স্থবিরতা কাটাতে ব্যবস্থা নিন

  • মন্দায় মুমূর্ষু আবাসন খাত
শেয়ার
স্থবিরতা কাটাতে ব্যবস্থা নিন

দেশের অর্থনীতিতে বিশেষ ভূমিকা রাখে এমন খাতগুলোর মধ্যে আবাসন খাত একটি। সাম্প্রতিক সময়ে এই আবাসনশিল্পে বন্ধ্য পরিস্থিতি বিরাজ করছে। অথচ এই খাতটিকে ঘিরে দেশের অনেক মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ হয়েছে, বিনিয়োগ হয়েছে। এই খাত সংকটাপন্ন হলে দেশের অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

দেশের আবাসন খাতকে ঘিরে নানা প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। রি-রোলিং মিল, সিমেন্ট, স্টিল মিল থেকে শুরু করে বেসরকারি খাতের অনেক শিল্প আবাসন খাতের ওপর নির্ভর করে গড়ে উঠেছে। এসব খাতে অনেক কর্মসংস্থান হয়েছে। নতুন নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগও সৃষ্টি হচ্ছিল, কিন্তু আবাসন খাত আজ রীতিমতো মুখ থুবড়ে পড়েছে।

সংশ্লিষ্ট শিল্পগুলোতেও দেখা দিয়েছে অচলাবস্থা। একদিকে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর সহায়তার অভাব, প্রবাসীদের বিনিয়োগ কমে যাওয়ায় আবাসন খাতে দেখা দিয়েছে শ্লথগতি। অন্যদিকে রয়েছে সেবা সহায়তা ও সুষ্ঠু নীতির অভাব।

কালের কণ্ঠে গতকাল প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থানে দেশে সবচেয়ে এগিয়ে থাকা আবাসন খাত এখন ক্রান্তিকাল পার করছে।

অর্থনীতির অন্যতম প্রধান এই খাতটিতে অচলাবস্থা চলছে। প্লট, ফ্ল্যাট ও বাড়ি বিক্রিতে মন্দার কারণে এই খাতজুড়ে চরম স্থবিরতা। নতুন বিনিয়োগ না হওয়া ও পুরনো প্রজেক্ট প্রায় অচল হয়ে থাকায় উদ্যোক্তারাও পরিচালন ব্যয় মেটাতে হিমশিম খাচ্ছেন। অনেক কম্পানি পরিচালন খরচ মেটাতে লাভ না করেই প্লট-ফ্ল্যাট ছেড়ে দিচ্ছে। উদ্যোক্তারা বলছেন, অন্তত ৬০ শতাংশ ব্যবসা মন্দার কবলে।
এর ধাক্কা এসে লেগেছে আবাসন খাতের সঙ্গে জড়িত রড, সিমেন্টসহ অন্তত আড়াই শ উপখাতেও। দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের অন্যতম চালিকাশক্তি আবাসন খাতের সঙ্গে ছোট-বড় অনেকগুলো শিল্প ও উপখাত জড়িত। এসব খাতেও অনেক শিল্পপ্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হওয়ায় দেশের অর্থনীতিতেও গতির সঞ্চার হয়েছিল। আবাসান খাতের দুরবস্থার সঙ্গে সঙ্গে এ খাতের কর্মীদের জীবনযাপনও হুমকিতে পড়েছে।

দেশের অর্থনীতিতে বিশেষ ভূমিকা রাখা খাতগুলো একটি অপরটির সঙ্গে জড়িত। একটি ক্ষতিগ্রস্ত হলে অন্যটিতেও তার প্রভাব পড়ে। অথচ উৎপাদন, বিপণন ও কর্মসংস্থান সৃষ্টি করে জাতীয় অর্থনীতিতে অবদান রেখে চলা অনেক প্রতিষ্ঠানেরই আজ মুমূর্ষু অবস্থা হয়েছে। অনেক সম্ভাবনা নিয়ে বিনিয়োগ করে জাতীয় অর্থনীতিতে ২১ শতাংশ অবদান রাখার পরও শিল্প হিসেবে বিকশিত হতে পারেনি আবাসনশিল্প। বিকাশের পথ রুদ্ধ করে রেখেছে নানা প্রতিবন্ধকতা। দেশের অর্থনীতির অন্যতম চালিকাশক্তি এই আবাসনশিল্প কর্মসংস্থানেও বড় ভূমিকা রাখছিল। কিন্তু খাতটির দুরবস্থার সঙ্গে সঙ্গে শিল্পে কর্মরত জনবলের ওপরও আঘাত আসছে। নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার স্বার্থে এখন কর্মী ছাঁটাই শুরু হয়েছে অনেক শিল্প-কারখানায়। দেশের অর্থনীতিতে এর বিরূপ প্রভাব এরই মধ্যে পড়তে শুরু করেছে।

