ঢাকা, বুধবার ১৯ মার্চ ২০২৫
৫ চৈত্র ১৪৩১, ১৮ রমজান ১৪৪৬

ঢাকা, বুধবার ১৯ মার্চ ২০২৫
৫ চৈত্র ১৪৩১, ১৮ রমজান ১৪৪৬

অপরাধ দমনে ব্যবস্থা নিন

  • আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি
শেয়ার
অপরাধ দমনে ব্যবস্থা নিন

অন্তর্বর্তী সরকারের সামনে এখনো প্রধান যেসব চ্যালেঞ্জ রয়েছে, তার একটি হচ্ছে দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা। সারা দেশেই ঘটছে খুনের ঘটনা। সেই সঙ্গে বেড়েছে ছিনতাই, চুরি-ডাকাতি। বাড়ছে হুমকি-ধমকি ও চাঁদাবাজির ঘটনা।

নানামুখী পদক্ষেপ নেওয়ার পরও পথে-ঘাটে, এমনকি নিজের বাসার ভেতরেও মানুষ নিরাপত্তাহীন। কালের কণ্ঠে প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, সারা দেশে সব ধরনের অপরাধ বেড়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে হত্যা, নারী-শিশু নির্যাতন, ধর্ষণ, শ্লীলতাহানি, চুরি, ডাকাতি, দস্যুতা, ছিনতাই, অপহরণ, চাঁদাবাজি, বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে হামলা, দখল, চোরাচালান, মাদক ব্যবসার মতো অন্তত ১১ ধরনের অপরাধমূলক ঘটনা বেড়েছে। এসব নিয়ন্ত্রণে জোরালো পদক্ষেপ না থাকায় সাধারণ মানুষ আতঙ্কিত।
পুলিশ সদর দপ্তরের পরিসংখ্যানেও অপরাধ বেড়ে যাওয়ার তথ্য রয়েছে। তথ্য অনুযায়ী, গত বছর প্রথম ছয় মাসের (জানুয়ারি-জুন) তুলনায় এর পরের সাত মাস (জুলাই ২৪-জানুয়ারি ২৫) প্রায় সব ধরনের অপরাধের ঘটনায় মামলার সংখ্যা বেড়েছে। নারী-শিশু নির্যাতন, ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনা সমাজে আতঙ্কে আছে মানুষ।

অপরাধ বিশ্লেষকরা বলছেন, সমাজে অপরাধমূলক নানা ঘটনায় ভুক্তভোগীরা রীতিমতো অসহায়।

আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর দায়িত্বে ঘাটতির বিষয়টিও দৃশ্যমান। দায়িত্বশীলদের সঠিক জবাবদিহির আওতায় না আনা, আইন না মানার প্রবণতা এবং আইনের যথাযথ প্রয়োগ না থাকা এসব ঘটনার পেছনে বেশির ভাগ দায়ী বলে তাঁরা মনে করছেন।

এটি ঠিক যে সমাজের কিছু মানুষ যেন দিন দিন অপরাধপ্রবণ হয়ে উঠছে। এক শ্রেণির মানুষ পুলিশ-প্রশাসন, বিচারব্যবস্থা, মানবিক মূল্যবোধকোনো কিছুরই তোয়াক্কা করছে না, যে কারণে সমাজে খুনখারাবিসহ অপরাধপ্রবণতা বাড়ছে। স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠছে, দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির এ রকম অবনতির কারণ কী? কেন খুনখারাবির লাগাম টেনে ধরা যাচ্ছে না? কেন বন্ধ করা যাচ্ছে না নৃশংসতা, অমানবিকতা? পেশাগত অপরাধীদের তৎপরতা বেড়ে যাওয়া এবং ব্যক্তিগত ও রাজনৈতিক ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ ঘটানোর কারণেই আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।

