<p>মানুষের মস্তিষ্ক একটি অত্যন্ত জটিল এবং বিস্ময়কর অঙ্গ। তবে ‘মানুষ মস্তিষ্কের মাত্র ১০% ব্যবহার করে’ ধারণাটি বহুদিন ধরে প্রচলিত একটি মিথ। বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক গবেষণা স্পষ্টভাবে প্রমাণ করেছে যে আমরা প্রতিনিয়ত আমাদের মস্তিষ্কের প্রায় প্রতিটি অংশই ব্যবহার করি।</p> <p>এই ভুল ধারণাটি সম্ভবত ১৯শ শতকের শেষের দিকে বা ২০শ শতকের শুরুর দিকে ছড়িয়ে পড়ে। স্নায়ুবিজ্ঞানীরা সেই সময় বলেছিলেন, মানব মস্তিষ্কের কিছু অংশ সম্পর্কে তখনো বিস্তারিত জানতে পারেননি তারা। এই ব্যাখ্যা ভুলভাবে ‘আমরা মস্তিষ্কের শুধুমাত্র ১০% ব্যবহার করি’ হিসাবে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে।</p> <p>চলচ্চিত্র, বই, এবং গণমাধ্যমে এই ধারণা আরও ছড়িয়ে পড়ে। যেমন ‘লুসি’র বিখ্যাত কিছু সিনেমা এবং জনপ্রিয় কিছু বই এই ভুল তথ্য প্রচার করেছে।</p> <p>এছাড়া কিছু বক্তা এবং লেখক মানুষের মস্তিষ্কের অসীম সম্ভাবনার কথা বলতে গিয়ে এই তথ্যটি ব্যবহার করেন। তবে এর কোনো বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নয়।</p> <p>বিজ্ঞানীরা যেমন এমআরআই  এবং পেট-এর মতো আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে প্রমাণ করেছেন, মানব মস্তিষ্কের প্রতিটি অংশই নির্দিষ্ট কাজের জন্য সক্রিয় থাকে।</p> <p>এমনকি যখন আমরা ঘুমাই, তখনো মস্তিষ্কের কিছু অংশ সক্রিয় থাকে। যেমন  স্বপ্ন দেখা এবং স্মৃতি সংরক্ষণে মস্তিষ্ক কাজ করে।</p> <p>মস্তিষ্কের প্রতিটি স্নায়ু কোষ (নিউরন) নির্দিষ্ট কাজ করে। কোনো অংশ নিষ্ক্রিয় থাকলে সেটা রোগ বা আঘাতের লক্ষণ হতে পারে। মোটেও সেটা এমনি এমনি বসে থাকে না।</p> <p>মস্তিষ্ক শরীরের মোট এনার্জির প্রায় ২০ শতাংশড়দ ব্যবহার করে, যদিও এটি শরীরের মোট ওজনের মাত্র ২ শতাংশ। এটি ইঙ্গিত দেয় যে মস্তিষ্কের বড় অংশই সক্রিয়।</p> <p>মস্তিষ্কের একটি ছোট অংশও ক্ষতিগ্রস্ত হলে গুরুতর শারীরিক ও মানসিক সমস্যা হতে পারে। এটা প্রমাণ করে যে মস্তিষ্কের প্রতিটি অংশ গুরুত্বপূর্ণ। ৯০ শতাংশ অব্যহৃত হলে এটা হতো না।</p> <p>এমআরআই স্ক্যান করে বিজ্ঞানীরা নিশ্চিজ হয়েছেন, সহজ কাজ যেমন কথা বলা, হাঁটা, বা এমনকি বিশ্রাম নেয়ার সময়ও মস্তিষ্কের বহু অংশ একসঙ্গে কাজ করে।</p> <p>১০ শতাংশ ব্যবহার করি, এ কথাটা ভুল হলেও, এটা ঠিক আমাদের মস্তিষ্কের ক্ষমতা আরও বাড়ানোর সুযোগ রয়েছে।যেমন নতুন দক্ষতা আয়ত্ব করলে নিউরনের মধ্যে নতুন সংযোগ তৈরি হয়, যা স্মৃতিশক্তি বাড়ায়। তেমনি ভাবে, শারীরিক ব্যায়াম রক্ত সঞ্চালন বাড়ায়, যা মস্তিষ্কের স্বাস্থ্য উন্নত করে। মানসিক ব্যায়াম, যেমন পাজল, দাবা, এবং গণিতের সমস্যা সমাধান করলে মস্তিষ্ক সক্রিয় থাকে। <br /> স্বাস্থ্যকর খাদ্য যেমন অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট এবং ওমেগা-৩ সমৃদ্ধ খাবার স্মৃতিশক্তি ও মনোযোগ বাড়ায়। পর্যাপ্ত ঘুম  মস্তিষ্কের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটি স্মৃতিশক্তি সংরক্ষণ ও রিচার্জের জন্য কাজ করে।</p> <p><br /> মোদ্দা কথা হলো, আমরা মস্তিষ্কের মাত্র ১০ শতাংশ ব্যবহার করি—এ কথাটা সম্পূর্ণ ভুল। প্রকৃতপক্ষে, আমরা আমাদের মস্তিষ্কের প্রায় প্রতিটি অংশই ব্যবহার করি, এমনকি সহজ কাজের জন্যও। তবে আমাদের মস্তিষ্কের সম্ভাবনা অসীম। নিয়মিত চর্চা এবং অভ্যাসের মাধ্যমে আমরা মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা আরও বাড়াতে পারি।<br /> সূত্র: হাউ ইট ওয়ার্কস</p> <p><br />  </p>