বেসরকারি বিনিয়োগের পথ কণ্টকমুক্ত না হলে দেশের অর্থনৈতিক উন্নতি সম্ভব হবে না। নতুন বিনিয়োগও আসবে না। দেশের অর্থনীতির স্বার্থে আবাসন খাতের বাধাগুলো দূর করা দরকার। এতে দেশের অন্যান্য শিল্প বিকশিত হওয়ার সুযোগ পাবে। আমাদের প্রত্যাশা, আবাসন খাতের স্থবিরতা দূর করতে জরুরি ভিত্তিতে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

 

মন্তব্য

সম্পর্কিত খবর

বায়ুমান উন্নয়নে পদক্ষেপ নিন

    বায়ুদূষণে দ্বিতীয় বাংলাদেশ
শেয়ার
বায়ুমান উন্নয়নে পদক্ষেপ নিন

নিঃশ্বাসের মাধ্যমে আমরা বায়ু থেকে অক্সিজেন নিই এবং এই অক্সিজেন ছাড়া বাঁচা সম্ভব নয়। কিন্তু বাংলাদেশে বায়ুদূষণের যে অবস্থা, তাতে নিঃশ্বাসের সঙ্গে আমরা প্রতিনিয়ত প্রচুর বিষ বা মৃত্যুর উপাদানও নিচ্ছি। গতকাল কালের কণ্ঠে প্রকাশিত প্রতিবেদনে দেখা যায়, ২০২৪ সালে বিশ্বে সর্বাধিক বায়ুদূষণের কবলে থাকা দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ ছিল দ্বিতীয় অবস্থানে। আর এশিয়ার মধ্যে ছিল প্রথম স্থানে।

বিশ্বে এক নম্বরে ছিল উত্তর-মধ্য আফ্রিকার দেশ চাদ। বায়ুদূষণের এই তালিকা প্রকাশ পেয়েছে সুইজারল্যান্ডভিত্তিক বায়ুমান পর্যবেক্ষণকারী প্রতিষ্ঠান আইকিউএয়ারের বৈশ্বিক বায়ুমান প্রতিবেদন ২০২৪ (ওয়ার্ল্ড এয়ার কোয়ালিটি রিপোর্ট ২০২৪) শীর্ষক প্রতিবেদনে।

বাংলাদেশ দীর্ঘদিন ধরেই বিশ্বে সর্বাধিক দূষিত বায়ুর দেশ। প্রায়ই বাংলাদেশ প্রথম বা দ্বিতীয় স্থানে থাকে।

২০২৩ সালে বিশ্বে বায়ুদূষণের শীর্ষে ছিল বাংলাদেশ। বিভিন্ন দেশ ও অঞ্চলের বায়ুদূষণ নিয়ে টানা সপ্তমবারের মতো এই প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে আইকিউএয়ার। এবারের প্রতিবেদনে বিশ্বের ১৩৮টি দেশ ও অঞ্চলের আট হাজার ৯৫৪টি শহরের ৪০ হাজারেরও বেশি বায়ুমান পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের উপাত্ত বিশ্লেষণ করেছেন আইকিউএয়ারের বায়ুমান বিশেষজ্ঞরা। কাজেই এই প্রতিবেদনের সত্যতাকে অস্বীকার করা যাবে না।
মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর অতি ক্ষুদ্র বস্তুকণা (পিএম ২.৫) পর্যালোচনা করে বায়ুদূষণের এই প্রতিবেদন তৈরি করে আইকিউএয়ার। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) নির্ধারিত মান অনুযায়ী, বাতাসে অতি ক্ষুদ্র বস্তুকণার বার্ষিক গড় প্রতি ঘনমিটারে ৫ মাইক্রোগ্রাম বা তার কম হতে হবে। প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত বছর বাংলাদেশের বাতাসে প্রতি ঘনমিটারে এর পরিমাণ ছিল ৭৮ মাইক্রোগ্রাম, যা নির্ধারিত বার্ষিক মানমাত্রার চেয়ে প্রায় ১৫ গুণ বেশি। আইকিউএয়ারের গতকাল বুধবারের প্রতিবেদন অনুযায়ী বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা ছিল দ্বিতীয় অবস্থানে। সকাল সাড়ে ১০টার দিকে বাতাসে অতি ক্ষুদ্র বস্তুকণা পিএম ২.৫ ছিল ২৩ গুণ বেশি।
আর গত বছর ছিল তৃতীয় অবস্থানে।

