আন্তর্জাতিক মাদার তেরেসা অ্যাওয়ার্ড পেলেন বসুন্ধরা চেয়ারম্যান

  • বাংলাদেশে সামাজিক উন্নয়নে ব্যাপক অবদান ও জনহিতকর কাজের জন্য এই পুরস্কার
সুব্রত আচার্য্য, কলকাতা
সুব্রত আচার্য্য, কলকাতা
শেয়ার
আন্তর্জাতিক মাদার তেরেসা অ্যাওয়ার্ড পেলেন বসুন্ধরা চেয়ারম্যান
কলকাতায় গতকাল বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহানের হাতে ‘আন্তর্জাতিক মাদার তেরেসা অ্যাওয়ার্ড’ তুলে দেন মিজোরামের মুখ্যমন্ত্রী লালথান হাওলা। ছবি : কালের কণ্ঠ

আন্তর্জাতিক মাদার তেরেসা অ্যাওয়ার্ড পেলেন বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহান। মাদারের সন্তায়ন উপলক্ষে গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যায় কলকাতার মহাজাতি সদনে আয়োজিত অনুষ্ঠানে তাঁকে এ সম্মাননা দেওয়া হয়। বাংলাদেশের সামাজিক উন্নয়নে অবদানের জন্য তাঁর হাতে এই পুরস্কার তুলে দেন মিজোরামের মুখ্যমন্ত্রী লালথান হাওলা। এর আগে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ বিশ্বের বেশ কয়েকজন শীর্ষ নেতৃত্ব বিরল এই সম্মানে ভূষিত হয়েছেন।

 

অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন পশ্চিমবঙ্গের সাবেক রাজ্যপাল ও রাজ্য মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান শ্যামল সেন, পশ্চিমবঙ্গ সরকারের গণশিক্ষা ও সংসদ বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী সিদ্দিক উল্লাহ চৌধুরী, দক্ষিণেশ্বর মন্দির কমিটির সম্পাদক মুরালি ভাই, অভিনেত্রী ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত প্রমুখ।

পুরস্কার গ্রহণ করে বসুন্ধরা গ্রুপের কর্ণধার আহমেদ আকবর সোবহান বলেন, ‘মাদার তেরেসার নামাঙ্কিত এই পুরস্কার পেয়ে আমি গর্বিত।’ তিনি বলেন, ‘মাদারের সেবার দীক্ষায় দীক্ষিত হয়ে আমি বাংলাদেশের উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছি। আজ যে সম্মানে সম্মানিত হলাম, সেটি শুধু আমার একার নয়, বরং গোটা বাংলাদেশের।

আমরা মিডিয়ার মাধ্যমে চেষ্টা করি দেশকে সেবা দিতে। এই পুরস্কার আমাকে দরিদ্র মানুষের জন্য কাজ করতে আরো উৎসাহিত করবে।’ তিনি আরো বলেন, ‘মাদার তেরেসার আরো অনেক আগেই সন্ত উপাধি পাওয়া উচিত ছিল। তবে আমরা খুশি দেরিতে হলেও তিনি তা পেয়েছেন।

বসুন্ধরা চেয়ারম্যান বলেন, ‘বাংলাদেশের সামাজিক উন্নয়নে বসুন্ধরা গ্রুপ যথাসাধ্য চেষ্টা করে যাচ্ছে। বিগত ১২ বছর ধরে আমরা সুদহীন ঋণ দিচ্ছি। আমাদের হাসপাতালগুলোতেও ন্যূনতম অর্থের বিনিময়ে সেবা নিশ্চিত করা হচ্ছে। সেখানে আমরা ব্যবসার চিন্তা করি না।’

এর আগে স্বাগত ভাষণে আন্তর্জাতিক মাদার তেরেসা অ্যাওয়ার্ড কমিটির চেয়ারম্যান অ্যান্থনি অরুণ বিশ্বাস বলেন, ‘মাদারের মৃত্যু পর্যন্ত আমি তাঁর সঙ্গে ছিলাম।

আমিই প্রথম তাঁকে সন্ত উপাধি দেওয়ার জন্য ভ্যাটিকান সিটিকে চিঠি পাঠিয়েছিলাম। এই অনুষ্ঠান যখন হচ্ছে, তার মাত্র দুই দিন আগে মাদার ভ্যাটিকানে সন্ত উপাধি পান।’

অ্যান্থনি আরো বলেন, ‘বিশ্বের এত শহর থাকতে মাদার তেরেসা কলকাতাকে বেছে নিয়েছিলেন। প্রথম দিকে তাঁকে প্রচণ্ড বাধার মুখে পড়তে হয়েছিল। তাঁকে গ্রামে পর্যন্ত ঢুকতে দেওয়া হয়নি।’

