<p style="text-align:justify"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">বাঙালি জাতির ইতিহাসে রয়েছে অনন্য বীরত্বের সঙ্গে অনেক বিজয় অর্জন করতে পারার ইতিহাস। এটি আমাদের গর্ব। কিন্তু গভীর বেদনা ও পরিতাপের কথা হলো, সে ইতিহাস একই সঙ্গে অর্জিত বিজয় ধরে রাখতে না পারারও ইতিহাস। জুলাই-আগস্টের গণ-অভ্যুত্থানে অভূতপূর্ব বিজয় ছিনিয়ে আনতে পারার পরেও মানুষের মাঝে দেশের ভবিষ্যৎ নিয়ে সে কারণেই সংশয়। মানুষের মাঝে নানা রাজনৈতিক বিষয়, এ দেশের ভবিষ্যৎ নিয়ে জল্পনাকল্পনা, আলাপ-আলোচনার শেষ নেই। সেসব বিষয়ের মধ্যে একটি হচ্ছে জাতীয় ঐক্য।</span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:justify"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><img alt="মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম" height="398" src="https://asset.kalerkantho.com/public/news_images/share/photo/shares/1.Print/2025/1.january/10-01-2025/mk/kk-M-10-07a.jpg" style="float:left" width="350" />সাধারণ মানুষ তাদের সরল বুঝ থেকে জাতীয় ঐক্যকে দেশে নির্বিরোধ প্রশান্ত রাজনৈতিক পরিবেশ স্থায়ীভাবে বহাল রাখার সহজ পথ হিসেবে গণ্য করে। কিন্তু এ কথা তারা এখনো সম্পূর্ণ বুঝে উঠতে পারেনি যে যেহেতু </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">রাজনীতি হলো অর্থনীতিরই ঘনীভূত প্রকাশ</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">, তাই অর্থনৈতিক শোষণ-বৈষম্য-বঞ্চনার ব্যবস্থা বহাল থাকলে সমাজে শ্রেণিগত দ্বন্দ্ব থাকবেই এবং সে কারণে শ্রেণিহীন সমাজব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করতে না পারা পর্যন্ত সমাজে স্থায়ীভাবে নির্বিরোধ প্রশান্ত পরিবেশ প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব না। তাই শ্রেণিবিভক্ত সমাজে নিশ্ছিদ্র জাতীয় ঐক্য আশা করা যায় না।</span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:justify"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">আমাদের দেশে ইতিহাসে আপেক্ষিকভাবে সবচেয়ে উন্নত স্তরের ও মানের জাতীয় ঐক্য প্রতিষ্ঠা হয়েছিল ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধকালে। সেটিই ছিল জাতির ইতিহাসে সবচেয়ে কার্যকর জাতীয় ঐক্য। ফলে একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধকে এড়িয়ে, অবহেলা করে, কিংবা তার বিপরীতে দাঁড়িয়ে কোনো জাতীয় ঐক্য হতে পারে না। আমাদের এ কথা মনে রাখতে হবে যে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ প্রকৃতভাবেই ছিল একটি জনযুদ্ধ। সেটি নিছক কোনো </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">মেটিকুলাসলি প্ল্যানড</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"> অথবা কোনো মাস্টারমাইন্ডের পরিকল্পনার ফসল ছিল না। সেটি ছিল না কেবল একটি ৯ মাসের সামরিক অপারেশন। তা ছিল বছরের পর বছর, দশকের পর দশক ধরে পরিচালিত গণমানুষের অসংখ্য গণসংগ্রামের সফল পরিণতি। ৯ মাসের অসীম সাহসী সশস্ত্র যুদ্ধ ছিল তার শীর্ষ অধ্যায়। এ লড়াই কোনো </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">বিচ্ছিন্নতাবাদী</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"> কার্যকলাপ ছিল না, তা ছিল বিশ্বব্যাপী চলতে থাকা </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">জাতীয় মুক্তি আন্দোলন</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">-এর ধারায় পরিচালিত এক অনন্য সংগ্রাম।</span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:justify"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">পাকিস্তান যুগের সেই লড়াইয়ে যেমন শরিক ছিল জাতীয়তাবাদী শক্তি, তেমনি তাতে বলিষ্ঠভাবে শরিক ছিল বামপন্থী-প্রগতিশীল। জাতীয়তাবাদী শক্তি কখনো কখনো শাসকদের সঙ্গে আপস করেছে, নীতি-আদর্শ থেকে বিচ্যুত হয়েছে, নিজেদের আবস্থান উল্টে ফেলেছে। আওয়ামী লীগের নেতা সোহরাওয়ার্দী সাহেবকে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী বানানোর পর তিনি বললেন, </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">৯৮ শতাংশ স্বায়ত্তশাসন অর্জিত হয়ে গেছে। জোটনিরপেক্ষ আন্দোলনে আমাদের থাকার দরকার নেই।