প্রতিবছর মার্চ মাসের দ্বিতীয় বৃহস্পতিবার বিশ্ব কিডনি দিবস পালিত হয়। এই বছর ১৩ই মার্চ কিডনি সম্পর্কিত রোগ ও সংক্রমণ এবং তা প্রতিরোধের উপায় সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য বিশ্ব কিডনি দিবস পালিত হচ্ছে। অনেকের মনে প্রশ্ন জাগে, এই রোগ কি দীর্ঘস্থায়ী? এর থেকে কি প্রতিকারের উপায় নেই? আর সেসব প্রশ্নের উত্তর জানতে বিস্তারিত পড়ুন এই প্রতিবেদনে।
কিডনি রোগ কি দীর্ঘস্থায়ী
বিশেষজ্ঞদের মতে, দীর্ঘস্থায়ী কিডনি রোগ একটি ক্রমবর্ধমান অবস্থা যেখানে কিডনি ধীরে ধীরে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সঠিকভাবে কাজ করার ক্ষমতা হারায়।
কিডনি রক্ত থেকে বর্জ্য, অতিরিক্ত তরল ও টক্সিন ফিল্টার করার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এ ছাড়া শরীরের সামগ্রিক ভারসাম্য বজায় রাখে।
আরো পড়ুন
নারকেলের দুধে কী উপকার, জেনে খাচ্ছেন তো?
দীর্ঘস্থায়ী এই রোগের ফলে কিডনি তার কার্যকারিতা হারিয়ে ফেলে। যার ফলে শরীরে ক্ষতিকারক পদার্থ জমা হয়।
এই রোগকে পাঁচটি পর্যায়ে শ্রেণিবদ্ধ করা হয়। চূড়ান্ত পর্যায়, যা এন্ড-স্টেজ রেনাল ডিজিজ (ইএসআরডি) নামে পরিচিত। এতে ডায়ালিসিস বা কিডনি প্রতিস্থাপনের প্রয়োজন হয়। এই রোগটি প্রায়শই ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ ও গ্লোমেরুলোনেফ্রাইটিসের মতো অবস্থার কারণে হয়, যার ফলে এর অগ্রগতি ধীর করার জন্য প্রাথমিক শনাক্তকরণ এবং ব্যবস্থাপনা অপরিহার্য।
সতর্ক থাকার জন্য প্রাথমিক সংকেত
নেফ্রোলজিস্টরা জানিয়েছেন, কিডনির দীর্ঘস্থায়ী রোগের লক্ষণগুলো প্রায়শই ধীরে ধীরে বিকাশ লাভ করে এবং প্রাথমিক পর্যায়ে লক্ষণীয় নাও হতে পারে। অবস্থা অগ্রসর হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ব্যক্তিরা ক্লান্তি, পা ও পায়ে ফোলা (শোথ), ঘন ঘন প্রস্রাব (বিশেষ করে রাতে), ক্রমাগত চুলকানি, পেশীতে ক্রাম্পস, বমি বমি ভাব এবং মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করতে অসুবিধা অনুভব করতে পারে। উচ্চ রক্তচাপ, ক্ষুধামন্দা ও শ্বাসকষ্টও এর ইঙ্গিত হতে পারে।
উন্নত পর্যায়ে এই রোগ তীব্র তরল ধারণ, রক্তাল্পতা ও বিপাকীয় ভারসাম্যহীনতা সৃষ্টি করতে পারে। যেহেতু উল্লেখযোগ্য কিডনি ক্ষতি হওয়ার আগ পর্যন্ত লক্ষণগুলো প্রকাশ নাও হতে পারে, তাই প্রাথমিক নির্ণয়ের জন্য নিয়মিত চেকআপ এবং কিডনি ফাংশন পরীক্ষা অপরিহার্য।
আরো পড়ুন
ধূমপানে কি চুল পড়ার সমস্যা বাড়ে?