প্রধান অতিথির ভাষণে লালথান হাওলা বলেন, ‘মাদার তেরেসা বিংশ শতকের সেরা মুখ। যাঁরা তাঁকে কাছ থেকে দেখেছেন, তাঁরা সত্যিই খুব ভাগ্যবান। আর আমরা ভাগ্যবান যে মাদার ভারতে এসে নিপীড়িত, ক্লিষ্ট, রোগাক্রান্ত মানুষকে সেবা দিয়েছেন। মাদার কলকাতার মিশনারিজ অব চ্যারিটি থেকে বিশ্বের ১৩০টি দেশে প্রায় সাড়ে চার শ শাখা তৈরি করে সেবার বিছানা ছড়িয়ে গিয়েছেন।’

পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারের প্রতিমন্ত্রী সিদ্দিক উল্লাহ চৌধুরী বলেন, ‘যাঁদের নিয়ে কখনো কেউ ভাবেনি, যাঁরা রাস্তায় পড়ে থাকতেন, রোগে ভুগতেন, সেই সব মানুষকে নিজের হাতে সেবা দিয়েছেন মাদার তেরেসা।’ সাবেক রাজ্যপাল শ্যামল সেন বলেন, ‘এই অনুষ্ঠানে থাকতে পেরে আমি খুশি। সন্ত হলেও তিনি এখনো আমাদের কাছে মাদারই আছেন। আমরা সব সময় তাঁর অনপুস্থিতি অনুভব করি।’ অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন আন্থনি অরুণ বিশ্বাস।

মন্তব্য

সম্পর্কিত খবর

ইউক্রেনে অস্ত্র সহায়তা স্থগিত করলেন ট্রাম্প

কালের কণ্ঠ ডেস্ক
কালের কণ্ঠ ডেস্ক
শেয়ার
ইউক্রেনে অস্ত্র সহায়তা স্থগিত করলেন ট্রাম্প
ডোনাল্ড ট্রাম্প

ইউক্রেনকে সব ধরনের অস্ত্র সরবরাহ স্থগিত করার নির্দেশ দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। যুদ্ধ বন্ধ করতে রাশিয়ার সঙ্গে আলোচনায় বসার জন্য ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভোলাদিমির জেলেনস্কিকে চাপ দিতেই এই পদক্ষেপ নিয়েছেন তিনি।  

তিন বছর আগে ইউক্রেনে রাশিয়া আক্রমণ করার পর থেকে যুক্তরাষ্ট্র কিয়েভে ১৮০ বিলিয়ন ডলারের বেশি সামরিক সহায়তা পাঠিয়েছে। মার্কিন এই সহায়তার জন্য জেলেনস্কি যথেষ্ট কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেননি বলে অভিযোগ করেন ট্রাম্প এবং ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স।

ওভাল অফিসের এক বৈঠক উত্তপ্ত বাগবিতণ্ডার মধ্যে ভেস্তে যাওয়ার মাত্র কয়েক দিন পর সামরিক সহায়তা স্থগিত করার পদক্ষেপটি নিলেন ট্রাম্প।

হোয়াইট হাউসের এক কর্মকর্তা বলেছেন, ট্রাম্প একটি শান্তিচুক্তিতে পৌঁছানোর দিকে মনোনিবেশ করছেন এবং জেলেনস্কিকে সেই লক্ষ্যে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ দেখতে চান।

ওই কর্মকর্তা আরো বলেন, যুক্তরাষ্ট্র একটি সমাধানে ভূমিকা রাখছে কি না তা নিশ্চিত করতে ইউক্রেনকে দেওয়া মার্কিন সহায়তা স্থগিত ও পর্যালোচনা করছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওই কর্মকর্তা সহায়তার বিষয়ে এসব কথাবার্তা সংস্থা অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসকে (এপি) জানান।

ওই কর্মকর্তা বলেন, যতক্ষণ না রাশিয়ার সঙ্গে ইউক্রেনের আলোচনায় বসার প্রতিশ্রুতি পান, ততক্ষণ ট্রাম্পের এই আদেশ কার্যকর থাকবে।

২০২৪ সালের নির্বাচনের আগে ট্রাম্প ইউক্রেন যুদ্ধ দ্রুত শেষ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। তিনি গর্ব করে বলেছিলেন, তিনি এক দিনের মধ্যে লড়াই বন্ধ করতে পারেন। যুদ্ধ নিয়ে জেলেনস্কির প্রতি ক্রমবর্ধমান হতাশা প্রকাশ করেছেন তিনি।

একই সঙ্গে নিজের আত্মবিশ্বাস প্রকাশ করেন, যুদ্ধবিরতিতে পৌঁছালে শান্তি বজায় রাখার জন্য রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে বিশ্বাস করা যেতে পারে। এমনকি তিনি দীর্ঘদিন ধরে পুতিনের প্রশংসাও করে আসছিলেন। সূত্র : এপি

 

 

 

