সংরক্ষণ সুবিধা বাড়ান

  • আলু চাষিদের মাথায় হাত
শেয়ার
সংরক্ষণ সুবিধা বাড়ান

বাংলাদেশে আলু, পেঁয়াজসহ এমন কিছু পচনশীল ফসল রয়েছে, মৌসুমে যেগুলোর দাম অস্বাভাবিকভাবে পড়ে যায়। কৃষকের তখন মাথায় হাত। মাথার ঘাম পায়ে ফেলে উৎপাদন করা ফসলের তখন যে দাম পাওয়া যায়, তাতে উৎপাদন খরচও উঠে না। আবার মৌসুম শেষ হতেই সেগুলোর দাম লাফিয়ে বাড়তে থাকে।

কিছুদিন আগেও আলুর দাম ছিল ৭৮-৮০ টাকা। পেঁয়াজের দাম কখনো কখনো ২০০ টাকা ছাড়িয়েছে। কাঁচা মরিচের দাম ছাড়িয়ে যায় হাজার টাকাও। এর জন্য দায়ী মূলত পর্যাপ্ত সংরক্ষণ সুবিধার অভাব।
গতকাল কালের কণ্ঠে প্রকাশিত প্রতিবেদনে দেখা যায়, গত মৌসুমে দাম বেশি থাকায় কৃষকরা এ বছর আলুর চাষ অনেক বাড়িয়ে দিয়েছিলেন। ফলে চাহিদার চেয়ে বেশি আলু উৎপাদন হয়েছে। এখন বাজারে আলুর দাম পড়ে যাওয়ায় কৃষকরা কেজিপ্রতি সাত-আট টাকা লোকসান দিয়ে বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন। কারণ অতিরিক্ত ভাড়ার কারণে তাঁরা হিমাগারেও আলু রাখতে পারছেন না।
এই পরিস্থিতিতে আলুর রপ্তানি বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে সরকার।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের (ডিএই) তথ্য অনুযায়ী দেশে আলুর উৎপাদন ছাড়িয়েছে এক কোটি ৯ লাখ টন। অন্যদিকে চাহিদা ৯০ লাখ টন, যা চাহিদার চেয়ে ১৯ লাখ টন বা ২২ শতাংশ বেশি। গত ৯ বছর ধরে প্রতিবছর কিছু আলু রপ্তানি হলেও তার পরিমাণ খুবই কম। রপ্তানির পরিমাণ গড়ে প্রতিবছর ৫০ হাজার টনের মতো।

কিন্তু গত অর্থবছরে আলুর সংকট থাকায় প্রায় এক লাখ টন আলু আমদানিও করতে হয়েছে। উৎপাদন সংকটে গত অর্থবছরে রপ্তানি হয়েছিল মাত্র ১২ হাজার টন। চলতি অর্থবছরের প্রায় সাত মাসে রপ্তানি হয়েছে ১২ হাজার টনের কাছাকাছি। এমন পরিস্থিতিতে এ বছর কতটাই বা আলু রপ্তানি করা যাবে। দ্বিগুণ বা এক লাখ টনও যদি রপ্তানি করা যায়, তাহলেও অতিরিক্ত থেকে যাবে ১৮ লাখ টন।

প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, বর্তমানে কৃষক প্রতি কেজি আলু ১০-১২ টাকায় বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন। যেখানে তাঁদের উৎপাদন খরচ হয়েছে প্রায় ২০ টাকা। তাহলে এই লোকসান কৃষক কিভাবে সামাল দেবেন? সরকারের সংশ্লিষ্ট কোনো কোনো সংস্থা যদি দ্রুত ন্যায্য দামে কৃষকদের কাছ থেকে কিছু পরিমাণে আলু কিনে কোল্ড স্টোরেজে রাখে, তাহলেও কৃষক কিছুটা রক্ষা পাবে। সংকটের সময় তা বাজারেও ছাড়া যাবে। আর শুধু আলু নয়, আরো কিছু ফসলের ক্ষেত্রে মৌসুমে এমন ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে। বাংলাদেশে বছরে পেঁয়াজের চাহিদা ৩০ লাখ টনের মতো, উৎপাদন হয় ৩৫ লাখ টনের বেশি। কিন্তু যথাযথ সংরক্ষণের অভাবে প্রায় ১০ লাখ টন পেঁয়াজ নষ্ট হয়ে যায়। এ কারণে ঘাটতি থাকে পাঁচ লাখ টনের মতো।

