চলে গেলেন কালের কণ্ঠের আলী হাবিব

  • বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যানের শোক
নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
চলে গেলেন কালের কণ্ঠের আলী হাবিব

প্রতিদিনের মতো গতকাল মঙ্গলবারও সকাল ১১টায় অফিসে ঢুকে নিজের কাজগুলো করছিলেন বিশিষ্ট সাংবাদিক ও কালের কণ্ঠের সহকারী সম্পাদক আলী হাবিব। বিকেলে নিয়মিত পাতা দেখার অংশ হিসেবে সম্পাদকীয় পাতাও তিনিই দেখে দিচ্ছিলেন। কিন্তু হঠাৎ করে অসুস্থবোধ করলে সহকর্মীরা প্রেসার পরীক্ষা করেন। এ সময় প্রেসার সঠিক না থাকায় সহকর্মীরা তাঁকে রোজা ভেঙে স্যালাইন পান করতে বলেন।

তিনি আরেকটু অপেক্ষা করে ঠিক হয় কি না দেখতে চান। কয়েক মিনিটের মধ্যেই তিনি নিজের টেবিলের ওপর মাথা রেখে হেলে পড়েন। এরপর সহকর্মীরা তাঁকে গাড়িতে তুলে নিকটস্থ এভারকেয়ার হাসপাতালে নিয়ে যান। জরুরি বিভাগের চিকিৎসকরা তাঁকে লাইফ সাপোর্টে রাখেন।
অবস্থার অবনতি হলে সেখান থেকে চিকিৎসকরা তাঁকে করোনারি কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) ভর্তি করান। পরে সন্ধ্যা ৭টা ৪৫ মিনিটে তিনি শেষনিঃশ্বাস ত্যাগ করেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। এভাবেই গতকাল কালের কণ্ঠের সম্পাদকীয় পাতায় শেষ ছোঁয়া রেখে গেলেন তিনি। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৬১ বছর।
তিনি স্ত্রী, একমাত্র ছেলেসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন। 

আলী হাবিবের মৃত্যুতে শোক জানিয়েছেন বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহান, ইস্ট ওয়েস্ট মিডিয়া গ্রুপের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক কাদের গনি চৌধুরী, কালের কণ্ঠের সম্পাদক ও জাতীয় প্রেস ক্লাবের সভাপতি হাসান হাফিজ, জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক আইয়ুব ভূঁইয়া। শোকবার্তায় তাঁরা আলী হাবিবের রুহের মাগফিরাত কামনা এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানিয়েছেন। বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ গত রাতে এক শোক বার্তায় প্রয়াত আলী হাবিবের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়েছেন। বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের নারী অধিকার আদায়ের আন্দোলনে মহিলা পরিষদের অন্যতম এক সুহূদ ছিলেন আলী হাবিব।

আলী হাবিব জাতীয় প্রেস ক্লাবের স্থায়ী সদস্য ছিলেন। তাঁর মৃত্যুর খবর শুনে সাবেক সহকর্মী ও বন্ধুদের অনেকেই কালের কণ্ঠ কার্যালয়ে ছুটে আসেন। সবার মধ্যে নেমে আসে শোকের ছায়া।

কালের কণ্ঠের আর্ট অ্যান্ড গ্রাফিকস বিভাগের সিনিয়র গ্রাফিকস ডিজাইনার মো. সাফিউল্লাহ ছোটন বলেন, ১৬ বছর ধরে আলী হাবিব ভাইয়ের সঙ্গে কাজ করছি। আজও (গতকাল) তিনি সম্পাদকীয় পাতা দেখে দিয়েছিলেন। কে জানত আজকে তিনি শেষবারের মতো পাতা দেখছেন। এখনো বিশ্বাস করতে পারছি না।

আলী হাবিবের মরদেহ গতকাল রাত সাড়ে ১০টার দিকে ইস্ট ওয়েস্ট মিডিয়া গ্রুপ লিমিটেড প্রাঙ্গণে আনা হয়। কালের কণ্ঠ সম্পাদক ও জাতীয় প্রেস ক্লাব সভাপতি কবি হাসান হাফিজ প্রয়াত আলী হাবিবের বর্ণাঢ্য কর্মজীবনের কথা স্মরণ করেন।

ইস্ট ওয়েস্ট মিডিয়া গ্রুপ লিমিটেড প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত জানাজায় অংশ নেন বসুন্ধরা গ্রুপের মিডিয়া উপদেষ্টা আবু তৈয়ব, কালের কণ্ঠ সম্পাদক ও জাতীয় প্রেস ক্লাবের সভাপতি কবি হাসান হাফিজ, বাংলাদেশ প্রতিদিনের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক আবু তাহের, নির্বাহী সম্পাদক মনজুরুল ইসলাম, জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক মোস্তফা মামুন, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক আব্দুল বায়েস, নিরাপত্তা বিশ্লেষক মেজর জেনারেল (অব.) মোহাম্মদ আলী শিকদার ছাড়াও ইস্ট ওয়েস্ট মিডিয়া গ্রুপের সব গণমাধ্যমের সাংবাদিক ও সহকর্মীরা।