সারা দেশেই অপরাধ কর্মকাণ্ড বাড়ছে। আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির ক্রমেই অবনতি হচ্ছে। অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্রের ব্যবহার বাড়ছে। বাড়ছে খুনখারাবি, চাঁদাবাজি, চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই, অপহরণ, রাহাজানি, লুটতরাজের মতো ঘটনা। ফলে মানুষের মধ্যে নিরাপত্তার অভাববোধ ক্রমেই তীব্র হচ্ছে। আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির এমন অবনতি মানুষের জীবনকে দুর্বিষহ করে তুলছে।

নিরাপদে বসবাস করা মানুষের মৌলিক অধিকার। আর মানুষের সেই মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করার দায়িত্ব রাষ্ট্রের। খুনখারাবির লাগাম টেনে ধরতে না পারলে জনমনে নিরাপত্তাহীনতার বোধ তীব্র হবে। তাই আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এখনই কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীকে আরো তৎপর হতে হবে। দেশে অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টি হোক, সেটি আমরা কেউ চাই না। আমাদের প্রত্যাশা, অবনতিশীল আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সংশ্লিষ্ট সবার আন্তরিক চেষ্টায় সুস্থ পরিবেশ প্রতিষ্ঠিত হবে।

মন্তব্য

সম্পর্কিত খবর

সংরক্ষণ সুবিধা বাড়ান

    আলু চাষিদের মাথায় হাত
শেয়ার
সংরক্ষণ সুবিধা বাড়ান

বাংলাদেশে আলু, পেঁয়াজসহ এমন কিছু পচনশীল ফসল রয়েছে, মৌসুমে যেগুলোর দাম অস্বাভাবিকভাবে পড়ে যায়। কৃষকের তখন মাথায় হাত। মাথার ঘাম পায়ে ফেলে উৎপাদন করা ফসলের তখন যে দাম পাওয়া যায়, তাতে উৎপাদন খরচও উঠে না। আবার মৌসুম শেষ হতেই সেগুলোর দাম লাফিয়ে বাড়তে থাকে।

কিছুদিন আগেও আলুর দাম ছিল ৭৮-৮০ টাকা। পেঁয়াজের দাম কখনো কখনো ২০০ টাকা ছাড়িয়েছে। কাঁচা মরিচের দাম ছাড়িয়ে যায় হাজার টাকাও। এর জন্য দায়ী মূলত পর্যাপ্ত সংরক্ষণ সুবিধার অভাব।
গতকাল কালের কণ্ঠে প্রকাশিত প্রতিবেদনে দেখা যায়, গত মৌসুমে দাম বেশি থাকায় কৃষকরা এ বছর আলুর চাষ অনেক বাড়িয়ে দিয়েছিলেন। ফলে চাহিদার চেয়ে বেশি আলু উৎপাদন হয়েছে। এখন বাজারে আলুর দাম পড়ে যাওয়ায় কৃষকরা কেজিপ্রতি সাত-আট টাকা লোকসান দিয়ে বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন। কারণ অতিরিক্ত ভাড়ার কারণে তাঁরা হিমাগারেও আলু রাখতে পারছেন না।
এই পরিস্থিতিতে আলুর রপ্তানি বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে সরকার।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের (ডিএই) তথ্য অনুযায়ী দেশে আলুর উৎপাদন ছাড়িয়েছে এক কোটি ৯ লাখ টন। অন্যদিকে চাহিদা ৯০ লাখ টন, যা চাহিদার চেয়ে ১৯ লাখ টন বা ২২ শতাংশ বেশি। গত ৯ বছর ধরে প্রতিবছর কিছু আলু রপ্তানি হলেও তার পরিমাণ খুবই কম। রপ্তানির পরিমাণ গড়ে প্রতিবছর ৫০ হাজার টনের মতো।

কিন্তু গত অর্থবছরে আলুর সংকট থাকায় প্রায় এক লাখ টন আলু আমদানিও করতে হয়েছে। উৎপাদন সংকটে গত অর্থবছরে রপ্তানি হয়েছিল মাত্র ১২ হাজার টন। চলতি অর্থবছরের প্রায় সাত মাসে রপ্তানি হয়েছে ১২ হাজার টনের কাছাকাছি। এমন পরিস্থিতিতে এ বছর কতটাই বা আলু রপ্তানি করা যাবে। দ্বিগুণ বা এক লাখ টনও যদি রপ্তানি করা যায়, তাহলেও অতিরিক্ত থেকে যাবে ১৮ লাখ টন।

