সুন্দরবনে ৫৪ বছরে ৪০ অগ্নিকাণ্ড

  • ► আগুন নিয়ন্ত্রণে : বন বিভাগ
  • ► ফায়ার ব্রিগেড ও বিমানবাহিনীর তৎপরতা
  • ► বাস্তবায়ন হয়নি আগের তদন্তের সুপারিশ
গৌরাঙ্গ নন্দী, খুলনা
গৌরাঙ্গ নন্দী, খুলনা
শেয়ার
সুন্দরবনে ৫৪ বছরে ৪০ অগ্নিকাণ্ড
সুন্দরবনে আগুন নেভাতে ফায়ার সার্ভিসের তৎপরতা। গতকাল তোলা। ছবি : কালের কণ্ঠ

আবারও আগুন লাগল বিশ্ব ঐতিহ্যের অংশ সুন্দরবনে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এ বনে প্রায় প্রতিবছরই আগুনের ঘটনা ঘটছে। ১৯৭০ সাল থেকে এ পর্যন্ত ৫৪ বছরে অন্তত ৪০ বার আগুন লাগার ঘটনা ঘটেছে। সর্বশেষ গত ৪ মে আগুন লাগে চাঁদপাই রেঞ্জ এলাকার আমুরবুনিয়ায়।

এবারের আগুন নেভাতে ফায়ার সার্ভিসের উদ্যোগ ছাড়াও বিমানবাহিনীর হেলিকপ্টার ব্যবহার করা হয়েছে। গতকাল রবিবার বিকেলে প্রধান বন সংরক্ষকের পরিদর্শনের পর বন বিভাগ আগুন নিয়ন্ত্রণে এসেছে বলে দাবি করেছে। এমন প্রেক্ষাপটে সামনে এসেছে অতীতের গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশগুলো বাস্তবায়িত না হওয়ার অভিযোগ।

অগ্নিকাণ্ডের এলাকা পরিদর্শনের পর গতকাল রাত ৮টার দিকে প্রধান বন সংরক্ষক আমীর হোসাইন চৌধুরী কালের কণ্ঠকে বলেন, সুন্দরবনে জ্বলতে থাকা আগুন এখন দেখা যাচ্ছে না।

এর পরও মাটির নিচের অংশে ধোঁয়ার কুণ্ডলী থেকে আগুন দেখা দিলে সঙ্গে সঙ্গে বন বিভাগের সদস্যরা পানি দিয়ে আগুন নেভাবেন। এ জন্য রাতভর আগুনের এলাকায় দায়িত্ব পালন করার জন্য ২০ জনের একটি টিম গঠন করা হয়েছে। অগ্নিনির্বাপণের জন্য সুন্দরবন পূর্ব ও পশ্চিম বিভাগের পাম্প মেশিন যুক্ত করা হয়েছে।

 প্রায় পাঁচ একর এলাকায় বিক্ষিপ্তভাবে আগুন ছড়িয়েছিল বলে প্রধান বন সংরক্ষক জানান।

ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার বিষয়ে তিনি বলেন, আগুন নেভানোর জন্য বনের ক্যাম্পগুলোতে নিজস্ব পাম্প মেশিন যুক্ত করার পরিকল্পনা রয়েছে। এ ছাড়া পানির উৎস নিশ্চিত করতে ভোলা নদী, খোড়মা ও আড়ুয়ারবের খাল খননের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আগামী অর্থবছরে পানি উন্নয়ন বোর্ডের মাধ্যমে এই নদী ও খাল খনন করা হবে।

প্রধান বন সংরক্ষক আরো জানান, আগুনে বনের জীববৈচিত্র্যের ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণে আজ সোমবার উচ্চ পর্যায়ের একটি কমিটি গঠন করা হবে।

