<p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">ড. বদিউল আলম মজুমদারের নেতৃত্বাধীন নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশন আজ বুধবার অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার কাছে তাদের প্রতিবেদন জমা দিতে যাচ্ছে। প্রতিবেদনে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রধান আইন </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">দ্য রিপ্রেজেন্টেশন অব দ্য পিপল অর্ডার (আরপিও)</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"> বা গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ, জাতীয় সংসদের নির্বাচনী এলাকার সীমানা নির্ধারণ আইন, নির্বাচন কমিশনারদের নিয়োগ আইন ও নির্বাচন কমিশন সচিবালয় আইন ছাড়াও নির্বাচনসংশ্লিষ্ট সাংবিধানিক বিষয়েও গুরুত্বপূর্ণ কিছু সুপারিশ থাকবে বলে জানা গেছে। সাংবিধানিক বিষয়গুলোর মধ্যে রয়েছে দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদের উচ্চকক্ষে সদস্যদের ক্ষেত্রে শিক্ষাগত যোগ্যতা কমপক্ষে স্নাতক রাখা এবং নারীদের জন্য সংরক্ষিত আসন ১০০-তে উন্নীত করে ওই সব আসনে সরাসরি ভোটের (ফার্স্ট পাস্ট দ্য পোস্ট) ব্যবস্থা করা। </span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">এই সংস্কার কমিশনের একাধিক সদস্যের সঙ্গে আলোচনায় জানা যায়, আরপিও সংস্কারে কমিশনের যেসব সুপারিশ থাকছে তার মধ্যে রয়েছে নির্বাচনের সময় সশস্ত্র বাহিনীকে (সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনী) আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সংজ্ঞায় আবারও অন্তর্ভুক্ত করে তাদের বিনা পরোয়ানায় গ্রেপ্তারের ক্ষমতা দেওয়া; দলীয় প্রার্থী হতে হলে আগের নিবন্ধিত কোনো দলে তিন বছর সদস্য পদ থাকা বাধ্যতামূলক করা (নতুন নিবন্ধিত দলের জন্য এই বিধান প্রযোজ্য হবে না); দলীয় প্রার্থী হতে তৃণমূলের ভোটে জিতে আসা; জোটবদ্ধ নির্বাচনের ক্ষেত্রে জোটভুক্ত দলগুলোর প্রার্থীদের নিজ নিজ দলের প্রতীক ব্যবহার বাধ্যতামূলক করা; ঋণ ও বিল খেলাপিদের ঋণ পুনঃ তফসিল ও বিল পরিশোধের শেষ সময় মনোনয়নপত্র দাখিলের এক সপ্তাহ আগে নির্ধারিত রাখা; প্রার্থীদের নির্বাচনী ব্যয় পর্যবেক্ষণের জন্য নির্বাচনী এলাকাগুলোতে পর্যবেক্ষণ কমিটি গঠন করা; নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর থেকে নির্বাচন শেষ হওয়া পর্যন্ত গুরুতর নির্বাচনী অনিয়মের ক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশনকে নির্বাচন বাতিলের ক্ষমতা ফিরিয়ে দেওয়া; প্রার্থীর হলফনামায় দেশি-বিদেশি সব স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তির হিসাব দেওয়া; প্রবাসী বাংলাদেশিদের ভোটার করার সুবিধা বাড়ানো; সব রাজনৈতিক দলের ঐকমত্য ছাড়া ইভিএম ব্যবহার না করা এবং পুনরায় </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">না</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"> ভোটের বিধান চালু করা। এসব ক্ষেত্রে কয়েকটি ব্যতিক্রমসহ মূলত আওয়ামী লীগ আমলে বাতিল করা বিধানগুলোই ফিরিয়ে আনার সুপারিশ করতে যাচ্ছে সংস্কার কমিশন। সংস্কার কমিশনের সদস্য ড. মো. আব্দুল আলীম গতকাল মঙ্গলবার কালের কণ্ঠকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। </span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">এ ছাড়া নির্বাচন কমিশনারদের নিয়োগ আইনে নির্বাচন কমিশনারদের দায়বদ্ধতা নির্দিষ্ট করারও সুপারিশ থাকছে। এর ফলে গুরুতর নির্বাচনী অপরাধে নির্বাচন কমিশনাররাও শাস্তির সম্মুখীন হবেন। সংসদের