দেশের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের প্রভাবে মেগাপ্রকল্পসহ অধিকাংশ অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের নির্মাণকাজ স্থবির হয়ে পড়েছে। একই সঙ্গে বেসরকারি ছোট-বড় আবাসনশিল্পেও দেখা দিয়েছে স্থবিরতা। এতে নির্মাণকাজের প্রধান উপকরণ সিমেন্ট বিক্রিতে নেমেছে ধস। দোকানগুলোয় গত পাঁচ মাস আগের তুলনায় ৫০ থেকে ৬০ শতাংশ পর্যন্ত সিমেন্ট বিক্রি কমেছে।
আশঙ্কাজনক হারে বিক্রি কমায় উদ্বিগ্ন সিমেন্টশিল্পের উদ্যোক্তারা
সজীব আহমেদ

খাতসংশ্লিষ্টরা বলছেন, গত ৫ আগস্ট সরকার পরিবর্তনের পর মেগাপ্রকল্পসহ রাষ্ট্রীয়ভাবে সব ধরনের অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের নির্মাণকাজ স্থবির হয়ে পড়েছে। নির্মাণকাজের সঙ্গে জড়িত ঠিকাদারদের অনেকে গাঢাকা দিয়েছেন। আবার স্থানীয় সরকারের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের বাদ দেওয়ায় সিটি করপোরেশন থেকে শুরু করে উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ের উন্নয়নকাজেও স্থবিরতা দেখা দিয়েছে।
এ ছাড়া আওয়ামী লীগঘনিষ্ঠ অনেকে আধিপত্য হারিয়ে নির্মাণাধীন কিংবা নির্মাণ পরিকল্পনায় থাকা ব্যক্তিগত-বাণিজ্যিক অবকাঠামোর কার্যক্রম বন্ধ রেখেছেন। অন্যদিকে দেশের চলমান পরিস্থিতি ও ড্যাপের কারণে আবাসন খাতে বেচা-বিক্রি এবং নতুন প্রকল্প কমে গেছে। ফলে রডের পাশাপাশি সিমেন্টের বিক্রিও ব্যাপকভাবে কমেছে। বর্তমান পরিস্থিতিতে এ দুই খাতের অধিকাংশ উদ্যোক্তা অনিশ্চয়তায় ভুগছেন।
এই খাতের উদ্যোক্তারা বলছেন, দেশে সিমেন্ট উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান রয়েছে ৪০টি (একই গ্রুপের একাধিক প্রতিষ্ঠানসহ)। এর মধ্যে বর্তমানে উৎপাদনে রয়েছে ৩০টি কম্পানি। প্রতিবছর প্রায় চার কোটি টন সিমেন্ট চাহিদার বিপরীতে প্রায় সাত কোটি ৮০ লাখ টন উৎপাদনের সক্ষমতা রয়েছে এই কম্পানিগুলোর। রাজনৈতিক সংকটের দ্রুত সমাধান না হলে এবং সরকারি অর্থায়নে পরিচালিত প্রকল্পগুলো পুনরায় চালু না হলে সিমেন্ট খাত দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতির মুখে পড়তে পারে বলে জানিয়েছেন উদ্যোক্তারা।
রাজধানীর তেজগাঁও, মহাখালী, কুড়িলসহ বিভিন্ন এলাকার সিমেন্টের দোকান ঘুরে দেখা গেছে, শাহ স্পেশাল বস্তা ৫০০ থেকে ৫১০ টাকা, শাহ পপুলার সিমেন্ট ৪৯০ থেকে ৫০০ টাকা, বসুন্ধরা সিমেন্ট ৫০০ থেকে ৫১০ টাকা, মেঘনা সিম ডিলাক্স সিমেন্ট ৫০০ টাকা, ডালাই স্পেশাল ৫১০ থেকে ৫২০ টাকা, ক্রাউন সিমেন্ট ৫১৫ টাকা, ইনসি সিমেন্ট ৫১০ থেকে ৫১৫ টাকা ও হোলসিম সিমেন্ট ৫৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
রাজধানীর তেজগাঁওয়ের পূর্ব তেজতুরী বাজারে রড-সিমেন্টের পুরনো ব্যবসায়ী মেসার্স আল-তাবুক এজেন্সির স্বত্বাধিকারী মোহাম্মদ ইউসুফ সোহাগ কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর সরকারি প্রকল্পের পাশাপাশি বাণিজ্যিক ও ব্যক্তিগত অবকাঠামোগত কাজ বন্ধ থাকায় সিমেন্ট বিক্রি ৪০ থেকে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত কমে গেছে। বিক্রি কমলেও আমাদের দোকান ভাড়া ও কর্মচারীদের বেতন ঠিকই দিতে হচ্ছে। এতে আমরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি।’