প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, বর্তমানে কৃষক প্রতি কেজি আলু ১০-১২ টাকায় বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন। যেখানে তাঁদের উৎপাদন খরচ হয়েছে প্রায় ২০ টাকা। তাহলে এই লোকসান কৃষক কিভাবে সামাল দেবেন? সরকারের সংশ্লিষ্ট কোনো কোনো সংস্থা যদি দ্রুত ন্যায্য দামে কৃষকদের কাছ থেকে কিছু পরিমাণে আলু কিনে কোল্ড স্টোরেজে রাখে, তাহলেও কৃষক কিছুটা রক্ষা পাবে। সংকটের সময় তা বাজারেও ছাড়া যাবে। আর শুধু আলু নয়, আরো কিছু ফসলের ক্ষেত্রে মৌসুমে এমন ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে। বাংলাদেশে বছরে পেঁয়াজের চাহিদা ৩০ লাখ টনের মতো, উৎপাদন হয় ৩৫ লাখ টনের বেশি। কিন্তু যথাযথ সংরক্ষণের অভাবে প্রায় ১০ লাখ টন পেঁয়াজ নষ্ট হয়ে যায়। এ কারণে ঘাটতি থাকে পাঁচ লাখ টনের মতো।

আমরা আশা করি, কৃষককে রক্ষায় এবং বাজার নিয়ন্ত্রণে আধুনিক সংরক্ষণ ব্যবস্থার দ্রুত সম্প্রসারণ করা হবে।

 

মন্তব্য

গণতন্ত্রের চর্চা শুরু হোক

    ডিসেম্বরে নির্বাচন
শেয়ার
গণতন্ত্রের চর্চা শুরু হোক

বাংলাদেশে বিগত ১৬ বছরে যে তিনটি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে, সেগুলোর গ্রহণযোগ্যতা ছিল না বললেই চলে। যেমন দেশের ভেতর থেকে, তেমনি দেশের বাইরে থেকেও এসব নির্বাচনের ব্যাপক সমালোচনা ছিল। এসব নির্বাচনকে ভোটারবিহীন নির্বাচন, রাতের নির্বাচন, ভোট চুরির নির্বাচনসহ আরো অনেক নামে আখ্যায়িত করা হয়েছে। তাই দেশের মানুষ প্রকৃত গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় অনুষ্ঠিত নির্বাচনে নিজেদের ভোটাধিকার প্রয়োগের জন্য উন্মুখ হয়ে আছে।

নির্বাচন নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলো শুরু থেকেই কথা বলে আসছে। অন্যদিকে সরকারের পক্ষ থেকে বরাবরই বলা হয়েছে নির্বাচনের আগে কিছু গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার করা দরকার। জাতিসংঘ মহাসচিবের সাম্প্রতিক সফরের সময়ও নির্বাচন ও সংস্কারের বিষয়টি বিস্তারিতভাবে আলোচিত হয়েছে। গত ১৪ মার্চ প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, চলতি বছরের ডিসেম্বরে কিংবা আগামী বছরের জুনে জাতীয় সংসদ নির্বাচন হবে।