নির্বাচনী এলাকার সীমানা নির্ধারণ আইনেও পরিবর্তনের সুপারিশ থাকছে। সংস্কার কমিশন মহানগর এলাকায় আসনসংখ্যা বাড়ানোর পক্ষে নয়। এ ছাড়া নারীদের জন্য সংরক্ষিত আসন ১০০-তে উন্নীত এবং এসব আসনে সরাসরি ভোটের জন্য সাধারণ ৩০০ সহ সংসদীয় আসন ৪০০টি নির্ধারণ করার পক্ষে সংস্কার কমিশন। সংবিধান সংস্কার কমিশনও একই সুপারিশ দিতে যাচ্ছে বলে জানা গেছে। এ অবস্থায় জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগেই সংবিধান সংস্কার হলে বর্তমান সীমানায় ব্যাপক পরিবর্তন আসতে পারে।</span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">নির্বাচন কমিশন সচিবালয় আইনে প্রশাসনিক ক্ষমতা রয়েছে প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও সচিবের। কমিশনের কোনো গুরত্বপূর্ণ ফাইল অন্য নির্বাচন কমিশনারদের দেখানো হয় না। এতে অতীতে অন্য নির্বাচন কমিশনারদের অসন্তোষ প্রকাশের ঘটনাও ঘটে। সংস্কার কমিশন এ ক্ষেত্রে অন্য নির্বাচন কমিশনারদের ক্ষমতা বৃদ্ধিরও সুপারিশ করতে যাচ্ছে বলে জানা গেছে। </span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">২০০১ ও ২০০৮ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় এম এ সাঈদ ও এ টি এম শামসুল হুদার নির্বাচন কমিশন আরপিওতে বেশ কিছু বিধান যুক্ত করেছিল। কিন্তু নবম জাতীয় সংসদে সংখ্যাগরিষ্ঠ দল আওয়ামী লীগ সেগুলো বাতিল করে। এর মধ্যে দলে কমপক্ষে তিন বছর সদস্য না থাকলে প্রার্থী হওয়া যাবে না</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">—</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">এই বিধানটিও ছিল। সংস্কার কমিশন এই বিধান আবার ফিরিয়ে আনার সুপারিশ দিতে যাচ্ছে। </span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">আওয়ামী লীগ সরকার আমলের নির্বাচন কমিশন ঋণ ও বিল খেলাপিদের জন্য নির্বাচনে অংশগ্রহণের পথ কিছুটা সহজ করেছিল। সাত দিন আগের পরিবর্তে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার দিন খেলাপি ঋণ পুনঃ তফসিল ও বিল পরিশোধের বিধান করেছিল। সংস্কার কমিশন সেই সুযোগ বাতিল করে আগের বিধানে ফেরার সুপারিশ করতে যাচ্ছে।</span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"> </p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><strong><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">সশস্ত্র বাহিনী যে ক্ষমতা ফিরে পাবে</span></span></strong></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">দেশের প্রতিটি জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সশস্ত্র বাহিনী নিয়োগ করা হলেও ২০০১ সালের অষ্টম সংসদ নির্বাচনের আগে আরপিও সংশোধন করে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সংজ্ঞায় প্রতিরক্ষা কর্মবিভাগগুলো বা সশস্ত্র বাহিনীকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। আরপিওর ৮৭ অনুচ্ছেদে এই বিধান যুক্ত করা হয় যে ১৮৯৮ সালের ফৌজদারি কার্যবিধি বা আপাতত বলবৎ অন্য কোনো আইনে যা-ই থাকুক না কেন, নির্বাচনসংক্রান্ত দায়িত্ব পালনকালে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কোনো সদস্য একজন পুলিশ কর্মকর্তা না হয়েও নির্বাচনী অপরাধের জন্য কাউকে বিনা পরোয়ানায় গ্রেপ্তার করতে পারবেন।</span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">এর আগের নির্বাচনগুলোতে সেনাবাহিনী নিয়োগ করা হতো ১৮৯৮ সালের প্রণীত ফৌজদারি কর্যবিধির ১২৯ থেকে ১৩১ ধারায় এবং সেনা বিধিমালা </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">ইন এইড টু সিভিল পাওয়ার</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">-এর আওতায়।