মন্তব্য

ব্যবসায়ীরা চাপ দিলেও সুদহার কমবে না : গভর্নর

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
ব্যবসায়ীরা চাপ দিলেও সুদহার কমবে না : গভর্নর
আহসান এইচ মনসুর

বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর বলেছেন, ব্যবসায়ীরা চাপ দিলেই যে সুদহার কমিয়ে দেব তা হবে না। আগে মূল্যস্ফীতি কমবে, তারপর পলিসি রেট ধীরে ধীরে কমানো হবে।

গতকাল মঙ্গলবার ব্যাংক খাতের পুনরুদ্ধারের পথযাত্রা শীর্ষক এক আলোচনাসভায় তিনি এ কথা বলেন। ইংরেজি দৈনিক দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড এই আলোচনাসভার আয়োজন করে।

ইস্কাটনে পত্রিকার কার্যালয়ে এ আলোচনাসভা হয়।

গভর্নর বলেন, আমি চাই পলিসি রেট বাস্তবিক অর্থে ইতিবাচক হোক। একেবারেই না হলে মূল্যস্ফীতি দ্রুত কমবে না। বাস্তবিক অর্থে ইতিবাচক হতে হবে।

ইউরোপীয় ইউনিয়ন, আমেরিকা, ভারতকে দেখুন, সব জায়গায় উল্লেখযোগ্য ইতিবাচক নীতি সুদহার আছে। তো আমাকে ওইটাতে আনতে হবে। আমি এখনো ওইখানে যাইনি। তবে সুদহার কাঠামো ও মূল্যস্ফীতি সঠিক দিকে আগাচ্ছে।
সময়মতো এটা অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে। আমাদের তাড়াহুড়ার দরকার নেই। আমাকে ব্যবসায়ীরা চাপ দিলেই সুদহার কমিয়ে দেব তা হবে না। মূল্যস্ফীতি, ট্রেজারি  বিল, ইন্টারেস্ট পলিসির সব রেট কমবে, তখন আমি পলিসি রেট ধীরে ধীরে  কমাব। এর আগে নয়।

ব্যাংকিং খাত নিয়ে গভর্নর বলেন, আমরা দ্রুত এগিয়ে যেতে চাই এবং আর্থিক খাতকে নতুনভাবে গড়ে তুলতে চাই। কেন্দ্রীয় ব্যাংককে শক্তিশালী করার কাজ জোরেশোরে চলছে। প্রধান উপদেষ্টা এ বিষয়ে যথেষ্ট আগ্রহী। এ ক্ষেত্রে বিশ্বব্যাংকও আমাদের বিশ্বব্যাপী সেরা ব্যবস্থা বা নীতিমালা খুঁজে পেতে সহায়তা করছে। আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী নিয়ন্ত্রক সংস্থা গঠন করা হচ্ছে। আমরা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পুনর্গঠনে কাজ করছি।

আহসান এইচ মনসুর বলেন, আমরা চলতি বছরের জুলাই-আগস্টের মধ্যে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে চাই। আমরা এর ভিত মজবুত করতে চেষ্টা করব, তবে সব সংস্কার অন্তর্বর্তী সরকার করতে পারবে না। যখন পরবর্তী সরকার ক্ষমতায় আসবে, তখনো এই সংস্কার প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকবে।

গভর্নর আরো বলেন, গৃহিণী স্ত্রী ও মেয়েকে ব্যাংকের পরিচালক হিসেবে বসিয়ে দিচ্ছি। তাঁদের যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতা নেই। আমরা এসব চাই না। ব্যাংকের পরিচালক হতে ফিট অ্যান্ড প্রপার টেস্ট (অভিজ্ঞতা ও যোগ্যতা পরীক্ষা) পর্যালোচনা করা হচ্ছে। যাঁরা এখন পরিচালক আছেন, তাঁরাসহ সবাইকে এই যাচাই-বাছাইয়ের মধ্য দিয়ে যেতে হবে। ব্যাংকের পরিচালক হওয়ার গুণাবলি থাকতে হবে। ব্যাংকের মালিকদেরও এই যাচাই-বাছাইয়ের মধ্য দিয়ে যেতে হবে। যোগ্যতা থাকলে মালিকরা পরিচালক হবেন, যোগ্যতা না থাকলে হবেন না। সিটি ব্যাংক এনএর মালিক কারা, তা কেউ জানে না।

আহসান এইচ মনসুর বলেন, সরকারের ঋণ নিয়ে একটি চক্রের মধ্যে আছি। আমি সেই লোক নই যে চাটুকারিতা করে টাকা আনব। গত ছয় মাসে অর্থনীতি যেভাবে ঘুরে দাঁড়িয়েছে, বিশেষ করে রিজার্ভের পতন ঠেকানো, বিনিময় হারে এক ধরনের স্থিতিশীল অবস্থা, রপ্তানি এবং প্রবাস আয়ে ভালো অবস্থা, আমদানিতে নিয়ন্ত্রণ, সব মিলিয়ে নেতিবাচক অবস্থা থেকে চলতি হিসাব ও আর্থিক হিসাব ইতিবাচক ধারায় ফিরেছে। কেবল রাজস্ব আয়টা ঠিক রাখা গেলে মাত্র পৌনে পাঁচ বিলিয়ন ডলারের জন্য আইএমএফের কাছে ধরনা দিতে হতো না।

