ঢাকা, বৃহস্পতিবার ১৭ এপ্রিল ২০২৫
৪ বৈশাখ ১৪৩২, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৬

ঢাকা, বৃহস্পতিবার ১৭ এপ্রিল ২০২৫
৪ বৈশাখ ১৪৩২, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৬

কঠোর অভিযান চালাতে হবে

  • রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীরা ছড়িয়ে পড়ছে
শেয়ার
কঠোর অভিযান চালাতে হবে

রোহিঙ্গা সংকট ক্রমেই জটিল হচ্ছে। যত দিন যাচ্ছে, সংকট নানামুখী ডালপালা বিস্তার করছে। রোহিঙ্গাদের বিভিন্ন সশস্ত্র সংগঠনের তৎপরতা ক্রমেই প্রকাশ্য হচ্ছে। খুনাখুনি লেগেই আছে।

মাদক ও অস্ত্র পাচার, অপহরণ ও মুক্তিপণ আদায়সহ আরো অনেক অপরাধের সঙ্গে তাদের একটি অংশ জড়িয়ে গেছে। দেশের বিভিন্ন স্থানে থাকা সন্ত্রাসী-অপরাধীদের সঙ্গেও তাদের সখ্য গড়ে উঠেছে। গতকাল কালের কণ্ঠে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, মায়ানমারের রাখাইন রাজ্যের সশস্ত্র বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মির (আরসা) সদস্যরা দেশের বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে পড়ছে। তারা মাদক বিক্রি করছে আর সেই টাকায় অস্ত্র কিনে ধ্বংসাত্মক ক্ষমতা বাড়াচ্ছে।
তাদের দৌরাত্ম্যে দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি আরো খারাপ হতে পারে বলেও আশঙ্কা করা হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে সারা দেশে  র‌্যাবের বিশেষ অভিযান চলছে বলে জানিয়েছে  র‌্যাব সদর দপ্তর সূত্র।

সম্প্রতি নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জ ও ময়মনসিংহে পৃথক অভিযান চালিয়ে আরসা নেতা আতাউল্লাহসহ ১০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।  র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার প্রধান লে. কর্নেল আশিকুর রহমান গত বৃহস্পতিবার কালের কণ্ঠকে বলেন, আরসার রয়েছে বিপুল অস্ত্রভাণ্ডার।

তিনি বলেন, ধরা পড়ার আগে গ্রেপ্তারকৃত ব্যক্তিরা সিদ্ধিরগঞ্জ ও ময়মনসিংহের সাধারণ মানুষের সঙ্গে মিশে চলাফেরা করেছে বলে তথ্য পেয়েছি। গোপন বৈঠকও করেছে। তারা কিভাবে ওই এলাকায় ঢুকল, তাদের টাকার উৎস, অস্ত্রের উৎস কী, তাদের আরো কত সদস্য রয়েছে, কত নেতা এভাবে দেশে আত্মগোপনে রয়েছেএসবের খোঁজ নেওয়া হচ্ছে। তাদের ধরতে  র‌্যাবের সব ব্যাটালিয়ন অভিযান শুরু করেছে।

রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলোর সশস্ত্র তৎপরতায় সাধারণ রোহিঙ্গারা সব সময় তটস্থ থাকে।

প্রায়ই হামলা, গোলাগুলি বা খুনখারাবির ঘটনা ঘটে। সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে প্রায়ই সংঘর্ষ হয়। ২০২৩ সালের এক প্রতিবেদনে জানা যায়, পাঁচ বছরে ১২ ধরনের অপরাধে দেড় হাজারের বেশি মামলাও হয়েছে রোহিঙ্গা অপরাধীদের বিরুদ্ধে। স্থানীয় অপরাধীদের সঙ্গেও তাদের সম্পৃক্ততা তৈরি হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, তাদের কাছে প্রচুর পরিমাণে অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র রয়েছে। পাঁচ বছরে দুই লাখের বেশি রোহিঙ্গা ক্যাম্প ছেড়ে পালিয়ে গেছে। অনেক নিরাপত্তা বিশ্লেষকের ধারণা, এখনই পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেওয়া না হলে শিগগিরই তারা জাতীয় নিরাপত্তার ক্ষেত্রে বড় ধরনের সংকট তৈরি করতে পারে, বিশেষ করে যেভাবে সারা দেশে তাদের উপস্থিতি পাওয়া যাচ্ছে।