রাজধানীর কুড়িল প্রগতি সরণি এলাকায় হেলমি এন্টারপ্রাইজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) তাসিন রহমান হেলমি কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘স্বাভাবিক সময়ে প্রতি মাসে সিমেন্ট বিক্রি করা যেত এক লাখ বস্তার বেশি। এখন ৫০ হাজার বস্তাও বিক্রি করা যাচ্ছে না। গত পাঁচ-ছয় মাসে আগের তুলনায় ৬০ শতাংশ পর্যন্ত সিমেন্ট বিক্রি কমেছে। অস্বাভাবিক হারে রডের সঙ্গে সিমেন্ট বিক্রি কমে যাওয়ায় আমরা খুবই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি। ফলে দোকান ভাড়া, কর্মচারীদের বেতন, অগ্রিম ট্যাক্স ও ব্যাংক লোন নিয়ে বিপাকে আছি। এভাবে চলতে থাকলে এই ব্যবসায় টিকে থাকা কঠিন হয়ে যাবে।’
জানতে চাইলে বাংলাদেশ সিমেন্ট ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিসিএমএ) নির্বাহী পরিচালক শংকর কুমার রায় কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘এবার সিমেন্ট খাতে ১০ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হওয়ার কথা ছিল, কিন্তু উল্টো আরো হ্রাস পেয়েছে। কম্পানিগুলো তাদের সক্ষমতার অর্ধেক সিমেন্ট উৎপাদন করছে। এই শিল্পের কাঁচামাল শতভাগ আমদানিনির্ভর হওয়ায় ডলারের সঙ্গে টাকার বড় অবমূল্যায়নের কারণে উৎপাদন ব্যয় বেড়েছে। বর্তমানে সব মিলিয়ে এই খাতের উদ্যোক্তারা ক্ষতির মুখে।’
সম্প্রতি বাংলাদেশের সিমেন্টশিল্পের সঙ্গে সম্পর্কিত অতিরিক্ত শুল্ক ও কর হ্রাসকরণ, আমদানি ও ঋণপত্রজনিত সমস্যা সহজীকরণ এবং সুরক্ষা ও শিল্প খাতকে পুনরুজ্জীবিত করার লক্ষ্যে ব্যাংকিং-সংক্রান্ত কতিপয় নীতি প্রণয়নের জন্য অর্থ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের কাছে চিঠি দিয়েছে বিসিএমএ। অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো চিঠিতে বলা হয়েছে, সিমেন্টশিল্পের ওপর বিভিন্ন উপায়ে দীর্ঘদিন ধরে অতিরিক্ত শুল্ক ও কর ধার্য করা হচ্ছে, যা সমস্যায় নিমজ্জিত উদীয়মান এই শিল্প খাতটির সংকটকে গভীর থেকে গভীরতর করছে।
চিঠিতে আরো বলা হয়, সিমেন্টের কাঁচামাল আমদানি ও বিক্রয় পর্যায়ে বর্তমানে অগ্রিম আয়কর ২ থেকে ৫ শতাংশ হারে ধার্য করা হচ্ছে। এই অগ্রিম আয়করকে চূড়ান্ত দায় হিসেবে গণ্য করা হচ্ছে। আমরা দীর্ঘদিন ধরে দাবি করে আসছি, আমদানি ও বিক্রয় পর্যায়ে অগ্রিম আয়কর প্রাথমিকভাবে সর্বোচ্চ দশমিক ৫০ শতাংশ ধার্য করা যেতে পারে। কিন্তু অগ্রিম আয়করকে কোনোক্রমেই চূড়ান্ত দায় হিসেবে বিবেচনা করা সমীচীন হবে না।
সিমেন্ট উৎপাদনের প্রধান কাঁচামাল ক্লিংকার, স্ল্যাগ, জিপসাম ও ফ্লাই অ্যাশ প্রায় শতভাগ আমদানি করতে হয়। কিন্তু এই কাঁচামালগুলো অনেক দিন ধরে আমদানি মূল্যের চেয়ে বেশি মূল্য ধরে শুল্কায়ন করা হচ্ছে। ক্লিংকার আমদানিতে শুল্কায়ন মূল্য কমিয়ে প্রতি টন ৫০ ডলার, স্ল্যাগ ২৪ ডলার, জিপসাম ৩০ ডলার এবং ফ্লাই অ্যাশের শুল্কায়ন মূল্য ২৫ ডলার নির্ধারণের প্রস্তাব রেখেছে বিসিএমএ। এ ছাড়া ক্লিংকারের ওপর কাস্টম ডিউটি প্রতি টনে ৭০০ টাকার স্থলে ২০০ টাকা ধার্য করার জন্যও প্রস্তাব দেওয়া হয়।
বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের কাছে পাঠানো চিঠিতে সিমেন্টশিল্পের সংকট নিরসনে তিনটি প্রস্তাব দেয় বিসিএমএ। প্রস্তাবগুলো হলো—১) মূলধন এবং বৈদেশিক মুদ্রা বিনিময়জনিত ঘাটতি পূরণের লক্ষ্যে দীর্ঘমেয়াদি ঋণ সুবিধা প্রদান। সিমেন্টশিল্পের জন্য মূলধন এবং মুদ্রা বিনিময়জনিত ঘাটতি পূরণের লক্ষ্যে স্বল্পতম সুদে দুই বছরের গ্রেস পিরিয়ডসহ ১৬ বছরের দীর্ঘমেয়াদি ঋণের ব্যবস্থা করা। উক্ত ঋণ একটি আলাদা ব্লক অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে পরিচালনাসহ ইএমআই ভিত্তিতে পরিশোধ করার সুযোগ প্রদান করা। ২) এরই মধ্যে পুনঃ তফসিলকৃত ঋণ বিলম্বিত ঋণ পরিশোধের পুনঃ তফসিলকরণ (রিশিডিউলিং অফ অলরেজড রিশিডিউল লোন অ্যান্ড অভারডিউ লোন রিলিফ) : এরই মধ্যে পুনঃ তফসিলকৃত ঋণ এবং বিলম্বিত ঋণ পরিশোধের ক্ষেত্রে দুই বছরের গ্রেস পিরিয়ডসহ ১৬ বছরের মধ্যে পরিশোধের সুযোগ প্রদান করা।
এ ক্ষেত্রে ঋণের পরিমাণ নির্বিশেষে ডাউন পেমেন্টের শর্ত বাদ দেওয়া এবং এ ধরনের ঋণকে কোনো প্রকার শ্রেণিবদ্ধ না করা আবশ্যক। ৩) স্বল্পতম সুদে চলতি মূলধনের সুযোগ প্রদান করা (অ্যাকসেস টু লো-কস্ট ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল) : বৈদেশিক মুদ্রার বিপরীতে বাংলাদেশের মুদ্রার অবমূল্যায়নের কারণে সৃষ্ট অতিরিক্ত চলতি মূলধনের প্রয়োজনীয়তার পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে এসংক্রান্ত পুনরর্থায়ন ব্যবস্থার আওতায় নতুন তহবিল সৃষ্টি করা। চলতি মূলধনে ঋণপত্রের বিষয়টি সহজীকরণ করার লক্ষ্যে মুদ্রা বিনিময়জনিত হার এবং আমদানি দ্রব্যের পরিমাণ বিবেচনা করা।
সম্পর্কিত খবর

এখন আলোচনায় ‘এক্সিট’
কাজী হাফিজ

অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের বয়স আগামী ৮ আগস্ট এক বছর পূর্ণ হতে যাচ্ছে। গত ৩০ জানুয়ারি এই সরকারের বয়স যখন ছয় মাসের কাছাকাছি, তখন বেলজিয়ামভিত্তিক নীতি গবেষণা প্রতিষ্ঠান ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপ (আইসিজি) তাদের এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করে, ‘বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের মধুচন্দ্রিমা এখন পুরোপুরি শেষ। রাজনৈতিক দলগুলো এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ পক্ষ সংস্কার নিয়ে দর-কষাকষি এবং নির্বাচনী সুবিধার জন্য মরিয়া হয়ে ওঠায় এ বছর রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জ বাড়তে পারে।’ তবে স্বদেশি বিশেষজ্ঞরা কেবল রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জ দেখছেন না, অর্থনৈতিক, আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতিও এই সরকারের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ বলে মনে করছেন।
গতকাল বুধবার রাজধানীর একটি হোটেলে ‘ডেমোক্রেসি ডায়াস বাংলাদেশ’-এর এক সেমিনারে এ মন্তব্য করেন সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মাননীয় ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ড. শাহদীন মালিকও মনে করেন, অন্তর্বর্তী সরকারের এখন এই বাস্তবতা মেনে নেওয়ার সময় এসেছে যে ভালো হোক, মন্দ হোক দেশটাকে রাজনীতিবিদদেরই চালাতে হবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. সাব্বীর আহমেদেরও বক্তব্য, নির্বাচন বিলম্বিত করে এই সরকারের মেয়াদ দীর্ঘায়িত করার আর সুযোগ নেই। সে কারণে নিজেদের বিদায় প্রক্রিয়াটি নিয়ে এই সরকারের চিন্তা-ভাবনার সময় এখনই।
