সড়ক আইন সংশোধন নিয়ে দোটানা

সজিব ঘোষ
সজিব ঘোষ
শেয়ার
সড়ক আইন সংশোধন নিয়ে দোটানা

সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮ সংশোধনের চূড়ান্ত খসড়া নিয়ে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় বিভ্রান্তিতে রয়েছে। এমনটি মনে করে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এটি অনুমোদিত হলে একদিকে যেমন দুর্বল আইন হিসেবে বিবেচিত হতে পারে, তেমনি আইন সংশোধনে রয়েছে পরিবহন মালিকদের আবদার রক্ষার চাপ।

এমন পরিস্থিতিতে দোটানায় থাকা সড়ক মন্ত্রণালয়ের চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে আইনের সংশোধনী শেষ পর্যন্ত কেমন হবে, তা এখনো বোঝা যাচ্ছে না। এরই মধ্যে প্রথম সংশোধনীর খসড়া মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে সড়ক মন্ত্রণালয়ে ফেরত পাঠানো হয়।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সংশোধিত আইনের খসড়া চূড়ান্ত অনুমোদন পেলে আইনের কার্যকারিতা কমে আসবে। বিদ্যমান আইন অনেকটা দুর্বল আইনে পরিণত হবে। রাজপথে শিক্ষার্থীদের যে তুমুল আন্দোলনের মুখে এই সড়ক আইন সংসদে পাস হয়েছিল, সেই প্রেক্ষাপট বিবেচনায় বিতর্কের মুখে পড়তে পারে সরকার।

আবার পরিবহন মালিক সমিতির নেতারা সরকারি দলের পক্ষে নানা সময় কাজ করে যাচ্ছেন।

এমনকি মালিকপক্ষের নেতারা ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের দলীয় পদেও রয়েছেন। সেদিক থেকেও আইন সংশোধনে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ে চাপ তৈরি হচ্ছে। দুই দিক সামাল দিতে গিয়ে এই আইন সংশোধনের উদ্যোগে গড়িমসি চলছে সড়ক মন্ত্রণালয়ে।

গেল বছরের মাঝামাঝি সময় সংশোধিত আইনের খসড়া চূড়ান্ত হয়।

প্রক্রিয়া অনুযায়ী জনমত যাচাই-বাছাই করার কথা। সেটি একবার হয়েছে। এরপর সংশোধিত খসড়া জনমত যাচাইয়ের জন্য আর প্রকাশ করা হয়নি। ফলে চূড়ান্ত খসড়ায় কী ধরনের সংশোধনী আইনে আসতে যাচ্ছে, তা অনেকাংশে অপ্রকাশিত রয়েছে।

মন্ত্রণালয় সূত্র কালের কণ্ঠকে বলছে, এরই মধ্যে একবার সড়ক আইনের সংশোধিত খসড়া মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে পাঠানো হয়েছে।

মন্ত্রিপরিষদের আইন বিভাগ থেকে খসড়া অনুমোদন করা হয়। কিন্তু সংশোধনী খসড়ায় আরো কিছু বিষয় যুক্ত ও বাদ দেওয়ার পরামর্শ দিয়ে সড়ক মন্ত্রণালয়ে ফেরত পাঠায় মন্ত্রিপরিষদ। এখন সেগুলোর ওপর কাজ চলছে। আরো কিছুদিন আগেই খসড়া চূড়ান্ত করা সম্ভব হতো। কিন্তু দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে সড়ক আইন সংশোধনের উদ্যোগ নিতে চায়নি সরকার। 

নাম প্রকাশ না করার শর্তে মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা কালের কণ্ঠকে বলেন, এই মুহূর্তে সংশোধনী খসড়াকে আর চূড়ান্ত বলার সুযোগ নেই। তাতে ফাইন টিউনিং করা হচ্ছে। কিছু বিষয়ে পরিবর্তন আসছে। তবে পরিবহন চালক-শ্রমিকদের শাস্তি কমিয়ে যে সংশোধন করা হয়েছিল, এতে বড় পরিবর্তন হচ্ছে না। শাস্তি কমছে। কিন্তু নিহতের পরিবারকে ক্ষতিপূরণে পাঁচ লাখের পরিবর্তে তিন লাখ দেওয়ার যে প্রস্তাব করা হয়েছিল, সেটা বাতিল হতে পারে। ক্ষতিপূরণ পাঁচ লাখই থাকবে।