আমরা মনে করি, রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে বাংলাদেশকে আরো সক্রিয় হতে হবে। ক্যাম্পের বাইরে রোহিঙ্গাদের ছড়িয়ে যাওয়া রোধ করতে হবে। সশস্ত্র সংগঠনগুলোর তৎপরতা সর্বোচ্চ কঠোরতায় দমন করতে হবে। প্রত্যাবাসনের প্রক্রিয়া দ্রুততর করতে হবে। চোরাচালান বন্ধে সীমান্তে সর্বোচ্চ কড়াকড়ি আরোপ করা প্রয়োজন।

মন্তব্য

সম্পর্কিত খবর

লাভের চেয়ে ক্ষতি বেশি হবে

    শিল্পে গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধি
শেয়ার
লাভের চেয়ে ক্ষতি বেশি হবে

উৎপাদনশীল অর্থনীতির অন্যতম ভিত্তি হচ্ছে গ্যাস। গ্যাসের সহজলভ্যতা ও মূল্যের ওপর উৎপাদনের খরচ নির্ভর করে। গ্যাসের দাম বাড়লে স্বাভাবিকভাবেই উৎপাদনের খরচ বেড়ে যায়। পণ্য বাজারজাতকরণে সমস্যা হয়।

শিল্পের ঝুঁকি বাড়ে। কালের কণ্ঠেশিল্পে গ্যাসের দাম বাড়ায় উদ্বেগ শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা যাচ্ছে, নতুন শিল্পের জন্য গ্যাসের দাম ৩৩ শতাংশ বাড়িয়েছে সরকার। পাশাপাশি প্রতিশ্রুত শিল্প গ্রাহকদের অনুমোদিত লোডের ৫০ শতাংশের বেশি ব্যবহারে বাড়তি দাম দিতে হবে। অন্যদিকে পুরনো শিল্প-কারখানায় অনুমোদিত লোডের বাইরে অতিরিক্ত ব্যবহারে গ্যাসের বাড়তি দাম আরোপিত হবে।

ব্যাংকঋণের সুদের চড়া হার, উচ্চ মূল্যস্ফীতি ও রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা এসবের মধ্যে গ্যাসের নতুন মূল্যহারকে বৈষম্যমূলক আখ্যায়িত করে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে বাংলাদেশে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের সংগঠন ফরেন ইনভেস্টরস চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এফআইসিসিআই) এতে নতুন বিনিয়োগ অসম প্রতিযোগিতার মধ্যে পড়বে বলে মনে করছে তারা। সংগঠনটির মতে, নির্দেশনা অনুযায়ী নতুন গ্রাহক, প্রতিশ্রুত গ্রাহক ও বিদ্যমান গ্রাহকদের জন্য আলাদা গ্যাসের দাম নির্ধারণ করা হয়েছে, যা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। এই দ্বৈত মূল্যনীতি শুধু ন্যায্য প্রতিযোগিতার নীতিই লঙ্ঘন করে না, বরং প্রতিযোগিতামূলক বাজারে সবার জন্য সমান সুযোগ তৈরি অনিশ্চিত করে।

গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির ফলে নতুন বিনিয়োগ ও শিল্প সম্প্রসারণ চরমভাবে বাধাগ্রস্ত হবে মনে করেন উদ্যোক্তারা। তাঁরা বলছেন, এভাবে গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধি করা হলে বাংলাদেশে আর কোনো শিল্প-কারখানা গড়ে উঠবে না। নতুন বিনিয়োগ আসবে না, কর্মসংস্থানও হবে না। বিদেশি বিনিয়োগও আসবে না। বড় ধরনের প্রভাব পড়বে রপ্তানি শিল্পে।
এতে লাভের চেয়ে ক্ষতি বেশি হবে।

