দেশজুড়ে তীব্র দাবদাহের মধ্যে অবশেষে গতকাল বৃহস্পতিবার দেখা গেল বৈশাখের রুদ্ররূপের অন্য দিকটা। গতকাল তীব্র ঝোড়ো হাওয়ার সঙ্গে তুমুল বজ্রপাতে পাঁচ জেলায় অন্তত ১১ জনের মৃত্যু হয়েছে। ঢাকা বিভাগের কিছু জেলা এবং সিলেট ও চট্টগ্রাম বিভাগের বেশির ভাগ অঞ্চলে বৃষ্টি হয়েছে। ফলে তিন বিভাগে তাপমাত্রা কিছুটা কমে স্বস্তি নামে জনজীবনে।
ঢাকাসহ তিন বিভাগে বৃষ্টি বজ্রপাতে নিহত ১১
নিজস্ব প্রতিবেদক

বজ্রপাতে মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে কক্সবাজার, রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি, কুমিল্লা ও সিলেটে। এতে নিহতের পাশাপাশি আহত হয়েছে আরো প্রায় ১০ জন।
আবহাওয়া অধিদপ্তর সূত্র জানিয়েছে, গতকাল সিলেট ও চট্টগ্রাম বিভাগের বেশির ভাগ জায়গায় বৃষ্টি হয়েছে। গতকাল রাতে এবং আজ শুক্রবারও চট্টগ্রাম ও সিলেটের পাশাপাশি ঢাকা, ময়মনসিংহ ও বরিশাল বিভাগের কিছু জায়গায় বৃষ্টি বা ঝোড়ো হাওয়াসহ বজ্রবৃষ্টি হতে পারে। কোথাও কোথাও শিলাবৃষ্টির আশঙ্কা রয়েছে।
এ ছাড়া দেশের অন্যত্র অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে।
আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, পশ্চিমা লঘুচাপের বর্ধিতাংশ পশ্চিমবঙ্গ থেকে বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল হয়ে উত্তর-পশ্চিম বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে। গতকাল দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল যশোর ও চুয়াডাঙ্গা জেলায় ৪২.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
কুমিল্লায় প্রাণ গেল ৪ জনের
কুমিল্লার চার উপজেলায় বজ্রপাতে চারজনের মৃত্যু হয়েছে। গতকাল বিকেল থেকে সন্ধ্যার মধ্যে জেলার চান্দিনা, কুমিল্লা সদর দক্ষিণ, বুড়িচং ও দেবীদ্বারে এই চারজনের মৃত্যু হয়।
কুমিল্লা সদর দক্ষিণ উপজেলার সূর্যনগর গ্রামে বজ্রপাতে মারা যান আতিকুল ইসলাম (৫০)। চান্দিনার কিছমত শ্রীমন্তপুর গ্রামে ধান কাটতে গিয়ে মারা যান দৌলতুর রহমান (৪৭) নামের এক কৃষক। বুড়িচংয়ের পাঁচোড়া নোয়াপাড়া গ্রামে আলম হোসেন নামের এক যুবক এবং দেবীদ্বারে ধামতী গ্রামে বাড়ির পাশে খড় আনতে গিয়ে মোখলেসুর রহমান (৫৮) নামের আরেক ব্যক্তির মৃত্যু হয়।
কুমিল্লার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) পঙ্কজ বড়ুয়া সন্ধ্যায় বলেন, ‘আমরা বিক্ষিপ্তভাবে বজ্রপাতে মৃত্যুর সংবাদ পাচ্ছি। সঠিক সংখ্যা জানতে আরো সময় লাগবে।’
জেলার ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মো. আবেদ আলী বলেন, বজ্রপাতে মারা যাওয়া প্রত্যেক ব্যক্তির পরিবারকে ২০ হাজার টাকা করে আর্থিক সহায়তা দেওয়া হবে।
কক্সবাজারে বজ্রপাতে দুই লবণ শ্রমিক নিহত
কক্সবাজারের পেকুয়ায় তীব্র ঝোড়ো হাওয়ার সঙ্গে তুমুল বজ্রপাত শুরু হলে মাঠে থাকা লবণ ঢেকে দিতে গিয়ে দুই শ্রমিক প্রাণ হারিয়েছে বজ্রপাতে। তাদের মধ্যে একজনের বয়স ১২। গতকাল ভোর রাত সাড়ে ৩টার দিকে উপজেলার মগনামা ও রাজাখালী ইউনিয়নের পৃথক স্থানে এ দুর্ঘটনা ঘটে। বজ্রপাতে নিহতরা হলো মগনামা ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের কোদাইল্যাদিয়া এলাকার জমির উদ্দিনের ছেলে দিদারুল ইসলাম (৩০) ও রাজাখালী ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের ছড়িপাড়ার জামাল উদ্দিনের ছেলে মোহাম্মদ আরাফাত (১২)।
