<p>মোবাইল ফোনের টাচস্ক্রিন প্রযুক্তি একটি গুরুত্বপূর্ণ উদ্ভাবন, যা আমাদের দৈনন্দিন জীবনকে ব্যাপকভাবে প্রভাবিত করেছে। এটি বিভিন্ন প্রযুক্তি, বৈদ্যুতিক সার্কিট, এবং সফটওয়্যারের সমন্বয়ে কাজ করে। টাচস্ক্রিনের মাধ্যমে আমরা সরাসরি স্ক্রিনের ওপর স্পর্শ করে বিভিন্ন অ্যাপ্লিকেশন, মেন্যু এবং ফাংশন নিয়ন্ত্রণ করতে পারি। </p> <p>মোবাইল ফোনে প্রধানত দুই ধরনের টাচস্ক্রিন ব্যবহৃত হয়—ক্যাপাসিটিভ টাচস্ক্রিন ও রেজিস্টিভ টাচস্ক্রিন।  ক্যাপাসিটিভ টাচস্ক্রিন একটি কাচের প্যানেলে বৈদ্যুতিক চার্জ ধারণ করে। এই চার্জটি কন্ডাক্টিভ (বৈদ্যুতিকভাবে পরিবাহী) স্তরের মাধ্যমে সমগ্র স্ক্রিনে বিতরণ করা হয়। আপনার আঙুল যখন স্ক্রিনের সঙ্গে স্পর্শ করে, তখন এটি স্ক্রিনের বৈদ্যুতিক ক্ষেত্রকে প্রভাবিত করে, কারণ আঙুলও বৈদ্যুতিকভাবে পরিবাহী। স্ক্রিনের নিচে থাকা সেন্সরগুলো স্পর্শের স্থানের বৈদ্যুতিক ক্ষেত্রের পরিবর্তন শনাক্ত করে এবং সেই তথ্য প্রসেসরে পাঠায়। ক্যাপাসিটিভ টাচস্ক্রিন একাধিক স্পর্শ শনাক্ত করতে সক্ষম, যা একে মাল্টি-টাচ ব্যবহারের জন্য আদর্শ করে তোলে। এটি পিঞ্চ-টু-জুম, স্ক্রোলিং এবং জেসচার কন্ট্রোলের মতো ফিচারগুলোকে সহজ করে।</p> <p>রেজিস্টিভ টাচস্ক্রিনে দুটি পাতলা, নমনীয় স্তর থাকে, যার মধ্যে একটি বৈদ্যুতিকভাবে সংবেদনশীল পদার্থ দিয়ে আবৃত। স্তরগুলোর মাঝে একটি ছোট গ্যাপ থাকে। যখন আপনি স্ক্রিনে চাপ প্রয়োগ করেন, ওপরের স্তরটি নিচের স্তরের সঙ্গে সংযোগ ঘটে। এই সংযোগ বৈদ্যুতিক সার্কিট সম্পন্ন করে এবং স্ক্রিনে স্পর্শের স্থান শনাক্ত হয়। রেজিস্টিভ টাচস্ক্রিন সাধারণত একক স্পর্শ শনাক্ত করতে সক্ষম, যার কারণে এটি মাল্টি-টাচ ব্যবহারে সীমাবদ্ধ।</p> <p>টাচস্ক্রিনের মাধ্যমে যেকোনো কমান্ড সম্পাদিত হয় কয়েকটি ধাপে। আপনার আঙুল, স্টাইলাস বা অন্য কোনো বস্তু স্ক্রিনের ওপর স্পর্শ করে, যা টাচস্ক্রিনের নির্দিষ্ট অঞ্চলে বৈদ্যুতিক বা চাপ পরিবর্তন ঘটায়।  টাচস্ক্রিন এই পরিবর্তনকে সংকেত হিসেবে প্রসেসরের কাছে পাঠায়। এটি একটি স্পর্শের অবস্থান এবং ধরন শনাক্ত করে। প্রসেসর সেই সংকেত অনুযায়ী স্ক্রিনে প্রদর্শিত তথ্য আপডেট করে অথবা নির্দিষ্ট ফাংশন কার্যকর করে।</p> <p>টাচস্ক্রিনের সুবিধা ও সীমাবদ্ধতা আছে। টাচস্ক্রিন ব্যবহারকারীদের জন্য সহজ এবং স্বাভাবিক ইন্টারফেস প্রদান করে। এটা সরাসরি স্ক্রিনের মাধ্যমে অ্যাপ্লিকেশন নিয়ন্ত্রণ করতে সহায়তা করে। বিশেষত ক্যাপাসিটিভ টাচস্ক্রিন মাল্টি-টাচ সমর্থন করে, যা ব্যবহারকারীদের জন্য অনেক জটিল কাজকে সহজ করে তোলে। টাচস্ক্রিন বিভিন্ন ধরনের ডিভাইসে সহজে সংযুক্ত করা যায়, যেমন মোবাইল ফোন, ট্যাবলেট, ল্যাপটপ এবং এটিএম মেশিন।</p> <p>অন্যদিকে রেজিস্টিভ টাচস্ক্রিনের সীমাবদ্ধতা হলো, এটি একক স্পর্শ শনাক্ত করতে পারে, যা মাল্টি-টাচ জেসচার ব্যবহারে সীমাবদ্ধতা সৃষ্টি করে। নিয়মিত ব্যবহারে স্ক্রিনে আঙুলের ছাপ এবং দাগ পড়তে পারে। ফলে স্ক্রিনের স্বচ্ছতা ও কার্যকারিতায় প্রভাব পড়ে। গ্লাভস পরে ক্যাপাসিটিভ টাচস্ক্রিন ব্যবহার করা কঠিন।  কারণ গ্লাভস বৈদ্যুতিক পরিবাহী নয়।</p> <p>তবে আশার কথা হলো, ভবিষ্যতে টাচস্ক্রিন প্রযুক্তি আরো উন্নত এবং বহুমুখী হতে চলেছে। যেমন : ফ্লেক্সিবল ডিসপ্লে আসছে। এটাকে মোড়ানো বা বাঁকানো যেতে পারে। শিগগিরই স্ক্রিনের উপরিভাগে স্পর্শ করেই ফিঙ্গারপ্রিন্ট শনাক্ত করা যাবে। স্পর্শের প্রতিক্রিয়ায় স্পর্শের অনুভূতি বা ভাইব্রেশন প্রদান করবে, যা ব্যবহারকারীদের জন্য আরো বাস্তবমুখী অভিজ্ঞতা তৈরি করবে।</p> <p>মোবাইল ফোনের টাচস্ক্রিন প্রযুক্তি আমাদের দৈনন্দিন জীবনের অংশ হয়ে উঠেছে। এর সাহায্যে আমরা সহজেই ফোনের সব ফিচার ও অ্যাপ্লিকেশন ব্যবহার করতে পারি। ভবিষ্যতে এই প্রযুক্তি আরো উন্নত ও ব্যবহারকারীবান্ধব হবে, যা আমাদের জীবনকে আরো সহজ করবে।</p> <p>সূত্র : হাউ ইটস ওয়ার্কস</p>