রোহিঙ্গা সংকট ক্রমেই জটিল হচ্ছে। যত দিন যাচ্ছে, সংকট নানামুখী ডালপালা বিস্তার করছে। রোহিঙ্গাদের বিভিন্ন সশস্ত্র সংগঠনের তৎপরতা ক্রমেই প্রকাশ্য হচ্ছে। খুনাখুনি লেগেই আছে।
কঠোর অভিযান চালাতে হবে
- রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীরা ছড়িয়ে পড়ছে

সম্প্রতি নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জ ও ময়মনসিংহে পৃথক অভিযান চালিয়ে আরসা নেতা আতাউল্লাহসহ ১০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার প্রধান লে. কর্নেল আশিকুর রহমান গত বৃহস্পতিবার কালের কণ্ঠকে বলেন, আরসার রয়েছে বিপুল অস্ত্রভাণ্ডার।
রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলোর সশস্ত্র তৎপরতায় সাধারণ রোহিঙ্গারা সব সময় তটস্থ থাকে।
আমরা মনে করি, রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে বাংলাদেশকে আরো সক্রিয় হতে হবে। ক্যাম্পের বাইরে রোহিঙ্গাদের ছড়িয়ে যাওয়া রোধ করতে হবে। সশস্ত্র সংগঠনগুলোর তৎপরতা সর্বোচ্চ কঠোরতায় দমন করতে হবে। প্রত্যাবাসনের প্রক্রিয়া দ্রুততর করতে হবে। চোরাচালান বন্ধে সীমান্তে সর্বোচ্চ কড়াকড়ি আরোপ করা প্রয়োজন।
সম্পর্কিত খবর

লাভের চেয়ে ক্ষতি বেশি হবে
- শিল্পে গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধি

উৎপাদনশীল অর্থনীতির অন্যতম ভিত্তি হচ্ছে গ্যাস। গ্যাসের সহজলভ্যতা ও মূল্যের ওপর উৎপাদনের খরচ নির্ভর করে। গ্যাসের দাম বাড়লে স্বাভাবিকভাবেই উৎপাদনের খরচ বেড়ে যায়। পণ্য বাজারজাতকরণে সমস্যা হয়।
ব্যাংকঋণের সুদের চড়া হার, উচ্চ মূল্যস্ফীতি ও রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা— এসবের মধ্যে গ্যাসের নতুন মূল্যহারকে বৈষম্যমূলক আখ্যায়িত করে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে বাংলাদেশে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের সংগঠন ফরেন ইনভেস্টরস চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এফআইসিসিআই)। এতে নতুন বিনিয়োগ অসম প্রতিযোগিতার মধ্যে পড়বে বলে মনে করছে তারা। সংগঠনটির মতে, নির্দেশনা অনুযায়ী নতুন গ্রাহক, প্রতিশ্রুত গ্রাহক ও বিদ্যমান গ্রাহকদের জন্য আলাদা গ্যাসের দাম নির্ধারণ করা হয়েছে, যা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। এই দ্বৈত মূল্যনীতি শুধু ন্যায্য প্রতিযোগিতার নীতিই লঙ্ঘন করে না, বরং প্রতিযোগিতামূলক বাজারে সবার জন্য সমান সুযোগ তৈরি অনিশ্চিত করে।
ঘোষণা অনুযায়ী যেকোনো নতুন গ্যাস সেলস অ্যাগ্রিমেন্ট নতুন সংযোগ হিসেবে বিবেচিত হবে। অর্থাৎ দীর্ঘদিন ধরে গ্যাস ব্যবহার করে আসা শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোকেও চলতি চুক্তি শেষ হলে কর্তৃপক্ষ ইচ্ছা করলে অতিরিক্ত গ্যাস ট্যারিফের স্ল্যাবে ফেলতে পারবে। এ ধরনের বিধান ক্ষমতার অপব্যবহার এবং ভবিষ্যতে দুর্নীতির সুযোগ তৈরি করবে বলেও আশঙ্কা করা হচ্ছে।
গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে ব্যবসায়ীদের এই উদ্বেগ যৌক্তিক এবং জরুরি। একটি দীর্ঘ স্বৈরশাসনের পর দেশের ভঙ্গুর অর্থনীতিকে চাঙ্গা করা আবশ্যক। এই অবস্থায় যদি গ্যাসের অবাস্তব মূল্য বৃদ্ধি করা হয়, তবে তা অর্থনীতি ও দেশের ভবিষ্যতের জন্য বড় রকমের বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে। মনে রাখতে হবে, ঘন ঘন গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধি করা হলে সেই চাপ ঘুরেফিরে জনগণের কাঁধেই পড়বে। গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির ফলে উৎপাদন ব্যয় বৃদ্ধি পাবে, আরেক দফা পণ্যমূল্য বাড়বে।