এখন প্রক্রিয়া অনুযায়ী, আইনের খসড়া মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে অনুমোদনের জন্য পাঠানো হবে। সেখানে আলোচনায় অনুমোদন পেলে খসড়াটি চূড়ান্ত বলে বিবেচিত হবে। এরপর পাঠানো হবে আইন মন্ত্রণালয়ে। আইন মন্ত্রণালয়ের অনাপত্তি নিয়ে চূড়ান্ত খসড়া যাবে সংসদে। সংসদ চাইলে যাচাই-বাছাইয়ের জন্য খসড়াটি সড়ক মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় কমিটিতে পাঠাতে পারে। সে ক্ষেত্রে কমিটি যাচাই-বাছাই করে দেখবে। প্রয়োজনে সড়ক মন্ত্রণালয়ে ফেরত পাঠাবে। তা না হলে অনুমোদনের জন্য সংসদে পাঠাবে।

এক প্রশ্নের জবাবে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব এ বি এম আমিন উল্লাহ নুরী কালের কণ্ঠকে বলেন, আমরা আমাদের কাজ প্রায় শেষ করে ফেলেছি। আগামী সপ্তাহের মধ্য ফাইল ক্যাবিনেটে পাঠিয়ে দেব। এরপর আমাদের হাতে আর কিছু নেই।

জানতে চাইলে পরিবহন ও যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক মো. হাদিউজ্জামান কালের কণ্ঠকে বলেন, নিঃসন্দেহে সরকার বিরাট বিভ্রান্তিতে পড়েছে। একদিকে যেমন নির্বাচনী ইশতেহার বাস্তবায়ন করার দায়, অন্যদিকে রজনৈতিক প্রেক্ষাপট। এ অবস্থায় সড়ক মন্ত্রণালয় পরিবহন মালিকদের অন্যায় আবদারে সায় দেবে কি না, সেটাই দেখার বড় বিষয়। প্রথম খসড়া অনুযায়ী আইনটি সংশোধন হলে এটি দুর্বল আইনে পরিণত হবে।

 

চূড়ান্ত খসড়ায়ও কমছে চালক-শ্রমিকের শাস্তি

শুরুতে আইনের মোট ১২৬টি ধারার মধ্যে ২৯টিতে পরিবর্তন এনে সংশোধিত আইনের খসড়া প্রণয়ন করা হয়। এর মধ্যে ১৫টি ধারায় বিদ্যমান কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ড কমানো হচ্ছে। ভারী ও মাঝারি মোটরযানের সংজ্ঞাসহ আটটি বিষয়ের সংজ্ঞায় পরিবর্তন আনা হচ্ছে। এই খসড়ার ওপর এখন আবার সংশোধনের কাজ চলছে।

সংশোধনের খসড়া অনুযায়ী, ওভারলোডিং (গাড়ি মাত্রাতিরিক্ত বোঝাই) এবং মোটরযানের আকার পরিবর্তনের অপরাধকে জামিনযোগ্য অপরাধ হিসেবে বিবেচনা করা হবে, যা বর্তমানে অজামিনযোগ্য। অষ্টম শ্রেণির পরিবর্তে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষাগত যোগ্যতা থাকলেই একজন চালক নিবন্ধিত তিন চাকার গাড়ি চালাতে পারবেন। আবার একজন সহকারী বা সুপারভাইজার ১০ বছর কাজ করে যদি দক্ষ হয়ে ওঠেন এবং ড্রাইভিং সক্ষমতা বোর্ডে পাস করেন, তাঁর ক্ষেত্রে শিক্ষাগত যোগ্যতাসহ কয়েকটি শর্ত মানা প্রয়োজন হবে না।

এত দিন যেখানে নকল, ভুয়া বা জাল ড্রাইভিং লাইসেন্স ব্যবহার করলে সর্বনিম্ন ছয় মাস এবং সর্বোচ্চ দুই বছরের কারাদণ্ড ছিল, সেখানে সংশোধনীতে সর্বোচ্চ এক বছরের কারাদণ্ড এবং ২৫ হাজার টাকা অর্থদণ্ডের প্রস্তাব করা হয়েছে। কোনো ব্যক্তির ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রত্যাহার করার পরও সে গাড়ি চালালে ২৫ হাজারের পরিবর্তে ১৫ হাজার টাকা জরিমানার বিধান করা হচ্ছে। সরকারের নির্ধারিত অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করলে শাস্তিস্বরূপ জরিমানা ও কারাদণ্ড অর্ধেক করা হচ্ছে।

