<p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">এমন কিছু কইরেন না, যাতে না খাইয়া মরতে হয়!</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’—</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">এভাবে চাকরি ফিরে পাওয়ার আকুল আবেদন জানান তানজিনা বেগম (৩৬)। গাজীপুরের কাশিমপুরে সারাবো এলাকায় বেক্সিমকোর পোশাক কারখানার ফটকের সামনে দাঁড়িয়ে ছিলেন তিনি। একদৃষ্টে কারখানার দিকে তাকিয়ে হয়তো বা স্মৃতিচারণা করছিলেন পুরনো সেই কর্মচঞ্চল দিনের। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">পাঁচ বছর আগে এই কারখানায় শ্রমিক হিসেবে যোগ দিয়েছিলেন তানজিনা। তাঁর সঙ্গে আরো ২০ থেকে ২৫ জন জড়ো হয়েছেন ফটকে। সবার দাবি একটাই</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">—</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">কাজে ফিরতে চান। চান মজুরি, যাতে সংসারের চাকাটা সচল থাকে। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">ওড়নার আঁচলে চোখের পানি মুছে পাশে দাঁড়ানো জান্নাতি বেগম (৩০) জানান, স্বামী ও দুই সন্তানসহ পরিবারের সদস্য চারজন। মেয়েরা লেখাপড়া করে। স্বামী কারখানায় লোডারের কাজ করতেন। অসুস্থ হয়ে এখন আর কাজ করতে পারেন না। তাঁর আয়ে কোনো রকমে টেনেটুনে চলছিল চারজনের সংসার। হেলপার হিসেবে কাজ করে মাস শেষে পেতেন ১২ হাজার ৫০০ টাকা। ঘর ভাড়া আড়াই হাজার দিয়ে যা থাকত, তা দিয়েই চলে যেত। কারখানা বন্ধ হওয়ায় পরিবার নিয়ে তিনি দিশাহারা। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">তিনি বলেন, </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">স্বামীর অসুখের সময় ১০ হাজার টেকা ঋণ করেছিলাম। দোকানে বাকি আট হাজার। ঘরভাড়া বাকি দুই মাসের। নতুন বছরের শুরুতে কারখানা থাইকা দুই বছরের বকেয়া ছুটির ভাতা দেওনের কথা আছিল। ওই টেকা দিয়া ঋণ পরিশোধ করার ইচ্ছা ছিল। সবাই পাওনা টাকার জন্য চাপ দিতাছে। কারখানা বন্ধ হওয়ায় এহনে পরিবার নিয়া অকূল সাগরে পড়ছি।</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">জান্নাতি জানান, অন্য কারখানায় চাকরির জন্য গিয়েছিলেন। বেক্সিমকোর শ্রমিক জেনে কেউ কাজে নিচ্ছে না। অবিলম্বে কারখানা খুলে দেওয়ার দাবি জানান তিনি। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">শুধু তানজিনা-জান্নাতি নন, গাজীপুর মহানগরের সারাবো এলাকার বেক্সিমকো শিল্প পার্কের ১৬ কারখানা বন্ধ (লে-অফ) হয়ে যাওয়ায় এখন বেকার ৪২ হাজার শ্রমিক-কর্মচারী। তাঁদের জীবনে নেমে এসেছে অন্ধকার। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">এসব কারখানার মালিক সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান। গত ৫ আগস্ট হাসিনা সরকারের পতনের পর তিনি গ্রেপ্তার হয়ে বর্তমানে জেলে রয়েছেন। এর পর থেকে ব্রেক্সিমকোর শ্রমিকদের বেতন-ভাতা পরিশোধে সমস্যা তৈরি হয়। প্রতি মাসেই বেতনের দাবিতে শ্রমিকদের আন্দোলনে নামতে হয়েছে। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">সর্বশেষ গত বৃহস্পতিবার নভেম্বর মাসের বেতন দিয়ে কর্তৃপক্ষ ৪৫ দিনের জন্য কারখানা লে-অফ ঘোষণা করে। লে-অফের কারণ হিসেবে ক্রয় আদেশ না থাকা এবং এলসি সমস্যাসহ বেশ কয়েকটি কারণ উল্লেখ করা হয়। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">বেক্সিমকোর প্রিপ্রিক্স কারখানার অপারেটর এমদাদ হোসেন জানান, ১৩ হাজার ৫০০ টাকা বেতন পেতেন। ওই টাকায় স্ত্রী, ছোট ভাই ও ৯ মাসের শিশুসন্তানকে নিয়ে সংসার চালাচ্ছিলেন তিনি। এর মধ্যে বিদ্যুৎ, গ্যাস বিলসহ ঘরভাড়াই দিতে হতো পাঁচ হাজার টাকা। প্রায়ই একমাত্র সন্তানের দুধ কেনার টাকা থাকত না। এর পরও ঠেলেঠুলে চালাচ্ছিলেন। চাকরি হারিয়ে এখন সেটাও বন্ধ। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">এমদাদ বলেন, </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">লে-অফের টাকা কবে পাওয়া যাবে, এর নিশ্চয়তা নেই। তা ছাড়া লে-অফ ঘোষণা হলে শ্রমিকরা তিন মাসের মূল বেতন প্রাপ্য। অথচ লে-অফ নোটিশে মূল বেতনের অর্ধেক দেওয়া হবে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। আমরা চাই, সরকার কারখানা খুলে দিক।</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span> </span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">শাওন, মালেক, আলফাজসহ ১০-১২ জন শ্রমিক বলেন, লে-অফের নোটিশ পেয়ে তাঁরা অন্য কারখানায় চাকরির জন্য গিয়েছিলেন। কাগজপত্র দেখে চূড়ান্ত বাছাইয়ের আগে ফিঙ্গার টেস্টে তাঁদের বাদ দেওয়া হচ্ছে। কারণ ফিঙ্গার দিলেই </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">বেক্সিমকোর শ্রমিক</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"> লেখা উঠছে। বেক্সিমকোর শ্রমিকদের কোনো কারখানায় চাকরি হবে না বলে দেওয়া হচ্ছে। এটা নতুন বিপত্তি ডেকে এনেছে। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">তাঁদের প্রশ্ন, দোষ করলে বেক্সিমকোর মালিক করেছেন, ওই দোষে শ্রমিকদের কেন শাস্তি পেতে হবে? </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">অপারেটর মরিয়ম আক্তার বলেন, ঘরে বৃদ্ধা মা আর  অসুুস্থ স্বামী। তাদের চিকিৎসার জন্য মাসে পাঁচ হাজার টাকা লাগে। সপ্তাহে মাছ-মাংস না জুটলেও পরিবারের ছয় সদস্যের তিন বেলার খাবার নিয়ে চিন্তা ছিল না। এখন চিকিৎসা দূরে থাক, ভাত জোগাড় কিভাবে হবে, তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছেন।   </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">নাম না প্রকাশের শর্তে কারখানার একজন কর্মকর্তা বলেন, বন্ধ ১৬ কারখানায় ৪২ হাজার শ্রমিক কাজ করতেন। এর  মধ্যে এক হাজার ৭০০ ছিলেন কর্মকর্তা-কর্মচারী। শুধু শ্রমিক নন, তাঁদের গোটা পরিবারে নেমে এসেছে দুর্ভোগ। কারখানা বন্ধ না করে খুলে দিয়ে শ্রমিক-কর্মচারীদের পরিবার রক্ষায় পদক্ষেপ নিতে সরকারের কাছে দাবি জানান তিনি।</span></span></span></span></p>