অস্থিতিশীলতা কাম্য নয়
- উত্তপ্ত হচ্ছে রাজনীতির মাঠ

দেশের রাজনীতিতে ক্রমে উত্তাপ বাড়ছে। জুলাই-আগস্টের অভ্যুত্থান-পরবর্তী সময়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে যে ধরনের ঐক্য দেখা যেত, তা ক্রমেই লোপ পাচ্ছে। বিশেষ করে আগামী সাধারণ নির্বাচনের দিনক্ষণ নিয়ে মতভেদ ক্রমেই স্পষ্ট হচ্ছে। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন দাবি করছে।
গণ-অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে গঠিত অন্তর্বর্তী সরকারের কার্যকাল এরই মধ্যে আট মাস পেরিয়ে ৯ মাসে পড়েছে। কিন্তু রাষ্ট্র সংস্কারের কাজ কতটা এগোল এবং কবে নির্বাচন হচ্ছে, তা এখনো খুব একটা স্পষ্ট নয়। গত শনিবার প্রধান উপদেষ্টা আগামী ডিসেম্বরে জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে ঐকমত্য কমিশনকে সংস্কার কার্যক্রম দ্রুত এগিয়ে নেওয়ার তাগিদ দিয়েছেন বলে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং প্রথমে গণমাধ্যমকে জানায়। পরে সংশোধিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে নির্বাচনের সময় আগামী ডিসেম্বর থেকে জুনের মধ্যে বলা হয়। এর আগেও কখনো ডিসেম্বর, কখনো ডিসেম্বর থেকে মার্চ-এপ্রিলের মধ্যে নির্বাচন হতে পারে বলেও জানানো হয়।
দেশের মানুষের বিপুল অংশগ্রহণ ছিল বলেই জুলাই-আগস্টের অভ্যুত্থান সফল হয়েছিল। সেনাপ্রধানের মতো তারাও চায়, দেশে শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় থাকুক। রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐক্য অটুট থাকুক। আমরা মনে করি, রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে অন্তর্বর্তী সরকারকে সুবিধাজনক সময়ে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের উদ্যোগ নিতে হবে। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে পুনরায় কোনো অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি হোক, এটি কারো কাম্য নয়।

হজযাত্রীদের দুর্ভোগ কমবে
- হজ ব্যবস্থাপনায় নানা উদ্যোগ

পবিত্র হজ পালন ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের ধর্মীয় বিশ্বাস এবং আবেগ-অনুভূতির সঙ্গে জড়িত। তা সত্ত্বেও প্রতিবছরই হজ ব্যবস্থাপনার নানাবিধ দুর্বলতা উঠে আসে গণমাধ্যমে। প্রতারণাসহ নানা ধরনের বিড়ম্বনায় পড়তে হয় হজযাত্রীদের। ঢাকার বিমানবন্দর থেকেই শুরু হয় বিড়ম্বনা।
প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, হজ ব্যবস্থাপনাসংক্রান্ত জাতীয় কমিটির সভায় বেসরকারি এজেন্সিগুলোর দায়িত্ব কী হবে, সেটি সুস্পষ্টভাবে লিপিবদ্ধ করে বুকলেট আকারে অনলাইনে প্রকাশের নির্দেশ দেন প্রধান উপদেষ্টা। তিনি বলেন, সরকারের দায়িত্ব হলো এজেন্সিগুলো ঠিকমতো দায়িত্ব পালন করছে কি না তা মনিটর করা এবং কোনো ব্যত্যয় দেখা গেলে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়া। জানা যায়, এ ছাড়া সব হজযাত্রীর মোবাইল ফোনের সিম ‘রোমিং’ করে দেবে সরকার।
এ বছর সরকারি ব্যবস্থাপনায় পাঁচ হাজার ২০০ জন এবং বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় ৮১ হাজার ৯০০ জন হজে যাচ্ছেন। আমরা আশা করি, হজযাত্রীদের যাতে কোনো দুর্ভোগ না হয় সে জন্য সরকার ও সংশ্লিষ্ট এজেন্সিগুলো যার যার দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করবে। হজযাত্রীদের সমস্যা সমাধানে সরকার যেসব উদ্যোগ নিয়েছে সেসবের সর্বাঙ্গীণ সাফল্য কামনা করি।