পেকুয়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মুজিবুর রহমান জানান, গতকাল ভোরে রাজাখালী ইউনিয়ন থেকে আরাফাত নামের এক শিশুকে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসা হয়। তবে এর আগেই তার মৃত্যু হয়। মগনামা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ইউনুস চৌধুরী কোদাইল্যাদিয়ায় লবণ মাঠে বজ্রপাতে শ্রমিক দিদারুল ইসলামের মারা যাওয়ার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
রাঙামাটিতে নিহত ৩
পার্বত্য জেলা রাঙামাটিতে বজ্রপাতে অন্তত তিনজনের মৃত্যুর সংবাদ পাওয়া যায়। গতকাল রাঙামাটি শহরের সিলেটিপাড়া ও বাঘাইছড়ি উপজেলার রূপাকারী ইউনিয়ন ও সাজেক ইউনিয়নে এসব মৃত্যু ঘটে বলে জানা যায়। একই সময়ে আরো অন্তত সাতজনের আহত হওয়ার ঘটনার তথ্য মিলেছে।
নিহতরা হলেন রাঙামাটি শহরের সিলেটিপাড়ার বাসিন্দা মো. নজির (৫০) এবং বাঘাইছড়ি উপজেলার রূপকারী ইউনিয়নের মুসলিম ব্লক এলাকার বাসিন্দা বাহারজান বেগম (৫৫) এবং সাজেকের লংথিয়ানপাড়ার তনিবালা ত্রিপুরা (৩৭)।
রূপকারী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জ্যাসমিন চাকমা জানান, ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের মুসলিম ব্লক গ্রামের লাল মিয়ার স্ত্রী বাহারজান বেগম গরু আনতে গিয়ে বজ্রপাতে মারা যান। বাঘাইছড়ি উপজেলা নির্বাহী অফিসার শিরীন আক্তার জানান, বজ্রপাতে রূপকারী ইউনিয়নে বাহারজান নামের একজন এবং সাজেকে তনিবালা ত্রিপুরা নামের আরেক নারী নিহত হন। নিহতদের পরিবারকে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ১০ হাজার টাকা করে তাত্ক্ষণিক আর্থিক সহায়তা দেওয়া হয়েছে।
বাঘাইছড়িতে সকাল সাড়ে ৯টার দিকে একটি চায়ের দোকানে বসে আড্ডা দেওয়ার সময় বজ্রপাতে সাতজন আহত হওয়ার তথ্য জানিয়েছে স্থানীয়রা। আহতরা হলো তরুণ চাকমা, তৃণা চাকমা, রবীন্দ্র চাকমা, সুষমলাল চাকমা, অক্ষয়মনি চাকমা, পাত্থর চাকমা ও অমরজ্যোতি চাকমা।
খাগড়াছড়িতে কিশোরের মৃত্যু
খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গায় বজ্রপাতে ইয়াছিন আরাফাত নামের এক কিশোরের মৃত্যু হয়েছে। গতকাল দুপুরের দিকে বড়নাল ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের ইব্রাহিমপাড়ায় এ ঘটনা ঘটে।
ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ ইলিয়াস হোসেন ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। স্বজনরা জানায়, বৃষ্টির সময় উঠানের পাশেই আম কুড়াতে যায় ইয়াছির ও তার এক ভাই। এ সময় বজ্রপাতে ছোট ভাই প্রাণে বেঁচে গেলেও বড় ভাই ইয়াছিন ঘটনাস্থলেই মারা যায়।
সিলেটে এক কৃষকের মৃত্যু
