ঢাকা, বৃহস্পতিবার ৩১ জুলাই ২০২৫
১৬ শ্রাবণ ১৪৩২, ০৫ সফর ১৪৪৭

ঢাকা, বৃহস্পতিবার ৩১ জুলাই ২০২৫
১৬ শ্রাবণ ১৪৩২, ০৫ সফর ১৪৪৭

মহাসচিবের ইতিবাচক বার্তা

  • সংলাপে সহায়তায় প্রস্তুত জাতিসংঘ
শেয়ার
মহাসচিবের ইতিবাচক বার্তা

রমজান সংহতি সফর শেষে বাংলাদেশ ছেড়ে গেছেন জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস। চার দিনের সফরে গত বৃহস্পতিবার ঢাকায় আসেন তিনি। শুক্রবার তিনি প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে কক্সবাজার সফর করেন। সেখানে তাঁরা লাখো রোহিঙ্গার সঙ্গে ইফতারে অংশ নেন।

শনিবার জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাত্ করেন সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান, এসবিপি, ওএসপি, এসজিপি, পিএসসি। সেনাবাহিনীর ফেসবুক পেজে জানানো হয়, সৌহার্দ্যপূর্ণ এই বৈঠকে পারস্পরিক কুশল বিনিময়ের পাশাপাশি জাতিসংঘ মহাসচিব জাতিসংঘ শান্তি রক্ষা মিশনে বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনীর পেশাদারি ও দক্ষতার প্রশংসা করেন এবং শান্তিরক্ষীদের গুরুত্বপূর্ণ অবদানের জন্য আন্তরিক কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। শনিবার দুপুরে রাজধানীর ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলে জাতিসংঘ ঢাকা অফিসের উদ্যোগে জাতিসংঘ মহাসচিবের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর এক গোলটেবিল বৈঠক হয়। বৈঠকে রাজনৈতিক দলগুলোর নেতারা দলীয় দৃষ্টিভঙ্গি থেকে সংস্কারের বিষয়ে তাঁদের মতামত তুলে ধরেন।
নেতাদের গুতেরেস বলেছেন, সংস্কার বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়। শনিবার সন্ধ্যায় রাজধানীর একটি হোটেলে সফররত জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসের সম্মানে আয়োজিত ইফতার অনুষ্ঠানে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস অপতথ্যের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে জাতিসংঘের সহায়তা কামনা করেছেন।

জাতিসংঘ মহাসচিব বাংলাদেশ সফর শেষে গতকাল রবিবার সকালে ঢাকা ছেড়ে যান। ঢাকা ছেড়ে যাওয়ার আগে গত শনিবার এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে তিনি এই বলে আশ্বস্ত করেছেন যে জাতিসংঘ শান্তি, জাতীয় সংলাপ, আস্থা ও নিরাময়কে উৎসাহিত ও সহায়তা করতে প্রস্তুত।

জাতিসংঘ মহাসচিব তাঁর বক্তব্যে উষ্ণ অভ্যর্থনার জন্য প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস, অন্তর্বর্তী সরকার ও বাংলাদেশের জনগণকে ধন্যবাদ জানান। তিনি পবিত্র রমজান মাস উপলক্ষে বাংলাদেশ এবং বিশ্বজুড়ে মুসলমানদের আন্তরিক শুভেচ্ছা জানান।

বর্তমান বিশ্ববাস্তবতায় জাতিসংঘ মহাসচিবের বাংলাদেশ সফর নিঃসন্দেহে বিশেষ গুরুত্ব বহন করে। কারণ বিপুলসংখ্যক রোহিঙ্গা বাস্তুচ্যুত হয়ে বাংলাদেশে এসে আশ্রয় নিয়েছে। মানবিক কারণে বাংলাদেশ কয়েক লাখ রোহিঙ্গাকে সাময়িক আশ্রয় দিয়েছে।

কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, এই জনগোষ্ঠীর বিপুলসংখ্যক মানুষের ভার বহন করতে গিয়ে বাংলাদেশ হিমশিম খাচ্ছে। গত শুক্রবার কক্সবাজারে জাতিসংঘ মহাসচিব বলেন, আমরা একটি গভীর মানবিক সংকটের দ্বারপ্রান্তে। আর্থিক সহায়তা কাটছাঁটের ফলে ২০২৪ সালে মানবিক সহায়তার তুলনায় এ বছর মাত্র ৪০ শতাংশ সহায়তা পাওয়ার নাটকীয় ঝুঁকির মুখোমুখি আমরা। তিনি উল্লেখ করেন, এর ভয়াবহ পরিণতি হবে।

সামরিক অভিযানের মুখে মায়ানমার থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে অবস্থান করছে। তাদের ফিরিয়ে নেওয়ার ব্যাপারে মায়ানমার সরকার শুধু টালবাহানা করছে। বাংলাদেশ সফরে এসে জাতিসংঘ মহাসচিব বলেছেন, রোহিঙ্গাদের সম্মানজনক প্রত্যাবাসন নিশ্চিত করতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ও মায়ানমারের সব প্রতিবেশী রাষ্ট্রকে ভূমিকা রাখতে হবে।

বাংলাদেশ এখন এক রূপান্তরের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। অন্তর্বর্তী সরকার সংস্কারের কাজ হাতে নিয়েছে। আগামী দিনের উজ্জ্বল বাংলাদেশে জাতিসংঘ তার সহায়তা দিয়ে যাবে, জাতিসংঘ মহাসচিব সে বার্তাই দিয়ে গেলেন।

মন্তব্য

সম্পর্কিত খবর

আস্থার পরিবেশ প্রয়োজন

    বেসরকারি খাতে মন্দা
শেয়ার
আস্থার পরিবেশ প্রয়োজন

বাংলাদেশের অর্থনীতি বর্তমানে এক গভীর সংকটের মুখে। বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ স্থবিরতা, ঋণপ্রবাহে ভাটা, এলসি খোলার হ্রাস, ব্যাংক খাতে ঋণখেলাপির উচ্চহার এবং সুদের হার বৃদ্ধির ফলে গোটা অর্থনীতির চাকা ধীর হয়ে পড়েছে। কালের কণ্ঠে প্রকাশিত প্রতিবেদনে দেখা যায়, দেশের অর্থনীতির এই সংকট ক্রমেই গভীর হচ্ছে। এটি কেবল সামষ্টিক অর্থনীতির সূচকগুলোকে প্রভাবিত করছে না, বরং লাখ লাখ মানুষের জীবন-জীবিকা হুমকির মুখে নিয়ে এসেছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৫ সালের জুন শেষে বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধি মাত্র ৬.৪ শতাংশে দাঁড়িয়েছে, যা দেশের ইতিহাসে সর্বনিম্ন। অথচ কেন্দ্রীয় ব্যাংক ৯.৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য নির্ধারণ করেছিল। একই সময়ে আমদানির ঋণপত্র খোলা ২৪.৪২ শতাংশ কমে ৪.১৪ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে, যা ২০২০ সালের আগস্টের পর সর্বনিম্ন। এই দুটি সূচকই শিল্পোৎপাদন, ভোগ্যপণ্য ও কাঁচামাল আমদানিতে স্থবিরতা এবং কর্মসংস্থান ও রপ্তানিতে নেতিবাচক প্রভাবের ইঙ্গিত দেয়।

ব্যাংকিং খাতের খেলাপি ঋণ জুন শেষে পাঁচ লাখ ৩০ হাজার ৪২৮ কোটি টাকায় পৌঁছেছে, যা বিতরণকৃত মোট ঋণের ২৭.০৯ শতাংশ। মাত্র তিন মাসেই এক লাখ কোটি টাকারও বেশি খেলাপি ঋণ বৃদ্ধি পেয়েছে, যা ব্যাংকিং খাতের স্থিতিশীলতাকে মারাত্মকভাবে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। অন্যদিকে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠ সাইফুল আলমের (এস আলম) নিয়ন্ত্রণে থাকা ৯টি ব্যাংক এবং সালমান এফ রহমান ও সাইফুজ্জামান চৌধুরীর নিয়ন্ত্রণে থাকা ব্যাংকগুলোর তারল্য সংকট এতটাই তীব্র যে তারা গ্রাহকের জমা টাকা তোলার চাহিদা মেটাতেই হিমশিম খাচ্ছে এবং ঋণ কার্যক্রম সীমিত বা বন্ধ করে দিয়েছে।

