নির্বাচনে অনিশ্চয়তা বাড়াবে জটিলতা

শেয়ার
নির্বাচনে অনিশ্চয়তা বাড়াবে জটিলতা
প্রতীকী ছবি

মহান স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে ২৫ মার্চ জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। সেই ভাষণে তিনি আবারও বলেন, ডিসেম্বর থেকে জুনের মধ্যে জাতীয় সংসদ নির্বাচন হবে। এটি কোনো নতুন কথা নয়। এর আগেও প্রধান উপদেষ্টা বিভিন্ন ফোরামে ও সাক্ষাৎকারে বারবার বলেছিলেন, তিনি ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠান করতে চান।

এই নির্বাচন পেছাবে না। অনেকে আশা করেছিলেন যে, ২৬ মার্চ মহান স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে জাতির উদ্দেশে ভাষণে তিনি নির্বাচনের একটি সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ ঘোষণা করবেন। কিন্তু সেটি করা হয়নি। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এ নিয়ে হতাশা প্রকাশ করেছেন।
বাস্তবতা হলো এখন বাংলাদেশে যে রাজনৈতিক এবং সামাজিক পরিস্থিতি তাতে দ্রুত একটি নির্বাচনের কোনো বিকল্প নেই। নির্বাচন যত পেছাবে, তত সংঘাত, সহিংসতা, জটিলতা বাড়বে। দেশে অস্থিরতা দেখা দেবে এবং জনমনে এক ধরনের নেতিবাচক মনোভাব প্রতিষ্ঠিত হবে। নির্বাচন পেছানো মানেই ষড়যন্ত্রের ডালপালা বিস্তার।
এরকম পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য দ্রুত জাতীয় সংসদ নির্বাচনের কোনো বিকল্প নেই। আট মাস ধরে অন্তর্বর্তী সরকার নানা রকম জটিল এবং কঠিন পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে রীতিমতো হিমশিম খাচ্ছে। সময় যত যাচ্ছে পরিস্থিতি তত জটিল থেকে জটিলতর হচ্ছে। এই যেমন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির কথাই ধরা যাক। গত সাত মাসে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতির জন্য যতবার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে কিছুটা উন্নতি হওয়ার পর আবার একটি আচমকা ঘটনা ঘটে পরিস্থিতি আগের অবস্থায় ফিরে গেছে।
আইনশৃঙ্খলা নিয়ে কোনো সুখবর নেই। কোনো অবস্থাতেই আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির লাগাম টানা সম্ভব হয়নি। এর একটি বড় কারণ পুলিশ বাহিনী এখন পর্যন্ত কার্যকর হয়নি। তারা পূর্ণ আস্থা এবং মনোবল নিয়ে মাঠে কাজ করতে পারেনি। অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষে তাদের আস্থায় নিয়ে মাঠে নামানো এখন প্রায় অসম্ভব। কারণ একটি অন্তর্বর্তী সরকার সবসময় ক্ষণস্থায়ী। এটির নির্দিষ্ট কোনো সময়সীমা নেই। কিন্তু যদি একটি নির্বাচিত সরকার দায়িত্ব গ্রহণ করে তাহলে তাদের একটি সুনির্দিষ্ট রাজনৈতিক দায়িত্ব পালনের সময়সীমা থাকবে। সবাই জানবে তাদের নীতি এবং পদ্ধতি কী হবে। সে অনুযায়ী পুলিশ বাহিনী বা অন্য সবাই কাজ করবে। এ কারণেই আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতির জন্য প্রয়োজন একটি নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি।