নিঃশ্বাসের সঙ্গে দূষিত বায়ু গ্রহণের কারণে মূলত মানুষের ফুসফুস আক্রান্ত হচ্ছে, শ্বাসতন্ত্রের রোগ বাড়ছে। বায়ুদূষণ ক্যান্সার, হৃদরোগসহ আরো অনেক রোগেরই কারণ হচ্ছে। বায়ুদূষণ জনিত বিভিন্ন রোগে প্রতিবছর লক্ষাধিক মানুষের মৃত্যু হচ্ছে। বহু মানুষ অসুস্থ হয়ে ধুঁকে ধুঁকে মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। বহু মানুষ কর্মক্ষমতা হারিয়ে ফেলছে। দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশে বায়ুদূষণের এমন দুর্বিষহ অবস্থা চললেও বায়ুদূষণ রোধের প্রচেষ্টা কম। বায়ুদূষণের কারণ বা উৎসগুলো আমাদের অজানা নয়। বাংলাদেশে বায়ুদূষণের অন্যতম কারণ হলো সনাতন পদ্ধতির ইটভাটা ও ত্রুটিপূর্ণ যানবাহন। বায়ুদূষণের জন্য দায়ী কালো ধোঁয়ার ৩৮ শতাংশই নির্গত হয় ইটভাটা থেকে। আর যানবাহন থেকে নির্গত হয় ১৯ শতাংশ। দূষণের এই দুটি উৎস নিয়ন্ত্রণ করা গেলেও বায়ুমান অনেকটা উন্নত হয়।

আমরা আশা করি, দেশের মানুষের জীবন রক্ষার প্রয়োজনে অতি দ্রুত বায়ুমান উন্নয়নে পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

মন্তব্য

কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে

    পোশাকশিল্পে বেতন-বোনাস পরিশোধ
শেয়ার
কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে

গার্মেন্টস বা পোশাকশিল্প এখন পর্যন্ত দেশের প্রধান রপ্তানি খাত। সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা ও সুযোগ-সুবিধা পাওয়ার দিক থেকেও তারা শীর্ষস্থানে। অন্যদিকে একে সবচেয়ে সমস্যাগ্রস্ত খাতও বলা চলে। শ্রমিক অসন্তোষ, বিশেষ করে শ্রমিকদের বেতন-ভাতা ও বোনাস পরিশোধ সংক্রান্ত জটিলতা লেগেই আছে।

আগের তুলনায় সমস্যা কিছুটা কমলেও এখনো বিশেষ করে দুই ঈদের আগে শ্রমিকদের রাস্তায় নেমে জনদুর্ভোগ সৃষ্টি করতে দেখা যায়। গার্মেন্টসকর্মীদের কাছে বছরের দুই ঈদে যে দুটি বোনাস দেওয়া হয়, তা-ই অনেক বড় প্রাপ্তি। নিজের সন্তান কিংবা ভাই-বোন, মা-বাবার জন্য সামান্য কিছু উপহার কেনার জন্য সবাই ঈদ বোনাসের অপেক্ষায় থাকেন। কিন্তু সেটি যখন না পাওয়া যায়, তখন তাঁদের কষ্টের সীমা-পরিসীমা থাকে না।
প্রতিবছরই দেখা যায়, অল্প কিছু কারখানা শ্রমিকের বেতন-বোনাস প্রদানে যথেষ্ট গড়িমসি করে। প্রতিবছরই হাতে গোনা কিছু প্রতিষ্ঠান বোনাস নিয়ে ঝামেলার সৃষ্টি করে। অনেকে বেতনও আটকে রাখে, যাতে শেষ মুহূর্তে বোনাস না দিয়ে শুধু বেতন দিয়ে বিদায় করা যায়।

কালের কণ্ঠে গতকাল প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, কারখানার মালিকদের এবার একই সময়ে দুই মাসের (ফেব্রুয়ারি-মার্চ) মজুরি এবং ঈদ বোনাস দিতে হবে।