ঋণের সুদের হার বৃদ্ধি ব্যবসায়ীদের দুরবস্থাকে আরো বাড়িয়ে দিয়েছে।

যেখানে ২০২৩ সালে গড় সুদহার ৯ শতাংশ ছিল, তা ২০২৪ সালের এপ্রিলে ১৪ থেকে ১৬ শতাংশে পৌঁছেছে। এই উচ্চ সুদহারের কারণে অনেক উদ্যোক্তা ঋণ পরিশোধে হিমশিম খাচ্ছেন এবং তিন মাসের মধ্যেই খেলাপি তালিকায় নাম ওঠার ঝুঁকিতে পড়ছেন। এর ফলস্বরূপ, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে অসংখ্য শিল্পপ্রতিষ্ঠান, বিশেষ করে পোশাক, সুতা ও জুতার কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে, যার ফলে লাখ লাখ শ্রমিক বেকার হয়ে পড়েছেন। গত বছরের ৫ আগস্টের পর থেকে নতুন বিনিয়োগের উদ্যোগ কমেছে এবং চালু থাকা অনেক কারখানাও বন্ধ হয়ে যাচ্ছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. মুস্তাফা কে মুজেরী যথার্থই বলেছেন যে বেসরকারি খাতের দিকেও বিশেষ নজর দিতে হবে, নীতিগত সুবিধা বাড়াতে হবে।

ব্যাংক খাতে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করা এবং উদ্যোক্তাদের জন্য সহজ ও স্বল্পসুদে ঋণপ্রাপ্তির ব্যবস্থা করাই হবে এই মন্দা রোধে প্রধান করণীয়। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এই পরিস্থিতিতে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা অত্যন্ত জরুরি। আইনের শাসন নিশ্চিত করতে হবে। ব্যবসায়ীদের মধ্যে আস্থার পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে হবে।

মন্তব্য

জননিরাপত্তা নিশ্চিত করুন

    আগস্ট ঘিরে উত্তেজনা-আতঙ্ক
শেয়ার
জননিরাপত্তা নিশ্চিত করুন

দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভালো নয়। রাজধানীসহ সারা দেশে ডাকাতি, ছিনতাই, রাহাজানির বহু ঘটনা ঘটছে। খুন, ধর্ষণ, অপহরণের ঘটনা ঘটছে। ঘটছে মব সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, হামলা, লুটপাটের ঘটনা।

ফলে জনজীবনে উদ্বেগ ক্রমেই বাড়ছে। এর মধ্যে যোগ হয়েছে আগস্ট মাস ঘিরে এক ধরনের আতঙ্ক, চাপা উত্তেজনা ও নৈরাজ্যের আশঙ্কা। খোদ গোয়েন্দা সংস্থাগুলো আশঙ্কা করছে এ সময়ে নাশকতা হতে পারে। উপদেষ্টাদের বহর, রাজনৈতিক দলের সভা-সমাবেশে হামলাসহ বহুমুখী অঘটন ঘটতে পারে।
এসব অপকর্ম ঠেকাতে ব্যাপক প্রতিরোধমূলক প্রস্তুতি নিয়ে রয়েছে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী। বাহিনীর ২০ হাজারের বেশি সদস্যকে প্রস্তুত রাখা হয়েছে।

কালের কণ্ঠে প্রকাশিত প্রতিবেদনে জানা যায়, সরকারের বিশেষ গোয়েন্দা প্রতিবেদনের আগাম তথ্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ফাঁস ও ভাইরাল হয়েছে। এটিও জনমনের আতঙ্ক বিস্তার করছে।