সিলেটের কানাইঘাট উপজেলায় ধান কাটতে গিয়ে বজ্রপাতে বাবুল আহমদ (৪৮) নামের এক কৃষক নিহত হয়েছেন। এ সময় আহত হন ফাহিম আহমদ (১৭) ও প্রদীপ বিশ্বাস (২০) নামের আরো দুজন। গতকাল দুপুর ১২টার দিকে উপজেলার দিঘিরপাড় পূর্ব ইউনিয়নের এক হাওরে এই বজ্রপাতের ঘটনা ঘটে। নিহত বর্গাচাষি বাবুল উপজেলার দক্ষিণ কুয়রের মাটি গ্রামের মৃত আব্দুস সালামের ছেলে।
নিহতের স্বজন ও স্থানীয়রা জানায়, বৃহস্পতিবার সকাল থেকে বাবুল আহমদ কয়েকজনের সঙ্গে স্থানীয় শফিক হাওরে ধান কাটছিলেন। দুপুর ১২টার দিকে হঠাৎ প্রচণ্ড শব্দে বজ্রপাত হলে ঝলসে গিয়ে গুরুতর আহত হয় তারা। খবর পেয়ে স্থানীয়রা তাদের উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক বাবুল আহমদকে মৃত ঘোষণা করেন। গুরুতর আহত ফাহিম ও প্রদীপকে সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়।
সম্পর্কিত খবর

শুল্কঝড়ের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় আঞ্চলিক-দ্বিপক্ষীয় চুক্তিতে জোর
- ছায়া সংসদে ফাহমিদা খাতুন
নিজস্ব প্রতিবেদক

সারা বিশ্বে এখন শুল্কঝড় বইছে। মার্কিন প্রশাসন শুল্কহার বৃদ্ধিতে কোনো নিয়ম-কানুনের ধার ধারেনি। যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে শুল্ক আরোপ নিয়ে পরস্পরবিরোধী অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে বাণিজ্যযুদ্ধ শুরু হয়েছে। বাংলাদেশও এই চ্যালেঞ্জের বাইরে নয়।
গতকাল শনিবার রাজধানীর এফডিসিতে যুক্তরাষ্ট্রের উচ্চ শুল্কহারের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা নিয়ে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি আয়োজিত ছায়া সংসদে বিতর্ক প্রতিযোগিতায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন তিনি। অনুষ্ঠানে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ সভাপতিত্ব করেন।
ড. ফাহমিদা খাতুন বলেন, ‘বাংলাদেশের ওপর ৩৭ শতাংশ কর আরোপের প্রক্রিয়া ত্রুটিপূর্ণ। তবে ট্রাম্পের উচ্চ শুল্কনীতি আমাদের জন্য ওয়েক-আপ কল। ব্যক্তি সমালোচনা না করে প্রাতিষ্ঠানিক দক্ষতা বাড়াতে হবে। দেশের করকাঠামো শক্তিশালী করতে আয়কর আদায়ে জোর দিতে হবে।
তিনি বলেন, ‘শুল্ক ও অশুল্ক বাধা কাটিয়ে বাণিজ্যের সম্প্রসারণে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা (ডব্লিউটিও) গঠিত হয়েছিল। কিন্তু প্রভাবশালী দেশগুলো ডব্লিউটিওর নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা করেনি। তাই সংস্থাটি এ ক্ষেত্রে সেভাবে প্রভাব রাখতে পারেনি। এর পর থেকেই নিজেদের মধ্যে সমমনা ১৫ থেকে ২০টি দেশ মিলে একাধিক জোট করে সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিতের মধ্য দিয়ে বাণিজ্য করছে।
ড. ফাহমিদা খাতুন আরো বলেন, ‘বাণিজ্য সক্ষমতা বাড়াতে আমরা অনেক দিন ধরেই বেশ কিছু দেশের সঙ্গে এফটিএ করার কথা বলে আসছি। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, প্রতিযোগী দেশ ভিয়েতনামে যেখানে ৫০ দেশের সঙ্গে এফটি রয়েছে সেখানে আমাদের রয়েছে শুধু ভুটানের সঙ্গে। যত দ্রুত সম্ভব আরো কিছু দেশের সঙ্গে এফটি করতে হবে। একই সঙ্গে নতুন বাজার, পণ্য বহুমুখীকরণ ও উৎপাদনশীলতার ওপর জোর দিতে হবে।’
হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ বলেন, যুক্তরাষ্ট্রে পণ্য রপ্তানিতে ঘোষিত নতুন শুল্ক আরোপ তিন মাসের জন্য স্থগিত করায় বাংলাদেশের রপ্তানি খাতে সাময়িক স্বস্তি মিললেও অনিশ্চয়তা কাটেনি। এই ৯০ দিনের মধ্যে নতুন করে এলসি খোলা হলে তার জাহাজীকরণ যদি ৯০ দিনের পরে হয়, তাহলে সে ক্ষেত্রে ওই রপ্তানির বিপরীতে স্থগিত কর সুবিধা প্রযোজ্য হবে কি না, তা স্পষ্ট নয়। যদি এই স্থগিতাদেশের ৯০ দিন পর মার্কিন শুল্ক বিভাগ পণ্য খালাসীকরণের লক্ষ্যে শুল্ক অ্যাসেসমেন্ট করে তাহলে কত শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হবে, তা নিশ্চিত করা না গেলে ব্যবসায়ীদের মধ্যে শঙ্কা থেকেই যাবে।
চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় ১০ সুপারিশ
বাংলাদেশকে যুক্তরাষ্ট্রের উচ্চ শুল্কহারের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি ১০ দফা সুপারিশ করে। এগুলো হচ্ছে এক. শুধু পোশাক খাতকেন্দ্রিক রপ্তানিনির্ভরতা না রেখে রপ্তানি পণ্যের বহুমুখিতা ও বৈচিত্র্য বাড়ানো এবং বিকল্প বাজার খুঁজে বের করা, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য কূটনীতি জোরদার করে সে দেশের বাজারে বাংলাদেশি পণ্যের রপ্তানি অব্যাহত রাখা, ৯০ দিনের স্থগিতাদেশের মেয়াদ শেষে রপ্তানি পণ্য যুক্তরাষ্ট্রে পৌঁছালে বা জাহাজীকরণ হলে রপ্তানির বিপরীতে স্থগিতকৃত শুল্ক সুবিধা প্রযোজ্য হবে কি না তা স্পষ্ট করা অন্যতম।
ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির আয়োজনে ‘যুক্তরাষ্ট্রের উচ্চ শুল্কহারের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় বাংলাদেশ সক্ষম হবে’ শীর্ষক ছায়া সংসদে মানারাত ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির বিতার্কিকদের পরাজিত করে বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস অ্যান্ড টেকনোলজির বিতার্কিকরা বিজয়ী হন। প্রতিযোগিতায় বিচারক ছিলেন অধ্যাপক আবু মুহাম্মদ রইস, সুলতান আহমেদ ভূঁইয়া এফসিএ, সাংবাদিক দৌলত আক্তার মালা, ড. এস এম মোর্শেদ এবং টিভি অনুষ্ঠান নির্মাতা কে এম মাহমুদ হাসান।

ঢাবি সাদা দল
ফ্যাসিবাদের মুখোশে আগুন পরিকল্পিত
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) চারুকলা অনুষদে ফ্যাসিবাদের মুখাকৃতি ও শান্তির পায়রা মোটিফে আগুন দেওয়ার ঘটনায় নিন্দা ও প্রতিবাদ এবং বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ জানিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিএনপি-জামায়াতপন্থী শিক্ষকদের সংগঠন সাদা দল।
একই সঙ্গে অবিলম্বে অগ্নিকাণ্ডে জড়িতদের চিহ্নিত করে আইনের মাধ্যমে সর্বোচ্চ শাস্তির দাবি জানায় সংগঠনটি।
গতকাল শনিবার ঢাবি সাদা দলের আহবায়ক অধ্যাপক মো. মোর্শেদ হাসান খান, যুগ্ম আহবায়ক অধ্যাপক আব্দুস সালাম ও অধ্যাপক মো. আবুল কালাম সরকার স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে এই দাবি জানানো হয়।
বিবৃতিতে নেতারা বলেন, বাঙালি জাতির ঐতিহ্যের স্মরক পহেলা বৈশাখ।
