<p>রক্তনালি ব্লক বা হার্ট ব্লকের অনেক কারণ রয়েছে। বংশগত কারণে রক্তনালির ব্লক হতে পারে। যদি কারো বাবা বা ভাইয়ের ৫৫ বছর বয়সের আগে এবং মা বা বোনের ৬৫ বছর বয়সের আগে হার্ট অ্যাটাক হয়, তাহলে ধরে নেবেন আপনার বংশগত রক্তনালি ব্লকের সমস্যা আছে। সুতরাং ৩০ বছর বয়সের পর থেকেই আপনাকে হার্টের চেকআপে থাকতে হবে। রক্তনালির ব্লক যাতে না হয় সেই জন্য ২০ বছরের পর থেকেই নিয়ন্ত্রিত জীবন পদ্ধতি বেছে নিতে হবে। যাঁদের ডায়াবেটিস আছে এবং ডায়াবেটিস অনিয়ন্ত্রিত থাকে তাঁদের রক্তনালি ব্লক হতে পারে। তাই ২৪ ঘণ্টাই যাতে আপনার সুগার নিয়ন্ত্রণে থাকে সে ব্যাপারে সচেষ্ট থাকবেন। যাঁরা ধূমপান করেন তাঁদের হার্ট অ্যাটাক হওয়ার আশঙ্কা অনেক। তাই ধূমপান আজই বন্ধ করুন। এমনকি আপনার কাছে বসেও কাউকে ধূমপান করতে দেবেন না। এটাতে পেসিভ স্মোকিং হয়। এতেও আপনার ক্ষতি হতে পারে। যাঁদের হাইপ্রেসার আছে তাঁদেরও রক্তনালিতে ব্লক হতে পারে। তাই প্রেসারের ওষুধ কখনো বাদ দেওয়া যাবে না। বয়সের কারণেও রক্তনালিতে ব্লক হতে পারে। রক্তনালি ব্লকের আরেকটি কারণ হলো রক্তে অতিরিক্ত কোলেস্টেরল। কোলেস্টেরল বেশি থাকলে রক্তনালির ভেতরে জমে ব্লক তৈরি করে। যাঁরা শর্করাজাতীয় কিংবা মিষ্টিজাতীয় খাবার এবং চর্বিজাতীয় খাবার বেশি খান তাঁদের রক্তে কোলেস্টেরল বেড়ে গিয়ে রক্তনালি ব্লক হতে পারে। কিছু রোগ আছে যেগুলো শরীরে ইনফ্লামেশন বা প্রদাহ তৈরি করে, সেগুলো থেকেও রক্তনালিতে ব্লক হতে পারে।</p> <p> </p> <p>কিভাবে বুঝবেন আপনার হার্টের রক্তনালিতে ব্লক থাকতে পারে?</p> <p>হার্টের রক্তনালিতে ব্লক থাকলে বুকে ব্যথা হয় এবং শ্বাসকষ্ট হয়। একটু পরিশ্রম করলেই তাঁদের বুকে ব্যথা হয়। অতি অল্প পরিশ্রমেই হাঁপিয়ে যান অথবা শ্বাসকষ্ট হয়। হার্টের কিছু টেস্ট আছে, যেমন—ইসিজি, ইকোকার্ডিওগ্রাম, ইটিটি ও এনজিওগ্রাম। এগুলো করে হার্টের ব্লক বা রক্তনালির ব্লক নির্ণয় করা যায়।</p> <p> </p> <p>হার্টের রক্তনালির ব্লকের চিকিৎসা কী?</p> <p>রক্তনালির ব্লক বা হার্টের ব্লক হলে দুশ্চিন্তার কিছু নেই। এর রয়েছে চারটি চমৎকার ও কার্যকর চিকিৎসা। প্রথমত, লাইফস্টাইল মডিফিকেশন মানে ব্যায়াম ও স্বাস্থ্যকর খাবারদাবার। দ্বিতীয়ত, হার্টের ওষুধ। তৃতীয়ত, স্টেন্টিং বা রক্তনালিতে রিং লাগানো। চতুর্থত, বাইপাস সার্জারি বা ওপেন হার্ট সার্জারি।</p> <p>ব্যায়াম : প্রতিদিন ৩০ মিনিট করে সপ্তাহে পাঁচ দিন ব্যায়াম করতে হবে। আপনার জন্য উপযোগী যেকোনো ব্যায়ামই আপনি করতে পারেন। তবে দ্রুত হাঁটা একটি ভালো ব্যায়াম। এ ছাড়া সাইক্লিং অথবা সুইমিংও করতে পারেন। যাঁদের খুব বেশি সময় থাকে না, ব্যস্ত মানুষ, তাঁরা ট্রেডমিল এক্সারসাইজ করতে পারেন। ট্রেডমিল মেশিনে ৮-১০ মিনিটের এক্সারসাইজ করলেও চলবে।