<p>মালয়েশিয়ায় কর্মী নিয়োগের প্রতারণার ক্ষেত্রে বাংলাদেশি ও মালয়েশিয়ার উচ্চ-পর্যায়ের কর্মকর্তারা জড়িত বলে জানিয়েছেন জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞরা। মালয়েশিয়ার সংবাদ মাধ্যম ফ্রিমালেয়শিয়াটুডের জেসন থমাসের রিপোর্ট অনুযায়ী, বাংলাদেশি অভিবাসীদের কাজ নিশ্চিত করা ও তাদেরকে শোষণ থেকে রক্ষা করার আহ্বান জানিয়েছেন জাতিসংঘের একদল বিশেষজ্ঞ।</p> <p>গত ২৬ ফেব্রুয়ারি মালয়েশিয়ান পুলিশ চেরাসে ১০০ বাংলাদেশিকে উদ্ধার করে। তারা কাজ না পেয়ে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে মানবেতর পরিবেশে একটা ডরমিটরিতে অবস্থান করছিলেন।</p> <p>জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিল-নিযুক্ত বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, তারা বাংলাদেশি অভিবাসীদের সম্পর্কে প্রতিবেদনে হতাশ হয়ে পড়েছেন। যারা কর্মসংস্থানের প্রতিশ্রুতি দিয়ে মালয়েশিয়ায় নিয়ে এসে কর্মীদের সঙ্গে প্রতারণা করেছেন তাদের খুঁজে বের করার জন্য অনুরোধ করেছেন তারা। মালয়েশিয়ায় কর্মী নিয়োগকারীরা প্রচুর অর্থের মালিক হলেও তারা প্রতারণা থেকে বের হতে পারছে না।</p> <p>বিশেষজ্ঞরা আরো জানান, নিয়োগকৃত অনেক কম্পানির অনেকের কোনোরকম কোনো প্রজেক্ট নেই। তারা আসলে নামসর্বস্ব কম্পানি ছিল। যারা কাজের জন্য কর্মীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত অর্থ দাবি করেছে। যার ফলে বাংলাদেশি অভিবাসীরা ঋণের জালে ঘুরপাক খাচ্ছেন। প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার উদ্যোগ পর্যাপ্ত নয় বলে মনে করেন জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞরা।</p> <p>তারা জানান, কিছু অভিবাসী তাদের শোষণের অভিযোগ করার ফলে উল্টো তারা প্রতিহিংসার স্বীকার হয়েছেন। অভিবাসীদের পর্যাপ্ত সুরক্ষা দিয়ে শ্রম অভিবাসন পরিচালনা করার আহ্বান জানিয়েছেন জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞরা।</p> <p>তারা বলেছেন, মালয়েশিয়াকে অবশ্যই তার বাধ্যবাধকতা পূরণ করতে হবে। ইউএন গাইডিং প্রিন্সিপলস অন বিজনেস অ্যান্ড হিউম্যান রাইটসের অধীনে নিয়ম অনুযায়ী ব্যবসা করতে হবে। অভিবাসীকর্মীদের মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে সুরক্ষা দিতে হবে, মানবাধিকারকে সম্মান করে তা নিশ্চিত করতে হবে।</p> <p>বিশেষজ্ঞরা আরো বলেছেন, মালয়েশিয়াকে অবশ্যই শোষণের শিকার ব্যক্তিদের সনাক্তকরণ, সুরক্ষা এবং সহায়তা করার জন্য প্রচেষ্টা জোরদার করতে হবে, মানব পাচারের বিরুদ্ধে বিদ্যমান আইনি সুরক্ষা কার্যকর করতে হবে এবং আন্তর্জাতিক মানবাধিকারের বাধ্যবাধকতা সমুন্নত রাখতে হবে।</p> <p>জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিল থেকে তারা এর আগে মালয়েশিয়া ও বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে এসব বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।</p> <p>গত বছরের অক্টোবর মাসে, অভিবাসী অধিকারকর্মী অ্যান্ডি হল জেনেভায় জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিলের অধীনস্থ সংস্থা ইউনাইটেড নেশনস অফিস অফ দ্য হাইকমিশনার ফর হিউম্যান রাইটস (ওএইচসিএইচআর)-এর কাছে  বাংলাদেশি শ্রমিকদের দুর্দশার বিষয়ে জানানো হলে তেমন সাড়া পাওয়া যায়নি।</p> <p>শ্রমিকদের পরিস্থিতিকে ‘ভয়াবহ’ হিসেবে বর্ণনা করে তিনি তাদের দরিদ্র জীবনযাত্রার বিশদ বিবরণ দিয়েছেন, যার মধ্যে রয়েছে নিম্নমানের থাকার জায়গা, বাজে স্যানিটেশন এবং সীমিত খাবার প্রদান। অভিবাসীদের ঋণের জালে জর্জরিত হওয়ার বিষয়টিও গুরুত্ব পায়।</p> <p>অভিবাসী অধিকারকর্মী অ্যান্ডি হল, দাসপ্রথা, পাচার, অভিবাসী এবং দারিদ্র্যের বিষয়ে জাতিসংঘের বিশেষ রিপোর্টার ও ওয়ার্কিং গ্রুপ অন বিজনেস অ্যান্ড হিউম্যান রাইটসের নিকট নথিভুক্ত অভিযোগ পাঠান। এ ছাড়াও বিষয়টি তিনি পিয়া ওবেরয়, এশিয়া প্যাসিফিকের মাইগ্রেশন এবং মানবাধিকার বিষয়ক সিনিয়র উপদেষ্টার নজরে আনেন।</p>