সম্পদের পুনরুদ্ধার প্রসঙ্গে আহসান এইচ মনসুর বলেন, আমরা কেবল আশা করতে পারি যে বাংলাদেশে কিছু রায় পাবে এবং বিদেশে কিছু সম্পত্তি আটকানো সম্ভব হবে। তবে অর্থ ফেরত আনা দীর্ঘ সময়ের প্রক্রিয়া। তবে আশা শেষ হয়ে যায়নি। নাইজেরিয়া, মালয়েশিয়া, অ্যাঙ্গোলার মতো দেশগুলো সফলভাবে অর্থ পুনরুদ্ধার করতে পেরেছে।

 

 

মন্তব্য
জাতীয় স্মৃতিসৌধে এনসিপির শ্রদ্ধা

পুরনো সংবিধান রেখে নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণ সম্ভব নয় : নাহিদ

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
পুরনো সংবিধান রেখে নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণ সম্ভব নয় : নাহিদ
সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে গতকাল সকালে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানোর পর ফটো সেশনে অংশ নেন সম্প্রতি আত্মপ্রকাশ করা রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) নেতারা। ছবি : কালের কণ্ঠ

পুরনো সংবিধান ও শাসনকাঠামো রেখে একটি নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণ সম্ভব নয়। কেবল সরকার পরিবর্তন করেই জনগণের কল্যাণ ও প্রকৃত গণতন্ত্র বাস্তবায়ন করা সম্ভব নয়। এ জন্য আমরা বলছি, চব্বিশে যে গণ-অভ্যুত্থান হয়েছে, ছাত্র-জনতা রক্ত দিয়েছে, তাতে কেবল সরকার পরিবর্তন নয়, বরং শাসনকাঠামো ও সাংবিধানিক পরিবর্তন করে নতুন একটি বাংলাদেশের যাত্রা শুরু করতে চাই, যেখানে প্রকৃত গণতন্ত্র, ইনসাফ ও সাম্য নিশ্চিত করা সম্ভব হবে। গতকাল মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ৮টার দিকে সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম।

রাজনৈতিক দল হিসেবে প্রতিষ্ঠার পর প্রথম কর্মসূচির অংশ হিসেবে তাঁরা মহান মুক্তিযুদ্ধের বীর শহীদ ও জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান।

শ্রদ্ধা জানানো শেষে নাহিদ ইসলাম বলেন, ১৯৪৭ থেকে ২০২৪-এর সব লড়াইয়ের আকাঙ্ক্ষাকে ধারণ করে আমরা নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণ করব এবং সেই লক্ষ্যে এনসিপি কাজ করে যাচ্ছে। আমরা বলেছি, ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে আমরা একটি স্বাধীন রাষ্ট্র পেলেও আমাদের সার্বভৌমত্ব বারবার হুমকির মুখে পড়েছে। আমাদের গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলো বারবার ভেঙে পড়েছে।

আমরা একটি গণতান্ত্রিক সংবিধান গড়ে তুলতে পারিনি। একটি একদলীয় সংবিধানের মাধ্যমে ফ্যাসিজম এবং একদলীয় স্বৈরতন্ত্রের বীজ বপন করা হয়েছিল।

তিনি বলেন, আমরা বলেছি, একটি নতুন প্রজাতন্ত্র আমাদের করতে হবে। তার জন্য প্রয়োজন একটি নতুন সংবিধান ও গণপরিষদ।

সেই জায়গা থেকে আমরা সেকেন্ড রিপাবলিকের কথা বলেছি এবং আমরা সেই লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছি। জাতীয় নাগরিক পার্টির এ মুহূর্তে প্রথম লক্ষ্য হচ্ছে সাংগঠনিকভাবে কার্যক্রম বিস্তৃত করা। নিবন্ধন নিতে যে ধরনের শর্তাবলি পূরণ করা প্রয়োজন, সে শর্তাবলি আমরা দ্রুত সময়ের মধ্যে পূরণ করে নিবন্ধনের দিকে আগাব। এ মাসের মধ্যেই আমাদের গঠনতন্ত্র তৈরির কাজ শুরু করব।

অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে গণ-অভ্যুত্থান এবং গত ১৫ বছরে হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িতদের বিচারের আহ্বান জানিয়ে নাহিদ ইসলাম বলেন, গণ-অভ্যুত্থানে সংঘটিত গণহত্যার বিচার দ্রুত সময়ের মধ্যে কার্যকর দেখতে চাই।

বিচারিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক ফয়সালা এই বাংলার মাটিতে করতে হবে। গণ-অভ্যুত্থানে আমাদের প্রতিশ্রুতি ছিল যে যারা এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত এবং ১৫ বছর ধরে নানা ধরনের জুলুম করেছে তাদের বিচার এই বাংলার মাটিতে হতে হবে। এই বিচার বাংলাদেশের মানুষ দেখতে চায়। বিচারের পর সংস্কার কার্যক্রম করে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে দ্রুত জাতীয় সংলাপে গিয়ে আমাদের জুলাই সনদ ও জুলাই ঘোষণাপত্র বাস্তবায়ন আমরা দেখতে চাই।

দেশবাসীর কাছে দোয়া প্রার্থনা করে দলটির সদস্যসচিব আখতার হোসেন বলেন, ১৯৭১ সালে লাখ লাখ শহীদের জীবনের বিনিময়ে যে স্বাধীনতা এসেছে, সে স্বাধীনতার মূলমন্ত্র ছিল সাম্য ও সামাজিক সুবিচারের বাংলাদেশ। গত ৫৪ বছরে তা অধরা থেকে গেছে। আমরা এনসিপির নেতাকর্মীরা অঙ্গীকারবদ্ধ, সেই বাংলাদেশ নির্মাণে কাজ করে যাব।

তিনি আরো বলেন, সারা বাংলাদেশে আমাদের অনেক প্রস্তাবের জায়গা রয়েছে। তার মধ্যে অন্যতম হলো, বাংলাদেশ পুরো বিশ্বে মাথা উঁচু করে দাঁড়াবে। ঢাকা শহরকে গ্লোবাল সাউথের প্রধান হিসেবে দেখা। এমন অনেক স্বপ্ন নিয়ে আমরা এগোচ্ছি। বাংলাদেশের বর্তমান প্রেক্ষাপটে আমরা বিশ্বাস করি, নতুন একটি সংবিধানের বাস্তবতা রয়েছে। এর ভিত্তিতে আমরা গণপরিষদ নির্বাচনের কথা বলেছি। একই সঙ্গে সে গণপরিষদ নির্বাচনে যাঁরা জয়ী হবেন, তাঁরা সংসদ সদস্য হিসেবে ভূমিকা পালন করবেনএমন প্রস্তাবও আমাদের আছে। অল্প সময়ের মধ্যে সারা দেশে জেলা ও উপজেলায় জাতীয় নাগরিক পার্টি কার্যক্রম বিস্তৃত করবে।

 

হাসিনার ফাঁসির আগে নির্বাচন নিয়ে কথা নয় : সারজিস আলম

ক্ষমতাচ্যুত শেখ হাসিনার বিচার না হওয়া পর্যন্ত নির্বাচন নিয়ে কথা না বলতে সবার প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম। গতকাল সকাল ১০টার দিকে রায়েরবাজার বধ্যভূমিতে শহীদদের কবর জিয়ারতের পর তিনি এই মন্তব্য করেন।

এ সময় তিনি বলেন, স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা ও আইন উপদেষ্টা যদি খুনি হাসিনার দৃশ্যমান বিচার এই অন্তর্বর্তী সরকারের সময়ে করে যেতে না পারেন তাহলে এই সরকারের সবচেয়ে বড় দায়বদ্ধতা এবং সবচেয়ে বড় লেজিটিমেসি তাঁরা হারাবেন এবং সারা জীবন এটা তাঁদেরই দায় বহন করে যেতে হবে। কিন্তু আমরা স্পষ্ট করে একটা কথা বলি, দায় বহন করে যাওয়ার মধ্যে সব শেষ নয়। এই বিচার এই অন্তর্বর্তী সরকারের সময় করতে হবে এবং যে সময়টুকু এই সরকারের আছে, নির্বাচনের আগেই খুনি হাসিনাকে বাংলাদেশে নিয়ে এসে ফাঁসির মঞ্চে নিতে হবে। যত দিন না আমরা খুনি হাসিনাকে ওই ফাঁসির মঞ্চে না দেখছি, এই বাংলাদেশে কেউ যেন ভুলক্রমেও নির্বাচনের কথা না বলে।

এক শহীদের মায়ের পাশে দাঁড়িয়ে সারজিস বলেন, আমাদের একজন শহীদ ভাইয়ের মায়ের এই আহাজারিকে সামনে রেখে আপনাদের শুধু একটা কথাই বলি, এই খুনি হাসিনা যখন শুধু ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য আমার এমন হাজার ভাইকে খুন করতে বিন্দুমাত্র দ্বিধা করেনি, আমার এমন অনেক ভাই রয়েছে, যাদের লাশ এখন পর্যন্ত খুনি হাসিনা হত্যার পরে কোথায় নিয়ে গেছে, এটা খুঁজে পাওয়া যায়নি।