চায়ের আড্ডা থেকে শুরু করে রাজনৈতিক নেতাদের আলোচনায়ও উঠে আসছে এ নিয়ে আতঙ্কের কথা। বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আগস্ট ঘিরে হামলা-নাশকতার আশঙ্কায় মানুষের মধ্যে চাপা আতঙ্ক রয়েছে। গোয়েন্দা সূত্র বলছে, ৫ আগস্ট সামনে রেখে দেশে যেকোনো সময় নানা অঘটন ঘটতে পারে। এসবির প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, ২৯ জুলাই থেকে ৮ আগস্ট পর্যন্ত সময়কে কেন্দ্র করে অনলাইন ও অফলাইনে সংঘবদ্ধ প্রচারণার মাধ্যমে দেশে নৈরাজ্য সৃষ্টির চেষ্টা করা হতে পারে। অপরাধ বিশ্লেষকরা বলছেন, দেশে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি ক্রমেই খারাপের দিকে যাচ্ছে।
সে ক্ষেত্রে আগস্ট ঘিরে বড় ধরনের নাশকতার ঘটনা ঘটলে তা নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর সদস্যদেরই পালন করতে হবে।

অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নিয়েছে প্রায় এক বছর। এর মধ্যে দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির কাঙ্ক্ষিত উন্নতি হয়নি, বরং দিন দিন পরিস্থিতির আরো অবনতি হচ্ছে। গোয়েন্দা সূত্র বলছে, গত বছর জুলাই-আগস্ট মাসে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সময় দেশের ১৭টি কারাগারের পাশাপাশি বহু থানা ও পুলিশ ফাঁড়িতে হামলা হয়। অস্ত্র ও গোলাবারুদ লুট করা হয়। অনেক সাজাপ্রাপ্ত বন্দিও পালিয়ে যায়। ওই ঘটনার এক বছর পার হলেও পলাতক ৭০০ বন্দিকে এখনো গ্রেপ্তার করা যায়নি। উদ্ধার হয়নি লুট হওয়া পুলিশের ১৩ শতাধিক অস্ত্র। অভিযোগ রয়েছে, এসব অস্ত্র অপরাধীদের হাতে চলে গেছে। সন্ত্রাসমূলক কর্মকাণ্ডে ব্যবহার করছে। পলাতক অপরাধীরাও নানা গোষ্ঠীর সঙ্গে মিশে গেছে।

অন্যদিকে রাজনৈতিক বিরোধ কিংবা সংঘাত-সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটছে। দেশের অর্থনৈতিক অবস্থাও খারাপ। কয়েক শ কলকারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। লক্ষাধিক শ্রমিক বেকার হয়েছেন। সামাজিক অস্থিরতা নতুন করে গতি পাচ্ছে। এর মধ্যে দেশের আইন-শৃঙ্খলাও যদি ভেঙে পড়ার মতো অবস্থা হয়, তাহলে মানুষ যাবে কোথায়? যেকোনো মূল্যে জননিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।

 

মন্তব্য

আইন প্রয়োগে কঠোর হতে হবে

    ভয়াল রূপে চাঁদাবাজি
শেয়ার
আইন প্রয়োগে কঠোর হতে হবে

চাঁদাবাজি আজ আর বিচ্ছিন্ন কিছু নয়, ভয়াবহ এক সামাজিক ব্যাধিতে রূপ নিয়েছে। পুরান ঢাকায় ব্যবসায়ীকে নৃশংসভাবে হত্যার আলোচনা শেষ না হতেই রাজধানীর গুলশানে সাবেক সংসদ সদস্যের বাসায় ঢুকেসমন্ব্বয়কপরিচয়ে ৫০ লাখ টাকা চাঁদা দাবির ঘটনা ঘটেছে। বিভিন্ন জেলায়ও চলছে একই কৌশলে চাঁদাবাজি। প্রশাসনের নির্লিপ্ততা এবং রাজনৈতিক ছত্রছায়ার যেসব খবর গণমাধ্যমে ধারাবাহিকভাবে প্রকাশ পাচ্ছে, তা গভীর উদ্বেগজনক।

কালের কণ্ঠে গতকাল মঙ্গলবার প্রকাশিত এসংক্রান্ত প্রতিবেদনগুলো বাংলাদেশের বর্তমান সামাজিক ও রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে এক গভীর সংকটকেই তুলে ধরেছে। দেশজুড়েই চাঁদাবাজির ব্যাপক বিস্তার ঘটেছে। জুলাই অভ্যুত্থানে অংশগ্রহণকারী বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নাম ব্যবহার করা হচ্ছে এসব অপকর্মে। নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্তের বদলে কি দেশ চাঁদাবাজির পুরনো বন্দোবস্তে ফিরে যাচ্ছে?