এর আগে বন বিভাগের খুলনা অঞ্চলের সংরক্ষক মিহির কুমার দো কালের কণ্ঠকে গতকাল রবিবার বিকেলে জানান, তখনো বিক্ষিপ্তভাবে ধোঁয়া উঠতে দেখা যাচ্ছিল।

তবে আগুনের ভয়াবহতা ছিল না। অগ্নিকাণ্ড এলাকার প্রায় দুই কিলোমিটার দূরের মরাভোলা নদীর বিভিন্ন স্থানে পাইপ বসিয়ে পানি এনে আগুন নেভাতে ব্যবহার করা হয়। বাগেরহাট, মোংলা, কচুয়া, মোরেলগঞ্জ ও শরণখোলা থেকে ফায়ার সার্ভিসের পাঁচটি ইউনিট আগুন নেভাতে কাজ করে। এ ছাড়া বিমানবাহিনীর একটি হেলিকপ্টার শ্যালা নদী থেকে পানি সংগ্রহ করে তা ওপর থেকে আগুনে নিক্ষেপ করে।

মিহির কুমার দো বিকেলে বলেছিলেন, আগুন সম্পূর্ণভাবে নিভেছে কি না তা নিশ্চিত হতে আরো দুই-তিন দিন অপেক্ষা করতে হবে।

বাগেরহাট ফায়ার স্টেশনের উপপরিচালক সাইদুল ইসলাম চৌধুরী জানান, বনের আড়াই কিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিক্ষিপ্তভাবে আগুন ছড়িয়েছে। আগুন যাতে আর ছড়াতে না পারে, সে জন্য ওই এলাকা ঘিরে ফায়ার লেন (কর্ডন) তৈরি করা হয়েছে।

পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বনে আগুনের বিষয়টি অবহিত আছেন এবং খোঁজখবর নিচ্ছেন। এতে বলা হয়, প্রধান বন সংরক্ষক মো. আমীর হোসাইন চৌধুরী ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।

প্রসঙ্গত, গত শনিবার সকাল ১১টার দিকে পূর্ব সুন্দরবনের চাঁদপাই রেঞ্জের জিউধরা স্টেশনের আমুরবুনিয়া টহল ফাঁড়ির লতিফের ছিলা এলাকায় প্রথমে আগুন লাগে। প্রাথমিকভাবে বনকর্মী এবং বনের সুরক্ষায় নিয়োজিত স্বেচ্ছাসেবী ও স্থানীয় লোকজন আগুন লাগা এলাকার চারদিকে পরিখা (ফায়ার লেন) কেটে এর বিস্তাররোধের চেষ্টা করেন।

বন বিভাগের পক্ষ থেকে গঠিত তদন্ত কমিটিকে সাত কার্যদিবসের মধ্যে আগুন লাগার কারণ জানাতে বলা হয়েছে।

https://cdn.kalerkantho.com/public/news_images/share/photo/shares/1.Print/2024/05.May/06-05-2024/2/kalerkantho-ft-2a.jpg

আগুন নিয়ন্ত্রণে, বলল পরিবেশ মন্ত্রণালয়

পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ও গতকাল এক বিবৃতিতে সুন্দরবনের আগুন নিয়ন্ত্রণে এসেছে বলে জানিয়েছে। বিবৃতিতে বলা হয়, আগুন গাছের ডালপালা পর্যন্ত ছড়ায়নি। বরং তা মাটির নিচে গাছের শিকড়ের মধ্য দিয়ে বিস্তৃতি লাভ করছে।

বিবৃতিতে জানানো হয়, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী সাবের হোসেন চৌধুরী এবং মন্ত্রণালয়ের সচিব ফারহিনা আহমেদ আগুন নেভানোর কার্যক্রম সার্বক্ষণিকভাবে তদারকি ও সমন্বয় করছেন।

 

