ঢাকা, শুক্রবার ২৫ এপ্রিল ২০২৫
১২ বৈশাখ ১৪৩২, ২৫ শাওয়াল ১৪৪৬

ঢাকা, শুক্রবার ২৫ এপ্রিল ২০২৫
১২ বৈশাখ ১৪৩২, ২৫ শাওয়াল ১৪৪৬

নেতানিয়াহুর মন্তব্যের তীব্র নিন্দা আরববিশ্বের

অনলাইন ডেস্ক
অনলাইন ডেস্ক
শেয়ার
নেতানিয়াহুর মন্তব্যের তীব্র নিন্দা আরববিশ্বের
সৌদি আরব ও অন্যান্য আরবদেশ রবিবার ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর এক মন্তব্যের কঠোর নিন্দা জানিয়েছে। ফাইল ছবি : এএফপি

সৌদি আরব ও অন্যান্য আরবদেশ রবিবার ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর এক মন্তব্যের কঠোর নিন্দা জানিয়েছে। তিনি এক সাক্ষাৎকারে ফিলিস্তিন রাষ্ট্র সৌদি ভূখণ্ডে প্রতিষ্ঠা করা যেতে পারে বলে ইঙ্গিত দিয়েছিলেন।

নেতানিয়াহুর এই মন্তব্য এমন এক সময় এলো, যখন গোটা অঞ্চল গাজার বাসিন্দাদের প্রতিবেশী দেশগুলোতে স্থানান্তর করার বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগে রয়েছে। কিছু ইসরায়েলি গণমাধ্যম ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রীর মন্তব্যকে ‘রসিকতা’ হিসেবে বর্ণনা করেছে।

এর আগে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রথম এই ধারণার কথা তুলেছিলেন।

আরব লীগের প্রধান আহমেদ আবুল ঘেইত রবিবার বলেন, নেতানিয়াহুর এই ধারণা ‘অগ্রহণযোগ্য ও বাস্তবতা থেকে পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন’। তিনি আরো বলেন, এই ধরনের চিন্তা-ভাবনা ‘শুধু অলীক কল্পনা বা বিভ্রম ছাড়া কিছুই নয়’।

আরো পড়ুন
বিশ্বজুড়ে ট্রাম্পের প্রস্তাব নিন্দিত

বিশ্বজুড়ে ট্রাম্পের প্রস্তাব নিন্দিত

 

সৌদি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ফিলিস্তিনি ইস্যুর গুরুত্ব পুরো আরববিশ্বের কাছে অত্যন্ত স্পর্শকাতর।

তারা বলেছে, ‘ইসরায়েলি দখলদার বাহিনী ফিলিস্তিনি ভাইদের বিরুদ্ধে গাজায় যে অপরাধ চালিয়ে যাচ্ছে, তা থেকে দৃষ্টি সরিয়ে নিতে করা এই ধরনের বক্তব্যকে সৌদি আরব দৃঢ়ভাবে প্রত্যাখ্যান করছে।’

এক বিবৃতিতে সৌদি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ‘বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর দেওয়া বক্তব্যের বিরুদ্ধে যে নিন্দা, আপত্তি ও সম্পূর্ণ প্রত্যাখ্যান বন্ধুত্বপূর্ণ দেশগুলো প্রকাশ করেছে, সৌদি আরব তা স্বাগত জানায়।’

এক টেলিভিশন সাক্ষাৎকারে বৃহস্পতিবার ডানপন্থী ইসরায়েলি সাংবাদিক ইয়াকভ বারডুগো সৌদি আরবের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনের সম্ভাবনা নিয়ে নেতানিয়াহুর সঙ্গে আলোচনা করছিলেন। এ সময় তিনি ভুল করে বলেন, সৌদি আরবের অবস্থান হলো ‘সৌদি রাষ্ট্র ছাড়া কোনো অগ্রগতি হবে না’।

নেতানিয়াহু সঙ্গে সঙ্গে নিজেকে সংশোধন করে বলেন, ‘ফিলিস্তিন রাষ্ট্র?’ এরপর মজা করে যোগ করেন, ‘যদি না আপনি চান, ফিলিস্তিন রাষ্ট্র সৌদি আরবে হোক। ওদের (সৌদি আরবের) তো প্রচুর জমি আছে।’