তিনি আরো বলেন, আজ আমার মা তাঁর সন্তানের লাশের জন্য, শেষবার একবার দেখার জন্য, এখন সেই আহাজারি করছে; এই মাকে আমরা বায়তুল মোকাররমের সামনে সেদিন দেখেছি, প্রতিটি জায়গায় এই মা এভাবে আহাজারি করে ছুটে বেড়িয়েছেন; তো সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে, আমরা হয়তো আমাদের জায়গায় সর্বোচ্চ চেষ্টা করতে পারি, আমাদের ভাইয়ের লাশটা খোঁজার জন্য। কিন্তু এটা বলতে পারি না যে কখনো পাব কি পাব না। কিন্তু যেই ভাইয়ের লাশের জন্য আমার একজন মা এভাবে আহাজারি করেন, যেই খুনির নির্দেশে আমার এই ভাইগুলোকে হত্যা করা হলো, সেই খুনির বিচার না দেখা পর্যন্ত কিভাবে এই বাংলাদেশে আমরা অন্য কিছুর চিন্তা করি?

আরেক মুখ্য সংগঠক (দক্ষিণাঞ্চল) হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, সরকার ছাত্র-জনতার রক্তের ওপর এসেছে। তাদের মনে রাখতে হবে, বিচার নিশ্চিত করতে না পারলে পুরো প্রক্রিয়া প্রশ্নবিদ্ধ হবে। দ্রুততম সময়ে বিচার নিশ্চিত করতে হবে। প্রয়োজনে বিশেষভাবে ট্রাইব্যুনালের সংখ্যা বাড়িয়ে বিচার নিশ্চিত করতে হবে।

 

 

মন্তব্য
আগস্ট অভ্যুত্থানের ৭ মাস

জনজীবনে নিরাপত্তাহীনতা নিয়ে এখনো উদ্বেগ

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
জনজীবনে নিরাপত্তাহীনতা নিয়ে এখনো উদ্বেগ

সাত মাস আগে গত বছর ৫ আগস্ট দুপুর দেড়টার দিকে আইএসপিআর থেকে বার্তা আসে, দুপুর ২টায় সেনাপ্রধান ওয়াকার-উজ-জামান জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেবেন। সবার চোখ টিভির দিকে। ২টা পেরিয়ে যায়। আইএসপিআর আবার জানায়, সেনাপ্রধান বিকেল ৩টায় ভাষণ দেবেন।

আগের দিনও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ঘিরে সহিংসতায় শতাধিক প্রাণহানির ঘটনা ঘটে। কারফিউ উপেক্ষা করে শেখ হাসিনা সরকারের পদত্যাগ দাবিতে লং মার্চ টু ঢাকা কর্মসূচিতে উত্তাল দেশ। সকাল ১১টার পর থেকে শাহবাগ, কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারসহ রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট লোকারণ্য।

ছাত্র-জনতার গন্তব্য কড়া নিরাপত্তাবেষ্টিত গণভবন।

সারা দেশে উৎকণ্ঠা। ব্যাপক রক্তপাতের আশঙ্কা। অবশেষে স্বস্তির খবর। বিকেল ৪টার দিকে সেনাপ্রধান দেশবাসীকে জানালেন, প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে ইস্তফা দিয়ে দেশ ছেড়েছেন শেখ হাসিনা।
বললেন, আমাদের সহযোগিতা করেন। কথা দিচ্ছি, প্রতিটি হত্যার বিচার হবে। আশাহত হবেন না। আমরা দায়-দায়িত্ব নিচ্ছি। সেনাবাহিনী, সশস্ত্র বাহিনীর প্রতি আস্থা রাখুন।
সব দাবি পূরণ হবে। দেশে শান্তি-শৃঙ্খলা ফিরে আসবে। আমরা মহামান্য রাষ্ট্রপতির কাছে যাব। অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের বিষয়ে উনার সঙ্গে কথা বলব। তাঁর সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে অন্তর্বর্তী সরকার গঠন করে দেশ পরিচালনা করা হবে।

এর প্রায় সাত মাস পর গত ২ ফেব্রুয়ারি সেনাপ্রধান বললেন, আমি আপনাদের সতর্ক করে দিচ্ছি। আপনারা যদি নিজেদের মধ্যে ভেদাভেদ ভুলে একসঙ্গে কাজ না করতে পারেন, নিজেরা যদি কাদা ছোড়াছুড়ি করেন, মারামারি-কাটাকাটি করেন, এই দেশ এবং জাতির স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব বিপন্ন হবে। আমি আজ বলে দিলাম নইলে আপনারা বলবেন যে আমি আপনাদের সতর্ক করিনি। আমি সতর্ক করে দিচ্ছি আপনাদের। এই দেশ আমাদের সবার। আমরা সবাই সুখে-শান্তিতে থাকতে চাই। আমরা চাই না হানাহানি, কাটাকাটি, মারামারি।