তিনি বলেছেন, রাজনৈতিক দলগুলো যদি সংক্ষিপ্ত সংস্কার প্যাকেজ নিয়ে একমত হয়, তবে নির্বাচন ডিসেম্বরেই হতে পারে। তবে তারা যদি বৃহত্ সংস্কার প্যাকেজ গ্রহণ করে, তাহলে নির্বাচন আগামী বছরের জুনে অনুষ্ঠিত হবে। জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসও বাংলাদেশে চলমান সংস্কার উদ্যোগকে সমর্থন জানিয়েছেন। তবে সংস্কার প্রক্রিয়া জটিল হতে পারে বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি।
গত সোমবার আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে পুলিশের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, অন্তর্বর্তী সরকারের হাতে খুব বেশি সময় নেই। আমরা এরই মধ্যে সাত মাস পার করে এসেছি। আমরা বলছি, ডিসেম্বরে নির্বাচন হবে। কাজেই কী কী সংস্কার করতে চাই করে ফেলতে হবে। প্রধান উপদেষ্টার এই বক্তব্যে অনেকেরই ধারণা, অন্তর্বর্তী সরকার সংক্ষিপ্ত সংস্কার প্যাকেজ-এর দিকেই যাচ্ছে।

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, নির্বাচন যত দেরি হবে তত বেশি বাংলাদেশের পক্ষের শক্তিকে পরাজিত করতে ফ্যাসিস্ট শক্তি মাথাচাড়া দিতে শুরু করবে। একই সঙ্গে জঙ্গি ও উগ্র মনোভাব পোষণকারীরাও এই সুযোগগুলো নেওয়ার চেষ্টা করবে। নির্বাচন কমিশনও চলতি বছরের ডিসেম্বরে জাতীয় নির্বাচন করার সময়সীমা অতিক্রম করতে চায় না। সময়সীমা যাতে পার না হয় সে জন্য ইসি প্রস্তুতি নিচ্ছে। এ ক্ষেত্রে অক্টোবরে তফসিল ঘোষণা করতে হবে। নির্বাচন কমিশন জাতীয় নির্বাচনের আগে নতুন রাজনৈতিক দল নিবন্ধনের জন্য আবেদনও আহ্বান করেছে। জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বিষয়ে দ্রুতই সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ আসবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি ও সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রধান অধ্যাপক আলী রীয়াজ।      

সব কিছু ছাপিয়ে যে বিষয়টি আলোচনায় উঠে এসেছে তা হলো নির্বাচন। ধারণা করা হচ্ছে, এ বছরের শেষ মাসে অনুষ্ঠিত হবে পরবর্তী জাতীয় সংসদ নির্বাচন। নির্বাচন গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থার অপরিহার্য অংশ। নির্বাচনকে মানুষ উৎসব হিসেবে দেখতেই অভ্যস্ত। একটি সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে দেশ দ্রুত গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় ফিরে আসুকএটি সবারই কাম্য। আমরা চাই, দ্রুত নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় দেশ এগিয়ে যাক এবং দেশে প্রকৃত গণতন্ত্রের চর্চা শুরু হোক।

 

মন্তব্য

জনসংখ্যা হোক জনসম্পদ

    বিদেশে কর্মসংস্থান
শেয়ার
জনসংখ্যা হোক জনসম্পদ

বাংলাদেশের অর্থনীতিতে প্রবাস আয় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। দেশের বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের অন্যতম উৎস জনশক্তি রপ্তানি। বরাবরই বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় শ্রমবাজার ছিল সৌদি আরব। এর পাশাপাশি ছিল মধ্যপ্রাচ্যের দেশ ওমান।

পাশাপাশি ছিল কুয়েত। কাছের দেশ মালয়েশিয়াও একসময় দেশের অভিবাসী কর্মীদের কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিল।

দুঃখের বিষয় হচ্ছে, অতীতে বিভিন্ন সময়ে শ্রমবাজার নিয়ে সিন্ডিকেটসহ নানা ধরনের অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে। ২০২৩ সালের অক্টোবর মাসে দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগে বন্ধ হয়ে যায় ওমানের শ্রমবাজার।

এর সাত মাস পর একই অভিযোগে গত বছরের ৩১ মে বন্ধ হয়ে যায় মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার। অনানুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশি কর্মীদের ভিসা দেওয়া বন্ধ রেখেছে সংযুক্ত আরব আমিরাত সরকার। অভিবাসনসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, বাংলাদেশি কর্মীদের পছন্দের এই তিনটি শ্রমবাজার বন্ধ হয়ে যাওয়ায় সৌদি শ্রমবাজারে চাপ সৃষ্টি হয়েছে। চলতি বছরের প্রথম দুই মাসে যাওয়া এক লাখ ২০ হাজার ৮৭৬ জন কর্মীর মধ্যে গত জানুয়ারি মাসে গেছেন ৭৬ হাজার ৬১৮ জন আর ফেব্রুয়ারি মাসে গেছেন ৪৪ হাজার ২৫৮ জন।