ঘোষণা অনুযায়ী যেকোনো নতুন গ্যাস সেলস অ্যাগ্রিমেন্ট নতুন সংযোগ হিসেবে বিবেচিত হবে। অর্থাৎ দীর্ঘদিন ধরে গ্যাস ব্যবহার করে আসা শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোকেও চলতি চুক্তি শেষ হলে কর্তৃপক্ষ ইচ্ছা করলে অতিরিক্ত গ্যাস ট্যারিফের স্ল্যাবে ফেলতে পারবে। ধরনের বিধান ক্ষমতার অপব্যবহার এবং ভবিষ্যতে দুর্নীতির সুযোগ তৈরি করবে বলেও আশঙ্কা করা হচ্ছে।

গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে ব্যবসায়ীদের এই উদ্বেগ যৌক্তিক এবং জরুরি। একটি দীর্ঘ স্বৈরশাসনের পর দেশের ভঙ্গুর অর্থনীতিকে চাঙ্গা করা আবশ্যক। এই অবস্থায় যদি গ্যাসের অবাস্তব মূল্য বৃদ্ধি করা হয়, তবে তা অর্থনীতি ও দেশের ভবিষ্যতের জন্য বড় রকমের বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে। মনে রাখতে হবে, ঘন ঘন গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধি করা হলে সেই চাপ ঘুরেফিরে জনগণের কাঁধেই পড়বে। গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির ফলে উৎপাদন ব্যয় বৃদ্ধি পাবে, আরেক দফা পণ্যমূল্য বাড়বে।

মন্তব্য

অস্থিতিশীলতা কাম্য নয়

    উত্তপ্ত হচ্ছে রাজনীতির মাঠ
শেয়ার
অস্থিতিশীলতা কাম্য নয়

দেশের রাজনীতিতে ক্রমে উত্তাপ বাড়ছে। জুলাই-আগস্টের অভ্যুত্থান-পরবর্তী সময়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে যে ধরনের ঐক্য দেখা যেত, তা ক্রমেই লোপ পাচ্ছে। বিশেষ করে আগামী সাধারণ নির্বাচনের দিনক্ষণ নিয়ে মতভেদ ক্রমেই স্পষ্ট হচ্ছে। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন দাবি করছে।

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল গতকাল বুধবার প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠক করে ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচনের রোডম্যাপ দাবি করেছে। বিএনপির সঙ্গে জোটবদ্ধ দলগুলো ছাড়া কয়েকটি বাম দলও ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন দাবি করেছে। অন্যদিকে জামায়াতে ইসলামী চায় প্রয়োজনীয় সংস্কারের পরই নির্বাচন হোক। আর জুলাই-আগস্টের গণ-অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া ছাত্রনেতাদের নতুন দল জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) চায় জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে সংস্কারের রোডম্যাপ ও গণপরিষদ নির্বাচন।
বিএনপি ও সমমনা দলগুলোর পক্ষ থেকে ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলন শুরু করারও ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে। ফলে রাজনীতিতে পরস্পরবিরোধী অবস্থান ও উত্তেজনা ক্রমেই বাড়ছে। এমন পরিস্থিতিতে সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান জাতীয় ঐক্য ধরে রাখার বার্তা দিয়েছেন। বাংলা নববর্ষ উপলক্ষে গত সোমবার রাজধানীর ঢাকেশ্বরী মন্দির পরিদর্শন শেষে সেনাপ্রধান কথা বলেন।

