ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) আওতায় ৫০টি থানা রয়েছে। এর মধ্যে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন চলাকালে গত ৫ ও ৬ আগস্ট ২১টি থানায় ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়। এর মধ্যে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে ১৩টি থানা। ফলে থানায় থাকা অনেক নথি ও আলামত ধ্বংস হয়ে গেছে।
ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) আওতায় ৫০টি থানা রয়েছে। এর মধ্যে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন চলাকালে গত ৫ ও ৬ আগস্ট ২১টি থানায় ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়। এর মধ্যে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে ১৩টি থানা। ফলে থানায় থাকা অনেক নথি ও আলামত ধ্বংস হয়ে গেছে।
ডিএমপি সূত্র জানায়, হামলা ও অগ্নিকাণ্ডের শিকার ২১ থানার মধ্যে সবচেয়ে বেশি ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে যাত্রাবাড়ী, ভাটারা, মোহাম্মদপুর, মিরপুর, বাড্ডা, শ্যামপুর, খিলগাঁও, আদাবর, পল্টন, শেরেবাংলানগর, তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল, ওয়ারী ও খিলক্ষেত থানার। অন্য থানাগুলোরও যে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে তা-ও এখনো পূরণ করা যায়নি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, অগ্নিসংযোগ করায় থানার মামলা ও নথিপত্রের পাশাপাশি কম্পিউটারও পুড়ে যায়।
ভাটারা থানার ওসি মো. মাজহারুল ইসলাম বলেন, ‘থানায় রাখা সব নথিপত্র পুড়ে গেছে। এতে যে ক্ষতি হয়েছে তা আর পূরণ হওয়ার নয়।
তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল, খিলক্ষেত ও খিলগাঁও থানার ওসিরা জানান, এই থানাগুলোতে লুট হওয়া, পুড়ে যাওয়া কিংবা ক্ষতিগ্রস্ত মামলার নথিপত্রের হিসাব করা হচ্ছে। ডিএমপি সদর দপ্তরের ক্রিমিনাল ডাটাবেইস ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম (সিডিএমএস) থেকেও এসব তথ্য নেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া আদালত থেকেও এ বিষয়ে সহযোগিতা নেওয়া হচ্ছে।
ডিএমপি সদর দপ্তর সূত্র জানায়, পুলিশ বাহিনীর কাজ আবারও স্বাভাবিক করার চেষ্টা চলছে। তবে এখনো ডিউটি অফিসারসহ থানায় দায়িত্বরতরা হাতে লিখে বিভিন্ন অভিযোগ নিচ্ছেন। এখনো ইন্টারনেট সার্ভার ঠিক করা যায়নি বলে কিছু ক্ষেত্রে সেবা দিতে দেরি হচ্ছে, যার নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে সার্বিক আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির ওপর।
ডিএমপি সূত্র আরো জানায়, যাত্রাবাড়ী থানার মামলার নথিপত্র সংরক্ষণ করা কম্পিউটার পুড়ে যাওয়ায় ওই সব মামলার নথিপত্রের তালিকা এখনো তৈরি করা যায়নি। এ ছাড়া বাড্ডা, আদাবর, ওয়ারী এবং শ্যামপুর ও শেরেবাংলানগর থানার এক হাজার ১০০টি মামলার আলামত পুড়ে গেছে।
মিরপুর মডেল থানা পুলিশ জানিয়েছে, থানায় ৬৬০টি মামলার নথিপত্র এবং মালখানায় থাকা বিভিন্ন মামলার ২৩০টি আলামত পুড়ে গেছে। থানা ভবনে থাকা নিবন্ধন (রেজিস্টার) খাতাও পুড়ে গেছে। বিভিন্ন মামলার কেস ডকেট বা সিডি (সব নথিপত্র) পুড়ে গেছে।
এ ছাড়া মোহাম্মদপুর থানার ৮৯টি মামলার নথি পুড়ে গেছে। তবে কতগুলো মামলার আলামত ছিল, তা জানতে পারেনি পুলিশ। আগুনে বাড্ডা থানায় ১৩৭টি মামলার নথি ও ১৬০টি মামলার আলামত পুড়ে গেছে। শেরেবাংলানগর থানায় মামলার সব নথিপত্র এবং দেড় শর মতো আলামত পুড়ে গেছে। ওয়ারী থানার ৭৪টি মামলার নথি এবং ২১৫টি মামলার আলামত পুড়ে গেছে ও লুট হয়েছে। শ্যামপুর থানায় পুড়ে গেছে বা লুট হয়েছে ২৩৯টি মামলার আলামত।
ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স সূত্র জানায়, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সময় গত জুলাই মাসে সংঘাত-সহিংসতায় সারা দেশে দেড় শতাধিক অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। এর মধ্যে ঢাকা অঞ্চলে (রাজধানীসহ ঢাকা জেলা) ১০৫টি অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে, যার বেশির ভাগই ঘটেছে পুলিশ বাহিনীর স্থাপনা ঘিরে।