আগের সুপারিশ কার্যকর হয়নি

সুন্দরবনে এ পর্যন্ত প্রতিটি আগুনের ঘটনা ঘটেছে পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের শরণখোলা ও চাঁদপাই রেঞ্জে। এর আগে ২০২১ সালে চাঁদপাই রেঞ্জে দুইবার আগুন লেগেছিল। অতীতের আগুনের ঘটনায় প্রতিবারই তদন্ত কমিটি হলেও তাদের প্রতিবেদনের কোনো সুপারিশ বাস্তবায়িত হয়নি বলে অভিযোগ রয়েছে। অতীতের সুপারিশগুলোর মধ্যে রয়েছে : ৪০ কিলোমিটার খাল ও তিনটি পুকুর পুনরায় খনন করা, বন বিভাগের জনবল বাড়ানো, বনরক্ষীদের টহল কার্যক্রম জোরদার করা, কমপক্ষে তিনটি পর্যবেক্ষণ টাওয়ার তৈরি করা, রিভার ফায়ার স্টেশন নির্মাণ করা ও শুকিয়ে যাওয়া ভোলা নদী খনন করা। কিন্তু বিশেষ করে অবকাঠামোগত ও ভৌত কাজসহ কোনো সুপারিশই দৃশ্যত কার্যকর হয়নি।

 

যেসব কারণে আগুন লাগে

আগের তদন্ত কমিটিগুলোর বেশির ভাগ প্রতিবেদনেই আগুন লাগার কারণ হিসেবে মৌয়ালদের ব্যবহৃত আগুনের কুণ্ডলী, জেলেদের সিগারেট, গ্রীষ্মের দাবদাহ, অনাবৃষ্টি, বন অপরাধে সাজাপ্রাপ্তদের প্রতিশোধমূলক কাজ ইত্যাদিকে দায়ী করা হয়। মাটিতে জমা হওয়া শুকনা পাতার পুরু স্তর আগুন ছড়িয়ে পড়তে ও দীর্ঘস্থায়ী হতে সাহায্য করে।

শুষ্ক মৌসুম বন থেকে মধু আহরণের সময়। বর্তমানে তা চলছে। এ ছাড়া বাগদা ও গলদা চিংড়ির পোনা (রেণু) আহরণের সময়ও এখন। বনসংলগ্ন গ্রামগুলোর বাসিন্দাদের কেউ কেউ গোপনে বনে প্রবেশ করে মধু সংগ্রহ করে। অনেকে বনের ভেতর দিয়ে হেঁটে শ্যালা নদীতে পোনা আহরণ করতে যায়। এরা বনের হাঁটাপথে বিড়ি-সিগারেট খেয়ে তার অবশিষ্টাংশ যেখানে সেখানে ফেলে। মধু সংগ্রহকারীদের মৌমাছি তাড়ানোর মশাল থেকেও আগুন লাগে। সুন্দরবনের ধানসাগর ও জিউধরা স্টেশনের আওতায় বেশ কিছু বিল রয়েছে। এক শ্রেণির অসাধু জেলে বর্ষায় সহজে মাছ ধরার লক্ষ্যে এসব বিলের আগাছা পরিষ্কার করতে ইচ্ছা করে শুষ্ক মৌসুমে বনে আগুন ধরিয়ে দেয়।

সুন্দরবন বন বিভাগের তথ্য মতে, ১৯৭০ সালে চাঁদপাই রেঞ্জ এলাকায় আগুন লেগেছিল। এরপর থেকে দু-এক বছরের ব্যবধানে এই রেঞ্জ এলাকার কোনো না কোনো স্থানে আগুন লাগে। ১৯৯৬ সালের এপ্রিল মাসে এই রেঞ্জ এলাকার বৈদ্যমারিতে বেশ বড় আগুন লাগে। ১৯৭০ সাল থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত ছোট-বড় কমপক্ষে ১৫টি আগুন লাগার ঘটনা ঘটেছে। আর ২০০২ সাল থেকে এ পর্যন্ত অগ্নিকাণ্ড ঘটেছে ২৪ বার।