আজ বুধবার বাদ জোহর ঝিনাইদহের হরিণাকুণ্ডুতে পারিবারিক কবরস্থানে তাঁর দাদার কবরের পাশে তাঁকে সমাহিত করা হবে।

আলী হাবিব ছিলেন নন্দিত ছড়াশিল্পী। কথাসাহিত্যেও তাঁর সমান বিচরণ ছিল। ছড়া দিয়ে লেখালেখি শুরু করেছিলেন তিনি। ছড়ার জগতে অভিষিক্ত হয়েছিলেন ষাটের দশকের শেষার্ধে, স্কুলজীবনেই।

ঝিনাইদহের হরিণাকুণ্ডুতে ১৯৬৪ সালের ২৩ মার্চ জন্মেছিলেন আলী হাবিব। একসময় শুধুই বক্তব্যধর্মী ছড়া লিখতেন তিনি। নিটোল শিশুতোষ ছড়ায় তাঁর স্বাচ্ছন্দ্য ছিল। ছোটদের জন্য লেখা তাঁর গল্পগুলোও সহজে ছুঁয়ে যায় সবাইকে। ছড়ার পাশাপাশি তিনি রম্য গল্পচর্চা করেছেন। নিয়মিত লিখেছেন ব্যঙ্গ কলাম। তাঁর বেশ কটি ছড়ার বই ও রম্য গল্পও প্রকাশিত হয়েছে।

আলী হাবিব দৈনিক জনকণ্ঠে সম্পাদকীয় সহকারী হিসেবে যোগদান করেন ১৯৯৩ সালে। পরে ২০০১ সাল থেকে সহকারী সম্পাদক। ফিচার বিভাগের প্রধান সমন্বয়কারী হিসেবে দায়িত্ব পালন। রঙ্গভরা বঙ্গদেশ ও ঝিলিমিলি ফিচার পাতার বিভাগীয় সম্পাদক।

আলী হাবিব কালের কণ্ঠে ২০০৯ সালের সেপ্টেম্বর থেকে কর্মরত ছিলেন। তিনি পত্রিকাটির উপসম্পাদকীয় বিভাগে সমসাময়িক বিষয় নিয়ে লেখালেখি করতেন।

চলে গেলেন কালের কণ্ঠের আলী হাবিব

ইস্ট ওয়েস্ট মিডিয়া গ্রুপ লিমিটেড প্রাঙ্গণে গতকাল রাতে আলী হাবিবের জানাজা অনুষ্ঠিত হয়।     ছবি : কালের কণ্ঠ

 

মন্তব্য

সম্পর্কিত খবর

পররাষ্ট্র উপদেষ্টা

তুলসী গ্যাবার্ডের মন্তব্য গুরুতর

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
তুলসী গ্যাবার্ডের মন্তব্য গুরুতর

বাংলাদেশে সংখ্যালঘু নির্যাতন এবং ইসলামী খেলাফতকে কেন্দ্র করে ভারতীয় সংবাদমাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দাপ্রধান তুলসী গ্যাবার্ড যে মন্তব্য করেছেন, সেটি গুরুতর বলে মন্তব্য করেছেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন। গতকাল মঙ্গলবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ মন্তব্য করেন।

তুলসী গ্যাবার্ডের মন্তব্য নিয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অবস্থান জানতে চাইলে তৌহিদ হোসেন বলেন, প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় যে প্রতিক্রিয়া (তুলসী গ্যাবার্ডের বক্তব্যের) জানিয়েছে, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অবস্থান ওটাই। তাঁর (তুলসী গ্যাবার্ড) মন্তব্য গুরুতর।

গত সোমবার নয়াদিল্লিতে এনডিটিভি ওয়ার্ল্ডকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দাপ্রধান তুলসী গ্যাবার্ড বলেন, হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান, ক্যাথলিক ও অন্যান্য ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ওপর দীর্ঘদিন ধরে চলমান দুর্ভাগ্যজনক নিপীড়ন, হত্যা ও অন্যান্য নির্যাতন যুক্তরাষ্ট্র সরকার, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ও তাঁর প্রশাসনের উদ্বেগের একটি প্রধান ক্ষেত্র। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের নতুন মন্ত্রিসভা ও বাংলাদেশ সরকারের মধ্যে আলোচনা মাত্র শুরু হচ্ছে, কিন্তু এটি উদ্বেগের মূল জায়গার একটি হয়ে রয়েছে।