আমরা দেখেছি, ৫ আগস্টের পর দেশের প্রচুর থানা লুট হয়েছে। অস্ত্রশস্ত্র ছিনিয়ে নিয়ে গেছে কিছু দুর্বৃত্ত। এসব অস্ত্র উদ্ধারের ক্ষেত্রে তেমন কোনো কার্যকর ব্যবস্থা এখন পর্যন্ত নেওয়া হয়নি। এ ক্ষেত্রে অন্তর্বর্তী সরকার কতটুকু সফল হবে, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। কারণ, গত সাড়ে সাত মাসে অস্ত্র উদ্ধারে কোনো তৎপরতা দেখা যায়নি, বরং স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বারবার এনিয়ে কথা বলেছেন। আবার কদিন পরেই অস্ত্র উদ্ধারের আয়োজন ঝিমিয়ে গেছে। বিপুল অবৈধ অস্ত্র দেশে। এই অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারের ক্ষেত্রে অন্তর্বর্তী সরকারের সফলতা প্রশ্নবিদ্ধ। অনেক চিহ্নিত সন্ত্রাসী জেল থেকে ছাড়া পেয়ে এখন সন্ত্রাসী তৎপরতায় লিপ্ত। আমরা দেখছি যে, গত সাড়ে সাত মাসে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে বিভক্তি এবং বিভাজন বেড়েই চলেছে। বিএনপির সঙ্গে জামায়াতের রাজনৈতিক দূরত্ব বেড়েছে। সদ্য প্রতিষ্ঠিত জাতীয় নাগরিক পার্টির সঙ্গে বিএনপির আদর্শিক দ্বন্দ্ব প্রকাশ্য। তারা কেউ কাউকে ছেড়ে কথা বলছে না। এর চেয়েও আতঙ্কের বিষয় হলো বিভিন্ন স্থানে বিএনপির সঙ্গে জাতীয় নাগরিক পার্টির সহিংসতার ঘটনা ঘটছে। সামনের দিনগুলোতে এই সহিংসতা বাড়বে। সে ধরনের সহিংসতা যদি হয়, তাহলে বাংলাদেশের রাজনীতি দীর্ঘমেয়াদি একটি সংকটের দিকে যাবে। তাই সংকট মোকাবিলার জন্য দ্রুত নির্বাচন প্রয়োজন। সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে, অন্তর্বর্তী সরকার যে সংস্কার প্রস্তাবগুলো দিয়েছে সেই সংস্কার প্রস্তাব রাজনৈতিক দলগুলোকে দেওয়া হয়েছে। রাজনৈতিক দলগুলো এটা নিয়ে আলোচনা করছে। ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, যেসব বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলো একমত হবে সেটুকু নিয়েই তারা এগোতে চান। তাই যদি হয়, তাহলে এসব সংস্কার প্রস্তাবে রাজনৈতিক দলগুলোর পক্ষ থেকে যে মতামত এসেছে, সেই মতামতের ভিত্তিতে এখন নির্বাচনের রোডম্যাপ চূড়ান্ত করা উচিত। কারণ সব জায়গায় একটা অনিশ্চয়তা এবং আতঙ্ক বিরাজ করছে। ব্যবসা-বাণিজ্যে নতুন বিনিয়োগ নেই। বাংলাদেশের অর্থনীতি এখন পুরোপুরি রেমিট্যান্সনির্ভর। বিদেশি বিনিয়োগ উদ্বেগজনকভাবে কম। আমরা যতই তথ্য-উপাত্ত দিই না কেন, বেসরকারি খাতের উদ্যোক্তারা বিনিয়োগে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছেন। এরকম একটি অবস্থার কারণে সারা দেশের কর্মকাণ্ড যেন স্থবির হয়ে গেছে। এ কথা ঠিক যে, রমজান মাসে অন্তর্বর্তী সরকার পণ্যমূল্য স্থিতিশীল রাখতে সক্ষম হয়েছে। অনেক পণ্যমূল্য গতবারের তুলনায় কম ছিল। কিন্তু এটি হলো একটি আপৎকালীন ব্যবস্থা। বিভিন্ন পণ্যের ওপর শুল্ক কর কমিয়ে কৃত্রিমভাবে দাম কমানোর চেষ্টা করা হয়েছে। এটি ভালো উদ্যোগ, কোনো সন্দেহ নেই। কিন্তু যেভাবে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে তা কোনো স্থায়ী সমাধান হতে পারে না। আর এ কারণেই এ সরকারের যে কর্মপরিধি এবং কার্যক্রম সেটি নিয়ে মানুষের মধ্যে আশা-নিরাশার দোলাচল তৈরি হয়েছে। তাছাড়া জুলাই বিপ্লবের বেশ কয়েকটি নেতিবাচক দিক প্রকাশ হয়েছে। প্রথমত, জুলাই বিপ্লবে যারা নেতৃত্ব দিয়েছিলেন, সেই ছাত্রদের ব্যাপারে অনেক রকম কথা হচ্ছে। বিশেষ করে নতুন আত্মপ্রকাশ করা জাতীয় নাগরিক পার্টির অর্থের উৎস এবং তাদের নেতা-কর্মীদের কার্যক্রম নিয়ে জনমনে নানা রকম প্রশ্ন উঠেছে। নির্বাচনের সময় যত পেছাবে, তত এসব বিষয় প্রকাশ হবে। জাতীয় নাগরিক পার্টি মূলত বিপ্লবে নেতৃত্ব দেওয়া ছাত্রদের উদ্যোগে গঠিত। আর এ কারণেই হঠাৎ করে তাদের আর্থিক স্ফীতি, তাদের জীবনযাত্রার পরিবর্তন ইত্যাদি মানুষের চোখে দৃষ্টিকটুভাবে লাগছে। জাতীয় নাগরিক পার্টির একজন নেতা পঞ্চগড় গেছেন শতাধিক গাড়ির বহর নিয়ে। খোদ বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের চোখ এতে কপালে উঠেছে। হঠাৎ করে দৃষ্টিকুটুভাবে এ ধরনের শোডাউন রাজনীতির মাঠে বিতর্ক সৃষ্টি করেছে। শুধু একজনের ভুলের কারণে পুরো বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আদর্শ এবং সততা নিয়ে প্রশ্ন উত্থাপিত হচ্ছে। নায়ক থেকে তারা ভিলেনে রূপান্তরিত হচ্ছেন। কাজেই দ্রুত নির্বাচন দিয়ে এই বিপ্লবকে সুরক্ষা করা সবার দায়িত্ব।