বারডুগো উত্তরে বলেন, ‘আমি এটিকে পুরোপুরি উড়িয়ে দিচ্ছি না।’

আরো পড়ুন
ট্রাম্পের প্রস্তাবকে ‘জাতিগত নিধনের’ শামিল বলে নিন্দা ইরানের

ট্রাম্পের প্রস্তাবকে ‘জাতিগত নিধনের’ শামিল বলে নিন্দা ইরানের

 

এরপর নেতানিয়াহু তথাকথিত আব্রাহাম চুক্তির বিষয়ে আলোচনা করেন, যার মাধ্যমে কয়েকটি আরবদেশ ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করেছে। তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি, আমাদের এই প্রক্রিয়াকে তার স্বাভাবিক গতিতে চলতে দেওয়া উচিত।

কিন্তু ফিলিস্তিনিদের জন্য গাজা ও পশ্চিম তীরের বাইরে একটি রাষ্ট্র গঠনের ইঙ্গিত আঞ্চলিকভাবে তীব্র নিন্দার মুখে পড়েছে। কাতার, মিসর এবং ফিলিস্তিনি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় নেতানিয়াহুর মন্তব্যকে ‘বর্ণবাদী’ বলে আখ্যা দিয়েছে।

জর্দানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় নেতানিয়াহুর মন্তব্যকে ‘উসকানিমূলক ও আন্তর্জাতিক আইনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন’ হিসেবে নিন্দা জানিয়েছে। তারা জোর দিয়ে বলেছে, ফিলিস্তিনিদের ‘স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র গঠনের অধিকার’ রয়েছে, যা ইসরায়েলের পাশাপাশি প্রতিষ্ঠিত হবে। এ ছাড়া সংযুক্ত আরব আমিরাতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে নেতানিয়াহুর মন্তব্যকে ‘নিন্দনীয় ও উসকানিমূলক’ হিসেবে বর্ণনা করেছে এবং একে ‘আন্তর্জাতিক আইন ও জাতিসংঘ সনদের স্পষ্ট লঙ্ঘন’ বলে অভিহিত করেছে।

ফিলিস্তিনিদের কাছে গাজা থেকে জোরপূর্বক উচ্ছেদের যেকোনো প্রচেষ্টা তাদের জন্য ‘নাকবা’ বা মহাবিপর্যয়ের স্মৃতি ফিরিয়ে আনবে। ১৯৪৮ সালে ইসরায়েল প্রতিষ্ঠার সময় ব্যাপকভাবে ফিলিস্তিনিদের বাস্তুচ্যুত করা হয়েছিল, যা আরববিশ্ব ‘নাকবা’ নামে অভিহিত করে।

সৌদি আরব এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘এই চরমপন্থী, দখলদার মানসিকতা ফিলিস্তিনি ভূমির প্রকৃত তাৎপর্য বোঝে না। এই মানসিকতা মনে করে না যে ফিলিস্তিনি জনগণের বেঁচে থাকার অধিকার রয়েছে। কারণ তারা গাজা উপত্যকাকে পুরোপুরি ধ্বংস করে দিয়েছে এবং হাজার হাজার মানুষকে হত্যা করেছে, যার মধ্যে মানবতা বা ন্যূনতম নৈতিক অনুভূতিও নেই।’

সূত্র : এএফপি

মন্তব্য

সম্পর্কিত খবর

ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে যুদ্ধের আশঙ্কা কতটুকু? (ভিডিওসহ)

অনলাইন ডেস্ক
অনলাইন ডেস্ক
শেয়ার
ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে যুদ্ধের আশঙ্কা কতটুকু? (ভিডিওসহ)
ছবি : আনন্দবাজার

পৃথক রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশের পর থেকেই ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে বৈরিতা চলমান। বহির্বিশ্বের কাছে ‘চিরশক্র’র তকমাও পেয়েছে তারা। সীমান্তে নিয়মিত সংঘাত ও একাধিকবার বড় ধরনের যুদ্ধেও জড়িয়েছে দেশ দুটি। কাশ্মীর ইস্যু এই সংঘাতের প্রধান কারণ।