নেতারা অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ঢাবি ক্যাম্পাসের নিরাপত্তাব্যবস্থা নিয়ে প্রশ্ন তুলে বলেন, পহেলা বৈশাখের আনন্দ শোভাযাত্রা পালনের লক্ষ্যে তৈরি প্রতিকৃতিসহ অন্যান্য জিনিসের নিরাপত্তার জন্য পর্যাপ্ত নিরাপত্তাব্যবস্থা ছিল না। ফ্যাসিস্ট স্বৈরাচার সরকারের পতনের পর চারুকলার শোভাযাত্রা নিয়ে আগে থেকেই সতর্ক থাকা অত্যাবশ্যক ছিল। অতএব পুরো ঘটনা খতিয়ে দেখা দরকার বলে মনে করি।
ঢাবি সাদা দলের নেতারা অবিলম্বে চারুকলায় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় সুষ্ঠু তদন্ত করে দোষীদের চিহ্নিত করে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান।

আদানির বিদ্যুৎ কেন্দ্রের একটি ইউনিট ১৭ ঘণ্টা পর চালু
নিজস্ব প্রতিবেদক

ভারতের আদানি গ্রুপের কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায় গত শুক্রবার রাতে। এর ১৭ ঘণ্টা পর গতকাল শনিবার সন্ধ্যা ৬টা ১৫ মিনিটে পুনরায় একটি ইউনিট থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ শুরু হয়। সন্ধ্যা ৭টার দিকে জাতীয় গ্রিডে বিদ্যুৎ সরবরাহের পরিমাণ ছিল ৪৬ মেগাওয়াট। ক্রমান্বয়ে এক ইউনিট থেকে বিদ্যুতের পরিমাণ বাড়বে।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, কেন্দ্রটির দুটি ইউনিট থেকে গড়ে এক হাজার ৪০০ মেগাওয়াটের বেশি বিদ্যুৎ পাওয়া যেত। কারিগরি ত্রুটির কারণে প্রথম ইউনিট থেকে উৎপাদন বন্ধ হয়েছে গত মঙ্গলবার। আর দ্বিতীয় ইউনিট বন্ধ হয় গত শুক্রবার রাত ১টার দিকে।
জানতে চাইলে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের সদস্য (উৎপাদন) মো. জহুরুল ইসলাম কালের কণ্ঠকে বলেন, ত্রুটি দেখা দেওয়ায় আদানি বিদ্যুৎকেন্দ্রের দুটি ইউনিট থেকেই বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়। ঘাটতি পূরণে গ্যাস ও তেলভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদন বাড়ানো হয়।
আদানির বিদ্যুৎকেন্দ্রে ব্যবহৃত কয়লার দাম নিয়ে বিরোধ আছে। এটি নিয়ে আদানি ও বিপিডিবির মধ্যে আলোচনা চলছে। বকেয়া শোধ নিয়েও বিভিন্ন সময় তাগাদা দিয়েছে আদানি।
পিজিসিবি ও বিপিডিবি সূত্র বলছে, গতকাল শনিবার ছুটির দিন থাকায় বিদ্যুতের চাহিদা অন্য দিনের চেয়ে কিছুটা কম। গতকাল বিকেল ৩টা পর্যন্ত সর্বোচ্চ চাহিদা উঠেছে ১৩ হাজার ৫৫২ মেগাওয়াট। এ সময় ৪২৮ মেগাওয়াট লোডশেডিং করা হয়েছে। আদানির বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে সরবরাহ শুরু না হলে আজ রবিবার লোডশেডিং আরো বৃদ্ধি পেত। ঘাটতি মেটাতে পেট্রোবাংলার কাছে বাড়তি গ্যাস সরবরাহও চেয়েছিল বিপিডিবি।
আদানির কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রটি এক হাজার ৬০০ মেগাওয়াট ক্ষমতার। ৮০০ মেগাওয়াট সক্ষমতার দুটি ইউনিট আছে এই কেন্দ্রে। এতে উৎপাদিত বিদ্যুৎ ২৫ বছর ধরে কিনবে বাংলাদেশ। প্রথম ইউনিট থেকে বাণিজ্যিকভাবে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু হয় ২০২৩ সালের এপ্রিলে। দ্বিতীয় ইউনিট থেকে বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরু হয় একই বছরের জুনে। ২০১৭ সালে আদানির সঙ্গে বিদ্যুৎ কেনার চুক্তি করে বিপিডিবি। আদানির সঙ্গে বিপিডিবির চুক্তি পর্যালোচনায় অন্তর্বর্তী সরকারের গঠিত একটি কমিটি কাজ করছে।