বাংলাদেশ জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো (বিএমইটি) মনে করে, মালয়েশিয়া, আরব আমিরাত, ওমান বন্ধ ও কুয়েত, জর্দান, দক্ষিণ কোরিয়া, যুক্তরাজ্যে যাওয়া কর্মীর সংখ্যা কমা এবং সৌদির ওপর চাপ পড়লেও তার কোনো প্রভাব পড়েনি শ্রমবাজারে। কাতার, সিঙ্গাপুর, ইতালি ও জাপানে কর্মী যাওয়া বেড়েছে। একসময় ইউরোপের নানা দেশেও জনশক্তি রপ্তানির সুযোগ ছিল। প্রচলিত বাজারের বাইরে আমাদের বাজার হচ্ছে ইউরোপ। ইউরোপের বাজারের বড় সমস্যা, যেসব দেশ বাংলাদেশি কর্মী নেয়এমন অনেক দেশে বাংলাদেশের দূতাবাস নেই।

জনশক্তি রপ্তানির ক্ষেত্রে বাংলাদেশের জন্য বড় সমস্যা দক্ষ ও প্রশিক্ষিত কর্মীর অভাব। আন্তর্জাতিক শ্রমবাজারের বাস্তবতায় বাংলাদেশের শ্রমিকরা তুলনামূলকভাবে অদক্ষ। ফলে যেসব দেশে দক্ষ জনশক্তি রপ্তানির সুযোগ আছে, সেসব দেশে জনশক্তি রপ্তানি করা সম্ভব হয় না। বর্তমান সময়ে দক্ষতার বিকল্প নেই, কিন্তু বাংলাদেশের শ্রমিকরা তুলনামূলকভাবে অদক্ষ। অনেক পেশায় আমাদের কর্মীরা কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় দক্ষতা অর্জন করতে পারেননি। তাই ভালো ও বেশি আয়ের পেশায় বাংলাদেশিদের নিয়োগ কম। পর্যাপ্ত দক্ষতা নিশ্চিত করতে পারলে এসব পেশায় বাংলাদেশিদের নিয়োগ করা সম্ভব হতো। আমাদের এখন শ্রমবাজারের চাহিদার পরিবর্তন ও দক্ষতার বিষয়ে নজর দিতে হবে। বর্তমান বিশ্ববাস্তবতায় শিক্ষিত ও দক্ষতাসম্পন্নদের কদর বাড়ছে। দক্ষ জনশক্তি নিজ নিজ ক্ষেত্রে কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করে নিতে পারে। বিকাশমান বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে তাই জনশক্তি গড়ে তুলতে হবে। দক্ষ জনশক্তির রপ্তানি বাড়াতে পারলে রেমিট্যান্সও বাড়বে। জনশক্তিকে প্রশিক্ষিত ও দক্ষ করে গড়ে তুলতে পারলে জনসংখ্যা জনসম্পদে পরিণত হবে।

মন্তব্য

বাজারে হস্তক্ষেপ বাড়াতে হবে

    চালের দাম বাড়ছেই
শেয়ার
বাজারে হস্তক্ষেপ বাড়াতে হবে

সাধারণত অঘ্রান মাসে আমন ধান তোলার সময় বাজারে চালের দাম অনেকটাই কমে আসে। এবার তা হয়নি। আমনের ভরা মৌসুমেও চালের দাম না কমে বরং বেড়েছে। চালের দাম বাড়ার সে ধারা অব্যাহত আছে।