সম্প্রতি জম্মু-কাশ্মীরের পর্যটন এলাকায় নিরপরাধ মানুষের ওপর ঘটা এক সন্ত্রাসী হামলাকে কেন্দ্র করে আবারও মুখোমুখি ভারত-পাকিস্তান। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে উঠে আসছে এমন নানা খবর।  

সন্ত্রাসী হামলার ওই ঘটনায় পাকিস্তানকে দায়ী করছে ভারত। অন্যদিকে পাকিস্তান এ অভিযোগ অস্বীকার করছে।

এ নিয়ে দেশ দুটি পরস্পরের বিরুদ্ধে বড় ধরনের পদক্ষেপ নিচ্ছে। নয়াদিল্লি পাকিস্তানি নাগরিকদের ভিসা বাতিল, সিন্ধু পানি চুক্তি স্থগিত ও সীমান্ত বন্ধের পদক্ষেপ নিয়েছে। পাল্টা পদক্ষেপে ভারতের জন্য আকাশসীমা বন্ধ করে দিয়েছে ইসলামাবাদ। এতে ইন্ডিগো এবং এয়ার ইন্ডিয়া যাত্রীদের দেয়া এক সতর্কবার্তায় জানায়, আমেরিকা, ইউরোপ এবং মধ্যপ্রাচ্যের কিছু ফ্লাইট বিকল্প দীর্ঘ পথ ধরে যেতে হবে।

বিস্তারিত ভিডিও প্রতিবেদনে...

মন্তব্য
এক্সপ্রেস ট্রিবিউনের প্রতিবেদন

ভারতের বিরুদ্ধে পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার করতে পারে পাকিস্তান

অনলাইন ডেস্ক
অনলাইন ডেস্ক
শেয়ার
ভারতের বিরুদ্ধে পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার করতে পারে পাকিস্তান
ছবিসূত্র : এক্সপ্রেস ট্রিবিউন

জম্মু ও কাশ্মীরের পেহেলগামে ভয়াবহ বন্দুকধারী হামলার পর ভারত ও পাকিস্তানের সম্পর্ক নতুন করে উত্তেজনার মুখে পড়েছে। এই ঘটনায় ২৬ জন নিহত হওয়ার পর ভারত একতরফাভাবে সিন্ধু পানি চুক্তি স্থগিতের ঘোষণা দেয়, যা পাকিস্তানের কড়া প্রতিক্রিয়ার জন্ম দেয়।

বৃহস্পতিবার পাকিস্তানের জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদ (এনএসসি) কড়া হুঁশিয়ারি দিয়ে জানায়, চুক্তি অনুযায়ী পাকিস্তানের পানিপ্রবাহে হস্তক্ষেপ ‘যুদ্ধ ঘোষণা’র শামিল হবে এবং তার জবাব দেওয়া হবে সর্বশক্তি দিয়ে—যার মধ্যে পরমাণু অস্ত্র ব্যবহারের ইঙ্গিতও রয়েছে।

বিশ্বব্যাংকের মধ্যস্থতায় ১৯৬০ সালে স্বাক্ষরিত সিন্ধু পানি চুক্তিকে এতদিন ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে বিরল সহযোগিতার নিদর্শন হিসেবে দেখা হতো।

এই চুক্তির আওতায় পাকিস্তান সিন্ধু নদব্যবস্থার পানি ব্যবহার করে, যা দেশটির কৃষিনির্ভর অর্থনীতির প্রাণ।

ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা বিষয়ক মন্ত্রিসভা কমিটি (সিসিএস) পেহেলগামে পর্যটকদের ওপর সশস্ত্র হামলার জেরে চুক্তিটি ‘আপাতত স্থগিত’ রাখার সিদ্ধান্ত নেয়। বিশেষজ্ঞদের মতে, ভারতের লক্ষ্য হলো পাকিস্তানের ওপর চাপ সৃষ্টি করা এবং দেশটিতে খাদ্য নিরাপত্তা ও সামাজিক স্থিতিশীলতায় প্রভাব ফেলা।

পাকিস্তান জানায়, কোনো পক্ষ একতরফাভাবে এই চুক্তি বাতিল বা স্থগিত করতে পারে না, কারণ এটি একটি আন্তর্জাতিক পর্যায়ের স্থায়ী চুক্তি।

জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠক শেষে এক বিবৃতিতে বলা হয়, ‘পানির প্রবাহ বন্ধ বা সরিয়ে দেওয়া যুদ্ধ ঘোষণার শামিল হবে এবং তার জবাবে সম্পূর্ণ জাতীয় শক্তি ব্যবহার করা হবে।’

পরমাণু অস্ত্রের সম্ভাবনার কথা

প্রতিরক্ষা বিশ্লেষকরা সতর্ক করছেন, ভারত যদি পাকিস্তানের পানি রোধে কোনও বাঁধ বা অবকাঠামো নির্মাণ করে, তাহলে পাকিস্তান সামরিকভাবে সেই স্থাপনা ধ্বংস করতে দ্বিধা করবে না। এক বিশ্লেষক বলেন, ‘জাতীয় শক্তির পূর্ণ ব্যবহার’ কথার অর্থ হলো, পাকিস্তান পরমাণু অস্ত্র ব্যবহারের পথেও যেতে পারে।

সাবেক সিন্ধু পানি কমিশনার জামাত আলী শাহ মনে করেন, ভারতের এই সিদ্ধান্ত একটি রাজনৈতিক চাল।

তিনি বলেন, ‘চুক্তিটি একতরফাভাবে স্থগিত করা সম্ভব নয়। এর যে কোনো পরিবর্তনের জন্য দুই পক্ষের সম্মতি লাগবে।’ তবে ভারতীয় কর্তৃপক্ষ দাবি করেছে, তারা ‘স্থগিত’ শব্দটি ব্যবহার করেছে ‘বাতিল’ নয়। তাদের বক্তব্য, পাকিস্তান যদি ভারতের নিরাপত্তা উদ্বেগ মেটাতে পারে, তাহলে চুক্তি পুনরায় কার্যকর হতে পারে।

ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সিন্ধু পানি চুক্তি নিয়ে উদ্ভূত নতুন উত্তেজনা দক্ষিণ এশিয়ায় নিরাপত্তা পরিস্থিতিকে আরো জটিল করে তুলেছে।

পানির মতো একটি মৌলিক উপাদান এখন দুই প্রতিবেশী দেশের মধ্যে সংঘাতের সম্ভাব্য কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

সূত্র : এক্সপ্রেস ট্রিবউন

মন্তব্য

খাদ্যে বিষক্রিয়া: ইন্দোনেশিয়ার বিনামূল্যের খাবার কর্মসূচি নিয়ে বিতর্ক

অনলাইন ডেস্ক
অনলাইন ডেস্ক
শেয়ার
খাদ্যে বিষক্রিয়া: ইন্দোনেশিয়ার বিনামূল্যের খাবার কর্মসূচি নিয়ে বিতর্ক
ছবিসূত্র : এএফপি

ইন্দোনেশিয়া প্রায় ৮ কোটিরও বেশি স্কুল শিক্ষার্থীর জন্য বিনামূল্যে খাবার সরবরাহের একটি উদ্যোগ নিয়েছে। তবে বাস্তবে পরিকল্পনা অনুযায়ী এগোচ্ছে না। এই সপ্তাহে, রাজধানী জাকার্তার দক্ষিণে সিয়াঞ্জুর এলাকার দুটি উচ্চ বিদ্যালয়ে প্রায় ৮০ জন শিক্ষার্থী ফ্রি খাবার খাওয়ার পর অসুস্থ হয়ে পড়ে। যাদের অনেককেই হাসপাতালে ভর্তি করা হলেও বেশিরভাগই এখন হাসপাতাল  থেকে ছাড়া পেয়েছে।

দেশটির প্রেসিডেন্ট প্রাবোও সুবিয়ান্তোর নেওয়া অন্যতম প্রধান কর্মসূচি এটি। স্থানীয় কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, সম্ভবত খাবার প্রস্তুতে কোনো সমস্যা ছিল। রান্না থেকে শুরু করে প্যাকিং ও ডেলিভারি পর্যন্ত জড়িত সকল ব্যক্তিদের জিজ্ঞাসাবাদ করেছে পুলিশ।

১৬ বছর বয়সী এক শিক্ষার্থী স্থানীয় গণমাধ্যমকে জানায়, ‘মুরগির তরকারি থেকে একটা বাজে গন্ধ আসছিল।

খাবার খাওয়ার পরে আমার মাথা ঘুড়ছিল এবং বমি বমি ভাব অনুভব করছিলাম।’