ইসরায়েল গাজায় এবার পানি-অস্ত্র প্রয়োগ করছে
কালের কণ্ঠ ডেস্ক

ধরার বুকে ‘নির্মিত জাহান্নাম’ হিসেবে পরিচিত গাজার মানবিক পরিস্থিতির অবনতি বিশ্বসম্প্রদায়কে ভাবতে বাধ্য করছে। দখলদার ইসরায়েলের বেপরোয়া বিমান হামলা ও ভয়াবহ স্থল হামলায় অবরুদ্ধ গাজাবাসী এখন শুধু খাবারের অভাবে ধুঁকে ধুঁকে মরছে না; অনাহারি গাজাবাসী এক ঢোক সুপেয় জলও এখন পাচ্ছে না।
গাজায় বিশুদ্ধ পানির সবচেয়ে বড় উৎসটি ছিল ইসরায়েলি একটি কম্পানির। গত শুক্রবার কম্পানিটি পানির পাইপলাইন বন্ধ করে দিয়েছে।
ইসরায়েল গত সপ্তাহেই গাজার শিজাইয়া এলাকার সব অধিবাসীকে এলাকা ছেড়ে চলে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছে।
মিউনিসিপ্যালিটির একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘গাজার পরিস্থিতি অত্যন্ত কঠিন এবং দিন দিন তা অবনতির দিকেই যাচ্ছে। পানি তো দৈনন্দিন নানা কাজে লাগে। কিন্তু পানি কোথাও মিলছে না। গাজা এখন বিশ্বের এক তৃষ্ণার্ত নগরী। আগামী দিনগুলোতে কী ঘটতে যাচ্ছে, তা আমরা কেউ জানি না।’
গাজার লোকসংখ্যা ২৩ লাখ। কিন্তু যুদ্ধের কারণে বেশির ভাগ অধিবাসী এখন বাস্তুচ্যুত। প্রত্যন্ত এলাকায় এখনো দু-একটি কূপে পানি রয়েছে। কিন্তু সেই কূপে পানির বিশুদ্ধতার কোনোই গ্যারান্টি নেই।
গত শুক্রবার রেড ক্রসের প্রেসিডেন্ট মিরজানা স্পোলজারিক বলেন, গাজার মানবিক পরিস্থিতি ‘পৃথিবীর দোজখে’ পরিণত হয়েছে। আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে অস্থায়ী হাসপাতালগুলো বন্ধ করে দিতে বাধ্য হবে। কারণ এরপর গাজাবাসীর রসদ ফুরিয়ে যাবে বলে জানিয়েছে আন্তর্জাতিক সাহায্যকারী সংস্থা রেড ক্রস।
তিনি বলেন, ‘আমরা গাজায় এখন নিজেদের এমন পরিস্থিতিতে দেখছি। যেটিকে আমাকে বলতে হবে পৃথিবীর দোজখ। মানুষ বিভিন্ন জায়গায় বিদ্যুৎ, পানি, খাবার পায় না।’
গত ২ মার্চ গাজায় পূর্ণ অবরোধ আরোপ করে দখলদার ইসরায়েল। ওই সময় দখলদারদের সঙ্গে ফিলিস্তিনি সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাসের যুদ্ধবিরতি ভেস্তে যাওয়ার শঙ্কায় পড়ে। ওই দিন থেকে গাজায় যুদ্ধবিরতির দ্বিতীয় ধাপ শুরু হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ইসরাইল চুক্তি ভঙ্গ করে। এর কয়েক দিন পর ১৮ মার্চ রাতে গাজায় হঠাৎ তীব্র বিমান হামলা চালায় তারা। এতে এক রাতে চার শরও বেশি ফিলিস্তিনির মৃত্যু হয়।
জাতিসংঘের মতে, ইসরায়েলের বর্বর আক্রমণের কারণে গাজার প্রায় ৮৫ শতাংশ ফিলিস্তিনি বাস্তুচ্যুত হয়েছে। এ ছাড়া অবরুদ্ধ এই ভূখণ্ডের ৬০ শতাংশ অবকাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস হয়ে গেছে। উল্লেখ্য, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ভোরে গাজার শাসকগোষ্ঠী হামাসের নেতৃত্বাধীন হামলায় ইসরায়েলে অন্তত এক হাজার ১৩৯ জন নিহত হয় এবং দুই শর বেশি মানুষকে বন্দি করে গাজায় নিয়ে যাওয়া হয়। এই ঘটনার কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে গাজায় ভয়াবহ হামলা শুরু করে ইসরাইলি বাহিনী। সূত্র : এএফপি, রয়টার্স