</p> <p>খাবারদাবার : হার্ট ভালো রাখার জন্য ফলমূল, শাক-সবজি এবং মাছ বেশি খাবেন। বেশির ভাগ মাছই হার্টের জন্য ভালো। সামুদ্রিক মাছ হার্টের জন্য বেশি ভালো। তবে গলদা চিংড়ি এড়িয়ে চলবেন। এতে অনেক কোলেস্টেরল থাকে। এটি বাদ দিলেই ভালো। মাংসের মধ্যে মুরগির মাংস খেতে পারবেন। তবে চামড়া বাদ দিয়ে। গরু ও খাসির মাংস খুবই কম খাবেন। বাদ দিতে পারলেই ভালো। কবুতর ও পাখির মাংস খাবেন না। ভেড়া ও শূকরের মাংসে অনেক চর্বি থাকে— এগুলো খাবেন না। চর্বি ও তেল জাতীয় খাবার কম খাবেন। রান্নায় তেল খুবই কম ব্যবহার করবেন। রান্নায় যেকোনো উদ্ভিজ্জ তেল, যেমন—সয়াবিন তেল, অলিভ অয়েল ইত্যাদি ব্যবহার করতে পারেন। তবে যে তেলই ব্যবহার করেন না কেন, খুবই কম ব্যবহার করবেন। হার্টের জন্য কোন তেল ভালো? এর উত্তর হলো কোনো তেলই ভালো না, যদি সেটা পরিমাণে বেশি হয়।</p> <p>ওষুধ : হার্টের রোগীদের কয়েকটি ওষুধ সারা জীবন খেতে হয়। তবে যাঁরা নিয়মিত ব্যায়াম করেন এবং খাবারদাবারের নিয়ম মেনে চলেন তাঁদের জন্য ওষুধ এত বেশি দরকার হয় না। সঠিক নিয়ম মেনে চললে অনেক কম ওষুধেও হার্ট ব্লকের রোগীদের ভালো রাখা সম্ভব। কার কী ওষুধ প্রয়োজন সেটা নির্ভর করে রোগের তীব্রতার ওপর এবং সেটা আপনার হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ ঠিক করে দেবেন। হার্টের ওষুধ কখনো হৃদরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ ছাড়া বন্ধ করবেন না অথবা নিজে নিজে বাড়িয়ে খাবেন না।</p> <p>স্টেন্টিং বা রক্তনালিতে রিং স্থাপন : হার্টের রক্তনালির ব্লকের তৃতীয় চিকিৎসা হলো স্টেন্টিং। মানে রক্তনালিতে রিং স্থাপন। হার্টের রক্তনালিতে চর্বি জমে ব্লক হয়ে যায়। রক্ত চলাচল বাধাগ্রস্ত হয়। ফলে হার্ট ভালোভাবে কাজ করতে পারে না। তাই হার্টের রক্তনালির ব্লকের স্থানে একটি রিং বসিয়ে রক্ত চলাচল স্বাভাবিক করে দেওয়া হয়। একজন হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ এই সিদ্ধান্ত নেবেন কার ব্লকে রিং বসাতে হবে অথবা কার বসাতে হবে না। ইমার্জেন্সি হার্ট অ্যাটাকে এই স্টেন্টিং বা রিং স্থাপন একটি উন্নত মানের জীবনরক্ষাকারী চিকিৎসা। এবং হার্টের ওষুধ খাওয়ার পরও যাঁদের ব্যথা থাকে কিংবা হার্টের কার্যক্ষমতা কম থাকে তাঁদের জন্যও রিং স্থাপন একটি ভালো চিকিৎসা।</p> <p>বাইপাস সার্জারি বা ওপেন হার্ট সার্জারি : হার্টের রক্তনালির ব্লকের অন্য আরেকটি চিকিৎসা হলো ওপেন হার্ট সার্জারি বা বাইপাস সার্জারি। ব্লকের পরিমাণ এবং সংখ্যা অনেক বেশি হলে অনেক সময় রিং স্থাপন করা সম্ভব হয় না। তাঁদের ওপেন হার্ট সার্জারি করে, ব্লকগুলো বাইপাস করে বিকল্প রক্তনালি তৈরি করে দেওয়া হয়, যাতে রক্ত চলাচল স্বাভাবিকভাবে করতে পারে।</p> <p>হার্টের রক্তনালির ব্লক হলেই জীবন শেষ নয়। এর রয়েছে চমৎকার চিকিৎসাব্যবস্থা। আপনার হার্ট স্পেশালিস্টের নিবিড় তত্ত্বাবধানে থেকে আপনি পেতে পারেন আগের মতো নতুন জীবন।</p> <p> </p> <p>লেখক : সহকারী অধ্যাপক (কার্ডিওলজি)</p> <p>ইন্টারভেনশনাল কার্ডিওলজিস্ট</p> <p>গ্রীন লাইফ হসপিটাল, ধানমণ্ডি, ঢাকা</p>