সরকারের শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় এবং তৈরি পোশাক খাতের শীর্ষ সংগঠন বিজিএমইএ থেকেও আশঙ্কা করছে, ৬০টির বেশি কারখানা এবার বেতন-বোনাস নিয়ে ঝুঁকিতে আছে। প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, এসব কারখানার বেশির ভাগ রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের ফলে ঝুঁকিতে পড়েছে। কেউ কেউ স্বেচ্ছায় ঋণখেলাপি হয়েছে। আর এসব ইস্যু সামনে নিয়ে শ্রমিক নেতারাও শিগগিরই মাঠে নামছেন বলে জানা গেছে। তাঁদের দাবি, ২০ রমজানের মধ্যে বোনাস ও ঈদের ছুটি এবং এর আগে ওভারটাইমের পাওনা টাকা পরিশোধ করতে হবে।
বকেয়া বেতন পরিশোধ ও এক শ্রমিককে মারধরের বিচারের দাবিতে গত মঙ্গলবার গাজীপুর মহানগরীর দুটি এবং কালিয়াকৈরের মৌচাক এলাকার একটি পোশাক কারখানার শ্রমিকরা মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন। একটি কারখানায় ব্যাপক ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। অবরোধের কারণে যানবাহন আটকা পড়ে ঢাকা-ময়মনসিংহ ও ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে তীব্র যানজট ও ভোগান্তির সৃষ্টি হয়। অসন্তোষ ও ভাঙচুর এড়াতে ১২টি কারখানায় ওই দিনের জন্য ছুটি ঘোষণা করে কর্তৃপক্ষ।

খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, কিছু ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের নিজস্ব সংকট রয়েছে। রাজনৈতিক সংকটের ফলে অনেক বড় কারখানা সংকটে পড়েছে। এর মধ্যে কিছু মালিক সব সময় সরকারের কাছ থেকে সুবিধা নিতে চান। বিজিএমইএর নেতাদের মতে, কিছু সংকট দেখা দিয়েছে কোনো কোনো কারখানার মালিকদের নিজস্ব কারণে। এ সময় ব্যাংকগুলোও খুব একটা এগিয়ে আসেনি। এ কারণে কারো জন্য একটু কষ্টকর হবে। শ্রমিক নেতারা মনে করেন, সরকারের কাছ থেকে বাড়তি সুবিধা নিতে রোজা-ঈদ এলে শ্রমিকদের জিম্মি করে কৃত্রিম সংকট তৈরি করেন শিল্প মালিকরা। তাঁরা কর্মসংস্থানের কথা বলে বাড়তি সুবিধা নিতে সরকারের কাছ থেকে এসব সুবিধা আদায় করেন।

নানা অব্যবস্থার কারণে আমাদের পোশাকশিল্প এখনো বড় ধরনের ইমেজ সংকটে রয়েছে। দেশের এবং শিল্পের স্বার্থেই এই সংকট কাটিয়ে ওঠা জরুরি। প্রতিবছরই দেখা যায়, অল্প কিছু কারখানা শ্রমিকদের বেতন-বোনাস প্রদানে যথেষ্ট গড়িমসি করে। তাদের ব্যাপারে সিদ্ধান্তে আসা প্রয়োজন। কেউ যাতে শ্রমিকদের অসহায়ত্বকে পুঁজি করে অনিয়মের আশ্রয় নিতে না পারে, সে ব্যাপারে সজাগ থাকতে হবে।

আমরা চাই না সারা বছর কাজ করার পর ঈদের আগে শ্রমিকরা বেতন-বোনাসের দাবিতে রাস্তায় নেমে আসুন। এর আগেই সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন, এমনটাই প্রত্যাশিত।

মন্তব্য

কঠোর আইন হোক

    পাচার হওয়া টাকা ফেরত আনা
শেয়ার
কঠোর আইন হোক

বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতিতে একটি প্রধান বাধা হিসেবে চিহ্নিত করা হয় মুদ্রাপাচারকে। মুদ্রাপাচার রোধে সরকারের বেশ কিছু বিশেষায়িত সংস্থা রয়েছে। কিন্তু বিগত দিনগুলোতে কী হয়েছে? গত দেড় দশকে টাকা পাচারের স্বর্গরাজ্য ছিল বাংলাদেশ। স্বচ্ছতা, জবাবদিহি, সুশাসনের অভাব আর প্রাতিষ্ঠানিক দুর্নীতির প্রশ্রয়ে এ দেশের সম্পদ ও টাকা খুব সহজেই পাচার হয়েছে ভিনদেশে।