ঝুঁকির কারণ
কিছু মানুষ অন্যদের তুলনায় কিডনির দীর্ঘস্থায়ী রোগের ঝুঁকিতে বেশি থাকেন। বিশেষ করে ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত ব্যক্তিরা। যাদের পরিবারে কিডনি রোগের ইতিহাস আছে, স্থূলতা, হৃদরোগ বা লুপাস আছে তাদেরও ঝুঁকি বেশি। দীর্ঘস্থায়ী কিডনি রোগ বয়স্কদের মধ্যে বেশি দেখা যায়।
তবে ধূমপান, খারাপ খাদ্য ও ব্যায়ামের অভাবের মতো জীবনযাত্রার কারণে যেকোনো বয়সে কিডনি ক্ষয়কে ত্বরান্বিত করতে পারে। তদুপরি, চিকিৎসা পরামর্শ ছাড়া দীর্ঘদিন ধরে ব্যথা নিরাময়কারী ওষুধ বা কিছু অ্যান্টিবায়োটিক সেবনকারী ব্যক্তিরা অজান্তেই কিডনি ক্ষতির দিকে এগিয়ে যেতে পারেন।
চিকিৎসা কী
যদিও এই অবস্থার কোনো প্রতিকার নেই, তবে খাদ্যতালিকাগত পরিবর্তন ও চিকিৎসাগত হস্তক্ষেপের মাধ্যমে এর অগ্রগতি নিয়ন্ত্রণ করা যায়। এই রোগের চিকিৎসা রোগের পর্যায় ও অন্তর্নিহিত কারণগুলোর ওপর নির্ভর করে। কিডনি ক্ষতি ধীর করার জন্য ওষুধ রক্তচাপ, রক্তে শর্করার মাত্রা ও কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।
আরো পড়ুন
শিশুরা চিপস খেলে কি আসলেই ক্ষতি হয়?
সোডিয়াম, পটাসিয়াম ও প্রোটিনের পরিমাণ কমিয়ে খাদ্যতালিকাগত সমন্বয় কিডনির ওপর চাপ কমাতে সাহায্য করতে পারে। তীব্র ক্ষেত্রে রক্ত থেকে বর্জ্য ফিল্টার করার জন্য ডায়ালিসিসের প্রয়োজন হয়, অথবা কিডনি প্রতিস্থাপনের প্রয়োজন হতে পারে।
প্রতিরোধের উপায়
- সুষম খাদ্য, নিয়মিত ব্যায়াম ও নির্ধারিত ওষুধের মাধ্যমে রক্তে শর্করার মাত্রা ও রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
- পর্যাপ্ত পানি পান করা, লবণ ও প্রক্রিয়াজাত খাবারের পরিমাণ সীমাবদ্ধ করা, অতিরিক্ত অ্যালকোহল ও তামাকের ব্যবহার এড়িয়ে চলা এবং ওভার-দ্য-কাউন্টার পেইনকিলারের পরিমাণ কমিয়ে কিডনির কার্যকারিতা রক্ষা করা যায়।
- ফল, সবজি, পুরো শস্য ও লিন প্রোটিনে সমৃদ্ধ খাদ্য সামগ্রিক কিডনি স্বাস্থ্য বজায় রাখতে সাহায্য করে।
- বিশেষ করে ঝুঁকির মধ্যে থাকা ব্যক্তিদের জন্য নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা কিডনি ক্ষতির সম্ভাবনা কমাতে প্রাথমিক শনাক্তকরণ এবং সময়োপযোগী হস্তক্ষেপের সুযোগ করে দেয়।
আরো পড়ুন
নতুন যে আপডেট নিয়ে আসছে টেলিগ্রাম
এই প্রতিবেদনের তথ্যগুলো পরামর্শমূলক। সাধারণ তথ্যের ভিত্তিতে প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়েছে। বিস্তারিত জানতে বা পরবর্তী যেকোনো পদক্ষেপ নেওয়ার আগে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেবেন।
সূত্র : হিন্দুস্তান টাইমস