তিনি আরো বলেন, দেশে এই আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি খারাপের পেছনে কিছু কারণ আছে। প্রথম কারণটা হচ্ছে, আমরা নিজেরা হানাহানির মধ্যে ব্যস্ত। একজন আরেকজনের বিরুদ্ধে বিষোদগারে ব্যস্ত। এটা একটা চমৎকার সুযোগ অপরাধীদের জন্য। যেহেতু আমরা একটা অরাজক পরিস্থিতির মধ্যে বিরাজ করছি, তারা খুব ভালোভাবেই জানেন, এই সময় যদি এসব অপরাধ করা যায়, তাহলে এখান থেকে পরিত্রাণ পাওয়া সম্ভব। সেই কারণে এই অপরাধগুলো হচ্ছে। আমরা যদি সংগঠিত থাকি, একত্র থাকি, তাহলে অবশ্যই এটা সম্মিলিতভাবে মোকাবেলা করা সম্ভব হবে।

পর্যবেক্ষক মহলের মতে, প্রায় সাত মাস আগে এবং গত ২৫ ফেব্রুয়ারি সেনাপ্রধানের বক্তব্যই দেশবাসীর প্রত্যাশা ও বর্তমান অবস্থার বিষয়টি স্পষ্ট করে দিচ্ছে।

রাজনৈতিক নেতাদের মূল্যায়ন : বাম গণতান্ত্রিক জোটের সমন্বয়ক ও বাসদ (মার্ক্সবাদী) নেতা মাসুদ রানা  গতকাল মঙ্গলবার  কালের কণ্ঠকে বলেন, গণ-অভ্যুত্থানের পর অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে জনগণের অসীম প্রত্যাশা ছিল। কিন্তু গত সাত মাসে সেই প্রত্যাশা পূরণ হয়নি। সরকার ইতিবাচক কিছু পদক্ষেপ ছাড়া তেমন কোনো সফলতা দেখাতে পারেনি। অগ্রাধিকার ভিত্তিতে যে কাজগুলো করার দরকার ছিল তা করা হয়নি। জনজীবনে সীমাহীন সংকট নিরসন, সিন্ডিকেট ভেঙে দ্রব্যমূল নিয়ন্ত্রণ, গণহত্যার বিচার, আহতদের চিকিৎসা ও পুনর্বাসন এবং গণ-অভ্যুত্থানের পক্ষের রাজনৈতিক দলগুলোর আস্থা অর্জনসহ অন্যান্য কাজে সরকার অনেকটাই ব্যর্থ। ভবিষ্যতে সরকার এ বিষয়ে দ্রুত পদক্ষেপ নেবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।

বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক ও গণতন্ত্র মঞ্চের অন্যতম নেতা আকবর খান বলেন, গণ-অভ্যুত্থানের পর একটা অস্থির সময়ে অন্তর্বর্তী সরকার যে সাত মাস টিকে আছে, এটাই বড় সাফল্য। এই সময় সরকারকে নানা প্রতিকূলতা মোকাবেলা করতে হয়েছে। তার পরও সংস্কারসহ বেশ কিছু ইতিবাচক উদ্যোগ নিয়েছে। জাতীয় ঐকমত্য কমিশন গঠনের মাধ্যমে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ঐকমত্যে পৌঁছানোর উদ্যোগ নিয়েছে। তবে দ্রব্যমূল্যের লাগামহীন ঊর্ধ্বগতি মানুষকে নাজেহাল করে তুলছে। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীসহ প্রশাসনকে এখনো পুরোপুরি কার্যকর করা যায়নি। ফলে জনজীবনে নিরাপত্তাহীনতা উদ্বেগজনক অবস্থায় রয়েছে। এই অবস্থা পরিবর্তনে প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষে দ্রুত নির্বাচন দেওয়ার আহ্বান জানান তিনি।

নির্বাচন প্রশ্নে গতকাল অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা  সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান সাংবাদিকদের বলেন, আমি আবারও বলছি প্রধান উপদেষ্টা যেটা বলেছেন ডিসেম্বর থেকে জুনের মধ্যে নির্বাচন হবে। কাজেই প্রধান উপদেষ্টার মুখ থেকে নির্বাচনের চূড়ান্ত তারিখ শোনার জন্য অপেক্ষা করেন।