চলমান আইন অনুযায়ী, অনির্ধারিত জায়গায় গাড়ি পার্ক করলে বা যাত্রী ওঠানামা করলে পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা দিতে হবে। সেখানে প্রস্তাব অনুযায়ী এ অপরাধের জন্য মাত্র এক হাজার টাকা জরিমানা করা হবে।

৫৭ ধারায় ভুক্তভোগী বা তার পরিবারের সদস্যদের ক্ষতিপূরণ দিতে আর্থিক সহায়তা তহবিল গঠনের বিষয়ে বলা হয়েছে। ওই তহবিলের উৎস হিসেবে নিয়ন্ত্রণহীন চালক ও মোটরযান মালিকের কাছ থেকে আদায় করা জরিমানার কথা উল্লেখ রয়েছে। কিন্তু সংশোধনের প্রস্তাবে বিষয়টি বাদ দেওয়া হয়েছে। এ ক্ষেত্রে কর্তৃপক্ষকে সরকারি তহবিল বা পরিবহন সংগঠনগুলোর দেওয়া চাঁদার ওপরই নির্ভর করতে হবে।

বর্তমানে আইনের ৮৪, ৯৮ ও ১০৫ ধারা অজামিনযোগ্য অপরাধ। কিন্তু আইনটি সংশোধন করা হলে ৮৪ ও ৯৮ ধারার অপরাধ জামিনযোগ্য বলে বিবেচিত হবে। ৮৪ নম্বর ধারায় অবৈধভাবে মোটরযানের আকৃতি পরিবর্তনে শাস্তির কথা বলা হয়েছে। ৯৮ নম্বর ধারায় ওভারলোডিং বা নিয়ন্ত্রণহীনভাবে গাড়ি চালানোর শাস্তি সম্পর্কে বলা হয়েছে।

বর্তমান আইনের ১০৫ নম্বর ধারায় দুর্ঘটনায় কোনো ব্যক্তি গুরুতর আহত বা নিহত হলে দায়ী ব্যক্তির সর্বোচ্চ পাঁচ বছরের কারাদণ্ড ও পাঁচ লাখ টাকা অর্থদণ্ডের বিধান রয়েছে। প্রস্তাবিত সংশোধনীতে আর্থিক ক্ষতিপূরণ পাওয়া থেকে আহতদের বাদ দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। নিহত ব্যক্তির পরিবারকে পাঁচ লাখের পরিবর্তে তিন লাখ টাকা ক্ষতিপূরণের প্রস্তাব করা হচ্ছে।

এক প্রশ্নের জবাবে যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক মো. হাদিউজ্জামান বলেন, আমরা সড়কে মৃত্যু কমাতে পারছি না, উল্টো দুর্ঘটনার কারণে শাস্তি কমানোর আলোচনা করছি। জেল-জরিমানা কমাতে যাচ্ছি। এটা নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের চরম উদাসীনতার লক্ষণ।

এক প্রশ্নের জবাবে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্যাহ কালের কণ্ঠকে বলেন, আমরা ৩৪টি সংশোধনীর প্রস্তাব দিয়েছি। ক্যাবিনেট থেকে খসড়া ফেরত আসার পর মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে আমাদের সঙ্গে এখনো বসা হয়নি। বসলে আমরা পরামর্শ দেব।

মন্তব্য

সম্পর্কিত খবর

ন্যায্যমূল্যে টিসিবির পণ্য কিনতে মানুষের ভিড়

শেয়ার
ন্যায্যমূল্যে টিসিবির পণ্য কিনতে মানুষের ভিড়
ন্যায্যমূল্যে টিসিবির পণ্য কিনতে মানুষের ভিড়। গতকাল রাজধানীর মানিক মিয়া এভিনিউয়ে। ছবি : লুৎফর রহমান
মন্তব্য

গরমের তীব্রতা

শেয়ার
গরমের তীব্রতা
গরমের তীব্রতা বাড়ছে। একটু স্বস্তি পেতে পানিতে নেমে সাঁতার কাটছে দুই শিশু। গতকাল রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যান থেকে তোলা। ছবি : ফোকাস বাংলা
মন্তব্য
জামায়াতের আমির

গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর ঐক্য থাকা উচিত

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর ঐক্য থাকা উচিত
শফিকুর রহমান

জামায়াতে ইসলামীর আমির শফিকুর রহমান বলেছেন, রাজনীতিতে মতপার্থক্য থাকতে পারে। তবে দেশের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐক্য থাকা উচিত। গতকাল রবিবার রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে দ্য ফোরাম অব ইঞ্জিনিয়ার্স অ্যান্ড আর্কিটেক্টস বাংলাদেশ আয়োজিত ইফতার মাহফিলে তিনি এ কথা বলেন।