আমরা আশা করি, কৃষককে রক্ষায় এবং বাজার নিয়ন্ত্রণে আধুনিক সংরক্ষণ ব্যবস্থার দ্রুত সম্প্রসারণ করা হবে।

 

মন্তব্য

সম্পর্কিত খবর

অর্থনীতিতে আরো গতি আসুক

    যমুনা রেল সেতুর উদ্বোধন
শেয়ার
অর্থনীতিতে আরো গতি আসুক

যোগাযোগ অবকাঠামো উন্নয়নের সঙ্গে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। একসময় দেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চল ছিল সবচেয়ে অনুন্নত। ফেরিতে যমুনা নদী পার হতে ১০-১২ ঘণ্টাও লেগে যেত। শুষ্ক মৌসুমে ফেরি আটকে যেত চরে।

ঘন কুয়াশায় ফেরি চলাচল ব্যাহত হতো। মানুষের ভোগান্তি চরমে উঠত। জরুরি পণ্য পরিবহন ব্যাহত হতো ব্যাপকভাবে। কিন্তু যমুনা সেতু নির্মাণের পর যমুনা পার হতে লাগে কয়েক মিনিট।
ঢাকা থেকে দিনের মধ্যে উত্তরাঞ্চলের প্রত্যন্ত গ্রামেও পৌঁছানো যায়। পণ্য পরিবহন বহুগুণে বেড়েছে। কৃষকরা তাঁদের উৎপাদিত ফসলের ভালো মূল্য পাচ্ছেন। মানুষের অর্থনৈতিক অবস্থার উন্নতি হয়েছে।
যমুনা সেতুতে ট্রেন চলাচলের ব্যবস্থা থাকলেও তা ছিল সমস্যাগ্রস্ত। সে কারণে রেলযোগাযোগকে গতিশীল করতে তৈরি হয়েছে আলাদা রেল সেতু। দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর মঙ্গলবার উদ্বোধন করা হয়েছে দেশের বৃহত্তম যমুনা রেল সেতুর। ফলে উত্তরাঞ্চলের যোগাযোগব্যবস্থায় সম্ভাবনার এক নতুন দুয়ার উন্মোচিত হলো।

সড়কপথের তুলনায় রেলপথে যাত্রী ও পণ্য পরিবহন অনেক বেশি সাশ্রয়ী এবং পরিবেশবান্ধব।

তাই সারা দুনিয়ায় নতুন করে রেলপথের প্রসার ঘটছে। বাংলাদেশও সে পথেই হাঁটছে। তা ছাড়া বাংলাদেশের মতো বন্যাপ্রবণ এলাকায় সড়কপথের রক্ষণাবেক্ষণ খরচও অনেক বেশি। সেই বিবেচনায়ও রেলপথের প্রসার আমাদের জন্য লাভজনক। পদ্মা সেতুতে রেলসংযোগের মাধ্যমে ঢাকার সঙ্গে দক্ষিণাঞ্চলের রেলযোগাযোগ অনেক সহজ হয়েছে। এবার যমুনা সেতু উত্তরাঞ্চলের রেলযোগাযোগকে আরো অনেক সহজ করেছে। যমুনা রেল সেতু কর্তৃপক্ষ জানায়, জাপান ও বাংলাদেশ সরকারের যৌথ অর্থায়নে ৪.৮ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের এই রেল সেতু প্রকল্পে ব্যয় হয়েছে ১৬ হাজার ৭৮০ কোটি ৯৬ লাখ টাকা। এর মধ্যে ২৭.৬০ শতাংশ অর্থায়ন করা হয়েছে দেশীয় উৎস থেকে আর ৭২.৪০ শতাংশ ঋণ দিয়েছে জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি (জাইকা)। জাপানি পাঁচটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করে। জাপান, ভিয়েতনাম, নেপাল, অস্ট্রেলিয়া, ফিলিপিন্স ও বাংলাদেশের সাত হাজারেরও বেশি কর্মীর টানা চার বছরের পরিশ্রমে সেতুটির নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে। সেতুটিতে ৫০টি পিলার এবং প্রতি দুই পিলারের মাঝে একটি করে মোট ৪৯টি স্প্যান রয়েছে। মূল সেতুর দৈর্ঘ্য ৪.৮ কিলোমিটার হলেও দুই দিকে ৭.৬৬৭ কিলোমিটার রেলওয়ে অ্যাপ্রচ এমব্যাংকমেন্ট, লুপ, সাইডিংসহ মোট ৩০.৭৩ কিলোমিটার রেললাইন স্থাপন করা হয়েছে। যমুনা রেল সেতু প্রকল্পের প্রধান প্রকৌশলী জানান, সমান্তরাল ডুয়াল গেজ ডাবল ট্র্যাকের এই সেতুর প্রতিটি স্প্যানের ওপর জাপানি অত্যাধুনিক প্রযুক্তির রেললাইন বসানো হয়েছে। ফলে সেতুর ওপর দিয়ে ঘণ্টায় ১২০ কিলোমিটার বেগে ট্রেন চলাচল করতে পারবে।