</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"> এ অবস্থায় আওয়ামী লীগ থেকে বেরিয়ে এসে মওলানা ভাসানীর নেতৃত্বে ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ন্যাপ) গঠিত হলো। ন্যাপ গঠন করে বলা হলো, </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">বাঙালির স্বাধিকারের জন্য সংগ্রাম চলবে। সোহরাওয়ার্দী সাহেব বিচ্যুতি ও আপস করতে পারেন, শেখ মুজিবুর রহমান তা থেকে দূরে চলে যেতে পারেন, কিন্তু আমরা যারা এই নীতিতে বিশ্বাস করি, তারা অধিকার আদায় না হওয়া পর্যন্ত নিরলসভাবে সংগ্রাম করে যাব।</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"> সেই থেকে পাকিস্তানি শাসকদের বিরূদ্ধে সংগ্রাম দুটি ধারা ও কেন্দ্রকে আবর্তন করে সমান শক্তি নিয়ে এগিয়ে গেছে। একটি বাম-প্রগতিশীল ধারা এবং অন্যটি বুর্জোয়া-জাতীয়তাবাদী ধারা।</span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:justify"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">আমি এই দুটি ধারাকে পাশাপাশি দেখছি। একদিকে র‌্যাডিক্যাল বামপন্থী ধারার ছাত্র ইউনিয়ন, সঙ্গে ন্যাপ ও আত্মগোপনে থাকা নিষিদ্ধঘোষিত কমিউনিস্ট পার্টি। আর অন্যদিকে জাতীয়তাবাদী ধারার ছাত্রলীগ, তাদের সঙ্গে আওয়ামী লীগ। নানা ঘটনাপ্রবাহের মধ্য দিয়ে পথ চলতে চলতে ১৯৭১ সালে এ দুই মূল স্রোতোধারাসহ সব ধারা-উপধারার শক্তি এক স্রোতে মিলিত হয়েছিল। ১৯৭০ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ গোটা পাকিস্তানে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে জয়লাভ করেছিল। কিন্তু বাঙালি ভোটের মাধ্যমে যে রায় দিয়েছিল, পাকিস্তানি ঔপনিবেশিক শাসকরা সেই রায় কার্যকর হতে দিল না। শুরু হলো অসহযোগ আন্দোলন। পাকিস্তানিরা গণহত্যা শুরু করল। একের পর এক মানুষকে গুলি করে হত্যা করা হলো। মানুষ রাস্তায় নেমে এলো। সশস্ত্র সংগ্রামের প্রস্তুতি শুরু হয়ে গেল।</span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:justify"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">মহান মুক্তিযুদ্ধের চূড়ান্ত সশস্ত্র পর্বটি ছিল ধারাবাহিকভাবে গড়ে ওঠা সংগ্রামের ও সংগঠিত নেতৃত্বের মাধ্যমে পারিচালিত একটি অধ্যায়। ১৯৭১-এর ঘটনা ছিল জনযুদ্ধের মধ্য দিয়ে নতুন রাষ্ট্রের জন্ম দেওয়ার বিপ্লবী আখ্যান। ১৯৬৯ বা ১৯৭০ সালে সংঘটিত হয়েছিল ঐতিহাসিক গণ-অভ্যুত্থান। এবার ২০২৪-এর জুলাই-আগস্টে সংঘটিত হলো আরেকটি গণ-অভ্যুত্থান। এবারের বিশেষ বৈশিষ্ট্য হলো, এটি ছিল প্রধানত স্বতঃস্ফূর্ত জাগরণ।</span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:justify"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><img alt="মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম" height="462" src="https://asset.kalerkantho.com/public/news_images/share/photo/shares/1.Print/2025/1.january/10-01-2025/mk/kk-M-10-07b.jpg" style="float:right" width="350" />দীর্ঘ ৫৩ বছরেও মুক্তিযুদ্ধের আকাঙ্ক্ষা-স্বপ্ন বাস্তবায়িত হয়নি। দেশকে বিপথে পরিচালিত করা হয়েছে। জনমনের দুঃখ-বেদনা ক্রমেই পুঞ্জীভূত ক্ষোভে পরিণত হয়। তাদের মনে প্রশ্ন জাগে</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">—</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">কোথায় গেল প্রত্যাশিত গণতন্ত্র, সৌভ্রাত্র, জাতীয় আত্মমর্যাদা, সাম্যের চিন্তা ও বোধ? কেন আজও নেই ভাত-কাপড়, রুটি রুজি, শিক্ষা-চিকিৎসা-কর্মসংস্থান-বাসস্থানের নিশ্চয়তা। এমনকি কোথায় গেল মানুষের ভোটের অধিকার? ২০২৪-এর জুলাই-আগস্টে ক্রোধান্বিত জনগণ বিক্ষোভে ফেটে পড়ল।