দ্বিতীয়ত, এই আন্দোলনের মাধ্যমে একটি স্বৈরাচারী সরকারের পতন ঘটানো হয়েছিল। কিন্তু যতই দিন যাচ্ছে ততই সাবেক স্বৈরাচার আবার নিজেদের সংগঠিত করতে সক্ষম হচ্ছে। তারা জনগণের মধ্যে নানা রকম বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে। তৈরি হচ্ছে নানা রকম অপপ্রচার এবং বিভ্রান্তি। দিন যত বাড়বে ততই তারা পুনর্বাসিত হওয়ার সুযোগ পাবে। আমরা লক্ষ্য করেছি যে, সাম্প্রতিক সময়ে জাতীয় নাগরিক পার্টি যে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধকরণের দাবিতে আন্দোলন শুরু করেছিল, শুরুতেই সেই আন্দোলন মুখথুবড়ে পড়েছে। অধিকাংশ মানুষ এখন এসবের মধ্যে যেতে চায় না। তারা একটা স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে চায়। স্বাভাবিক জীবনে ফেরার একমাত্র পথ একটি নির্বাচিত সরকার।

তৃতীয়ত, এই সাড়ে সাত মাসে বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীকে নিয়ে শুরু হয়েছে নোংরা খেলা। একটি মহল আমাদের জাতীয় ঐক্য ও সার্বভৌমত্বের প্রতীক সেনাবাহিনীকে প্রশ্নবিদ্ধ করার চেষ্টায় লিপ্ত। এই ষড়যন্ত্র দেশে বড় সংকট সৃষ্টি করবে। সেনাবাহিনী দীর্ঘদিন ধরে ক্যান্টনমেন্টের বাইরে ডিউটি করছে। এটা ভালো লক্ষণ নয়। সশস্ত্র বাহিনীকে বিতর্কমুক্ত করতে প্রয়োজন দ্রুত নির্বাচন। নির্বাচন করে সশস্ত্র বাহিনীক ক্যান্টনমেন্টে ফিরিয়ে নিলেই এই বিতর্কের অবসান হবে।