কালের কণ্ঠে গতকাল প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, বিদেশে পাচার হওয়া টাকা দ্রুত ফেরত আনতে শিগগিরই সরকার একটা বিশেষ আইন করবে বলে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম। গত সোমবার রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে এক ব্রিফিংয়ে তিনি বলেছেন, পাচার করা টাকা কিভাবে আনা যায়, সেটা ত্বরান্বিত করতে একটি বিশেষ আইন শিগগিরই করা হবে। পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনার ক্ষেত্রে যেসব বিদেশি সাহায্য করছেন, তাঁরাও এ ধরনের আইনের চাহিদার কথা বলছেন। সেই অনুযায়ী আইনটি করা হচ্ছে।

আগামী সপ্তাহের মধ্যে এই আইন দেখা যাবে বলে প্রেস সচিব উল্লেখ করেছেন। তিনি উল্লেখ করেছেন, টাকা ফেরত আনার প্রচেষ্টা কত দূর এগিয়েছে, সেটার ওপর একটা বড় সভা হয়েছে। সভায় নেতৃত্ব দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা। সেই সভায় অনেক সিদ্ধান্ত হয়েছে।
আইনি সহায়তা পেতে অনেক ল ফার্মের সঙ্গে সরকার ও টাস্কফোর্স কথা বলছে। ল ফার্মের সঙ্গে অ্যাগ্রিমেন্ট করতে এ আইন সাহায্য করবে।

আগের সরকারের সময় অর্থ পাচার হওয়া নিয়ে গুরুতর অভিযোগ ওঠা এবং ব্যাপক আলোচনা হওয়া সত্ত্বেও এই অপরাধ বন্ধ করতে সেই সরকারকে তেমন কোনো পদক্ষেপ নিতে আমরা দেখিনি। বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার পাচার হওয়া অর্থ ফিরিয়ে আনা ও অর্থপাচার রোধে বহুমুখী উদ্যোগ নিচ্ছে। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, আগামী দিনে যাতে অর্থপাচার রোধ করা যায় সে জন্য দুর্নীতি দমন কমিশন, বাংলাদেশ ব্যাংকের বিএফআইইউ ও এনবিআরের সিআইসিকে কাজ করতে হবে।

অর্থনীতিবিদদের মতে, যেহেতু অর্থপাচার হয় বাণিজ্যের আড়ালে, সেহেতু এনবিআরের ভূমিকা বেশি। যে টাকা দেশের বাইরে চলে গেছে, সেটা ফেরত আনার চেয়ে যে টাকাটা চলে যেতে পারে, সেটা আটকানো বেশি গুরুত্বপূর্ণ ও সহজ। যেসব সংস্থা অর্থপাচার রোধের সঙ্গে যুক্ত তাদের তৎপরতা বাড়াতে হবে। টাকা ফেরতের ক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট কিছু পদক্ষেপ যদি দৃশ্যমান হয়, তাহলে মানুষ একটা ভরসা পাবে। খুব দ্রুত কিছু পদক্ষেপ নিতে হবে।

অতীতে পাচার হওয়া টাকা ফেরত আনার ব্যাপারে গণমাধ্যমে প্রচুর লেখালেখি হয়েছে। কিন্তু পাচার হওয়া টাকা ফেরত আনার কোনো উদ্যোগ নিতে দেখা যায়নি। বাংলাদেশের অর্থনীতির সবচেয়ে বেশি ক্ষতি করছে দেশের সম্পদ ও মুদ্রাপাচার। দীর্ঘদিন ধরেই চলে আসছে এই ক্ষতিকর প্রবণতা। পাচারকৃত সম্পদ ও মুদ্রা পুনরুদ্ধারে আমাদের আরো কঠোর হতে হবে।

 

মন্তব্য

অপরাধ দমনে ব্যবস্থা নিন

    আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি
শেয়ার
অপরাধ দমনে ব্যবস্থা নিন

অন্তর্বর্তী সরকারের সামনে এখনো প্রধান যেসব চ্যালেঞ্জ রয়েছে, তার একটি হচ্ছে দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা। সারা দেশেই ঘটছে খুনের ঘটনা। সেই সঙ্গে বেড়েছে ছিনতাই, চুরি-ডাকাতি। বাড়ছে হুমকি-ধমকি ও চাঁদাবাজির ঘটনা।

