<p> যুগের শ্রেষ্ঠ মুহাদ্দিস, দারুল উলুম দেওবন্দের শায়খুল হাদিস সাঈদ আহমদ পালনপুরী একবার তিরমিজি শরিফের দরস প্রদানের সময় একটি ঘটনা বলেছিলেন- একবার আমার মামা তাবলিগ জামাতের আমির হজরত উমর পালনপুরী (রহ.) আমাকে প্রশ্ন করলেন, বৎস, বলো তো দারুল উলুম দেওবন্দ এবং মিসরের আল আজহারের মধ্যে পার্থক্য কী?</p> <p> আমি অনেক চিন্তা-ভাবনা করে উত্তর দিলাম, আল আজহার হলো হাতি এবং দেওবন্দ হলো মশা। তিনি বললেন, তুমি সুন্দর বলেছ। তবে আমি তা বোঝাতে চাইনি। আমি এভাবে আরো বেশ কয়েকটি উত্তর দিলাম। কিন্তু কোনোটি মামা গ্রহণ করলেন না। সব শেষে অনেক ভেবে বললাম, আল আজহার হলো একটা বিদ্যাপীঠ, পক্ষান্তরে দারুল উলুম দেওবন্দ হলো একটি আন্দোলন। উত্তর শুনে মামা এত খুশি হলেন যে আমাকে বুকে জড়িয়ে নিলেন এবং বলতে শুরু করলেন, আমি এ প্রশ্নটি অনেককে করেছি, কিন্তু কেউ এত সুন্দর উত্তর দিতে পারেনি। তোমার উত্তর শুনে আমার মন জুড়িয়ে গেল।</p> <p> হজরত পালনপুরী দারুল উলুম দেওবন্দকে একটি আন্দোলন বলে অবহিত করলেন, যা আমাদের কাছে অস্পষ্ট মনে হতে পারে। কিন্তু যদি দেওবন্দ মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠার ইতিহাসে একবার চোখ বুলিয়ে নিই, তাহলে সূর্যের মতো স্পষ্ট হয়ে যাবে যে দেওবন্দ শুধু শিক্ষাকেন্দ্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়নি; তার পেছনে সবচেয়ে বড় কারণ ছিল ধর্ম ও দেশের শত্রুদের বিরুদ্ধে আন্দোলন। যাকে আমরা সহজে ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন বলে থাকি। তাদের বিরুদ্ধে আন্দোনের কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত এ দারুল উলুম। দেওবন্দের সেই ধারা এখনো অব্যাহত আছে। বেশি দিন আগের কথা নয়, হঠাৎ খবর ছড়িয়ে পড়ল, ভারতের কোনো এক প্রদেশে খ্রিস্টান মিশনারি কর্তৃক হিন্দু-মুসলমানরা গণহারে খ্রিস্টান হচ্ছে। সঙ্গে সঙ্গে দেওবন্দ মাদ্রাসায় মিটিং বসে গেল এবং তারা এই সিদ্ধান্তে উপনীত হলো, আগামীকাল থেকে মাদ্রাসার সব কার্যক্রম ওই জায়গায় পরিচালিত হবে, যেখানে মানুষ খ্রিস্টধর্ম গ্রহণ করছে। সেখানে তারা প্রায় এক মাস অবস্থান করে সব অমুসলিমকে ইসলাম ধর্মে দীক্ষিত করে তাদের ইসলামের মৌলিক জ্ঞান শিক্ষা দিয়ে দেওবন্দ ফিরে আসে।</p> <p> আমাদের দেশের কওমি মাদ্রাসার ছাত্র-শিক্ষক সবাই এ কথার দাবিদার যে আমরা ওলামায়ে দেওবন্দের উত্তরসূরি আর এ দেশের কওমি মাদ্রাসা প্রত্যেকটিই দেওবন্দের একেকটি শাখা। আমরা কি একবারের জন্যও এ কথা ভেবে দেখেছি যে উত্তরসূরির দায়িত্ব কী? দেশের এ পরিস্থিতিতে আমাদের করণীয় কী? মাদ্রাসায় পড়ার উদ্দেশ্য কি কোনো মসজিদের ইমাম হওয়া বা সর্বোচ্চ একটি মাদ্রাসার শিক্ষক হওয়া। যখন একদিক থেকে বেরলভি ফেতনার আক্রমণ, অন্যদিকে আহলে হাদিস (খবিস) ও মওদুদী ফেতনার থাবা, সেই সঙ্গে রাজনৈতিক ছায়াতলে থেকে নাস্তিক-মুরতাদদের আস্ফালন, তখন কি মাদ্রাসা ও মসজিদ নিয়ে থাকাটাই আমাদের একমাত্র দায়িত্ব? এসব প্রশ্নের উত্তর খোঁজা এবং নিজ দায়িত্ব ও উদ্দেশ্য বুঝে নিয়ে সেই লক্ষ্যে সম্মুখে অগ্রসর হওয়া কওমি মাদ্রাসার প্রত্যেক ছাত্র-শিক্ষকের একান্ত দায়িত্ব।</p> <p> লেখক : শিক্ষক, জামিয়া মাহমুদিয়া, হামিদনগর, বাহুবল, হবিগঞ্জ।</p> <p>  </p> <p>  </p>