‘অন্তর্বর্তী সরকার মাত্র ৮ মাসে বাংলাদেশকে ৪৭তম ক্ষমতাধর রাষ্ট্রে পরিণত করেছে’ এবং ‘র্যাংকিংটিতে বাংলাদেশ আগে ৪০তম ছিল, ৮ মাসে পিছিয়ে এখন ৪৭তম হয়েছে।’ এমন দুটি দাবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হচ্ছে।
দাবিগুলোর সূত্র হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে ইউএস নিউজ নামে একটি ওয়েবসাইটের নাম।
ফ্যাক্ট চেকিং প্রতিষ্ঠান রিউমর স্ক্যানার এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, ইউএস নিউজ মূলত মার্কিন মিডিয়া কম্পানি, যারা সংবাদের পাশাপাশি গত কয়েক বছর ধরে নিয়মিত বিভিন্ন ক্যাটাগরির র্যাংকিং ও বিশ্লেষণ প্রকাশ করে আসছে।
আজ যে র্যাংকিং নিয়ে আলোচনা হচ্ছে তাতে দেখা যাচ্ছে, ৮৯টি দেশের মধ্যে সামগ্রিকভাবে বাংলাদেশের অবস্থান ৭১তম। এ ছাড়া দেশের বিভিন্ন ক্যাটাগরিভিত্তিক র্যাংকিংও আছে। যেমন—ক্ষমতা বা পাওয়ারের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অবস্থান দেখাচ্ছে ৪৭তম। আলোচনা এটি নিয়েই।
আরো পড়ুন
মিথ্যা তথ্য প্রচার, প্রথম আলোর বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নেবে শিবির
রিউমর স্ক্যানার যাচাই করে দেখেছে, এই তালিকাটি আজই বা এ বছর প্রকাশ হয়নি। তালিকাটি প্রকাশিত হয়েছে ২০২৪ সালের ১০ সেপ্টেম্বর। মূলত জরিপের তথ্য ব্যবহার করে এই র্যাংকিং প্রকাশিত হয়। এই র্যাংকিংয়ের জরিপ হয়েছে ২০২৪ সালের ২২ মার্চ থেকে ২৩ মে পর্যন্ত।
রিউমর স্ক্যানার ইউএস নিউজের ওয়েবসাইটের বিভিন্ন সময়ের আর্কাইভ বিশ্লেষণ করে দেখেছে, সাইটটি প্রতিবছরের সেপ্টেম্বরে এই র্যাংকিং প্রকাশ করে থাকে এবং এসংক্রান্ত জরিপ হয় সে বছরের এপ্রিল থেকে জুলাইয়ের মধ্যে। যেমন—২০২৩ সালেরটি প্রকাশিত হয় সে বছরের ৬ সেপ্টেম্বর (জরিপ হয় সে বছরের ১৭ মার্চ থেকে ১২ জুন)। বাংলাদেশের অবস্থান পাওয়ারে ৪০তম, ওভারঅল : ৬৯তম (মোট ৮৭ দেশের মধ্যে)।
একইভাবে ২০২২ সালেরটি প্রকাশিত হয় সে বছরের ২৭ সেপ্টেম্বর (জরিপ হয় সে বছরের ৩০ এপ্রিল থেকে ১৩ জুলাই)। বাংলাদেশের অবস্থান পাওয়ারে ৪৪তম, ওভারঅল : ৭১তম (মোট ৮৫ দেশের মধ্যে)।
এসব তথ্য বিশ্লেষণ থেকে এটা নিশ্চিত যে ২০২৫ সালের র্যাংকিং এখনো প্রকাশ করেনি ইউএস নিউজ। রেওয়াজ অনুযায়ী, তা চলতি বছরের সেপ্টেম্বরে প্রকাশিত হবে।
দাবি অনুযায়ী, বাংলাদেশ ১২৩তম স্থান থেকে উন্নীত হয়ে বর্তমানে ৪৭তম অবস্থানে এসেছে বলে বলা হলেও ওয়েবসাইটটির আর্কাইভ বিশ্লেষণ করে রিউমর স্ক্যানার দেখতে পায়, বাংলাদেশ এই র্যাংকিংয়ে প্রথম অন্তর্ভুক্ত হয় ২০২২ সালে। ওই বছর থেকে পরবর্তী সময়গুলোতে র্যাংকিংয়ে অন্তর্ভুক্ত দেশের সংখ্যা ছিল যথাক্রমে : ২০২২ সালে ৮৫টি, ২০২৩ সালে ৮৭টি এবং ২০২৪ সালে ৮৯টি। এ পর্যন্ত কোনো বছরেই র্যাংকিংয়ে ১২৩টি দেশ অন্তর্ভুক্ত ছিল না, ফলে বাংলাদেশের কখনো ১২৩তম অবস্থানে থাকার দাবি বাস্তবসম্মত নয়।
২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরের এই র্যাংকিং নিয়ে হঠাৎ আলোচনা শুরুর প্রেক্ষাপটও জানার চেষ্টা করেছে রিউমর স্ক্যানার। গ্লোবাল স্ট্যাটিসটিকস নামের একটি এক্স অ্যাকাউন্ট থেকে গত ৬ এপ্রিল রাতে ইউএস নিউজকে সূত্র দেখিয়ে শিরোনামে ২০২৫ সালের র্যাংকিং দাবি করে এসংক্রান্ত প্রথম পোস্টটি করা হয় বলে প্রতীয়মান হয়। এর পরই বিষয়টি আলোচনায় আসে।
অর্থাৎ অন্তর্বর্তী সরকারের ৮ মাসে ৪৭তম হওয়া কিংবা ৮ মাসে ৭ পিছিয়ে ৪৭তম হওয়া সংক্রান্ত দুটো দাবিই ভুয়া।