আমাদের একটি বিষয় মনে রাখতে হবে। অন্তর্বর্তী সরকার একটি আপৎকালীন ব্যবস্থা। একটি সাময়িক ব্যবস্থাপত্র। এটি কোনো স্থায়ী সমাধান নয়। স্থায়ী সমাধান হলো একটি অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচন। সেই নির্বাচনের মাধ্যমে একটি নির্বাচিত সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করা। একটি অস্থায়ী ব্যবস্থা দিয়ে দীর্ঘদিন একটি পরিবার, একটি সমাজ বা রাষ্ট্র চলতে পারে না। নানারকম ষড়যন্ত্র করার সুযোগ সৃষ্টি হয়। যার ইঙ্গিত আমরা দেখতে পাচ্ছি। একদিকে যেমন দেশে মানুষ অন্তর্বর্তী সরকারের ওপর পূর্ণাঙ্গ আস্থা রাখতে পারে না, অন্যদিকে বিদেশিরাও একটা স্থায়ী কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করতে পারে না। দীর্ঘমেয়াদি কোনো চুক্তি হয় না। এ কারণেই এখন আমাদের সামনে একটাই পথ খোলা। তা হলো দ্রুত নির্বাচন। একটি অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে। নির্বাচনে যারাই জিতুক না কেন তারা জুলাই বিপ্লবের আদর্শ সামনে রাখবেন। সেই অনুযায়ী তারা কাজ করবেন। রাষ্ট্র সংস্কারের যে অঙ্গীকার হয়েছিল, সেই অঙ্গীকারগুলো তারা যথাযথভাবে বাস্তবায়নে কাজ করবে। সবচেয়ে বড় কথা হলো- যারা জুলাই-আগস্টে গণহত্যার সঙ্গে জড়িত ছিল, বিভিন্ন সময়ে লুণ্ঠন, অপরাধ করেছেন, তাদের দ্রুত বিচার করার ক্ষেত্রে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠিত করতে হবে। কিন্তু আমরা যদি নির্বাচনকে বিলম্বিত করি তাহলে রাজনৈতিক অঙ্গনে যেমন বিভক্তি দেখা দেবে, তেমনি জনগণের মধ্যে দেখা দেবে হতাশা। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটবে। ব্যবসা-বাণিজ্য বন্ধ হয়ে যাবে। সবকিছু মিলিয়ে বাংলাদেশ মুখথুবড়ে পড়বে।

সূত্র : বাংলাদেশ প্রতিদিন। 

প্রাসঙ্গিক
মন্তব্য

সম্পর্কিত খবর

নতুন শুল্ক স্থগিত : ট্রাম্পকে ধন্যবাদ জানালেন প্রধান উপদেষ্টা

অনলাইন ডেস্ক
অনলাইন ডেস্ক
শেয়ার
নতুন শুল্ক স্থগিত : ট্রাম্পকে ধন্যবাদ জানালেন প্রধান উপদেষ্টা

আগামী ৯০ দিনের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের ঘোষিত নতুন শুল্ক স্থগিত করায় দেশটির প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মোহাম্মদ ইউনূস। বুধবার (৯ এপ্রিল) দিবাগত রাতে প্রধান উপদেষ্টার ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এ ধন্যবাদ জ্ঞাপন করা হয়।

ফেসবুক স্ট্যাটাসে বলা হয়, ‘আমাদের অনুরোধে ৯০ দিনের জন্য নতুন শুল্ক স্থগিত করার সিদ্ধান্তে সম্মতি জানানোর জন্য আপনাকে ধন্যবাদ, মি. প্রেসিডেন্ট (ডোনাল্ড ট্রাম্প)। আমরা আপনার বাণিজ্যনীতি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে প্রশাসনের সঙ্গে সহযোগিতা অব্যাহত রাখব।

এর আগে বাংলাদেশি পণ্যের ওপর নতুন করে ৩৭ শতাংশ রেসিপ্রোকাল ট্যারিফ বা পাল্টা শুল্ক আরোপ করে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন। নতুন শুল্কের কারণে বাংলাদেশের রপ্তানি পণ্যের বড় বাজারটিতে পণ্য রপ্তানি, বিশেষ করে তৈরি পোশাক রপ্তানিতে বড় ধাক্কার আশঙ্কাও করেন রপ্তানিকারকরা।

এতদিন বাংলাদেশের মোট পণ্য রপ্তানির ১৮ শতাংশের গন্তব্য যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশি পণ্যের ওপর গড়ে ১৫ শতাংশ শুল্ক ছিল।

মন্তব্য

জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টার দায়িত্বও পেলেন খলিলুর রহমান

অনলাইন ডেস্ক
অনলাইন ডেস্ক
শেয়ার
জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টার দায়িত্বও পেলেন খলিলুর রহমান

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার রোহিঙ্গাবিষয়ক হাই রিপ্রেজেন্টেটিভ খলিলুর রহমানকে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা পদেও নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।

বুধবার (৯ এপ্রিল) মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে জারি করা এক প্রজ্ঞাপনে খলিলুর রহমানকে এই নতুন দায়িত্ব দেওয়ার কথা জানানো হয়। রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে এই প্রজ্ঞাপনে সই করেছেন মন্ত্রিপরিষদসচিব (সমন্বয় ও সংস্কার) জাহেদা পারভীন।