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনও দ্রুত জুলাই সনদ প্রস্তুতের লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে।
সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে ১৮ মাসের যে সময়সীমার কথা বলা হয়েছিল, সে সময়ও শেষ হওয়ার পথে। সেনাবাহিনী মনে করে, রাজনৈতিক সরকারের কাছে দ্রুত ক্ষমতা হস্তান্তর প্রয়োজন। সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামানের বিভিন্ন বক্তব্যে এ বিষয়টি উঠে এসেছে। তিনি মনে করেন, দীর্ঘ সময় ধরে সেনা সদস্যরা দেশের শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষায় মোতায়েন রয়েছেন, যা সার্বিকভাবে দেশের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাপনাকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে।
সম্প্রতি বিভিন্ন সভা-সমাবেশ ও সেমিনারে বিশিষ্টজন ও রাজনৈতিক নেতাদের বক্তব্যে সরকারের সমালোচনায় আর রাখ-ঢাক নেই। বিশেষ করে গত প্রায় এক বছরে অন্তর্বর্তী সরকারের কাজের মূল্যায়ন এবং দেশের বর্তমান পরিস্থিতি বিশ্লেষণে বলা হচ্ছে, অনির্বাচিত সরকারের রাজনৈতিক অনিশ্চয়তার কারণে দেশের সামগ্রিক বিনিয়োগ পরিবেশ ব্যাপকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। এর সঙ্গে আরো প্রতিবন্ধকতা তৈরি করেছে উচ্চ মূল্যস্ফীতি, জ্বালানি সংকট, আমদানি জটিলতা এবং অর্থনৈতিক নীতির অনিশ্চয়তা। ফলে সরকারি-বেসরকারি খাত নানা উদ্যোগ গ্রহণ করলেও কাঙ্ক্ষিত বিনিয়োগ প্রবাহ এখনো নিশ্চিত করতে পারেনি। সরকারি পরিসংখ্যানে বিনিয়োগ বৃদ্ধির দাবি করা হলেও বাস্তবে মাঠ পর্যায়ে সেই প্রবাহে রয়েছে বড় ধরনের স্থবিরতা। নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত একটি জবাবদিহিমূলক ও স্থিতিশীল সরকার ছাড়া দেশে টেকসই বিনিয়োগ সম্ভব নয় এমন মত দিচ্ছেন দেশের খ্যাতনামা রাজনীতিবিদ, অর্থনীতিবিদ ও শিল্পোদ্যোক্তারা। তাঁদের মতে, বর্তমান পরিস্থিতিতে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফিরিয়ে আনতে সর্বাগ্রে প্রয়োজন একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন। পাশাপাশি দরকার স্বচ্ছ ও দীর্ঘমেয়াদি অর্থনৈতিক নীতি, নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ-গ্যাস সরবরাহ এবং একটি প্রকৃত অর্থে উদ্যোক্তাবান্ধব পরিবেশ।
গতকালের ওই সেমিনারে দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য আরো বলেন, ‘বর্তমান পরিস্থিতিতে অন্তর্বর্তী সরকার যত দিন ক্ষমতায় থাকবে, সংকট ততই গভীর হবে।’ ক্ষমতা হস্তান্তর বিষয়ে দেবপ্রিয় বলেন, ‘যখন কোনো রাজনৈতিক শক্তি সুষ্ঠুভাবে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে ব্যর্থ হয়, তখনই রাষ্ট্রব্যবস্থায় চরম দুর্বলতা দেখা দেয়। তখনই জরুরি হস্তক্ষেপের প্রয়োজন দেখা দেয়, যা কখনো কখনো অবাঞ্ছিত পরিস্থিতির জন্ম দিতে পারে।’
তিনি আরো বলেন, ‘অন্তর্বর্তী সরকারের পদক্ষেপকে পরবর্তী সরকার কী পরিমাণ বৈধতা দেবে, তা এখনই চিন্তা করতে হবে। বিশেষ করে যেসব সংস্কারকাজ হাতে নেওয়া হয়েছে, সেগুলোর ব্যাপারে পরিপূর্ণ স্বচ্ছতা প্রয়োজন। সংস্কার একটি চলমান প্রক্রিয়া। প্রয়োজনের অতিরিক্ত কিছু নয়, আবার প্রয়োজনের কমও নয়—এমন ভারসাম্যপূর্ণ সংস্কারনীতিই গ্রহণযোগ্য। নইলে আমরা আবারও অসংস্কার প্রক্রিয়ায় ফিরে যাব।’