গণ-অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে গঠিত অন্তর্বর্তী সরকারের কার্যকাল এরই মধ্যে আট মাস পেরিয়ে ৯ মাসে পড়েছে। কিন্তু রাষ্ট্র সংস্কারের কাজ কতটা এগোল এবং কবে নির্বাচন হচ্ছে, তা এখনো খুব একটা স্পষ্ট নয়। গত শনিবার প্রধান উপদেষ্টা আগামী ডিসেম্বরে জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে ঐকমত্য কমিশনকে সংস্কার কার্যক্রম দ্রুত এগিয়ে নেওয়ার তাগিদ দিয়েছেন বলে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং প্রথমে গণমাধ্যমকে জানায়। পরে সংশোধিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে নির্বাচনের সময় আগামী ডিসেম্বর থেকে জুনের মধ্যে বলা হয়। এর আগেও কখনো ডিসেম্বর, কখনো ডিসেম্বর থেকে মার্চ-এপ্রিলের মধ্যে নির্বাচন হতে পারে বলেও জানানো হয়।

সব কিছু মিলে নির্বাচনের দিন-তারিখ নিয়ে এক ধরনের অস্পষ্টতা রয়েই গেছে। সম্প্রতি সুনামগঞ্জে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লে. জে. (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীর বক্তব্যও ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে। সেখানে তিনি সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘রাস্তা থেকে আমাকে বলতেছে, আপনারা আরো পাঁচ বছর থাকেন। গত মঙ্গলবারও সচিবালয়ে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘পাঁচ বছর সরকারকে ক্ষমতায় রাখার বিষয়ে আমি কিছু বলিনি, কথা জনগণ বলেছে। গত ১৩ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জে পালিত হয়েছেমার্চ ফর ইউনূস কর্মসূচি।আগে সংস্কার, পরে নির্বাচন স্লোগানে নারায়ণগঞ্জ প্রেস ক্লাবের সামনে ওই কর্মসূচি পালিত হয়। কর্মসূচি থেকে অন্তর্বর্তী সরকারের মেয়াদ কমপক্ষে তিন বছর করার দাবি জানানো হয়। এদিকে গতকাল প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকের পরও বিএনপি মহাসচিব বলেছেন, ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন না হলে দেশে অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে।

দেশের মানুষের বিপুল অংশগ্রহণ ছিল বলেই জুলাই-আগস্টের অভ্যুত্থান সফল হয়েছিল। সেনাপ্রধানের মতো তারাও চায়, দেশে শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় থাকুক। রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐক্য অটুট থাকুক। আমরা মনে করি, রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে অন্তর্বর্তী সরকারকে সুবিধাজনক সময়ে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের উদ্যোগ নিতে হবে। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে পুনরায় কোনো অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি হোক, এটি কারো কাম্য নয়।

 

মন্তব্য

হজযাত্রীদের দুর্ভোগ কমবে

    হজ ব্যবস্থাপনায় নানা উদ্যোগ
শেয়ার
হজযাত্রীদের দুর্ভোগ কমবে

পবিত্র হজ পালন ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের ধর্মীয় বিশ্বাস এবং আবেগ-অনুভূতির সঙ্গে জড়িত। তা সত্ত্বেও প্রতিবছরই হজ ব্যবস্থাপনার নানাবিধ দুর্বলতা উঠে আসে গণমাধ্যমে। প্রতারণাসহ নানা ধরনের বিড়ম্বনায় পড়তে হয় হজযাত্রীদের। ঢাকার বিমানবন্দর থেকেই শুরু হয় বিড়ম্বনা।

সৌদি আরবের জেদ্দা-মক্কা-মদিনায় তা অব্যাহত থাকে। লাগেজসহ মূল্যবান জিনিসপত্র হারিয়ে যায়। অনেক সময় হজযাত্রী নিজেই পথ ভুলে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েন নিজ নিজ দল থেকে। এমনকি হাত খরচের টাকাও অনেকে হারিয়ে ফেলেন।
এমন সব জটিলতা এড়াতে এবার উদ্যোগ নিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। কালের কণ্ঠে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা যাচ্ছে, হজযাত্রীদের লাগেজ হারানো ও অসুস্থ হওয়াসহ সব ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি নজরদারি করতে ঢাকা ও সৌদি আরবের মক্কা ও মদিনায় খোলা হবে হজ ম্যানেজমেন্ট সেন্টার। নির্দিষ্ট অ্যাপের মাধ্যমে ঢাকায় বসে সৌদি আরবে বাংলাদেশি হাজিদের মনিটর করা হবে। প্রত্যেক হজযাত্রীকে সেই অ্যাপের মাধ্যমে সার্বক্ষণিক দেখভাল করা হবে।
কোনো হজযাত্রী বিপদে পড়লে নিজেও অ্যাপসের মাধ্যমে কল করে জানাতে পারবেন এই সেন্টারে। তাৎক্ষণিক প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবে ধর্ম মন্ত্রণালয়।