প্রতিবেদন অনুযায়ী এটা স্পষ্ট যে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন এবং গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের পদধারী ছাত্রনেতারা চাঁদাবাজির মতো জঘন্য অপরাধে জড়িত।

আব্দুর রাজ্জাক রিয়াদ নিজেকে সমন্বয়ক পরিচয় দিতে চলতেন। দরিদ্র পরিবারের সন্তান রিয়াদের সম্পদ হঠাৎ করেই ফুলেফেঁপে ওঠে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক মুখপাত্র উমামা ফাতেমা অত্যন্ত দুঃখ করে বলেছেন, জুলাই বিপ্লবকে আজ টাকা বানানোর মেশিন করে ফেলা হয়েছে।

শুধু রাজধানীতেই নয়, অন্য জেলাগুলোতেও সমন্বয়ক পরিচয়ে চাঁদাবাজি চলছে অবাধে।

চট্টগ্রাম, হবিগঞ্জ, ঝিনাইদহ, সিলেটসহ দেশের নানা প্রান্তে এই সংগঠনের নাম ভাঙিয়ে চাঁদা আদায়, টেন্ডার বাণিজ্যএমনকি সরকারি কর্মকর্তাদের হুমকি দেওয়া হচ্ছে। ঝিনাইদহের হামিদুর রহমান রানার জীবন সমন্বয়ক হওয়ার পর রাতারাতি পাল্টে গেছে। হবিগঞ্জেও ২৫ বছরের কম বয়সীছোড চান্দাবাজদের উৎপাত এতটাই বেড়েছে যে, স্থানীয়রা তাদের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছে।

চাঁদাবাজির অভিযোগে সমন্বয়কারীরা গ্রেপ্তার হওয়ায় বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘বেদনায় একেবারে নীল হয়ে গেছি। এই পরিণতি কি আমরা চেয়েছিলাম? এই বাংলাদেশের মানুষ কি কেউ এটা চেয়েছিল?’ স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেছেন, ‘চাঁদাবাজ যত প্রভাবশালীই হোক, কোনো ছাড় দেওয়া হবে না।

দায়িত্বশীলদের এমন মন্তব্য নতুন নয়। কিন্তু এসব মন্তব্যে চাঁদাবাজি বন্ধ হয় না। ক্রমেই ভীতিকর রূপ নিচ্ছে চাঁদাবাজি। জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেছেন, চাঁদাবাজি-সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে তাঁদের সংগ্রাম ঘরের ভেতর থেকে শুরু হচ্ছে।

জুলাই অভ্যুত্থান দেশের মানুষকে স্বপ্ন দেখিয়েছিল। অন্য রকম প্রত্যাশা দেখিয়েছিল। কিন্তু লাগামহীন চাঁদাবাজি সেই স্বপ্ন প্রত্যাশা ধুলায় মিশিয়ে দিচ্ছে। এই অভিশাপ থেকে মুক্তি পেতে হলে কঠোরভাবে আইন প্রয়োগ করতে হবে।

মন্তব্য

মানুষের প্রত্যাশা পূরণ হোক

    হাওয়া বইছে নির্বাচনের পালে
শেয়ার
মানুষের প্রত্যাশা পূরণ হোক

দেশে একটি নির্বাচনের আবহ তৈরি হয়েছে। গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, কয়েক দিনের মধ্যে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিন-তারিখ ঘোষণা করতে পারেন। প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকের পর বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও জোটের নেতারা এমন ধারণা দিয়েছেন। কিছু রাজনৈতিক দল এরই মধ্যে তাদের প্রার্থী বাছাইয়ের কাজ অনেক দূর এগিয়ে নিয়েছে।