২০০৬ সালে চাঁদপাই রেঞ্জের তেড়াবেকা, আমুরবুনিয়া, খুরাবাড়িয়া, পচাকোড়ালিয়া ও ধানসাগর এলাকায় পাঁচবার আগুন লাগে। ২০২১ সালের ৩ মে পূর্ব সুন্দরবনেরই শরণখোলা রেঞ্জের দাসেরভারানি এলাকায় যে আগু লাগে তা ফায়ার সার্ভিস, বন বিভাগ ও স্থানীয়দের প্রায় ৩০ ঘণ্টার চেষ্টায় নেভানো হয়।

বিশেষ করে এপ্রিল-মে মাসে এবং যে বছর গরমের তীব্রতা তুলনামূলকভাবে বেশি থাকে, সেবারই আগুনের ঘটনা বেশি ঘটে।

 

[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বিষ্ণু প্রসাদ চক্রবর্তী, বাগেরহাট; মহিদুল ইসলাম, শরণখোলা; জামাল হোসেন বাপ্পা, মোরেলগঞ্জ ও এনামুল হক, মোংলা]

মন্তব্য

সম্পর্কিত খবর

ন্যায্যমূল্যে টিসিবির পণ্য কিনতে মানুষের ভিড়

শেয়ার
ন্যায্যমূল্যে টিসিবির পণ্য কিনতে মানুষের ভিড়
ন্যায্যমূল্যে টিসিবির পণ্য কিনতে মানুষের ভিড়। গতকাল রাজধানীর মানিক মিয়া এভিনিউয়ে। ছবি : লুৎফর রহমান
মন্তব্য

গরমের তীব্রতা

শেয়ার
গরমের তীব্রতা
গরমের তীব্রতা বাড়ছে। একটু স্বস্তি পেতে পানিতে নেমে সাঁতার কাটছে দুই শিশু। গতকাল রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যান থেকে তোলা। ছবি : ফোকাস বাংলা
মন্তব্য
জামায়াতের আমির

গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর ঐক্য থাকা উচিত

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর ঐক্য থাকা উচিত
শফিকুর রহমান

জামায়াতে ইসলামীর আমির শফিকুর রহমান বলেছেন, রাজনীতিতে মতপার্থক্য থাকতে পারে। তবে দেশের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐক্য থাকা উচিত। গতকাল রবিবার রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে দ্য ফোরাম অব ইঞ্জিনিয়ার্স অ্যান্ড আর্কিটেক্টস বাংলাদেশ আয়োজিত ইফতার মাহফিলে তিনি এ কথা বলেন।

শফিকুর রহমান বলেন, ভিন্নমত গণতন্ত্রের সৌন্দর্যের অংশ, যাকে সম্মান জানিয়ে দেশকে এগিয়ে নিতে হবে।

তিনি আশা প্রকাশ করেন, দেশে প্রতিহিংসার অবসান ঘটবে এবং মানবিক মূল্যবোধের বিজয় হবে।

তিনি বলেন, বুয়েটের শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ হত্যাকাণ্ডের রায় হাইকোর্টে প্রত্যাশিতভাবে এসেছে। তিনি এ রায় দ্রুত কার্যকর করার আহ্বান জানিয়ে বলেন, এর মাধ্যমে আবরারের পরিবার কিছুটা হলেও স্বস্তি পাবে।

শফিকুর রহমান বলেন, আল্লাহ তাআলা মানুষকে সৃষ্টির সেরা জীব হিসেবে দুনিয়ায় পাঠিয়েছেন।

মানুষকে তিনি ভালো-মন্দের জ্ঞান বা বিবেক দিয়েছেন। প্রকৌশলীরা হচ্ছেন মানুষের মধ্যে অন্যতম সেরা মেধাবী। কিন্তু একজন মানুষের মাঝে শুধু জ্ঞান ও দক্ষতা থাকলেই হবে না, তাকে একই সঙ্গে সত্ হতে হবে। তাহলেই তার দ্বারা দেশ এবং জাতি উপকৃত হবে।