এখন থেকে খলিলুর রহমানের পদবি হবে ‘জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা এবং রোহিঙ্গা সমস্যা বিষয়ক হাই রিপ্রেজেন্টেটি’।

পাশাপাশি তিনি প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসকে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত দায়িত্ব পালনেও সহযোগিতা করবেন।

২০২৪ সালের ১৯ নভেম্বর অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার রোহিঙ্গা সমস্যা ও অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত বিষয়াবলি সংক্রান্ত হাই রিপ্রেজেন্টেটিভ হিসেবে নিয়োগ পান খলিলুর রহমান।

ড. খলিলুর রহমান ১৯৭৯ সালে বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস (পররাষ্ট্র) কাডারে যোগদান করেন। ১৯৮৩-৮৫ সময়কালে তিনি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দক্ষিণ এশিয়া বিভাগে এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ব্যক্তিগত সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

১৯৮৫ সালে তাকে নিউইয়র্কে জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী মিশনে বদলি করা হয়। সেখানে তিনি জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অর্থনৈতিক ও আর্থিক কমিটিতে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করেন এবং স্বল্পোন্নত দেশগুলোর (এলডিসি) মুখপাত্র হিসেবে এ কমিটি ও জাতিসংঘের অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিষদে দায়িত্ব পালন করেন।

খলিলুর রহমান ১৯৯১ সালে জেনেভায় জাতিসংঘের বাণিজ্য ও উন্নয়ন সম্মেলনে (আংকটাড) বিশেষ উপদেষ্টা হিসেবে জাতিসংঘ সচিবালয়ে যোগ দেন। জাতিসংঘে পরবর্তী ২৫ বছরে তিনি নিউইয়র্ক ও জেনেভায় বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে কর্মরত ছিলেন।

 

২০০১ সালে খলিলুর রহমান তৃতীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা বিচারপতি লতিফুর রহমানের একান্ত সচিব হিসেবে কাজ করেন। তিনি ঢাকায় অবস্থিত ইস্ট ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা।

মন্তব্য

সৌদির বিদায়ি রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার সৌজন্য সাক্ষাৎ

অনলাইন ডেস্ক
অনলাইন ডেস্ক
শেয়ার
সৌদির বিদায়ি রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার সৌজন্য সাক্ষাৎ

স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী (অব.)-এর সঙ্গে সৌদি আরবের বিদায়ি রাষ্ট্রদূত ঈসা বিন ইউসুফ বিন আলদুহাইলানের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ অনুষ্ঠিত হয়েছে। এ সময় বাংলাদেশ থেকে আরো বেশি জনশক্তি নিতে সৌদি রাষ্ট্রদূতকে আহ্বান জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা। 

বুধবার (৯ এপ্রিল) সকালে সচিবালয়ে এ আহ্বান জানানো হয়।

বৈঠকে সৌদি আরবে বসবাসরত বৈধ পাসপোর্টবিহীন ৬৯ হাজার বাংলাদেশি নাগরিকদের অনুকূলে পাসপোর্ট ইস্যু/রি-ইস্যুসংক্রান্ত বিষয়াদিসহ পারস্পরিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা করা হয়।

বৈঠকের শুরুতে উপদেষ্টা বলেন, সৌদি আরব বাংলাদেশের উন্নয়নে অন্যতম বৃহৎ অংশীদার। একক দেশ হিসেবে সৌদি আরবে সবচেয়ে বেশি বাংলাদেশি কাজ করছে। বর্তমানে সৌদি আরবে ৩.২ মিলিয়ন বাংলাদেশি বিভিন্ন সেক্টরে কর্মরত রয়েছে। এটিকে চার মিলিয়নে উন্নীত করতে তিনি রাষ্ট্রদূতের সহযোগিতা কামনা করেন।

বাংলাদেশের উন্নয়নে সৌদি আরবের সর্বাত্মক সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে উল্লেখ করে সৌদি রাষ্ট্রদূত বলেন, জনশক্তি রপ্তানির পাশাপাশি দুই দেশের মধ্যে ব্যবসা, বাণিজ্য, বিনিয়োগ, পর্যটন ও সংস্কৃতিসহ বিভিন্ন খাতে প্রভূত সহায়তা বিদ্যমান। তিনি বলেন, সৌদি আরব সব সময় বাংলাদেশের পাশে ছিল, অদূর ভবিষ্যতেও থাকবে।