ফায়ার সার্ভিস সূত্র জানায়, এসব অগ্নিসংযোগের ঘটনার মধ্যে ১৬ জুলাই দুটি, ১৭ জুলাই ১০টি, ১৮ জুলাই ২৫টি, ১৯ জুলাই ৪১টি এবং ২০ জুলাই ২৩টি অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। এরপর ২১ জুলাই ৯টি এবং ২২ জুলাই তিনটি অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে।
ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের মুখপাত্র শাহজাহান শিকদার কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘সহিংসতায় বেশির ভাগ অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে পুলিশ বাহিনীর স্থাপনাকে কেন্দ্র করে।’
বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের মধ্যে গত ৫ আগস্ট সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে যাওয়ার পর বিক্ষুব্ধ জনতার সবচেয়ে বেশি রোষানলে পড়েন পুলিশ সদস্যরা।
ডিএমপি কমিশনার মো. মাইনুল হাসান বলেন, ‘যেসব মামলার নথিপত্র পুড়ে গেছে সেগুলো ডিএমপির সিডিএমএস থেকে নিয়ে তদন্ত করা হবে। আর যেসব আলামত পুড়ে গেছে বা লুট হয়েছে, সে বিষয়ে আদালতের সঙ্গে কথা বলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সিডিএমএসে ডিএমপির ৫০ থানার মামলাগুলোর তথ্য সংরক্ষিত আছে। তবে ডিএমপি সদর দপ্তরে মালখানা না থাকায় সেখানে থানাগুলোর আলামত রাখার কোনো ব্যবস্থা নেই।’
গাজায় ইসরায়েলি গণহত্যা ও হামলা বন্ধের দাবিতে সোমবার সারা দেশে নজিরবিহীন বিক্ষোভ করে বাংলাদেশের মানুষ। বিক্ষোভের সময় কয়েকটি শহরে বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা ও লুটপাট চালায় দুবৃত্তরা।
এসব ঘটনায় দ্রুত পদক্ষেপ নিয়েছে পুলিশ। ইতিমধ্যে ৬০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে মঙ্গলবার রাতে সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।
এক বিবৃতিতে হামলা লুটপাটের নিন্দা জানিয়ে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়, এসব ঘটনায় এ পর্যন্ত ৪ টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। গ্রেপ্তার করা হয়েছে ৬০ জনকে। এছাড়া, হামলায় জড়িত অন্যদেরও গ্রেপ্তারে অভিযান পরিচালনা করছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। আরো মামলা দায়ের প্রক্রিয়াধিন।
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, এই হামলা এবং ভাংচুর জননিরাপত্তা এবং আইনের শাসনের জন্য হুমকি স্বরুপ। যারা এই হামলা চালিয়েছে তাদের সবাইকে সনাক্ত করতে ঘটনাস্থলের ছবি ও ভিডিও ফুটেজ পর্যালোচনা করা হচ্ছে। যতক্ষণ পর্যন্ত দায়ী ব্যক্তিদের গ্রেপ্তার করা না যাবে ততক্ষণ পর্যন্ত অভিযান অব্যাহত থাকবে।
বিবৃতিতে তদন্তকাজে সহায়তার জন্য জনসাধারণকে তথ্য দিতে বলা হয়েছে।
দেশকে দুর্নীতিমুক্ত করতে সিঙ্গাপুর মডেল অনুসরণ করা প্রয়োজন বলে মনে করেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী।
মঙ্গলবার (৮ এপ্রিল) স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে উপদেষ্টার সঙ্গে সিঙ্গাপুরের অনাবাসিক রাষ্ট্রদূত ডেরেক লোহ সৌজন্য সাক্ষাৎ করতে এলে তিনি এ মন্তব্য করেন।
উপদেষ্টা বলেন, সিঙ্গাপুর একটি উন্নত ও দুর্নীতিমুক্ত দেশ, যেখানে সব ধরনের আধুনিক সুযোগ-সুবিধা রয়েছে। তারা গত কয়েক দশকে তথ্য-প্রযুক্তিসহ অবকাঠামো উন্নয়নে ঈর্ষণীয় অগ্রগতি সাধন করেছে।
তিনি বলেন, ‘দুর্নীতিমুক্ত ও উন্নত সেবার কারণে দেশটি বিশ্ব পর্যটকদের অন্যতম প্রধান গন্তব্যে পরিণত হয়েছে। সীমিত ভূমির কিভাবে সর্বোচ্চ ব্যবহার করা যায় তার উদাহরণ সিঙ্গাপুর। দুর্নীতিমুক্ত সেবা প্রদানের রোল মডেল দেশটি। তাই বাংলাদেশকে দুর্নীতিমুক্ত করতে সিঙ্গাপুর মডেল অনুসরণ করা প্রয়োজন।