সেমিনারে ডেমোক্রেসি ডায়াস বাংলাদেশের চেয়ারম্যান ড. আবদুল্লাহ আল মামুন ২৬টি দেশে গঠিত অন্তর্বর্তী সরকারের কার্যকাল, সফলতা ও ব্যর্থতা নিয়ে একটি গবেষণার বিস্তারিত তুলে ধরেন।
গবেষণায় দেখা যায়, ২৬টি দেশের মধ্যে ১৬টি দেশেই খুব স্বল্প সময়ের মধ্যে নির্বাচন আয়োজন করা হয়েছে। এতে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনা এবং দ্রুত সংস্কার কার্যকর করা সম্ভব হয়েছে।
সেমিনারে আলোচকরা বলেন, বাংলাদেশের বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারকে প্রয়োজনের তুলনায় বেশি সময় দেওয়া হয়েছে। তা সত্ত্বেও সরকার জনগণের প্রত্যাশা পূরণে ব্যর্থ হয়েছে। সরকারের সংস্কার কার্যক্রমও কার্যত সময়ক্ষেপণ ছাড়া কিছু নয়।
গবেষণার একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক ছিল বাংলাদেশে সংখ্যানুপাতিক নির্বাচন পদ্ধতি (পিআর) কতটা বাস্তবসম্মত। এ নিয়ে বক্তারা বলেন, বাংলাদেশের সাধারণ মানুষ এখনো এই পদ্ধতির সঙ্গে পরিচিত নয়। যাঁরা এই পদ্ধতির দাবি তুলছেন, তাঁরা মূলত দলের স্বার্থে কথা বলছেন, দেশের স্বার্থে নয়। অনেকেই মনে করেন, সরকারকে সময় বাড়ানোর সুযোগ দিতেই এই দাবি তোলা হচ্ছে।
এ ছাড়া বক্তারা বলেন, বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার দীর্ঘ সময় ধরে ক্ষমতায় থাকায় দেশের অর্থনীতি, আইন-শৃঙ্খলা ও সামগ্রিক পরিস্থিতি দিন দিন ভঙ্গুর হয়ে পড়ছে। তাই দ্রুত নির্বাচনের মধ্য দিয়েই এ সংকটের সমাধান হওয়া উচিত।
গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটির সদস্য অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ ওই সেমিনারে বলেন, এই সরকারের অনেক সংস্কার কমিশন হয়েছে। সেটা তাদের উল্লেখযোগ্য কাজ। যদিও গঠনের মধ্যে সমস্যা ছিল। কিন্তু সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনগুলোর মধ্যে শুধু সংবিধান ছাড়া আর কোনো প্রতিবেদন নিয়ে কোনো মনোযোগ নেই। সংবিধান সংস্কার কমিশন নিয়ে একমাত্র আলোচনা। সেখানে সরকারের ঘনিষ্ঠ লোকজন, যাঁদের একমাত্র আগ্রহ সংবিধানের মধ্যে এমন পরিবর্তন, যাতে তাঁদের রাজনৈতিক কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়। এ ছাড়া অন্য কোনো দিকে অগ্রগতি নেই।
বিশেষজ্ঞরা আরো যা বলছেন : সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ড. শাহদীন মালিক গতকাল কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘গত বছর আগস্টে যখন স্বৈরশাসক পালিয়ে যায়, তখন আমরা সবাই বিরাট প্রত্যাশা নিয়ে এগোতে চেয়েছিলাম। ভেবেছিলাম, কালো দিনগুলো চলে গেছে, এখন নতুন দিন এসেছে। অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসকে তো আমরা দেশের সবাই অত্যন্ত শ্রদ্ধার চোখে দেখি। তাঁর নেতৃত্বের সরকারের কাছে আমাদের অনেক প্রত্যাশা ছিল। কিন্তু বছরপূর্তিতে গিয়ে দেখা যাচ্ছে, সে প্রত্যাশার খুব অল্প অংশই বাস্তবায়িত হয়েছে। জনগণের উন্নতি হয় সে ধরনের কোনো পদক্ষেপই চোখে পড়ছে না। যা চোখে পড়ছে তা হলো, দীর্ঘ সময় ধরে সংস্কারের সংলাপ। সে সংস্কারও বাস্তবায়িত হচ্ছে না। এ অবস্থায় আমরা আশাহত হয়ে গেছি। এখন এটাও স্পষ্ট, প্রথম দিকে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি যে সমর্থন ছিল, সেটিও আস্তে আস্তে কমে যাচ্ছে। অতএব, এখন যত তাড়াতাড়ি সম্ভব নির্বাচন না দিয়ে এই সরকারের আর কোনো গত্যন্তর নেই। নির্বাচন যত দেরি হবে, দেশের সার্বিক পরিস্থিতির ততই অবনতি হবে। এখন এই বাস্তবতা মেনে নেওয়ার সময় এসেছে, ভালো হোক, মন্দ হোক দেশটাকে রাজনীতিবিদদেরই চালাতে হবে। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব নির্বাচন দিয়ে এই সরকারকে বিদায় নিতে হবে। আর নির্বাচন হতে হবে অংশগ্রহণমূলক, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য।’
বিষয়টি সম্পর্কে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. সাব্বীর আহমেদ কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা ফিরে আনার বিষয়ে সব রাজনৈতিক দল একমত। তবে এবারের নির্বাচন অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনেই হতে পারে। নির্বাচন হওয়ার আগে এই সরকারের যেসব উদ্যোগ, অর্জন, সুবিধা গ্রহণ সেগুলোর সুরক্ষার ব্যবস্থা হওয়া দরকার। এই সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় যে দল গঠন হয়েছে বলে শোনা যায়, সে দলটির সেটলমেন্টও দরকার। পতিত স্বৈরাচার যাতে না ফিরতে পারে তারও ব্যবস্থা করে যাওয়া প্রয়োজন। এসবের ব্যবস্থা দ্রুত হওয়া দরকার। কারণ, নির্বাচন বিলম্বিত করে এই সরকারের মেয়াদ দীর্ঘায়িত করলে জটিল পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে।’

ফিরে দেখা ৩১ জুলাই ’২৪
মার্চ ফর জাস্টিসে পুলিশের বাধা, ১৪ দিন পর ফেসবুক চালু
নিজস্ব প্রতিবেদক

কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে সংঘর্ষের ঘটনায় সারা দেশে গ্রেপ্তার, হামলা-মামলা ও হত্যার প্রতিবাদ এবং ৯ দফা দাবি আদায়ে গত বছরের এই দিনে (৩১ জুলাই) ঢাকা, চট্টগ্রাম, খুলনা, বরিশাল, রাজশাহী, সিলেটসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ‘মার্চ ফর জাস্টিস’ কর্মসূচি পালন করে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা।
বিভিন্ন স্থানে পুলিশের বাধার মুখে পড়ে আন্দোলনকারীরা। টিয়ার শেল, সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ এবং লাঠিপেটার ঘটনা ঘটে। বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা (বাসস) বলেছে, এদিন দেশের বিভিন্ন স্থানে সাংবাদিকসহ আহত হন অন্তত ৯০ জন।
১৪ দিন বন্ধ থাকার পর ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ ও টিকটক চালু করা হয়। ইন্টারনেট ও ফেসবুক বন্ধ থাকায় দেশের অনলাইনভিত্তিক ব্যবসা খাতে প্রায় এক হাজার ৭৫০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে জানায় ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ই-ক্যাব)।
দুপুরে আন্দোলনকারীরা মিছিল নিয়ে রাজধানীর বিভিন্ন জায়গা থেকে হাইকোর্ট এলাকায় জড়ো হতে শুরু করে।
দুপুরে ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস’ স্লোগান দিতে দিতে ব্যারিকেড ভেঙে সুপ্রিম কোর্ট আঙিনার ভেতরে ঢুকে পড়ে আন্দোলনকারীরা।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষকরাও মার্চ ফর জাস্টিস কর্মসূচিতে অংশ নেন।