সংস্কারে পরিবর্তন আর্থিক খাতে : শেখ হাসিনার স্বৈরশাসনের অবসানের শুরু হয় রাষ্ট্র সংস্কারের মাধ্যমে উদার, গণতান্ত্রিক, বৈষম্যহীন এক নতুন বাংলাদেশ গঠনের প্রস্তুতি। গত বছর ৮ আগস্ট নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে গঠিত অন্তর্বর্তী সরকারের বয়সও সাত মাস পূর্ণ হওয়ার পথে। এই সাত মাসের মূল্যায়নে অর্থনীতিবিদরা বলছেন, অর্থনীতিতে তেমন চাঞ্চল্য ফেরেনি। অন্তর্বর্তী সরকার কর্মসংস্থান বাড়াতে পারেনি। দেশে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও প্রাতিষ্ঠানিক স্থিতিশীলতা না থাকলে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ আসে না। গত ২৯ জানুয়ারি বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) এক সংবাদ সম্মেলনে এ মন্তব্য করে। তবে হাসিনা সরকার আমলের ভঙ্গুর সামষ্টিক অর্থনীতিতে খানিকটা শৃঙ্খলা ফিরেছে বলে অর্থনীতিবিদরা মনে করেন।

তাঁরা বলছেন, অন্তর্বর্তী সরকারের হাত ধরেই পরিবর্তন আসতে শুরু করেছে আর্থিক খাতে। বিধ্বস্ত ব্যাংক ও আর্থিক খাত ঢেলে সাজাতে সাহসী পদক্ষেপ নিতে শুরু করে বাংলাদেশ ব্যাংক। ব্যাংকের পর্ষদ পুনর্গঠন, আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার, কঠোর নজরদারির মাধ্যমে বাণিজ্যভিত্তিক অর্থপাচার রোধ, মূল্যস্ফীতি কমাতে নীতি সুদহার বৃদ্ধিসহ আরো কিছু কঠিন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ব্যাংকিং খাতের সৃষ্ট সমস্যা সমাধানে তিনটি টাস্কফোর্স গঠন করা হয়। এর মধ্যে একটির কাজ ব্যাংক খাতের সুশাসন ফিরিয়ে আনাসহ ঋণ আদায়প্রক্রিয়া নিরূপণ এবং অন্যটির কাজ বিদেশে পাচার হওয়া টাকা ফেরত নিয়ে আসা। পাচার হওয়া অর্থ ফেরাতে এরই মধ্যে দেড় হাজার ব্যাংক অ্যাকাউন্ট জব্দ ও তলব করা হয়েছে। পাশাপাশি বিদেশ থেকে অর্থ ফেরাতে আন্তর্জাতিক আইনি সংস্থা নিয়োগের প্রস্তুতি নিচ্ছে আর্থিক গোয়েন্দা সংস্থা বাংলাদেশ ফিন্যানশিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)।

ইতিবাচক ধারায় রপ্তানি ও রেমিট্যান্স : দেশের পণ্য রপ্তানি ইতিবাচক ধারায় রয়েছে। গত মাসে ৩৯৭ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছে। এই রপ্তানি গত বছরের ফেব্রুয়ারির তুলনায় ২.৭৭ শতাংশ বেশি। যদিও চলতি অর্থবছরের সাত মাসের মধ্যে সবচেয়ে কম প্রবৃদ্ধি হয়েছে গত ফেব্রুয়ারি মাসে।

পণ্য রপ্তানির এই হালনাগাদ পরিসংখ্যান গতকাল মঙ্গলবার প্রকাশ করেছে রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি)। তাতে দেখা যায়, চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম আট মাসে অর্থাত্ জুলাই-ফেব্রুয়ারিতে রপ্তানি হয়েছে তিন হাজার ২৯৪ কোটি ডলারের পণ্য।

গত অর্থবছরের একই সময়ে এই রপ্তানির পরিমাণ ছিল দুই হাজার ৯৮০ কোটি ডলার। সেই হিসাবে চলতি অর্থবছরের প্রথম আট মাসে রপ্তানি আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় বেড়েছে ১০.৫৩ শতাংশ।

এদিকে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে দেশে রেমিট্যান্স এসেছে ২.৫৩ বিলিয়ন ডলার, যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ২৫ শতাংশ বেশি। গত রবিবার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রেমিট্যান্স নিয়ে মাসিক হালনাগাদ প্রতিবেদনে এ তথ্য পাওয়া গেছে। ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে প্রবাসীরা রেমিট্যান্স পাঠিয়েছিলেন ২.০২ বিলিয়ন ডলার।

ব্যাংক সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, রমজান ও দুই ঈদ উপলক্ষে প্রবাসীরা সব সময়ই পরিবারের জন্য বেশি পরিমাণে রেমিট্যান্স পাঠান।

ডিসেম্বরে সার্বিক মূল্যস্ফীতি দাঁড়ায় ১০.৮৯ শতাংশ। আগের মাসে ছিল ১১.৩৮ শতাংশ। খাদ্য মূল্যস্ফীতি কমে ১২.৯২ শতাংশে নেমেছে, যা আগের মাসে ছিল ১৩.৮০ শতাংশ।

 

 

মন্তব্য

সর্বশেষ সংবাদ