প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, হজ ব্যবস্থাপনাসংক্রান্ত জাতীয় কমিটির সভায় বেসরকারি এজেন্সিগুলোর দায়িত্ব কী হবে, সেটি সুস্পষ্টভাবে লিপিবদ্ধ করে বুকলেট আকারে অনলাইনে প্রকাশের নির্দেশ দেন প্রধান উপদেষ্টা। তিনি বলেন, সরকারের দায়িত্ব হলো এজেন্সিগুলো ঠিকমতো দায়িত্ব পালন করছে কি না তা মনিটর করা এবং কোনো ব্যত্যয় দেখা গেলে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়া। জানা যায়, এ ছাড়া সব হজযাত্রীর মোবাইল ফোনের সিম রোমিং করে দেবে সরকার।

এর খরচ সাশ্রয়ী করা হবে। হজযাত্রীদের নতুন করে সৌদি কম্পানির মোবাইল সিম কিনতে হবে না। এতে হাজিদের সঙ্গে তাঁদের পরিবার-পরিজনের যোগাযোগের সমস্যা দূর হবে। এ ছাড়া সৌদি আরবে নগদ টাকা বহনের ঝুঁকি কমাতে সব হজযাত্রীকে ইসলামী ব্যাংকের ডেবিট কার্ড দেওয়া হবে, যাতে সৌদি আরবে গিয়ে হজযাত্রীরা এটিএম বুথ থেকে প্রয়োজনীয় রিয়াল তুলে খরচ করতে পারেন।

এ বছর সরকারি ব্যবস্থাপনায় পাঁচ হাজার ২০০ জন এবং বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় ৮১ হাজার ৯০০ জন হজে যাচ্ছেন। আমরা আশা করি, হজযাত্রীদের যাতে কোনো দুর্ভোগ না হয় সে জন্য সরকার ও সংশ্লিষ্ট এজেন্সিগুলো যার যার দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করবে। হজযাত্রীদের সমস্যা সমাধানে সরকার যেসব উদ্যোগ নিয়েছে সেসবের সর্বাঙ্গীণ সাফল্য কামনা করি।

মন্তব্য

অনুকূল পরিবেশ নিশ্চিত করুন

    গভীর সংকটে শিল্প-কারখানা
শেয়ার
অনুকূল পরিবেশ নিশ্চিত করুন

নানা প্রতিকূল পরিস্থিতিতে দেশের শিল্প খাত আজ এক গভীর সংকটে নিমজ্জিত। গ্যাস-বিদ্যুতের সংকট ক্রমেই প্রবল হচ্ছে। ঢাকার সাভার, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর ও নরসিংদী এলাকার শিল্প-কারখানাগুলোতে চাহিদা অনুযায়ী গ্যাস না পাওয়ায় উৎপাদন ৪০ শতাংশ পর্যন্ত কমেছে। এর ফলে উৎপাদন ব্যয় বেড়ে যাচ্ছে।

এমন পরিস্থিতিতে আবারও বাড়ানো হয়েছে গ্যাসের দাম, যার কারণে শিল্পে রীতিমতো বিপর্যয় নেমে আসবে বলে জানান খাতসংশ্লিষ্টরা। গতকাল কালের কণ্ঠে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, শিল্প গ্রাহকদের প্রতি ঘনমিটার গ্যাসের বিল ৩০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৪০ টাকা এবং ক্যাপটিভ পাওয়ারে (শিল্পে উৎপাদিত নিজস্ব বিদ্যুৎকেন্দ্র) গ্যাসের দাম ৩১.৫০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৪২ টাকা করা হয়েছে। পুরনো শিল্প-কারখানায় অনুমোদিত লোডের বাইরে অতিরিক্ত ব্যবহারে দিতে হবে বাড়তি দাম।