এদিন ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) অতিরিক্ত কমিশনার হারুন অর রশীদকে দায়িত্ব থেকে বদলিসহ ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) ছয় শীর্ষ কর্মকর্তাকে রদবদল করা হয়।
সিলেটে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে জড়ো হয়ে আন্দোলনকারীরা দুপুর ১২টার দিকে শহরের উদ্দেশে পদযাত্রা শুরু করে।
বরিশাল নগরের সদর রোডের অশ্বিনীকুমার হল ও ফজলুল হক এভিনিউ এলাকায় আন্দোলনকারীদের লাঠিপেটা করে ছত্রভঙ্গ করে পুলিশ। এ সময় সাংবাদিকদেরও মারধর করা হয়। এতে চার সাংবাদিকসহ অন্তত ১৫ জন আহত হয়। ২০ জনকে আটক করে পুলিশ।
রাজশাহী নগরীর মহিষবাথান এলাকায় পুলিশের গাড়িতে হামলার ঘটনা ঘটে। পরে আশপাশে অভিযান চালিয়ে পাঁচজনকে আটক করে পুলিশ।
কুষ্টিয়ায় ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ১১ শিক্ষার্থীসহ ১৪ জনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। যশোরে পুলিশ সুপারের কার্যালয়ের সামনে আন্দোলনকারীদের লাঠিপেটা করে পুলিশ। সেখান থেকে অন্তত ছয় শিক্ষার্থীকে আটক করা হয়।
এদিকে কোটা সংস্কার আন্দোলনে ভর করে দেশব্যাপী বিএনপি-জামায়াতের সহিংসতার প্রতিবাদে চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, ফরিদপুর, কুমিল্লাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে এদিন সমাবেশ করে আওয়ামী লীগ।
কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে সৃষ্ট পরিস্থিতিতে নিরাপত্তা বাহিনীর মাত্রাতিরিক্ত বল প্রয়োগের নিন্দা জানায় ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)। বাংলাদেশের সঙ্গে নতুন অংশীদারি ও সহযোগিতা চুক্তি নিয়ে আলোচনা স্থগিত করে ইইউ।

দুর্নীতি ও জাল রায় তৈরির অভিযোগ
সাবেক প্রধান বিচারপতি খায়রুল হক সাত দিনের রিমান্ডে
নিজস্ব প্রতিবেদক

সাবেক প্রধান বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হককে জিজ্ঞাসাবাদে সাত দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। গতকাল বুধবার ঢাকার অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. ছানাউল্লাহ রিমান্ডের এ আদেশ দেন। এর আগে বিচারক হিসেবে দুর্নীতি ও বিদ্বেষমূলকভাবে বেআইনি রায় প্রদানসহ জাল রায় তৈরির অভিযোগে রাজধানীর শাহবাগ থানায় করা মামলায় তাঁকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়।
রিমান্ড শুনানিতে তাঁর বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের বিষয়ে বক্তব্য দেওয়া হয়।
এদিন কারাগার থেকে খায়রুল হককে আদালতে হাজির করা হয়। এরপর তাঁর উপস্থিতিতে সকাল ১০টা ১ মিনিটে শুনানি শুরু হয়। শুনানি শেষে আদালত তাঁকে গ্রেপ্তার দেখান।
শুনানিতে প্রসিকিউশন বিভাগের পরিদর্শক মো. আসাদুজ্জামান বলেন, আসামি খায়রুল হক অবসরে যাওয়ার পর ফেব্রিকেটেড (বানোয়াট) রায় প্রদান করেছেন। তখন কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে থাকা খায়রুল হক দুইবার বলেন, ‘নট কারেক্ট (সঠিক নয়)।’
এরপর রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী আজিজুল হক দিদার ও মুহাম্মদ শামসুদ্দোহা সুমন রিমান্ডের পক্ষে শুনানি করেন।
আইনজীবী শামছুদ্দোহা সুমন বলেন, তিনি শেখ মুজিবের চেয়েও বড় আওয়ামী লীগার ছিলেন। তিনি শেখ মুজিবের চেয়েও বেশি আওয়ামী লীগের জন্য করেছেন।