নানামুখী পদক্ষেপ নেওয়ার পরও পথে-ঘাটে, এমনকি নিজের বাসার ভেতরেও মানুষ নিরাপত্তাহীন। কালের কণ্ঠে প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, সারা দেশে সব ধরনের অপরাধ বেড়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে হত্যা, নারী-শিশু নির্যাতন, ধর্ষণ, শ্লীলতাহানি, চুরি, ডাকাতি, দস্যুতা, ছিনতাই, অপহরণ, চাঁদাবাজি, বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে হামলা, দখল, চোরাচালান, মাদক ব্যবসার মতো অন্তত ১১ ধরনের অপরাধমূলক ঘটনা বেড়েছে। এসব নিয়ন্ত্রণে জোরালো পদক্ষেপ না থাকায় সাধারণ মানুষ আতঙ্কিত।
পুলিশ সদর দপ্তরের পরিসংখ্যানেও অপরাধ বেড়ে যাওয়ার তথ্য রয়েছে। তথ্য অনুযায়ী, গত বছর প্রথম ছয় মাসের (জানুয়ারি-জুন) তুলনায় এর পরের সাত মাস (জুলাই ২৪-জানুয়ারি ২৫) প্রায় সব ধরনের অপরাধের ঘটনায় মামলার সংখ্যা বেড়েছে। নারী-শিশু নির্যাতন, ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনা সমাজে আতঙ্কে আছে মানুষ।

অপরাধ বিশ্লেষকরা বলছেন, সমাজে অপরাধমূলক নানা ঘটনায় ভুক্তভোগীরা রীতিমতো অসহায়।

আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর দায়িত্বে ঘাটতির বিষয়টিও দৃশ্যমান। দায়িত্বশীলদের সঠিক জবাবদিহির আওতায় না আনা, আইন না মানার প্রবণতা এবং আইনের যথাযথ প্রয়োগ না থাকা এসব ঘটনার পেছনে বেশির ভাগ দায়ী বলে তাঁরা মনে করছেন।

এটি ঠিক যে সমাজের কিছু মানুষ যেন দিন দিন অপরাধপ্রবণ হয়ে উঠছে। এক শ্রেণির মানুষ পুলিশ-প্রশাসন, বিচারব্যবস্থা, মানবিক মূল্যবোধকোনো কিছুরই তোয়াক্কা করছে না, যে কারণে সমাজে খুনখারাবিসহ অপরাধপ্রবণতা বাড়ছে। স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠছে, দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির এ রকম অবনতির কারণ কী? কেন খুনখারাবির লাগাম টেনে ধরা যাচ্ছে না? কেন বন্ধ করা যাচ্ছে না নৃশংসতা, অমানবিকতা? পেশাগত অপরাধীদের তৎপরতা বেড়ে যাওয়া এবং ব্যক্তিগত ও রাজনৈতিক ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ ঘটানোর কারণেই আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।

সারা দেশেই অপরাধ কর্মকাণ্ড বাড়ছে। আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির ক্রমেই অবনতি হচ্ছে। অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্রের ব্যবহার বাড়ছে। বাড়ছে খুনখারাবি, চাঁদাবাজি, চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই, অপহরণ, রাহাজানি, লুটতরাজের মতো ঘটনা। ফলে মানুষের মধ্যে নিরাপত্তার অভাববোধ ক্রমেই তীব্র হচ্ছে। আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির এমন অবনতি মানুষের জীবনকে দুর্বিষহ করে তুলছে।

নিরাপদে বসবাস করা মানুষের মৌলিক অধিকার। আর মানুষের সেই মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করার দায়িত্ব রাষ্ট্রের। খুনখারাবির লাগাম টেনে ধরতে না পারলে জনমনে নিরাপত্তাহীনতার বোধ তীব্র হবে। তাই আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এখনই কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীকে আরো তৎপর হতে হবে। দেশে অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টি হোক, সেটি আমরা কেউ চাই না। আমাদের প্রত্যাশা, অবনতিশীল আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সংশ্লিষ্ট সবার আন্তরিক চেষ্টায় সুস্থ পরিবেশ প্রতিষ্ঠিত হবে।

মন্তব্য

সর্বশেষ সংবাদ