আমরা আশা করি, যমুনা রেল সেতুর মাধ্যমে উত্তরাঞ্চলের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড অনেক বেশি গতি পাবে এবং ওই অঞ্চলের মানুষও উন্নত সেবা পাবে।

 

মন্তব্য

সুশাসন ফেরাতেই হবে

    ব্যাংক খাতে মূলধন ঘাটতি
শেয়ার
সুশাসন ফেরাতেই হবে

ব্যাংক খাত মানুষের আস্থা, ভরসা ও নির্ভরতার প্রতীক। বিনিয়োগ-ব্যবসা-বাণিজ্য ত্বরান্বিত করার ক্ষেত্রে অন্যতম সহায়ক হলো এই ব্যাংক খাত। কোনো দেশের অর্থনীতির রক্তপ্রবাহ হিসেবেও এই খাতকে বিবেচনা করা হয়। কিন্তু কয়েক বছর ধরে বাংলাদেশের ব্যাংক খাত কঠিন সংকট পার করছে।

বিশেষ করে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের শেষ সময়ে এসে ব্যাংক খাতে বড় অঙ্কের ঋণখেলাপি, আমানতের টাকা নামে-বেনামে লুটে নেওয়া, রাজনৈতিক প্রভাবে মাত্রাতিরিক্ত নৈরাজ্য সৃষ্টি করে মালিকানা বদল, স্বজনপ্রীতির নজিরবিহীন ঘটনা ঘটতে দেখা যায়। সুশাসনের বদলে ব্যাংক খাতে অনিয়ম আর বিশৃঙ্খলার সীমাহীন রাজত্ব ছিল, যার ফলে পুরো ব্যাংক খাত আজ খাদের কিনারে। অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতা নেওয়ার পর নতুন গভর্নরের নেতৃত্বে বেশ কিছু ত্বরিত পদক্ষেপ নেওয়া হয়। কঠিন সংকটে পড়া কয়েকটি ব্যাংককে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তত্ত্বাবধানে টাকা ধার দেওয়া হয়।
এর ফলে ব্যাংকগুলোতে যে শ্বাসরুদ্ধকর অবস্থা ছিল, সেই পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে। তবে সংকট কাটেনি। গতকাল কালের কণ্ঠ ব্যাংক খাতে মূলধন ঘাটতি নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।

মূলত খেলাপি ঋণ কিভাবে ব্যাংক খাতকে মূলধন ঘাটতির চোরাবালিতে নিয়ে যাচ্ছে সেই চিত্রই তুলে ধরা হয়েছে।