ফোরামের সভাপতি প্রকৌশলী মো. গোলাম মোস্তফার সভাপতিত্বে ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের সেক্রেটারি পরিকল্পনাবিদ মো. সিরাজুল ইসলামের পরিচালনায় ইফতার মাহফিলে বক্তব্য দেন জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও দ্য ফোরাম অব ইঞ্জিনিয়ার্স অ্যান্ড আর্কিটেক্টস বাংলাদেশের তত্ত্বাবধায়ক সাইফুল আলম খান মিলন ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের আমির মোহাম্মদ সেলিম উদ্দিন প্রমুখ।

 

 

মন্তব্য

আন্তর্জাতিক মানের ভোট চায় ইউরোপীয় ইউনিয়ন : সিইসি

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
আন্তর্জাতিক মানের ভোট চায় ইউরোপীয় ইউনিয়ন : সিইসি

প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিন বলেছেন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) বাংলাদেশে একটি আন্তর্জাতিক মানের নির্বাচন দেখতে চায়। ইসিও এ বিষয়ে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের লক্ষ্যে নিরপেক্ষভাবে কাজ করছি আমরা।

গতকাল রবিবার বাংলাদেশে ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত মাইকেল মিলারের নেতৃত্বে প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বৈঠকের পর এ কথা বলেন তিনি।

রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে এ বৈঠকে সিইসির সঙ্গে ইসি সচিবও উপস্থিত ছিলেন।

ইইউ রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে বৈঠকের বিষয়ে সিইসি বলেন, মূলত আগামী নির্বাচনে আমাদের প্রস্তুতি কী আছে, তা উনারা জানতে চেয়েছিলেন। আমরা যা যা করছি তাঁদের জানিয়েছি। নির্বাচন সামনে রেখে প্রস্তুতির সব কিছু জানিয়েছি।

উনারা জানতে চেয়েছিলেন, ভোটের বাজেট কত, টাকা-পয়সা ঠিকমতো আছে কি না, কোনো রকম অসুবিধা আছে কি না। আমরা বলেছি, আমাদের টাকা-পয়সার কোনো অসুবিধা নেই। সরকারের কাছে বাজেট চেয়েছি। তবে উনারা (ইইউ) আমাদের সাহায্য করতে চান।

সিইসি বলেন, আমাদের কী প্রয়োজন, সেটি জানতে চান তাঁরা। আমরা বলেছি, ইউএনডিপি এরই মধ্যে একটা নিড অ্যাসেসমেন্ট করেছে। একটা টিম পাঠিয়েছিল, কী কী সাহায্য প্রয়োজন হতে পারে, এরই মধ্যে প্রজেক্টও বানিয়েছে। নির্বাচনের জন্য যে ধরনের সহায়তা প্রয়োজন হবে তা দিতে তাঁরা প্রস্তুত আছেন। নির্বাচন কমিশনকেই শুধু নয়, বাংলাদেশের উন্নয়নেও সহায়তা করতে চান তাঁরা।

এ এম এম নাসির উদ্দিন বলেন, তাঁরা আগামী মাসে একটি কর্মশালা করবেন। এতে ইসি সচিবসহ ইসির প্রতিনিধিরা যাবেন। সেখানে সিভিল সোসাইটি থাকবে। আমরা জোর দিয়েছি দলের পোলিং এজেন্ট, ভোটার এডুকেশন ও স্থানীয় পর্যবেক্ষকদের প্রশিক্ষণ দিতে।