একটু একটু করে দাম ক্রমেই বাড়ছে। মোটা চালের দামও বাড়ছে, তবে বেশি বাড়ছে সরু চালের দাম। গতকাল কালের কণ্ঠে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, দুই সপ্তাহের ব্যবধানে মিনিকেট চালের দাম বেড়েছে প্রতি কেজিতে পাঁচ থেকে ১০ টাকা পর্যন্ত। দেশি কাটারি (নাজির) চালের দাম বেড়েছে কেজিপ্রতি তিন থেকে পাঁচ টাকা পর্যন্ত।
আর মোটা চালের দাম বেড়েছে কেজিতে এক থেকে দুই টাকা পর্যন্ত।

চালের দাম বেড়ে গেলে তা নিম্ন ও নিম্নমধ্যম আয়ের মানুষের জীবনে অনেক বড় প্রভাব ফেলে। দরিদ্র মানুষ ভাতের জোগান থাকলে লবণ-মরিচ দিয়েও দু-এক বেলা পার করে দিতে পারে। কিন্তু চালের আকাল হলে তাদের সামনে আর কোনো পথই খোলা থাকে না।

সে কারণে চালের বাজার স্থিতিশীল রাখার জন্য সব সরকারই চেষ্টা চালায়। বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারও সেই চেষ্টা করে যাচ্ছে। চাল আমদানিতে শুল্ক কমানো হয়েছে। ভারত ছাড়াও কয়েকটি দেশ থেকে চাল আমদানি করা হচ্ছে। এরই মধ্যে আমদানি করা চাল যথেষ্ট পরিমাণে বাজারে প্রবেশও করেছে।
তার পরও চালের দাম এভাবে বেড়ে যাওয়াকে স্বাভাবিক মনে করছে না অনেকেই। অতীতে দেখা গেছে, কিছু মিলার ও পাইকারি ব্যবসায়ীর সিন্ডিকেট চালের বাজারকে অস্থিতিশীল করার ক্ষেত্রে নানাভাবে ভূমিকা রাখে। প্রশ্ন উঠেছে, বর্তমানে বাজারে হঠাত্ করে দাম বাড়ার পেছনে কি সেই সিন্ডিকেটের কোনো ভূমিকা রয়েছে? অবশ্য মিলারদের বক্তব্য, অন্যান্য চালের দাম অতটা বাড়েনি, যতটা বেড়েছে মিনিকেট চালের দাম। এর কারণ বাজারে এই ধানের অভাব রয়েছে। ফলে তাদের ধানই কিনতে হচ্ছে বেশি দাম দিয়ে। তাঁদের মতে, বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠ মাসে নতুন ধান উঠলে দাম কমে যাবে।

বাজারে সবজির দামে এখনো কিছুটা স্বস্তি আছে। তবে বোতলজাত সয়াবিন তেল এখনো কম মিলছে। দামও বেশি নেওয়া হচ্ছে। কিন্তু চালের দাম বেড়ে যাওয়ার কারণেই নিম্ন আয়ের মানুষ সবচেয়ে বেশি অস্বস্তিতে আছে। এর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের কৃষি বিভাগ (ইউএসডিএ) পূর্বাভাস দিয়েছে, প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও আবাদি জমির পরিমাণ কমে যাওয়ায় এ বছর বাংলাদেশে চালের উৎপাদন চার লাখ টন কমে যেতে পারে। এতে চাহিদার তুলনায় ঘাটতি আরো বেড়ে যাবে এবং বাজারে তার নেতিবাচক প্রভাবই পড়বে।

আমরা মনে করি, দেশে চালের উৎপাদন বৃদ্ধির ওপর আরো জোর দিতে হবে। এর আগে বাজারে চালের সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে আমদানি আরো বাড়াতে হবে। সিন্ডিকেট ও মজুদদারির বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। টিসিবির ট্রাক সেল ও ওপেন মার্কেট সেলের (ওএমএস) মতো অন্যান্য কর্মসূচি চালু করতে হবে। যেকোনো ধরনের কারসাজির বিরুদ্ধে কঠোর হতে হবে।

 

প্রাসঙ্গিক
মন্তব্য

সর্বশেষ সংবাদ