প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, গত ডিসেম্বর শেষে ব্যাংক খাতের খেলাপি ঋণ বেড়ে তিন লাখ ৪৫ হাজার ৭৬৫ কোটি টাকায় ঠেকেছে। এটি মোট ঋণের ২০.২০ শতাংশ। নিয়ম অনুযায়ী, প্রতিটি ব্যাংকের জন্য মন্দ বা লোকসান ক্যাটাগরির খেলাপি ঋণের বিপরীতে প্রভিশন হিসেবে রাখতে হয়। প্রভিশন বা নিরাপত্তা সঞ্চিতি হচ্ছে ব্যাংকগুলোর জন্য অবশ্য পালনীয় একটি নির্দেশনা, যার মাধ্যমে ব্যাংকে থাকা আমানতকারীর আমানতের সুরক্ষা দেওয়া হয়। অথচ এখন অনেক ব্যাংকেই প্রভিশন ঘাটতি বাড়তে দেখা যাচ্ছে।

প্রতিবেদনের তথ্য বলছে, ভালো ও মন্দ ঋণের বিপরীতে পর্যাপ্ত পরিমাণ প্রভিশন রাখতে পারছে না সরকারি ও বেসরকারি খাতের ১০টি ব্যাংক। ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর শেষে এসব ব্যাংকে মোট প্রভিশন ঘাটতির পরিমাণ ৫৬ হাজার ৩৬ কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। গত জুনে এটি ছিল ৩১ হাজার ৫৪৪ কোটি টাকা। অর্থাত্ মাত্র তিন মাসের ব্যবধানে প্রভিশন ঘাটতি বেড়েছে ২৪ হাজার ৪৯২ কোটি টাকা। ১৬টি ব্যাংকের মূলধন ঘাটতিও ৪০ হাজার কোটি টাকার বেশি।

অন্তর্বর্তী সরকার ব্যাংক খাতে সুশাসন ফেরানোর এবং এই খাত থেকে লুটে নেওয়া টাকা ফেরানোর চেষ্টা করছে। একইভাবে পাচার হওয়া লাখ লাখ কোটি টাকা ফেরাতেও বিভিন্নমুখী পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে, কিন্তু এসব পদক্ষেপ আরো ফলপ্রসূ ও জোরদার করতে হবে। ব্যাংক খাতে কঠোর নজরদারি করতে হবে। বিশেষ করে বড় অঙ্কের খেলাপি ঋণ আদায়ে সর্বশক্তি নিয়োগ করতে হবে। লুটেরা ও পাচারকারীদের বিরুদ্ধে ত্বরিত শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে। মোটকথা, ব্যাংক খাতকে এমনভাবে গড়ে তুলতে হবে, যাতে মানুষ আস্থা ফিরে পায় এবং তারা যেন ব্যাংকমুখী হয়। ব্যাংক খাতে আস্থা না ফিরলে অর্থনীতি, ব্যবসা-বাণিজ্য গতি পাবে না। এ বিষয়ে সরকারের নীতিনির্ধারকদের আরো বেশি কৌশলী ও জনবান্ধব নীতি গ্রহণ করতে হবে।

 

 

মন্তব্য

গণতন্ত্রের চর্চা শুরু হোক

    ডিসেম্বরে নির্বাচন
শেয়ার
গণতন্ত্রের চর্চা শুরু হোক

বাংলাদেশে বিগত ১৬ বছরে যে তিনটি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে, সেগুলোর গ্রহণযোগ্যতা ছিল না বললেই চলে। যেমন দেশের ভেতর থেকে, তেমনি দেশের বাইরে থেকেও এসব নির্বাচনের ব্যাপক সমালোচনা ছিল। এসব নির্বাচনকে ভোটারবিহীন নির্বাচন, রাতের নির্বাচন, ভোট চুরির নির্বাচনসহ আরো অনেক নামে আখ্যায়িত করা হয়েছে। তাই দেশের মানুষ প্রকৃত গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় অনুষ্ঠিত নির্বাচনে নিজেদের ভোটাধিকার প্রয়োগের জন্য উন্মুখ হয়ে আছে।

নির্বাচন নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলো শুরু থেকেই কথা বলে আসছে। অন্যদিকে সরকারের পক্ষ থেকে বরাবরই বলা হয়েছে নির্বাচনের আগে কিছু গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার করা দরকার। জাতিসংঘ মহাসচিবের সাম্প্রতিক সফরের সময়ও নির্বাচন ও সংস্কারের বিষয়টি বিস্তারিতভাবে আলোচিত হয়েছে। গত ১৪ মার্চ প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, চলতি বছরের ডিসেম্বরে কিংবা আগামী বছরের জুনে জাতীয় সংসদ নির্বাচন হবে।