ইন্দোনেশিয়ার ২৮ বিলিয়ন ডলারের (প্রায় ২১ বিলিয়ন পাউন্ড) এই কর্মসূচি বিশ্বের সবচেয়ে ব্যয়বহুল প্রকল্পগুলোর একটি। এ ঘটনা খাদ্য নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ এবং সরকারবিরোধী প্রতিবাদের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়েছে।  গত ফেব্রুয়ারিতে  বাজেট কাটছাঁটের বিরুদ্ধে দেশটির হাজারো মানুষ রাস্তায় নেমেছিল।

তাদের ক্ষোভের কেন্দ্রে ছিল প্রেসিডেন্ট প্রাবোওর এই ‘ফ্রি স্কুল মিল’ কর্মসূচি। বিক্ষোভে এক প্ল্যাকার্ডে লেখা ছিল, ‘শিশুরা ফ্রি খায়, বাবা-মা চাকরি হারায়।’

নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি থেকে জনমনে অসন্তোষ

গত বছরের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনী প্রচারে প্রাবোওর কেন্দ্রবিন্দু ছিল এই কর্মসূচি। তিনি বিনামূল্যে খাবার সরবরাহের কর্মসূচিকে শিশুদের অপুষ্টিজনিত রোগ ‘স্টান্টিং’ মোকাবিলার একটি উপায় হিসেবে উপস্থাপন করেছিলেন। যে রোগে ইন্দোনেশিয়ায় ৫ বছরের নিচে প্রায় ২০ শতাংশ শিশুরা আক্রান্ত হয়।

 

২০২৩ সালে তিনি বলেছিলেন, ‘এই উদ্যোগের মাধ্যমে আমাদের শিশুরা আরো লম্বা হবে এবং সফল হয়ে উঠবে।’ গত অক্টোবর ক্ষমতা গ্রহণের পর এই কর্মসূচি এবং বিনামূল্যে স্বাস্থ্যপরীক্ষা ও নতুন বাড়ি দেওয়ার মতো অন্যান্য জনপ্রিয় পদক্ষেপ তার জনপ্রিয়তা বাড়াতে সাহায্য করেছে। ক্ষমতায় যাওয়ার পরে প্রথম ১০০ দিনের মধ্যেই তার গ্রহণযোগ্যতা ৮০শতাংশে পৌঁছায়।

প্রথম ধাপে জানুয়ারিতে শুরু হওয়া এই কর্মসূচির আওতায় ২৬টি প্রদেশের ৫.৫ লাখ শিক্ষার্থীর কাছে ফ্রি খাবার পৌঁছেছে। তবে ইউসুফ ইসহাক ইনস্টিটিউট (আইএসইএএস)-এর ভিজিটিং ফেলো মারিয়া মনিকা উইহার্জা বিবিসিকে বলেন, এই কর্মসূচি সৎ উদ্দেশ্যে হলেও এর যে খবু বেশি প্রয়োজন আছে বিষয়টি এমন নয়। জানুয়ারি থেকেই বিভিন্ন বিষক্রিয়ার ঘটনায় কর্মসূচি নিয়ে উদ্বেগ বেড়েছে।

ফেব্রুয়ারিতে পূর্ব নুসা তেংগারা প্রদেশের মিশেল নামে এক প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী বিবিসিকে জানায়, আমরা কয়েকজন শিক্ষার্থী ফ্রি খাবার খাওয়ার পর পেটে ব্যথা অনুভব করেছিলাম। কারণ খাবারটি বাসি ছিল। এই ঘটনার পর অনেক অভিভাবক সন্তানদের জন্য বাসা থেকে খাবার পাঠানো শুরু করেন বলে জানান এক স্কুল কর্মকর্তা।

এই সপ্তাহে সিয়াঞ্জুরের বিষক্রিয়ার ঘটনার পর কর্তৃপক্ষ খাদ্য নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদারের আশ্বাস দিয়েছে। জাতীয় পুষ্টি সংস্থার প্রধান দাদান হিন্দায়ানা বলেন, ‘আমাদের মান উন্নত করতেই হবে।’