</span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">আওয়ামী লীগ ও তাদের সমমনা দলগুলো ২০০১ সালের নির্বাচনে সেনাবাহিনীর ভূমিকায় সন্তুষ্ট ছিল না। নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে সরকার গঠিত হলে ওই সংসদে আরপিওতে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সংজ্ঞা থেকে প্রতিরক্ষা কর্মবিভাগগুলো বাদ দেওয়া হয়। ফলে বিদ্যমান বিধান অনুসারে পুলিশ, র‌্যাব, বিজিবি, আনসার ও কোস্ট গার্ড সদস্যরা নির্বাচনী অপরাধের জন্য কাউকে বিনা পরোয়ানায় গ্রেপ্তারের ক্ষমতা নিয়ে নির্বাচনে দায়িত্ব পালন করতে পারলেও সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরা পারেন না। আওয়ামী লীগ ও তাদের সহযোগীদের বাইরের দলগুলো এবং নির্বাচন বিশেষজ্ঞরা সশস্ত্র বাহিনীকে এই ক্ষমতা ফিরিয়ে দেওয়ার পক্ষে দীর্ঘদিন ধরে দাবি জানিয়ে আসছেন। সে কারণে নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশন আরপিওর আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সংজ্ঞায় আবারও প্রতিরক্ষা কর্মবিভাগগুলোকে সংযুক্ত করার সুপারিশ দিতে যাচ্ছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র নিশ্চিত করেছে। </span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"> </p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><strong><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">ব্যাপক আলোচিত ৯১ অনুচ্ছেদ সংশোধন হবে</span></span></strong></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে কাজী হাবিবুল আউয়ালের নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশন আরপিওর ৯১(এ) অনুচ্ছেদ সংশোধন করে </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">ইলেকশন</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"> শব্দটি </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">পোলিং</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"> শব্দ দিয়ে প্রতিস্থাপন করে। এর ফলে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর থেকে ভোট শেষ হওয়া পর্যন্ত গুরুতর অনিয়মের ক্ষেত্রে কোনো আসনের নির্বাচন বন্ধ করার ক্ষমতা হারায় নির্বাচন কমিশন। এই সংশোধনের ফলে কেবল ভোট চলাকালে কিছু ভোটকেন্দ্রের ভোট স্থগিত বা বাতিল করার মধ্যে নির্বাচন কমিশনের ক্ষমতা সীমিত হয়ে পাড়ে। সংসদে এসংক্রান্ত বিল উত্থাপনের পর নির্বাচন বিশেষজ্ঞরা আপত্তি জানালেও তা আমলে নেওয়া হয়নি। সংস্কার কমিশন এই অনুচ্ছেদ আবার আগের অবস্থায় ফিরিয়ে এনে নির্বাচন কমিশনের ক্ষমতা বাড়ানের পক্ষে সুপারিশ করতে যাচ্ছে। </span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"> </p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><strong><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">সহজে পোস্টাল ব্যালটে ভোট</span></span></strong></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">সংস্কার কমিশন পোস্টাল ব্যালটে ভোট দেওয়ার বিষয়টি সহজ করার সুপারিশ করতে যাচ্ছে। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর সদস্যসহ নির্বাচনের কাজে নিয়োজিতরা, প্রবাসীরা, দেশে নির্বাচনী এলাকার বাইরে যাঁদের কর্মস্থল, বৃদ্ধ ও শারীরিক প্রতিবন্ধীরাও যাতে পোস্টাল ব্যালটে ভোট দিতে পারেন সে বিষয়ে সুপারিশ করতে যাচ্ছে।</span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"> </p>