তিনি বলেছেন, রাজনৈতিক দলগুলো যদি সংক্ষিপ্ত সংস্কার প্যাকেজ নিয়ে একমত হয়, তবে নির্বাচন ডিসেম্বরেই হতে পারে। তবে তারা যদি বৃহত্ সংস্কার প্যাকেজ গ্রহণ করে, তাহলে নির্বাচন আগামী বছরের জুনে অনুষ্ঠিত হবে। জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসও বাংলাদেশে চলমান সংস্কার উদ্যোগকে সমর্থন জানিয়েছেন। তবে সংস্কার প্রক্রিয়া জটিল হতে পারে বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি।
গত সোমবার আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে পুলিশের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, অন্তর্বর্তী সরকারের হাতে খুব বেশি সময় নেই। আমরা এরই মধ্যে সাত মাস পার করে এসেছি। আমরা বলছি, ডিসেম্বরে নির্বাচন হবে। কাজেই কী কী সংস্কার করতে চাই করে ফেলতে হবে। প্রধান উপদেষ্টার এই বক্তব্যে অনেকেরই ধারণা, অন্তর্বর্তী সরকার সংক্ষিপ্ত সংস্কার প্যাকেজ-এর দিকেই যাচ্ছে।

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, নির্বাচন যত দেরি হবে তত বেশি বাংলাদেশের পক্ষের শক্তিকে পরাজিত করতে ফ্যাসিস্ট শক্তি মাথাচাড়া দিতে শুরু করবে। একই সঙ্গে জঙ্গি ও উগ্র মনোভাব পোষণকারীরাও এই সুযোগগুলো নেওয়ার চেষ্টা করবে। নির্বাচন কমিশনও চলতি বছরের ডিসেম্বরে জাতীয় নির্বাচন করার সময়সীমা অতিক্রম করতে চায় না। সময়সীমা যাতে পার না হয় সে জন্য ইসি প্রস্তুতি নিচ্ছে। এ ক্ষেত্রে অক্টোবরে তফসিল ঘোষণা করতে হবে। নির্বাচন কমিশন জাতীয় নির্বাচনের আগে নতুন রাজনৈতিক দল নিবন্ধনের জন্য আবেদনও আহ্বান করেছে। জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বিষয়ে দ্রুতই সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ আসবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি ও সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রধান অধ্যাপক আলী রীয়াজ।      

সব কিছু ছাপিয়ে যে বিষয়টি আলোচনায় উঠে এসেছে তা হলো নির্বাচন। ধারণা করা হচ্ছে, এ বছরের শেষ মাসে অনুষ্ঠিত হবে পরবর্তী জাতীয় সংসদ নির্বাচন। নির্বাচন গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থার অপরিহার্য অংশ। নির্বাচনকে মানুষ উৎসব হিসেবে দেখতেই অভ্যস্ত। একটি সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে দেশ দ্রুত গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় ফিরে আসুকএটি সবারই কাম্য। আমরা চাই, দ্রুত নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় দেশ এগিয়ে যাক এবং দেশে প্রকৃত গণতন্ত্রের চর্চা শুরু হোক।

 

মন্তব্য

জনসংখ্যা হোক জনসম্পদ

    বিদেশে কর্মসংস্থান
শেয়ার
জনসংখ্যা হোক জনসম্পদ

বাংলাদেশের অর্থনীতিতে প্রবাস আয় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। দেশের বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের অন্যতম উৎস জনশক্তি রপ্তানি। বরাবরই বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় শ্রমবাজার ছিল সৌদি আরব। এর পাশাপাশি ছিল মধ্যপ্রাচ্যের দেশ ওমান।

পাশাপাশি ছিল কুয়েত। কাছের দেশ মালয়েশিয়াও একসময় দেশের অভিবাসী কর্মীদের কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিল।