ইন্দোনেশিয়া অর্থনীতি সংস্কার কেন্দ্র-এর গবেষক এলিজা মার্ডিয়ান বিবিসিকে বলেন, ‘এই কর্মসূচি শুরু করার আগে যথাযথ ও গভীর পরিকল্পনার অভাব ছিল। তাড়াহুড়ো শেষ পর্যন্ত খাবারের মান ও কার্যকারিতা কমিয়ে দিচ্ছে। ফলে জনগণের মধ্যে কর্মসূচিটি নিয়ে নেতিবাচক ধারণা তৈরি হয়েছে।’

১০ বিলিয়ন ডলারের প্রকল্প

এই কর্মসূচির বিশাল ব্যয়ও বিতর্ক সৃষ্টি করেছে। চলতি বছরে ইন্দোনেশিয়া ফ্রি মিলের জন্য ১০ বিলিয়নেরও বেশি ডলার বরাদ্দ করেছে। অন্যদিকে ভারত বছরে ১.৫ বিলিয়ন ডলার খরচ করে ১২ কোটিরও বেশি শিশুদের বিনামূল্যে খাবার সরবরাহ করে—যা বিশ্বের সবচেয়ে বড় কর্মসূচি। ব্রাজিলের কর্মসূচির ব্যয় একই রকম হলেও সেবা পায় ৪ কোটির মতো শিক্ষার্থী।

এই বিশাল খরচ সামলাতে প্রেসিডেন্ট প্রাবোও দেশের শীর্ষ ধনীদের সহযোগিতা চেয়েছেন এবং চীন থেকেও অর্থায়ন গ্রহণ করেছেন। তিনি এই কর্মসূচি ও অন্যান্য জনপ্রিয় প্রকল্প বাস্তবায়নে প্রায় ১৯ বিলিয়ন ডলারের বাজেট কাটছাঁট করেছেন—যা একে আরো বিতর্কিত করে তুলেছে। এর ফলে শিক্ষা মন্ত্রণালয়সহ কয়েকটি মন্ত্রণালয়ের বাজেট অর্ধেক কমিয়ে দেওয়া হয়েছে। 

যেসব কর্মকর্তারা বরখাস্ত হননি তারা অভিযোগ করছেন, এসি, লিফট এমনকি প্রিন্টার ব্যবহারে পর্যন্ত কাটছাঁট করতে বাধ্য করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের বৃত্তি কার্যক্রম বাতিল হয়েছে এবং শ্রেণিকক্ষে পাঠদানও ব্যাহত হচ্ছে।

বন্দুংয়ে এক ছাত্র আন্দোলনকারী মুহাম্মদ রমাদান বিবিসিকে বলেন, ‘পেট ভরলেও যদি মস্তিষ্ক খালি থাকে, তাহলে সেটা সবচেয়ে খারাপ।’

দুর্নীতির ঝুঁকি

চ্যালেঞ্জ এখানেই শেষ নয়। মার্চে দেশটির দুর্নীতি দমন সংস্থা এই কর্মসূচিতে ঘিরে দুর্নীতির সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানিয়েছে, বাজেট ব্যবস্থাপনায়ও অনিয়মের অভিযোগ ওঠতে শুরু করেছে। দক্ষিণ জাকার্তার এক খাবার সরবরাহকারী কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ এনেছে। তিনি জানান, ফেব্রুয়ারি থেকে খাবার সরবরাহ করলেও এখনো কোনো অর্থ পাননি।

প্রেসিডেন্ট প্রোবোও অবশ্য এই কর্মসূচির পক্ষে। তিনি বলেন, ‘এই অভিযোগগুলো নিয়ে আমরা কাজ করছি এবং জনগণের এক টাকাও নষ্ট হবে না।’ তবে বিশ্লেষকরা বলছেন, সমস্যাটি অনেক গভীর।

ইন্দোনেশিয়ায় বড় আকারের সামাজিক সহায়তা কর্মসূচিগুলো ঐতিহাসিকভাবে ‘দুর্নীতিতে জর্জরিত’ বলে জানান ইন্দোনেশিয়ার অডিট বোর্ডের গবেষক বিশ্লেষক মুহাম্মদ রাফি বক্রি। তিনি বলেন, ‘এই বাজেট যত বড়, দুর্নীতির সুযোগও ততটাই বড়।’