রাষ্ট্রদূত আরো বলেন, রাজকীয় সৌদি সরকারের গৃহীত নীতি অনুযায়ী সে দেশে বসবাস ও চাকরি করাসহ আইনগত সুযোগ-সুবিধা পাওয়ার জন্য বৈধ পাসপোর্ট থাকা আবশ্যক। সৌদি সরকারের তথ্য অনুযায়ী বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর থেকে বিভিন্ন সময় বাংলাদেশি পাসপোর্ট/ট্রাভেল ডকুমেন্ট নিয়ে সে দেশে প্রবেশ করেছেন কিন্তু বর্তমানে কোনো বৈধ পাসপোর্ট নেই—এমন লোকের সংখ্যা আনুমানিক ৬৯ হাজার।

সরকারি বিভিন্ন পর্যায়ের আলোচনায় ৬৯ হাজার ব্যক্তির পাসপোর্ট ইস্যু /নবায়নের জন্য সৌদি কর্তৃপক্ষ বাংলাদেশ সরকারকে অনুরোধ জানিয়ে আসছিল।

উপদেষ্টা বলেন, এ বিষয়ে দুই দেশের মধ্যে একটি প্রটোকল স্বাক্ষরিত হয়েছিল এবং এতে বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে সব ধরনের সহযোগিতা করা হবে।

মন্তব্য

মার্চে রাজনৈতিক সহিংসতায় ২৩ জন নিহত, ১৮ জনই বিএনপির

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
মার্চে রাজনৈতিক সহিংসতায় ২৩ জন নিহত, ১৮ জনই বিএনপির
সংগৃহীত ছবি

দেশে গত মার্চ মাসে ৯৭টি রাজনৈতিক সহিংসতায় ২৩ জন নিহত হয়েছেন। নিহতের এ সংখ্যা গত ফেব্রুয়ারি মাসের চেয়ে দ্বিগুণেরও বেশি। এর মধ্যে সহিংসতার ৮৮টি ঘটনা ঘটেছে বিএনপির অন্তঃকোন্দলে। বিএনপির সঙ্গে অন্যান্য দলের সহিংসতায় নিহতদের মধ্যে ১৮ জন বিএনপি নেতা, কর্মী ও সমর্থক।

মানবাধিকার পর্যবেক্ষণ সংস্থা হিউম্যান রাইটস সাপোর্ট সোসাইটির (এইচআরএসএস) মাসিক প্রতিবেদনে এমন তথ্য উঠে এসেছে। বুধবার সংস্থাটি এ প্রতিবেদন প্রকাশ করে। 

এক মাসের মানবাধিকার পরিস্থিতি তুলে ধরে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, মার্চ মাসেও মানবাধিকার পরিস্থিতির প্রকৃত অবস্থা ছিল হতাশাজনক। পবিত্র মাহে রমজান মাসে বিগত বছরগুলোর তুলনায় দ্রব্যমূল্য ও ঈদযাত্রা কিছুটা স্বস্তিদায়ক হলেও আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির আশানুরূপ উন্নতি হয়নি।

আরো পড়ুন
ট্রান্সশিপমেন্ট বাতিলে বাংলাদেশের রপ্তানিতে কোনো প্রভাব পড়বে না : ভারত

ট্রান্সশিপমেন্ট বাতিলে বাংলাদেশের রপ্তানিতে কোনো প্রভাব পড়বে না : ভারত

 

মার্চে ৯৭টি রাজনৈতিক সহিংসতার ঘটনায় অন্তত ২৩ জন নিহত হয়েছে জানিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়, এ সময়ে আহত হয়েছে কমপক্ষে ৭৩৩ জন। আধিপত্য বিস্তার, রাজনৈতিক প্রতিশোধপরায়ণতা, চাঁদাবাজি ও বিভিন্ন স্থাপনা দখলকেন্দ্রিক অধিকাংশ সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। নিহত ২৩ জনের মধ্যে বিএনপির ১৮ জন, আওয়ামী লীগের ৩ জন এবং ইউপিডিএফের ২ জন রয়েছে।