</span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:justify"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">বহুদিন ধরে হাসিনা সরকারেরর বিরুদ্ধে ক্ষোভ বারুদের মতো জমা হয়ে বিস্ফোরণের জন্য একটি ম্যাচের কাঠির আগুনের অপেক্ষায় ছিল। কোটা সংস্কার আন্দোলন ছিল সেই ম্যাচের কাঠি। তা ছিল বিস্ফোরণ ঘটার একটি উপলক্ষ মাত্র। কোটা না হলে অন্য কোনো উপলক্ষ ধরে এই বিস্ফোরণ ঘটত। কোটা ইস্যু ক্লিক করার একটি বিশেষ কারণ হলো, আমাদের দেশে বেকারত্বের সমস্যা। শিক্ষিত মধ্যবিত্ত ছাত্ররা দেখল, কষ্ট করে লেখাপড়া করছি, কিন্তু চাকরির নিশ্চয়তা নেই। তারপর মেধা থাকা সত্ত্বেও কোটার কারণে আমাকে বঞ্চিত করা হচ্ছে। এই বৈষম্যমূলক কোটাব্যবস্থার সংস্কারের দাবিতে আন্দোলন দু-চার দিনের মধ্যেই গণ-অভ্যুত্থানের পথে উত্থিত হলো।</span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:justify"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">যখন এ ধরনের স্বতঃস্ফূর্ত গণ-অভ্যুত্থান হয়, তখন চেতনাগত দিক থেকে সমাজের সবচেয়ে পিছিয়ে থাকা মানুষটিও এগিয়ে আসে এবং সামনে দাঁড়িয়ে যায়। সুতরাং জুলাই-আগস্টের গণ-অভ্যুত্থানেও ফ্যাসিস্ট স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে থাকা হরেক রকম রাজনৈতিক চিন্তার মানুষ সমবেত হয়েছিল। কিন্তু তা ছিল </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">একক ইস্যু</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">ভিত্তিক সম-অভিমুখিন সংগ্রামের ঘটনা। তা ছাড়া নেতৃত্বও ছিল আগে থেকে জানাশোনার বাইরের তাৎক্ষণিকভাবে গড়ে ওঠা সত্তা। কিন্তু জাতীয় ঐক্য তো বটেই, এমনকি কোনো সাধারণ রাজনৈতিক ঐক্যও কোনো নির্দিষ্ট </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">সাধারণ কর্মসূচি</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"> ছাড়া হয় না। এবারের গণ-অভ্যুত্থানে এসব উপাদান অনুপস্থিত ছিল।</span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:justify"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">এবারের আন্দোলনকারী ছাত্র নেতৃত্ব নিজেদের পরিচয় দিয়েছে </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"> হিসেবে। এ ক্ষেত্রে ভুলে গেলে চলবে না যে সমাজে শ্রেণিবিভাজন ও শ্রেণিবৈষম্য প্রকট। ব্যাপক জনগণের কাছে বৈষম্যবিরোধিতার অর্থ অন্য রকম।</span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:justify"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">রাজনৈতিক ঐক্য রাজনৈতিক কর্মসূচির ভিত্তিতে হয়। কিন্তু এর বাইরেও কতকগুলো বিশেষ ঘটনায় ইস্যুভিত্তিক ঐক্যও হতে পারে। তবে সেটাকে রাজনৈতিক ঐক্য বলে আখ্যায়িত করা যায় না। কোনো ইস্যুতে সাময়িকভাবে সমান্তরালে পথ চললেই তাতে রাজনৈতিক ঐক্য প্রতিষ্ঠা হয় না। যেমন</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">—</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">এবারের গণ-অভ্যুত্থানে, যে দক্ষিণপন্থী সে তার দক্ষিণপন্থী অবস্থান থেকে এই গণ-অভ্যুত্থানে শামিল হয়েছে। অন্যদিকে বামপন্থীরা তাদের বামপন্থী অবস্থান থেকে তাতে শামিল হয়েছে। দুটিকে একসঙ্গে মিলিয়ে দেখাটা ভুল হবে। মনে রাখতে হবে যে </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">ইউনিটি</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"> আর </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">ইউনিফরমিটি</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"> এক বিষয় নয়।</span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:justify"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">দেশবাসীর সামনে এই মুহূর্তের প্রধান একটি কাজ হলো গণ-ভ্যুত্থানের মাধ্যমে অর্জিত বিজয় সংহত করা এবং সেই বিজয় যেন হাতছাড়া না হয় তা নিশ্চিত করা। বিদ্রোহী কবির ভাষায় বললে</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">—‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">ক্ষুধাতুর শিশু চায় না স্বরাজ, চায় শুধু ভাত</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">—</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">একটু নুন</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">। আমরা