সূত্র : বিবিসি

মন্তব্য

কাশ্মীর হামলা : ২০ মিনিট পরে পৌঁছায় নিরাপত্তা বাহিনী

অনলাইন ডেস্ক
অনলাইন ডেস্ক
শেয়ার
কাশ্মীর হামলা : ২০ মিনিট পরে পৌঁছায় নিরাপত্তা বাহিনী
ছবিসূত্র : এএফপি

কাশ্মীরের পেহেলগামে পর্যটকদের ওপর সম্প্রতি ঘটে যাওয়া বন্দুকধারীদের হামলায় ভারতের নানা প্রান্তের মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন। নিহতদের তালিকায় কাশ্মীর থেকে কেরালা, গুজরাট থেকে পশ্চিমবঙ্গ এবং আসাম—বিভিন্ন রাজ্যের মানুষের নাম রয়েছে। এই হামলায় কেবল দেশজুড়ে নয়, কাশ্মীরের মানুষের মধ্যেও ক্ষোভ ছড়িয়েছে। কারণ, পর্যটকরা কাশ্মীরের মানুষের জীবিকা নির্বাহের বড় উৎস।

হামলার পর সামাজিক মাধ্যমে দেশজুড়ে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে। তবে অনেকেই প্রশ্ন তুলছেন—এই হামলার সময় নিরাপত্তা বাহিনী কোথায় ছিল? দি ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রায় ২০ মিনিট হামলা চলার পর নিরাপত্তা বাহিনী ঘটনাস্থলে পৌঁছায়, কিন্তু ততক্ষণে হামলাকারীরা পালিয়ে যায়।

‘কেউ সাহায্য করতে আসেনি’

পুণের বাসিন্দা আশাবরী জানান, তিনি তার বাবা-মা ও আত্মীয়দের সঙ্গে পেহেলগাম ছিলেন। হামলায় তার বাবা ও এক আত্মীয় নিহত হন।

তিনি জানান, ‘হামলার সময় আমাদের পাশে কেউ ছিল না। কেবল খচ্চরচালকরাই আমাদের সাহায্য করেছেন।’
তিনি দাবি করেন, ২০ মিনিট পর নিরাপত্তা বাহিনী এলেও তখন অনেক দেরি হয়ে গেছে।

‘নিরাপত্তা আরো কড়া হওয়া উচিত ছিল’

সেনাবাহিনীর শ্রীনগরভিত্তিক ১৫ কোরের সাবেক কমান্ডার অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট জেনারেল কে জে এস ধিলোঁ বলেন, ‘বৈসরন উপত্যকার মতো পর্যটক-ভরা জায়গায় নিরাপত্তা বাহিনীর উপস্থিতি থাকা উচিত ছিল।

নিরাপত্তাব্যবস্থা গতিশীল হলেও এটি নিয়মিত পর্যালোচনা দরকার।’

অবসরপ্রাপ্ত আইপিএস অফিসার যশোবর্ধন আজাদ বলেন, ‘এই হামলার পেছনে স্পষ্ট পরিকল্পনা ছিল। পেহেলগাম দীর্ঘদিন শান্তিপূর্ণ ছিল, পর্যটকনির্ভর এই এলাকায় সাধারণ মানুষ এমন হামলার বিরুদ্ধে। হামলাকারীরা কৌশলে এই জায়গাটি বেছে নিয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘আমরা জানতে পারছি হামলাকারীদের সম্পর্কে আগে থেকেই গোয়েন্দা তথ্য ছিল।

তবুও তারা সফল হয়েছে। এর বিশ্লেষণ দরকার, এবং এটিকে বড়সড় শিক্ষা হিসেবেও নেওয়া উচিত।’

সহিংসতা কি কমেছে?

সরকারি তথ্য অনুযায়ী, ২০২০ সালে কাশ্মীরে ৩৪ লাখ পর্যটক গিয়েছিলেন। ২০২৩ সালে এই সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় দুই কোটি ১১ লাখে। ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত তা এক কোটি আট লাখ ছাড়ায়। পর্যটনের ওপর নির্ভর করে কাশ্মীরের অর্থনীতি—২০১৯-২০ সালে পর্যটনের অবদান ছিল জিডিপির ৭.৮৪ শতাংশ, যা ২০২২-২৩ সালে বেড়ে দাঁড়ায় ৮.৪৭ শতাংশে। তবে সহিংসতা পুরোপুরি থেমে যায়নি। 