৯৭টি সহিংসতার ঘটনার ৮৮টিই ঘটেছে বিএনপির অন্তঃকোন্দলে ও বিএনপির সাথে অন্যান্য রাজনৈতিক দলের মধ্যে হয়েছে জানিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়, মার্চ মাসে সহিংসতার ৯৭টি ঘটনার মধ্যে বিএনপির অন্তঃকোন্দলে ৬৪টি ঘটনায় ১৭ জন নিহত ও আহত হয়েছে ৫০২ জন।

বিএনপি-আওয়ামী লীগের মধ্যে ১১টি সংঘর্ষে ২ জন নিহত ও ৫২ জন আহত হয়েছে। আর বিএনপি-জামায়াতের মধ্যে ১০টি সংঘর্ষে ১ জন নিহত ও ৮১ জন আহত হয়েছে। এ ছাড়া বিএনপি-এনসিপির মধ্যে ৩টি সংঘর্ষে ২ জন নিহত ও ৩১ জন আহত হয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, মার্চ মাসে রাজনৈতিক সহিংসতার সংখ্যা ফেব্রুয়ারি মাসের তুলনায় কিছুটা কমলেও নিহতের সংখ্যা দ্বিগুণের বেশি বেড়েছে। গত ফেব্রুয়ারি মাসে ১০৪টি রাজনৈতিক সহিংসতার ঘটনায় ৯ জন নিহত ও ৭৫৫ জন আহত হয়েছিল।

এতে বলা হয়, মার্চে রাজনৈতিক মামলায় কমপক্ষে ১ হাজার ৬৬৫ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, যেখানে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী অন্তত ১ হাজার ৬৪৪ জন। ওই সময় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর কমপক্ষে ৩টি হামলার ঘটনায় ২ জন আহত এবং ২টি প্রতিমা ভাঙচুর করা হয়েছে।

কমপক্ষে ২৮৪ জন নারী ও কন্যাশিশু নির্যাতনের শিকার হয়েছে জানিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়, এর মধ্যে ধর্ষণের শিকার হয়েছে কমপক্ষে ১৩৩ জন, যাদের মধ্যে ৩০ জন দলবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হয়েছে। ধর্ষণের পর হত্যার শিকার হয়েছে ২ জন। যৌন নির্যাতনের শিকার ১৩৩ জনের মধ্যে ৮৩ জন ১৮ বছরের কমবয়সী শিশু। প্রতিবেদনে মাগুরায় ৮ বছরের এক শিশুকে তার বোনের শ্বশুর কর্তৃক ধর্ষণ এবং শিশুটি ৮ দিন পর চিকিত্সাধীন অবস্থায় মৃত্যুর ঘটনাটি উল্লেখ করা হয়।

এইচআরএসএসের তথ্য অনুযায়ী, গেল মাসে অন্তত ২৯টি ঘটনায় কমপক্ষে ৪১ জন সাংবাদিক নির্যাতন ও হয়রানির শিকার হয়েছেন। এসব ঘটনায় আহত হয়েছেন অন্ততপক্ষে ২৩ জন সাংবাদিক। এ ছাড়া ৩টি মামলায় ৭ জন সাংবাদিককে অভিযুক্ত করা হয়েছে। মার্চে গণপিটুনির অন্তত ৪০টি ঘটনায় ১২ জন নিহত ও ৪৪ জন আহত হয়েছে।

একই সময়ে ২১টি শ্রমিক নির্যাতনের ঘটনায় ৭ জন নিহতের তথ্য জানানো হয়। এর মধ্যে ১ জন শিশু গৃহকর্মী মালিকের নির্যাতনে নিহত হয়। এ ছাড়া মার্চ মাসে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে ৬টি হামলার ঘটনায় ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) গুলিতে ২ জন বাংলাদেশি নিহতের তথ্য উল্লেখ করা হয়েছে।

সার্বিক বিষয়ে এইচআরএসএসের নির্বাহী পরিচালক ইজাজুল ইসলাম বলেন, মার্চে রাজনৈতিক সহিংসতায় মৃত্যুর ঘটনা উদ্বেগজনক। নারী ও শিশুদের ওপর নির্যাতন, সাংবাদিক নিপীড়নও তুলনামূলক বেড়েছে। আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে জনগণের মৌলিক ও সাংবিধানিক অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। ব্যত্যয় হলে দেশের সার্বিক মানবাধিকার পরিস্থিতি অবনতির দিকে যাবে।

প্রাসঙ্গিক
মন্তব্য

সর্বশেষ সংবাদ