বৈঠকে দুই দেশের মধ্যে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি, নিরাপত্তা ইস্যু, জনশক্তি রপ্তানি, অগ্নিদুর্ঘটনার তদন্তসহ বিভিন্ন বিষয়ে পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মীদের উন্নত প্রশিক্ষণ, সিঙ্গাপুরে পালিয়ে যাওয়া অপরাধীদের ফেরত প্রদান, অভিবাসীসহ মানবপাচার রোধ, মানবাধিকার রক্ষা, বিমানবন্দরে তৃতীয় টার্মিনালে এ্যাপিস (অ্যাডভান্স প্যাসেঞ্জার ইনফরমেশন সিস্টেম) চালুর সহযোগিতাসহ পারস্পরিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হয়।
রাষ্ট্রদূতকে স্বাগত জানিয়ে উপদেষ্টা বলেন, সিঙ্গাপুর বাংলাদেশের অন্যতম ঘনিষ্ঠ বন্ধু। দেশটিতে প্রচুর বাংলাদেশি কর্মী কাজ করছে, যা সিঙ্গাপুরের সার্বিক উন্নয়নে অবদান রেখে চলেছে।
তিনি এ সময় রাষ্ট্রদূতকে বাংলাদেশ থেকে আরো বেশি হারে জনশক্তি আমদানির আহ্বান জানান।
বিষয়টি বিবেচনার আশ্বাস দিয়ে রাষ্ট্রদূত বলেন, সিঙ্গাপুরের প্রায় ৫ শতাংশ অধিবাসী বাংলাদেশের। তিনি বলেন, দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক ও বন্ধুত্ব গভীর করতে জনগণের মধ্যে আন্তঃযোগাযোগ বৃদ্ধি অপরিহার্য, যা পারস্পরিক ভরসা ও বিশ্বাসকে আরো সুদৃঢ় করবে।
উপদেষ্টা বলেন, ‘বাংলাদেশের ফায়ার সার্ভিস কর্মী তথা ফায়ার ফাইটাররা অগ্নিনির্বাপণ ও অগ্নি দুর্ঘটনা রোধে অত্যন্ত দক্ষ। কিন্তু আমাদের বড় ধরনের অগ্নি দুর্ঘটনার তদন্তের ক্ষেত্রে সামর্থ্যের কিছুটা ঘাটতি রয়েছে। সে ক্ষেত্রে সিঙ্গাপুরের কারিগরি সহযোগিতা আমাদের প্রয়োজন।
এ বিষয়ে সিঙ্গাপুরের সিভিল ডিফেন্স ডিপার্টমেন্টের সঙ্গে আলোচনা করবেন বলে জানান রাষ্ট্রদূত।
উপদেষ্টা বলেন, ‘বাংলাদেশ থেকে অনেক অপরাধী পালিয়ে গিয়ে সিঙ্গাপুরে আশ্রয় নিয়েছে। তাদের দেশে ফিরিয়ে এনে বিচারের আওতায় আনতে দেশটির সহযোগিতা প্রয়োজন। এ বিষয়ে দুই দেশের মধ্যে পারস্পরিক আইনি সহায়তা বিষয়ক চুক্তি বা লিগ্যাল ইনস্ট্রুমেন্ট স্বাক্ষর হতে পারে।’
রাষ্ট্রদূত এ বিষয়ে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে সিঙ্গাপুরে চিঠি দেয়ার প্রস্তাব করেন।
বৈঠকে ঢাকায় সিঙ্গাপুর দূতাবাসের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স মিচেল লি, সিঙ্গাপুর পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দক্ষিণ এশিয়া ও সাব-সাহারান আফ্রিকা ডিরেক্টরেটের কান্ট্রি অফিসার রাহুল আইজ্যাক ইত্তি আব্রাহামসহ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার আনুলিয়া ইউনিয়নের বিছট গ্রামে রিং বাঁধ নির্মাণে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে সেনাবাহিনী।
আন্তঃবাহিনীর জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) মঙ্গলবার (৮ এপ্রিল) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলেছে, সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার আনুলিয়া ইউনিয়নের বিছট গ্রামে রিং বাঁধ নির্মাণে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ৫৫ পদাতিক ডিভিশনের সেনা সদস্যরা পানি উন্নয়ন বোর্ডের সঙ্গে সমন্বয় করে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন।
আইএসপিআর জানায়, জিওসি ৫৫ পদাতিক ডিভিশন ও যশোর এরিয়া মেজর জেনারেল জে এম ইমদাদুল ইসলাম ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করেন। পরবর্তীতে তিনি সেনাবাহিনীর পক্ষ হতে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন দুর্গম ও প্রত্যন্ত অঞ্চলের পানিবন্দি মানুষের মাঝে ত্রাণ বিতরণ করেন এবং এই দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে থাকার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন।
এ সময় কমান্ডার ১০৫ পদাতিক বিগ্রেড, জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার এবং পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
উল্লেখ্য, গত ৩১ মার্চ উল্লিখিত বেড়িবাঁধটির একটি অংশ ভেঙে প্রায় ১৫০ ফুট জায়গা খোলপেটুয়া নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায় এবং বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়।