রোলেক্স ঘড়ির জন্য দুবাইয়ের টেক্সটাইল কিং নামে পরিচিত ব্যবসায়ী বাসু শ্রফ ভারতের জয়পুর বিমানবন্দরে হয়রানির শিকার হয়েছেন। ৮৫ বছর বয়সী এই ব্যবসায়ী বলেন, বিমানবন্দরে আমার সঙ্গে একজন অপরাধী এবং চোরাকারবারীর মতো আচরণ করা হয়েছে।
মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক সংবাদমাধ্যম খালিজ টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়, গত ১২ এপ্রিল সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় জয়পুর বিমানবন্দরে এ ঘটনা ঘটে।
ব্যবসায়ী বাসু শ্রফ বলেন, দুই দিনের সফরে আমি রাজস্থানের মুখ্যমন্ত্রী ভজন লাল শর্মাসহ কয়েকজন ভিআইপির সঙ্গে দেখা করতে এবং একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠানে যোগ দিতে জয়পুর যাই।
কিন্তু, বিমান থেকে নামার মুহূর্ত থেকেই সফরটি হতাশাজনক হয়ে ওঠে।
হুইলচেয়ারে চলাফেরা করা এই ব্যবসায়ী বলেন, বিমান থেকে নামার পর একজন সাহায্যকারী যখন আমার ব্যাগেজসহ হুইলচেয়ারটি ঠেলে নিচ্ছিলেন, তখন হঠাৎ একজন ইমিগ্রেশন কর্মকর্তা তাকে থামিয়ে পাসপোর্ট দেখাতে বলেন।
তিনি বলেন, তখন আমি বুঝতে পারছিলাম না কেন সে আমার পাসপোর্ট চাইছে। এ সময় ইমিগ্রেশন কর্মকর্তা আমার রোলেক্স ঘড়ির দিকে আঙুল দেখিয়ে বলেন এটি ঘোষণা না করে বহন করতে পারবেন না।
এ কথা শুনে আমি তো অবাক।
এ সময় আমি ডিক্লারেশন কাউন্টার খুঁজতে চারপাশে তাকালাম। কিন্তু আমি অবাক হলাম, বিমানবন্দরে কোনো সঠিক ডিক্লারেশন পয়েন্ট ছিল না, তিনি বলেন। তখন ইমিগ্রেশন কর্মকর্তা আমাকে ৫x৩ ফুটের একটি ছোট ডেস্কের দিকে নির্দেশ করলেন এবং বললেন এখানেই জিনিসপত্র ঘোষণা করা হয়।
এরপর যা ঘটেছে তা আরো হতাশাজনক।
খালিজ টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়, ব্যবসা ও সমাজসেবায় অবদানের জন্য ভারতের রাষ্ট্রপতি কর্তৃক মর্যাদাপূর্ণ ভারতীয় প্রবাসী বাসু শ্রফকে হুইলচেয়ারে বিমানবন্দরে পাঁচ ঘন্টারও বেশি সময় অপেক্ষা করানো হয়।
ব্যবসায়ী বাসু শ্রফ বলেন, জয়পুর বিমানবন্দর থেকে ২০০ কিলোমিটার দূরে একটি মন্দিরে মধ্যরাতের আগে আমাকে পৌঁছাতে হবে। তাই ইমিগ্রেশন কর্মকর্তাকে দ্রুত কাগজপত্র প্রস্তুত করতে অনুরোধ করেছিলাম। কিন্তু তারা আমাকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে বাধ্য করেন।
তিনি বলেন, শুধু অপেক্ষাতেই কষ্ট দেয়নি, তাদের আচরণও আমাকে কষ্ট দিয়েছে। তারা আমার সঙ্গে এমন আচরণ করেছে যেন আমি একজন অপরাধী।
তিনি আরও বলেন, দুবাইতে আমার সঙ্গে সবসময় সম্মানের সহিত আচরণ করা হয়েছে। কিন্তু এখানে, আমার নিজের দেশে, এমন আচরণ করা হয়েছে মনে হচ্ছিল আমি কিছু ভুল করেছি।
ব্যবসায়ী বাসু শ্রফ দুবাইয়ের ইন্ডিয়া ক্লাব এবং ইন্ডিয়ান হাই স্কুলের চেয়ারম্যানও।
বাসু শ্রফের আইনজীবী ধর্মেন্দ্র সিং বলেন, ইমিগ্রেশন কর্মকর্তারা বাসু শ্রফের সঙ্গে যে আচরণ করেছে তা কেবল অন্যায্যই নয়, অসম্মানজনক ছিল।
আইনজীবী ধর্মেন্দ্র সিং বলেন, ১৪ এপ্রিল ব্যবসায়ী শ্রফ যখন দুবাই ফিরে আসছিলেন তখন তার সহকারী ঘড়িটি সংগ্রহ করার চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু ইমিগ্রেশন কর্মকর্তারা ১০ হাজার রুপি দাবি করেন, যা অযৌক্তিক। অথচ লকার ফি বাবদ বৈধ চার্জ মাত্র ৩০ রুপি।
সিং বলেন, শ্রফের পরা রোলেক্স ঘড়িটির মূল্য প্রায় ৩৫ লাখ রুপি। ভারতীয় শুল্ক আইন অনুসারে, যথাযথ ঘোষণা ছাড়া দেশে আনা বিলাসবহুল জিনিসপত্রের ওপর প্রায় ৩৮ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা যেতে পারে, যা এই ক্ষেত্রে প্রায় ১.৩ মিলিয়ন রুপি হবে। যথাযথ আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ করার পরিবর্তে, বিমানবন্দরের কর্মকর্তারা নগদ মাত্র ১০ হাজার রুপি দাবি করেন, যার কোনো আইনি ভিত্তি নেই।
আইনজীবী ধর্মেন্দ্র সিংকে পাওয়ার অ্যাটর্নি দিয়ে ১৪ এপ্রিল ব্যবসায়ী বাসু শ্রফ রোলেক্স ঘড়ি ছাড়াই দুবাই ফিরে যান। আইনি লড়াই শেষে ১৯ এপ্রিল ঘড়িটি উদ্ধার করে সংযুক্ত আরব আমিরাতে নিয়ে যান তিনি, সিং বলেন।