গণতন্ত্র চাই, ফ্যাসিবাদের অবসানও চাই</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">—</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">এসব কথা ষোলো আনা সত্য। কিন্তু চাল-ডালের দাম বাড়ে কেন? বাজারে গেলে জিনিসপত্রের দাম শুনে শূন্য হাতে ফিরে আসতে হয় কেন? আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হচ্ছে না কেন? জনজীবনের এই জরুরি সমস্যাগুলো নিরসনের পথ দেখাতে না পারলে মানুষ হতাশ হবে। পতিত ফ্যাসিস্ট স্বৈরাচার তার সুযোগ নেবে। তারা মানুষকে ভুল বুঝিয়ে আবারও আমাদের বিজয়কে হাতছাড়া করার অপচেষ্টা করতে পারে।</span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:justify"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">জাতির সামনে </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">জাতীয় সরকার</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">-এর সুযোগ অতীতে একাধিকবার এসেছিল, সেই সুযোগ আমরা কাজে লাগাইনি। এটা শুধু কাঠামোগতভাবে একটি সরকার গঠনের বিষয় না। বিষয়টা হলো, নীতিগতভাবে কিছু বিষয়ে একমত হয়ে, অন্তত মধ্যমেয়াদি লক্ষ্য নিয়ে দেশের মোটামুটি সব রাজনৈতিক শক্তি পরস্পরের বিভেদগুলোকে আপাতত প্রাধান্যে না এনে একযোগে একটি সাধারণ কর্মসূচি বাস্তবায়নের জন্য সরকার গঠন করা।</span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:justify"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">স্বৈরশাসক এরশাদের বিরুদ্ধে যখন গণজাগরণ হলো, তখন আমার ওপর দায়িত্ব পড়েছিল তিন জোটের রূপরেখার প্রাথমিক খসড়া প্রণয়ন করার। এরশাদের পতনের পর আমরা তিন জোট একটি অঙ্গীকারনামায় স্বাক্ষর করলাম। সেখানে বলা হয়েছিল, আগামী অন্তত দুই বছর পরস্পর দলীয় স্বার্থকে প্রাধান্য না দিয়ে, আগে স্বৈরাচারের আবর্জনা পরিষ্কার করার জন্য আমরা একসঙ্গে মিলিত হয়ে কাজ করব। কিন্তু সেটা হয়নি।</span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:justify"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">চব্বিশের ছাত্র-গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে এ বিষয়ে আবার এক নতুন সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছে ঠিকই, কিন্তু সেখানে আশঙ্কাও রয়েছে। সরকারের একেকজন একেক ভাষায় কথা বলছেন। কেউ কিংস পার্টি করার জন্য চেষ্টা করছেন। আবার অনেকে আছেন এনজিও বা সুধীসমাজের </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">নমস্য</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"> ব্যক্তি। তাঁরা আবার রাজনীতি সম্পর্কে বৈরী। অথচ তাঁরা সরকার চালাচ্ছেন, যা পরিপূর্ণভাবে রাজনীতির কারবার। দেশের ইতিহাস, অতীত ঘটনাবলি, এমনকি একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ ইত্যাদির মূল্যায়ন নিয়ে পরস্পরের মধ্য রয়েছে বিস্তর ফারাক। এদিকে আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক শক্তিস্বার্থ এবং সেসবের টানাপড়েন ও অভিঘাত রয়েছে। দেশের মধ্যে নিজ নিজ প্রবণতা নিয়ে বিভিন্ন ফোর্স রয়েছে। আছে সামরিক-বেসামরিক আমলাতন্ত্র। পতিত স্বৈরাচারের সঙ্গে মানসিকভাবে যুক্ত, এমনকি ওই সময়ে অত্যন্ত ঘৃণিত কাজগুলো যাদের নেতৃত্বে হয়েছে, তারাও এখনো ঘাপটি মেরে বসে আছে। এ অবস্থায় জাতীয় সরকারের কোনো বাস্তবতা বা সম্ভাবনা নেই।</span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:justify"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">যা বাস্তবসম্মত তা হলো বহুদলীয় রাজনৈতিক ব্যবস্থাকে স্থায়ীভাবে গণতান্ত্রিক পথে পরিচালনা নিশ্চিত করার জন্য কাঠামোগত ভিত্তি প্রতিষ্ঠা করা। জনগণের প্রকৃত ক্ষমতায়নের ব্যবস্থা গড়ে তোলা। সে ক্ষেত্রে সরকারি দল, বিরোধী দল, বামপন্থী দল, ডানপন্থী দল ইত্যাদি বহু রকম দল থাকবে। কোন দলের অবস্থান কী হবে তা নির্ধারণের দায়িত্ব থাকবে নিরঙ্কুশভাবে জনগণের হাতে। এটিই তো বহুদলীয় গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা। </span></span></span></span></span></p>