শুনানি শেষে আদালত তাঁর সাত দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। আসামিপক্ষে কোনো আইনজীবী ছিলেন না। শুনানি শেষে ১০টা ১৬ মিনিটে তাঁকে আদালত থেকে বের করা হয়। এরপর পুলিশ পাহারায় তাঁকে আদালতের হাজতখানায় নেওয়া হয়।
গত মঙ্গলবার তাঁকে গ্রেপ্তার দেখানোর আবেদন করা হয়। আদালত খায়রুল হকের উপস্থিতিতে শুনানির জন্য ৩০ জুলাই তারিখ ধার্য করেন। গত ২৭ আগস্ট রাতে শাহবাগ থানায় মামলাটি করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মুহা. মুজাহিদুল ইসলাম।
গত ২৪ জুলাই সকালে ধানমণ্ডির বাসা থেকে খায়রুল হককে গ্রেপ্তার করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। জুলাই আন্দোলনের সময় ঢাকার যাত্রাবাড়ীতে যুবদলকর্মী আবদুল কাইয়ুম আহাদ হত্যা মামলায় ওই দিন রাতে তাঁকে কারাগারে পাঠানো হয়। ২৯ জুলাই তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিল করে বেআইনি রায় দেওয়া ও জাল রায় তৈরির অভিযোগে নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা থানায় করা মামলায় তাঁকে ভার্চুয়ালি গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।

প্রধান বিচারপতির মন্তব্য
তথ্য যাচাইয়ে সাংবাদিকদের আরো সতর্ক হতে হবে
নিজস্ব প্রতিবেদক

আইন, বিচার ও সংবিধান নিয়ে সংবাদ-প্রতিবেদন করার ক্ষেত্রে বস্তুনিষ্ঠতা বজায় রাখার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ। তিনি বলেছেন, ‘আইন, বিচার, সংবিধান বা বিচারাধীন বিষয় নিয়ে রিপোর্ট করা জটিল এবং কঠিন বিষয়। এসব বিষয়ে সংবাদ-প্রতিবেদন তৈরির আগে তথ্য যাচাইয়ে সাংবাদিকদের আরো মনোযোগী ও সতর্ক হতে হবে।’
গতকাল বুধবার সুপ্রিম কোর্ট রিপোর্টার্স ফোরামের (এসআরএফ) বার্ষিক প্রকাশনা ‘জাগরণ’-এর মোড়ক উন্মোচনের সময় এ কথা বলেন বিচার বিভাগের প্রধান।
মোড়ক উন্মোচনের সময় প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘বিচার বিভাগের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর গত প্রায় এক বছরে দেশের সংবাদমাধ্যমগুলোতে বিচার বিভাগ নিয়ে যত খবর-প্রতিবেদন প্রচার-প্রকাশ হয়েছে, সেসব খবর-প্রতিবেদনে বস্তুনিষ্ঠতার কোনো ঘাটতি বা বিচ্যুতি আমার চোখে পড়েনি।
সুপ্রিম কোর্ট বিটের সাংবাদিকদের প্রশংসা করে প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘প্রায় প্রতিদিনই আমি খেয়াল করি সাংবাদিকরা এজলাসে উপস্থিত থাকছেন। শুনানি, আদেশ বা রায় ঘোষণার সময় তাঁরা নোট নিচ্ছেন।
বিচার বিভাগ সংস্কারে ঘোষিত রোডম্যাপ ও প্রধান বিচারপতির বিভিন্ন পদক্ষেপ তুলে ধরে এসআরএফের সভাপতি ও চ্যানেল টোয়েন্টিফোরের জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক মাসউদুর রহমান বলেন, ‘স্বাধীন বিচার বিভাগ প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে গত এক বছরে যেসব পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, তার বেশির ভাগই বাস্তবায়ন হয়েছে। আমাদের প্রত্যাশা, প্রধান বিচারপতির ঘোষণা অনুযায়ী বিচার বিভাগের জন্য একটি স্বতন্ত্র সচিবালয়ও প্রতিষ্ঠা করা হবে।’
এর আগে এসআরএফের নতুন কমিটির পক্ষ থেকে প্রধান বিচারপতিকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানানো হয়।