প্রার্থীরা এবং দলও নির্বাচনের লক্ষ্য নিয়ে জনসংযোগ শুরু করে দিয়েছে। আবার বিভিন্ন দলের অনেক সম্ভাব্য প্রার্থীও নানা কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে নিজেদের জনপ্রিয়তা তুলে ধরছেন। তাই বলা যায়, নির্বাচনের পালে বেশ জোরেশোরেই হাওয়া লাগতে শুরু করেছে।

কালের কণ্ঠে প্রকাশিত খবর থেকে জানা যায়, ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধেই নির্বাচন হতে যাচ্ছে।

নির্বাচন উপলক্ষে অন্যান্য প্রস্তুতির পাশাপাশি ব্যাপক নিরাপত্তা প্রস্তুতিও নেওয়া হচ্ছে। গত সোমবার বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে দ্বিতীয়বারের মতো সমন্বয়সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় সেনাবাহিনী, পুলিশ ও স্থানীয় প্রশাসনের মধ্যে সমন্ব্বয় বাড়ানোর কথাও বলা হয়েছে। সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, প্রায় ৬০ হাজার সেনা সদস্য নির্বাচনী দায়িত্বে থাকবেন।
সেপ্টেম্বর থেকে দেড় লাখ পুলিশ সদস্যকে নির্বাচনবিষয়ক বিশেষ প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। এই প্রশিক্ষণ কার্যক্রম চলবে অক্টোবর ও নভেম্বর পর্যন্ত। নির্বাচনের সময় গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর সক্ষমতার ঘাটতি যেন না থাকে, সে বিষয়েও তাগিদ দেওয়া হয়েছে। নির্বাচন ঘিরে গুজব ও ভুয়া তথ্য রোধে একটিন্যাশনাল ইনফরমেশন সেন্টারগঠনের চিন্তা-ভাবনা হচ্ছে। এর আগে গত ৯ জুলাই প্রধান উপদেষ্টা আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর প্রধানদের সঙ্গে বৈঠক করে আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করার নির্দেশ দিয়েছিলেন।

গত রবিবারও রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টা বৈঠক করেন। ওই বৈঠকে অংশ নেওয়া দলগুলোর পক্ষ থেকে জানানো হয়, চার-পাঁচ দিনের মধ্যে প্রধান উপদেষ্টা নির্বাচনের সময় ঘোষণা করবেন। কারো মতে, ৫ থেকে ৮ আগস্টের মধ্যে এই ঘোষণা আসতে পারে। ফলে নির্বাচন যে হচ্ছে এবং তা যে ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধেই হচ্ছে, তা প্রায় নিশ্চিতএমনটা ধরে নেওয়া যাচ্ছে। যদিও দু-একটি দল এখনো নির্বাচনের পদ্ধতি এবং সংস্কার ও বিচারের অজুহাতে নির্বাচন বিলম্বিত করার চেষ্টা করছে বলে অভিযোগ রয়েছে। ফলে নির্বাচন নিয়ে কিছুটা ধোঁয়াশাও রয়েছে।

কালের কণ্ঠে প্রকাশিত বিশেষ সাক্ষাৎকারে বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেছেন, ‘প্রধান উপদেষ্টা এখন পর্যন্ত লন্ডন বৈঠকের ভিত্তিতে নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট মাস ও দিন-তারিখ উল্লেখ করে নির্বাচন কমিশনকে বার্তা দেননি। কারণেই নির্বাচন নিয়ে সংশয় তৈরি হয়েছে। তবে আমি আশা করি, আগামী কয়েক দিনের মধ্যে, ৫ আগস্টের আগেই তিনি বিষয়টি জাতির সামনে পরিষ্কার করবেন। যথাযথ প্রক্রিয়ায় নির্বাচন কমিশনকে তাঁর বার্তা দেবেন। এটি হলে ধোঁয়াশা কেটে যাবে। তিনি আশা করেন, এবারের নির্বাচন একটি দৃষ্টান্ত স্থাপন করবে, যাতে সারা বিশ্ব বাংলাদেশের নির্বাচনকে অনুসরণ করে।

আমরা আশা করি, ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধেই দেশে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। দেশের মানুষ তাদের গণতান্ত্রিক অধিকার ফিরে পাবে।

 

মন্তব্য

সর্বশেষ সংবাদ