খাতসংশ্লিষ্টদের মতে, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের পর রাজনৈতিক অস্থিরতা, বাজার অস্থিতিশীলতা, ব্যাংকঋণের উচ্চ সুদহার, ঋণপত্র খোলার অভাবে কাঁচামালের অপর্যাপ্ততা, শ্রমিক অসন্তোষ ও উৎপাদন অপ্রতুলতায় দুই শতাধিক কলকারখানা বন্ধ হয়ে গেছে।

যেগুলো টিকে আছে সেগুলোও অস্তিত্বের সংকটে ধুঁকছে। এ অবস্থায় নতুন করে গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধিতে শিল্প খাতকে আরো ধ্বংসের দিকে নিয়ে যাবে বলে জানিয়েছেন তাঁরা। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সরকার গ্যাসের দাম বাড়ালেও সরবরাহ তেমন বাড়াতে পারবে না। কারণ ধারাবাহিকভাবে দেশীয় কূপগুলো থেকে গ্যাসের উৎপাদন কমে আসছে।
আর তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) থেকে সর্বোচ্চ আমদানির সক্ষমতা ১১০০ মিলিয়ন ঘনফুট। নতুন এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণ না হলে আমদানি আর বাড়ানো যাবে না। আগামী দুই বছরেও নতুন টার্মিনাল চালুর তেমন সম্ভাবনা নেই। কারণ টার্মিনাল নির্মাণে কোনো চুক্তি হয়নি। আওয়ামী লীগ আমলে হওয়া দুটি চুক্তিই বাতিল করেছে অন্তর্বর্তী সরকার।

বাংলাদেশ নিট পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএর সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম কালের কণ্ঠকে বলেন, আমার ধারণা, নতুন শিল্পের জন্য এত উচ্চমূল্যের গ্যাস বিল দিয়ে কেউ এই খাতে বিনিয়োগ করবে না। পাশাপাশি আমরা যারা কারখানা চালাচ্ছি, তারাও সক্ষমতা বাড়ানোর ক্ষেত্রে উদ্যোগী হব না। তিনি আরো বলেন, গ্যাসের দাম বাড়ানো হলেও গ্যাসের সরবরাহ কিন্তু বাড়ানো হচ্ছে না। পেট্রোবাংলা সূত্রে জানা যায়, বর্তমানে দেশে গ্যাসের চাহিদা রয়েছে প্রায় চার হাজার ২০০ মিলিয়ন ঘনফুট। গত রবিবার গ্যাস সরবরাহ করা হয় দুই হাজার ৬৯৬ মিলিয়ন ঘনফুট, ঘাটতি ছিল প্রায় দেড় হাজার মিলিয়ন ঘনফুট। মোট দুই হাজার ৬৯৬ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহের মধ্যে দেশীয় গ্যাসক্ষেত্র থেকে এক হাজার ৮৭৩ মিলিয়ন ঘনফুট এবং আমদানী তরা তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) থেকে ৮২২ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করা হয়।

দেশের ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার কর্মসংস্থানের জন্য দেশে দ্রুত শিল্পায়ন প্রয়োজন, কিন্তু হচ্ছে উল্টোটা। বিদ্যমান শিল্পগুলোও ধুঁকতে ধুঁকতে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। তাহলে এ দেশের দ্রুত বর্ধিষ্ণু জনসংখ্যার কর্মসংস্থান হবে কিভাবে? আমরা মনে করি, অন্তর্বর্তী সরকার দেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতির স্বার্থে শিল্প সুরক্ষায় গুরুত্ব দেবে। গ্যাসের দাম বাস্তবতার নিরিখে বিবেচনা করতে হবে। পাশাপাশি শিল্প-কারখানার জন্য অনুকূল পরিবেশ তৈরি করতে হবে।

প্রাসঙ্গিক
মন্তব্য

সর্বশেষ সংবাদ