সিইসি জানান, ইসি নির্বাচনী কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ দিতে পারে। কিন্তু রাজনৈতিক দলের এজেন্টদের কিভাবে প্রশিক্ষণ দেওয়া যায় সে বিষয়ে সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে। ভোটার এডুকেশন ও পর্যবেক্ষকদের প্রশিক্ষণের ব্যাপারে সাহায্য করতে প্রস্তুত রয়েছেন তাঁরা। আরো সহায়তা লাগলে জানানো হবে, সর্বতোভাবে সহায়তায় প্রস্তুত রয়েছেন তাঁরা।

সিইসি বলেন, উনারা চান যে আন্তর্জাতিক মানের একটি নির্বাচন হোক। আন্তর্জাতিক মানের নির্বাচন উনারা দেখতে চান। আমরাও তো প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। এখানে আমাদের দ্বিমত নেই। তাঁরা অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন চান, যেটা আমাদেরও ওয়াদা। এটা আমরাও চাই। নিরপেক্ষভাবে আমরা কাজ করব, এটা তো আমরা ঘোষণা দিয়েছি। আমরা স্বচ্ছতার সঙ্গে কাজ করছি।

যা বললেন মিলার : ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধিদলের প্রধান মাইকেল মিলার সাংবাদিকদের জানান, এটি নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে তাঁদের দ্বিতীয় সভা।

তিনি বলেন, আমরা আলোচনা করেছি এবং বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন বর্তমানে যে কাজ করছে সে সম্পর্কে সংক্ষিপ্তভাবে জানতে পেরেছি।

মিলার বলেন, যেহেতু বাংলাদেশ তার রাজনৈতিক পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে এবং গণতান্ত্রিক নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে, সেহেতু (সিইসির কাছে) তিনটি বার্তা পেশ করেছি। প্রথমত, ইউরোপীয় ইউনিয়ন এই দেশের জন্য একটি দৃঢ় অংশীদার এবং আমরা এই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তনের সময়ে আপনার পাশে আছি। দ্বিতীয়ত, ইউরোপীয় ইউনিয়ন বাংলাদেশের সঙ্গে তার অংশীদারিকে সব দিকে শক্তিশালী করতে চায় এবং আমরা এখানে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উচ্চাকাঙ্ক্ষাকে সমর্থন করতে এসেছি, যাতে তারা গত বছর আপনার নিজস্ব নাগরিকদের প্রকাশিত প্রত্যাশা অনুযায়ী নির্বাচন পরিচালনা করতে পারে এবং তৃতীয় বার্তাটি হলো, প্রধান নির্বাচন কমিশনারকে বলেছি যে ইউরোপীয় ইউনিয়ন আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী এই দেশে নির্বাচন পরিচালনাকে সমর্থন করবে।

মিলার জানান, নির্বাচন কমিশনকে অভিজ্ঞতা ও দক্ষতা দিয়ে সহায়তার পাশাপাশি আর্থিক বিষয়েও সহায়তার আশ্বাস দিয়েছে ইইউ। বিদেশি পর্যবেক্ষক মোতায়েনের বিষয়েও নির্বাচন কমিশনকে অবগত করা হয়েছে।

আজ ওআইসি মিশনপ্রধানদের বৈঠক : আজ সোমবার ইসলামী সহযোগিতা সংস্থাভুক্ত (ওআইসি) দেশগুলোর বাংলাদেশ মিশনপ্রধানদের কাছে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি নিয়ে ইসির সঙ্গে বৈঠক হতে যাচ্ছে।

এই বৈঠকে উপস্থিত হওয়ার জন্য আফগানিস্তান, আলজেরিয়া, ব্রুনেই দারুসসালাম, মিসর, ইন্দোনেশিয়া, ইরান, ইরাক, কুয়েত, লিবিয়া, মালয়েশিয়া, মালদ্বীপ, মরক্কো, ওমান, পাকিস্তান, ফিলিস্তিন, কাতার, সৌদি আরব, তুরস্ক ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের মিশনপ্রধানদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।

 

মন্তব্য

সর্বশেষ সংবাদ