভাগের এক গবেষণা অনুযায়ী রাজধানীতে একসময় পুকুরের সংখ্যা ছিল দুই হাজারেরও বেশি। পরের তিন দশকে এসব পুকুর হারিয়ে গেছে। ২০২১ সালে রাজধানীর পুকুর নিয়ে রিভার অ্যান্ড ডেলটা রিসার্চ সেন্টার (আরডিআরসি) নামের একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান জরিপ করে। সেখানে বলা হয়েছে, বর্তমানে রাজধানীতে ২৪১টি পুকুর কোনো মতে টিকে আছে। এর মধ্যে পুরান ঢাকায় রয়েছে ২৪টি।</span></span></span></span></span></span></span></span></p>