সাউথ এশিয়া টেররিজম পোর্টাল বলছে, ২০২৩ সালে ১২ জন বেসামরিক, ৩৩ জন নিরাপত্তাকর্মী এবং ৮৭ জন চরমপন্থী নিহত হয়। আর ২০২৪ সালে (এখন পর্যন্ত) ৩১ জন বেসামরিক, ২৬ জন নিরাপত্তাকর্মী এবং ৬৯ জন চরমপন্থী নিহত হন। এমন পরিস্থিতিতে অনেকেই বলছেন, বড় ঘোষণা দেওয়ার আগে আরও ভালো করে পরিস্থিতি সামলানো উচিত ছিল।

‘পর্যটকদের নিরাপত্তা নিয়ে দৃঢ় পদক্ষেপ নিতে হবে’

এক অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা বলেন,  ‘পর্যটকরা সফট টার্গেট, তাই তাদের ওপর হামলা অনেক সহজ। অমরনাথ যাত্রার মতো বড় আয়োজনের ক্ষেত্রে নিরাপত্তা থাকে। তেমনভাবেই পর্যটনকেও সামলাতে হবে। পর্যটকদের নির্দিষ্ট নিরাপদ এলাকায় প্রবেশের অনুমতি দেওয়া যেতে পারে।’

অবসরপ্রাপ্ত জেনারেল ধিলোঁ বলেন, ‘পর্যটকদের সংখ্যা এত বেশি, যে প্রতিটি মানুষকে পর্যবেক্ষণ করা কঠিন। স্থানীয় গাইড, হকার, চালকসহ অনেকেই ভিড়ে থাকেন। এর মধ্যেই চরমপন্থীরা লুকিয়ে থাকতে পারে।’

ইনস্টিটিউট ফর কনফ্লিক্ট ম্যানেজমেন্ট-এর পরিচালক অজয় সাহনি বলেন, ‘এই ধরনের হামলার ফলে আতঙ্ক তৈরি হয়েছে। সরকারের উচিত সাময়িক হলেও কড়া নিরাপত্তাব্যবস্থা নেওয়া, না হলে কাশ্মীরের পর্যটন ধ্বংস হয়ে যাবে।’ ২০১৯ সালে ৩৭০ ধারা বাতিলের পর সরকার পর্যটনসহ নানা ক্ষেত্রে বিনিয়োগের সুযোগ সৃষ্টি করেছে। কিন্তু এ ঘটনার পর কি সেই নীতি বদলাবে?

এরপর কী হবে?

প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং জানিয়েছেন, হামলার জবাব শিগগিরই দেওয়া হবে। তবে কবে এবং কিভাবে, তা জানা যায়নি।
যশোবর্ধন আজাদের মতে, ‘এই হামলার পেছনে পাকিস্তানের হাত রয়েছে। তারা চায় আন্তর্জাতিকভাবে ভারতের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করতে। হামলাকারীদের জীবিত ধরে পাকিস্তানের ভূমিকা প্রমাণ করতে হবে এবং তারপর উপযুক্ত ব্যবস্থা নিতে হবে।’

তিনি বলেন, ‘আমি সংলাপের পক্ষে, কিন্তু এখন যুদ্ধবিরতির বাস্তবতা নিয়েও ভাবার সময় এসেছে। পাকিস্তান এতে বেশি লাভবান হচ্ছে।’

অজয় সাহনি মনে করেন, ‘কাশ্মীরে দীর্ঘ ৩০ বছরের সন্ত্রাসবাদ এখন শেষ পর্যায়ে। ভারত সফল হয়েছে অনেকটা। তবে স্থানীয় মানুষদের সঙ্গে একাত্মতা না গড়ে তুললে সন্ত্রাসের মূল টেনে তোলা সম্ভব নয়।’ তার কথায়, ‘রাজনীতিবিদদের উসকানিমূলক বক্তব্য বন্ধ করতে হবে। গোয়েন্দা তথ্য জোগাড় ও পুলিশের দক্ষতা বাড়াতে হবে। স্থানীয়দের পাশে না থাকলে কোনো অভিযান সফল হবে না।’

সূত্র : বিবিসি
 

মন্তব্য

সর্বশেষ সংবাদ