শফিকুর রহমান বলেন, ভিন্নমত গণতন্ত্রের সৌন্দর্যের অংশ, যাকে সম্মান জানিয়ে দেশকে এগিয়ে নিতে হবে।

তিনি আশা প্রকাশ করেন, দেশে প্রতিহিংসার অবসান ঘটবে এবং মানবিক মূল্যবোধের বিজয় হবে।

তিনি বলেন, বুয়েটের শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ হত্যাকাণ্ডের রায় হাইকোর্টে প্রত্যাশিতভাবে এসেছে। তিনি এ রায় দ্রুত কার্যকর করার আহ্বান জানিয়ে বলেন, এর মাধ্যমে আবরারের পরিবার কিছুটা হলেও স্বস্তি পাবে।

শফিকুর রহমান বলেন, আল্লাহ তাআলা মানুষকে সৃষ্টির সেরা জীব হিসেবে দুনিয়ায় পাঠিয়েছেন।

মানুষকে তিনি ভালো-মন্দের জ্ঞান বা বিবেক দিয়েছেন। প্রকৌশলীরা হচ্ছেন মানুষের মধ্যে অন্যতম সেরা মেধাবী। কিন্তু একজন মানুষের মাঝে শুধু জ্ঞান ও দক্ষতা থাকলেই হবে না, তাকে একই সঙ্গে সত্ হতে হবে। তাহলেই তার দ্বারা দেশ এবং জাতি উপকৃত হবে।

ফোরামের সভাপতি প্রকৌশলী মো. গোলাম মোস্তফার সভাপতিত্বে ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের সেক্রেটারি পরিকল্পনাবিদ মো. সিরাজুল ইসলামের পরিচালনায় ইফতার মাহফিলে বক্তব্য দেন জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও দ্য ফোরাম অব ইঞ্জিনিয়ার্স অ্যান্ড আর্কিটেক্টস বাংলাদেশের তত্ত্বাবধায়ক সাইফুল আলম খান মিলন ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের আমির মোহাম্মদ সেলিম উদ্দিন প্রমুখ।

 

 

মন্তব্য

আন্তর্জাতিক মানের ভোট চায় ইউরোপীয় ইউনিয়ন : সিইসি

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
আন্তর্জাতিক মানের ভোট চায় ইউরোপীয় ইউনিয়ন : সিইসি

প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিন বলেছেন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) বাংলাদেশে একটি আন্তর্জাতিক মানের নির্বাচন দেখতে চায়। ইসিও এ বিষয়ে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের লক্ষ্যে নিরপেক্ষভাবে কাজ করছি আমরা।

গতকাল রবিবার বাংলাদেশে ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত মাইকেল মিলারের নেতৃত্বে প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বৈঠকের পর এ কথা বলেন তিনি।

রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে এ বৈঠকে সিইসির সঙ্গে ইসি সচিবও উপস্থিত ছিলেন।

ইইউ রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে বৈঠকের বিষয়ে সিইসি বলেন, মূলত আগামী নির্বাচনে আমাদের প্রস্তুতি কী আছে, তা উনারা জানতে চেয়েছিলেন। আমরা যা যা করছি তাঁদের জানিয়েছি। নির্বাচন সামনে রেখে প্রস্তুতির সব কিছু জানিয়েছি।

উনারা জানতে চেয়েছিলেন, ভোটের বাজেট কত, টাকা-পয়সা ঠিকমতো আছে কি না, কোনো রকম অসুবিধা আছে কি না। আমরা বলেছি, আমাদের টাকা-পয়সার কোনো অসুবিধা নেই। সরকারের কাছে বাজেট চেয়েছি। তবে উনারা (ইইউ) আমাদের সাহায্য করতে চান।

সিইসি বলেন, আমাদের কী প্রয়োজন, সেটি জানতে চান তাঁরা। আমরা বলেছি, ইউএনডিপি এরই মধ্যে একটা নিড অ্যাসেসমেন্ট করেছে। একটা টিম পাঠিয়েছিল, কী কী সাহায্য প্রয়োজন হতে পারে, এরই মধ্যে প্রজেক্টও বানিয়েছে। নির্বাচনের জন্য যে ধরনের সহায়তা প্রয়োজন হবে তা দিতে তাঁরা প্রস্তুত আছেন। নির্বাচন কমিশনকেই শুধু নয়, বাংলাদেশের উন্নয়নেও সহায়তা করতে চান তাঁরা।