অনুকূল পরিবেশ নিশ্চিত করুন
- গভীর সংকটে শিল্প-কারখানা

নানা প্রতিকূল পরিস্থিতিতে দেশের শিল্প খাত আজ এক গভীর সংকটে নিমজ্জিত। গ্যাস-বিদ্যুতের সংকট ক্রমেই প্রবল হচ্ছে। ঢাকার সাভার, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর ও নরসিংদী এলাকার শিল্প-কারখানাগুলোতে চাহিদা অনুযায়ী গ্যাস না পাওয়ায় উৎপাদন ৪০ শতাংশ পর্যন্ত কমেছে। এর ফলে উৎপাদন ব্যয় বেড়ে যাচ্ছে।
খাতসংশ্লিষ্টদের মতে, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের পর রাজনৈতিক অস্থিরতা, বাজার অস্থিতিশীলতা, ব্যাংকঋণের উচ্চ সুদহার, ঋণপত্র খোলার অভাবে কাঁচামালের অপর্যাপ্ততা, শ্রমিক অসন্তোষ ও উৎপাদন অপ্রতুলতায় দুই শতাধিক কলকারখানা বন্ধ হয়ে গেছে।
বাংলাদেশ নিট পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএর সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমার ধারণা, নতুন শিল্পের জন্য এত উচ্চমূল্যের গ্যাস বিল দিয়ে কেউ এই খাতে বিনিয়োগ করবে না। পাশাপাশি আমরা যারা কারখানা চালাচ্ছি, তারাও সক্ষমতা বাড়ানোর ক্ষেত্রে উদ্যোগী হব না।’ তিনি আরো বলেন, ‘গ্যাসের দাম বাড়ানো হলেও গ্যাসের সরবরাহ কিন্তু বাড়ানো হচ্ছে না।’ পেট্রোবাংলা সূত্রে জানা যায়, বর্তমানে দেশে গ্যাসের চাহিদা রয়েছে প্রায় চার হাজার ২০০ মিলিয়ন ঘনফুট। গত রবিবার গ্যাস সরবরাহ করা হয় দুই হাজার ৬৯৬ মিলিয়ন ঘনফুট, ঘাটতি ছিল প্রায় দেড় হাজার মিলিয়ন ঘনফুট। মোট দুই হাজার ৬৯৬ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহের মধ্যে দেশীয় গ্যাসক্ষেত্র থেকে এক হাজার ৮৭৩ মিলিয়ন ঘনফুট এবং আমদানী তরা তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) থেকে ৮২২ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করা হয়।
দেশের ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার কর্মসংস্থানের জন্য দেশে দ্রুত শিল্পায়ন প্রয়োজন, কিন্তু হচ্ছে উল্টোটা। বিদ্যমান শিল্পগুলোও ধুঁকতে ধুঁকতে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। তাহলে এ দেশের দ্রুত বর্ধিষ্ণু জনসংখ্যার কর্মসংস্থান হবে কিভাবে? আমরা মনে করি, অন্তর্বর্তী সরকার দেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতির স্বার্থে শিল্প সুরক্ষায় গুরুত্ব দেবে। গ্যাসের দাম বাস্তবতার নিরিখে বিবেচনা করতে হবে। পাশাপাশি শিল্প-কারখানার জন্য অনুকূল পরিবেশ তৈরি করতে হবে।