দুঃখের বিষয় হচ্ছে, অতীতে বিভিন্ন সময়ে শ্রমবাজার নিয়ে সিন্ডিকেটসহ নানা ধরনের অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে। ২০২৩ সালের অক্টোবর মাসে দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগে বন্ধ হয়ে যায় ওমানের শ্রমবাজার।

এর সাত মাস পর একই অভিযোগে গত বছরের ৩১ মে বন্ধ হয়ে যায় মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার। অনানুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশি কর্মীদের ভিসা দেওয়া বন্ধ রেখেছে সংযুক্ত আরব আমিরাত সরকার। অভিবাসনসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, বাংলাদেশি কর্মীদের পছন্দের এই তিনটি শ্রমবাজার বন্ধ হয়ে যাওয়ায় সৌদি শ্রমবাজারে চাপ সৃষ্টি হয়েছে। চলতি বছরের প্রথম দুই মাসে যাওয়া এক লাখ ২০ হাজার ৮৭৬ জন কর্মীর মধ্যে গত জানুয়ারি মাসে গেছেন ৭৬ হাজার ৬১৮ জন আর ফেব্রুয়ারি মাসে গেছেন ৪৪ হাজার ২৫৮ জন।

বাংলাদেশ জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো (বিএমইটি) মনে করে, মালয়েশিয়া, আরব আমিরাত, ওমান বন্ধ ও কুয়েত, জর্দান, দক্ষিণ কোরিয়া, যুক্তরাজ্যে যাওয়া কর্মীর সংখ্যা কমা এবং সৌদির ওপর চাপ পড়লেও তার কোনো প্রভাব পড়েনি শ্রমবাজারে। কাতার, সিঙ্গাপুর, ইতালি ও জাপানে কর্মী যাওয়া বেড়েছে। একসময় ইউরোপের নানা দেশেও জনশক্তি রপ্তানির সুযোগ ছিল। প্রচলিত বাজারের বাইরে আমাদের বাজার হচ্ছে ইউরোপ। ইউরোপের বাজারের বড় সমস্যা, যেসব দেশ বাংলাদেশি কর্মী নেয়এমন অনেক দেশে বাংলাদেশের দূতাবাস নেই।

জনশক্তি রপ্তানির ক্ষেত্রে বাংলাদেশের জন্য বড় সমস্যা দক্ষ ও প্রশিক্ষিত কর্মীর অভাব। আন্তর্জাতিক শ্রমবাজারের বাস্তবতায় বাংলাদেশের শ্রমিকরা তুলনামূলকভাবে অদক্ষ। ফলে যেসব দেশে দক্ষ জনশক্তি রপ্তানির সুযোগ আছে, সেসব দেশে জনশক্তি রপ্তানি করা সম্ভব হয় না। বর্তমান সময়ে দক্ষতার বিকল্প নেই, কিন্তু বাংলাদেশের শ্রমিকরা তুলনামূলকভাবে অদক্ষ। অনেক পেশায় আমাদের কর্মীরা কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় দক্ষতা অর্জন করতে পারেননি। তাই ভালো ও বেশি আয়ের পেশায় বাংলাদেশিদের নিয়োগ কম। পর্যাপ্ত দক্ষতা নিশ্চিত করতে পারলে এসব পেশায় বাংলাদেশিদের নিয়োগ করা সম্ভব হতো। আমাদের এখন শ্রমবাজারের চাহিদার পরিবর্তন ও দক্ষতার বিষয়ে নজর দিতে হবে। বর্তমান বিশ্ববাস্তবতায় শিক্ষিত ও দক্ষতাসম্পন্নদের কদর বাড়ছে। দক্ষ জনশক্তি নিজ নিজ ক্ষেত্রে কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করে নিতে পারে। বিকাশমান বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে তাই জনশক্তি গড়ে তুলতে হবে। দক্ষ জনশক্তির রপ্তানি বাড়াতে পারলে রেমিট্যান্সও বাড়বে। জনশক্তিকে প্রশিক্ষিত ও দক্ষ করে গড়ে তুলতে পারলে জনসংখ্যা জনসম্পদে পরিণত হবে।

মন্তব্য

সর্বশেষ সংবাদ