বাংলাদেশের অর্থনীতিতে প্রবাস আয় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। দেশের বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের অন্যতম উৎস জনশক্তি রপ্তানি। বরাবরই বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় শ্রমবাজার ছিল সৌদি আরব। এর পাশাপাশি ছিল মধ্যপ্রাচ্যের দেশ ওমান।
পাশাপাশি ছিল কুয়েত। কাছের দেশ মালয়েশিয়াও একসময় দেশের অভিবাসী কর্মীদের কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিল।
দুঃখের বিষয় হচ্ছে, অতীতে বিভিন্ন সময়ে শ্রমবাজার নিয়ে সিন্ডিকেটসহ নানা ধরনের অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে। ২০২৩ সালের অক্টোবর মাসে দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগে বন্ধ হয়ে যায় ওমানের শ্রমবাজার।
এর সাত মাস পর একই অভিযোগে গত বছরের ৩১ মে বন্ধ হয়ে যায় মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার। অনানুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশি কর্মীদের ভিসা দেওয়া বন্ধ রেখেছে সংযুক্ত আরব আমিরাত সরকার। অভিবাসনসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, বাংলাদেশি কর্মীদের পছন্দের এই তিনটি শ্রমবাজার বন্ধ হয়ে যাওয়ায় সৌদি শ্রমবাজারে চাপ সৃষ্টি হয়েছে। চলতি বছরের প্রথম দুই মাসে যাওয়া এক লাখ ২০ হাজার ৮৭৬ জন কর্মীর মধ্যে গত জানুয়ারি মাসে গেছেন ৭৬ হাজার ৬১৮ জন আর ফেব্রুয়ারি মাসে গেছেন ৪৪ হাজার ২৫৮ জন।
বাংলাদেশ জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো (বিএমইটি) মনে করে, মালয়েশিয়া, আরব আমিরাত, ওমান বন্ধ ও কুয়েত, জর্দান, দক্ষিণ কোরিয়া, যুক্তরাজ্যে যাওয়া কর্মীর সংখ্যা কমা এবং সৌদির ওপর চাপ পড়লেও তার কোনো প্রভাব পড়েনি শ্রমবাজারে। কাতার, সিঙ্গাপুর, ইতালি ও জাপানে কর্মী যাওয়া বেড়েছে। একসময় ইউরোপের নানা দেশেও জনশক্তি রপ্তানির সুযোগ ছিল। প্রচলিত বাজারের বাইরে আমাদের বাজার হচ্ছে ইউরোপ। ইউরোপের বাজারের বড় সমস্যা, যেসব দেশ বাংলাদেশি কর্মী নেয়—এমন অনেক দেশে বাংলাদেশের দূতাবাস নেই।
জনশক্তি রপ্তানির ক্ষেত্রে বাংলাদেশের জন্য বড় সমস্যা দক্ষ ও প্রশিক্ষিত কর্মীর অভাব। আন্তর্জাতিক শ্রমবাজারের বাস্তবতায় বাংলাদেশের শ্রমিকরা তুলনামূলকভাবে অদক্ষ। ফলে যেসব দেশে দক্ষ জনশক্তি রপ্তানির সুযোগ আছে, সেসব দেশে জনশক্তি রপ্তানি করা সম্ভব হয় না। বর্তমান সময়ে দক্ষতার বিকল্প নেই, কিন্তু বাংলাদেশের শ্রমিকরা তুলনামূলকভাবে অদক্ষ। অনেক পেশায় আমাদের কর্মীরা কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় দক্ষতা অর্জন করতে পারেননি। তাই ভালো ও বেশি আয়ের পেশায় বাংলাদেশিদের নিয়োগ কম। পর্যাপ্ত দক্ষতা নিশ্চিত করতে পারলে এসব পেশায় বাংলাদেশিদের নিয়োগ করা সম্ভব হতো। আমাদের এখন শ্রমবাজারের চাহিদার পরিবর্তন ও দক্ষতার বিষয়ে নজর দিতে হবে। বর্তমান বিশ্ববাস্তবতায় শিক্ষিত ও দক্ষতাসম্পন্নদের কদর বাড়ছে। দক্ষ জনশক্তি নিজ নিজ ক্ষেত্রে কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করে নিতে পারে। বিকাশমান বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে তাই জনশক্তি গড়ে তুলতে হবে। দক্ষ জনশক্তির রপ্তানি বাড়াতে পারলে রেমিট্যান্সও বাড়বে। জনশক্তিকে প্রশিক্ষিত ও দক্ষ করে গড়ে তুলতে পারলে জনসংখ্যা জনসম্পদে পরিণত হবে।