এ এম এম নাসির উদ্দিন বলেন, তাঁরা আগামী মাসে একটি কর্মশালা করবেন। এতে ইসি সচিবসহ ইসির প্রতিনিধিরা যাবেন। সেখানে সিভিল সোসাইটি থাকবে। আমরা জোর দিয়েছি দলের পোলিং এজেন্ট, ভোটার এডুকেশন ও স্থানীয় পর্যবেক্ষকদের প্রশিক্ষণ দিতে।

সিইসি জানান, ইসি নির্বাচনী কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ দিতে পারে। কিন্তু রাজনৈতিক দলের এজেন্টদের কিভাবে প্রশিক্ষণ দেওয়া যায় সে বিষয়ে সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে। ভোটার এডুকেশন ও পর্যবেক্ষকদের প্রশিক্ষণের ব্যাপারে সাহায্য করতে প্রস্তুত রয়েছেন তাঁরা। আরো সহায়তা লাগলে জানানো হবে, সর্বতোভাবে সহায়তায় প্রস্তুত রয়েছেন তাঁরা।

সিইসি বলেন, উনারা চান যে আন্তর্জাতিক মানের একটি নির্বাচন হোক। আন্তর্জাতিক মানের নির্বাচন উনারা দেখতে চান। আমরাও তো প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। এখানে আমাদের দ্বিমত নেই। তাঁরা অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন চান, যেটা আমাদেরও ওয়াদা। এটা আমরাও চাই। নিরপেক্ষভাবে আমরা কাজ করব, এটা তো আমরা ঘোষণা দিয়েছি। আমরা স্বচ্ছতার সঙ্গে কাজ করছি।

যা বললেন মিলার : ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধিদলের প্রধান মাইকেল মিলার সাংবাদিকদের জানান, এটি নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে তাঁদের দ্বিতীয় সভা।

তিনি বলেন, আমরা আলোচনা করেছি এবং বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন বর্তমানে যে কাজ করছে সে সম্পর্কে সংক্ষিপ্তভাবে জানতে পেরেছি।

মিলার বলেন, যেহেতু বাংলাদেশ তার রাজনৈতিক পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে এবং গণতান্ত্রিক নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে, সেহেতু (সিইসির কাছে) তিনটি বার্তা পেশ করেছি। প্রথমত, ইউরোপীয় ইউনিয়ন এই দেশের জন্য একটি দৃঢ় অংশীদার এবং আমরা এই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তনের সময়ে আপনার পাশে আছি। দ্বিতীয়ত, ইউরোপীয় ইউনিয়ন বাংলাদেশের সঙ্গে তার অংশীদারিকে সব দিকে শক্তিশালী করতে চায় এবং আমরা এখানে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উচ্চাকাঙ্ক্ষাকে সমর্থন করতে এসেছি, যাতে তারা গত বছর আপনার নিজস্ব নাগরিকদের প্রকাশিত প্রত্যাশা অনুযায়ী নির্বাচন পরিচালনা করতে পারে এবং তৃতীয় বার্তাটি হলো, প্রধান নির্বাচন কমিশনারকে বলেছি যে ইউরোপীয় ইউনিয়ন আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী এই দেশে নির্বাচন পরিচালনাকে সমর্থন করবে।

মিলার জানান, নির্বাচন কমিশনকে অভিজ্ঞতা ও দক্ষতা দিয়ে সহায়তার পাশাপাশি আর্থিক বিষয়েও সহায়তার আশ্বাস দিয়েছে ইইউ। বিদেশি পর্যবেক্ষক মোতায়েনের বিষয়েও নির্বাচন কমিশনকে অবগত করা হয়েছে।

আজ ওআইসি মিশনপ্রধানদের বৈঠক : আজ সোমবার ইসলামী সহযোগিতা সংস্থাভুক্ত (ওআইসি) দেশগুলোর বাংলাদেশ মিশনপ্রধানদের কাছে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি নিয়ে ইসির সঙ্গে বৈঠক হতে যাচ্ছে।

এই বৈঠকে উপস্থিত হওয়ার জন্য আফগানিস্তান, আলজেরিয়া, ব্রুনেই দারুসসালাম, মিসর, ইন্দোনেশিয়া, ইরান, ইরাক, কুয়েত, লিবিয়া, মালয়েশিয়া, মালদ্বীপ, মরক্কো, ওমান, পাকিস্তান, ফিলিস্তিন, কাতার, সৌদি আরব, তুরস্ক ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের মিশনপ্রধানদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।

 

মন্তব্য

সর্বশেষ সংবাদ