এর প্রতিক্রিয়ায় গত সোমবার রাতেই বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার এক বিবৃতিতে বলেছে, আমরা গভীর উদ্বেগ ও হতাশার সঙ্গে তুলসী গ্যাবার্ডের বক্তব্য লক্ষ্য করেছি, যেখানে তিনি বাংলাদেশে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের নিপীড়ন ও হত্যা করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করে বলেছেন, ইসলামপন্থী সন্ত্রাসীদের হুমকি এবং বিভিন্ন সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর বৈশ্বিক তৎপরতা একই আদর্শ ও লক্ষ্য দ্বারা পরিচালিত হয়। সেই আদর্শ ও লক্ষ্য হলো ইসলামপন্থী খেলাফতের মাধ্যমে শাসন করা।

তুলসী গ্যাবার্ডের এ মন্তব্য বিভ্রান্তিকর এবং বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ও সুনামের জন্য ক্ষতিকর উল্লেখ করে অন্তর্বর্তী সরকার বলেছে, বাংলাদেশ ঐতিহ্যগতভাবে শান্তিপূর্ণ ও অন্তর্ভুক্তিমূলক ইসলাম চর্চার জন্য সুপরিচিত এবং চরমপন্থা ও সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে অসাধারণ অগ্রগতি অর্জন করেছে।

যুক্তরাষ্ট্রে স্থানীয় সময় সোমবার বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিয়ে করা প্রশ্নে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের নবনিযুক্ত মুখপাত্র ট্যামি ব্রুস সরাসরি কোনো জবাব দেননি। একজন সাংবাদিকের প্রশ্ন ছিল, গত নভেম্বরে যুক্তরাষ্ট্রে নির্বাচনের কয়েক দিন আগে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বাংলাদেশে হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর হামলা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলেন। এখন নতুন প্রশাসন দায়িত্ব নিয়েছে এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রায় ৬০ দিন ধরে দায়িত্ব পালন করছেন।

বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের পরিস্থিতি সম্পর্কে তাঁর মূল্যায়ন কী? তিনি এ বিষয়ে কী পদক্ষেপ নিচ্ছেন?

এ প্রশ্নের জবাবে মুখপাত্র ট্যামি ক্রুস বলেন, আপনি প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের কথা বলছেন, যিনি অন্য দেশের ঘটনাবলি কিভাবে দেখেন, তা নিয়ে কথা বলেছিলেন। তবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী রুবিও এ বিষয়ে তাঁর নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গি অনুসরণ করেন। কূটনৈতিক আলোচনা এবং সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোর মধ্যে কথোপকথনের বিষয়ে আমি কোনো পূর্বানুমান করতে চাই না। এসব বিষয়ে সরাসরি মন্তব্য করা আমার পক্ষে সম্ভব নয়।

সাংবাদিক পুনরায় একই প্রশ্ন উত্থাপন করতে চাইলে মুখপাত্র ব্রুস বলেন, সরকার থেকে সরকার পর্যায়ে কূটনৈতিক আলোচনা বা কোনো নির্দিষ্ট দেশে ঘটে যাওয়া ঘটনাবলি সম্পর্কে সরাসরি মন্তব্য করা আমার কাজ নয়।

আমি কোনো পূর্বানুমানও করতে চাই না।

 

মন্তব্য

আরসাপ্রধান আতাউল্লাহ ৫ সহযোগীসহ গ্রেপ্তার

নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি
নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি
শেয়ার
আরসাপ্রধান আতাউল্লাহ ৫ সহযোগীসহ গ্রেপ্তার
আতাউল্লাহ

মায়ানমারের রোহিঙ্গা বিদ্রোহী সংগঠন আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মির (আরসা) প্রধান আতাউল্লাহকে পাঁচ সহযোগীসহ গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব-১১। গত সোমবার রাতে নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ভূমিপল্লী আবাসন এলাকা থেকে তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়। গতকাল মঙ্গলবার তাঁদের দুই মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে তোলা হলে আদালত পাঁচ দিন করে মোট ১০ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

পুলিশ জানিয়েছে, গ্রেপ্তারকৃত ব্যক্তিদের মধ্যে আরসার প্রধান আতাউল্লাহ আবু আম্মার জুনুনীর (৪৮) বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় অসংখ্য মামলা রয়েছে।

গতকাল বিকেলে সিদ্ধিরগঞ্জ থানার পৃথক দুই মামলায় ১০ দিন করে রিমান্ড চাইলে সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. মঈনউদ্দিন কাদির পাঁচ দিন করে মোট ১০ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। আদালত পুলিশের পরিদর্শক মো. কাইউম খান এর সত্যতা নিশ্চিত করেন।

গ্রেপ্তারকৃত অন্যরা হলেন মোস্তাক আহমেদ (৬৬), সলিমুল্লাহ (২৭), মো. আসমতউল্লাহ (২৪), হাসান (৪৩) ও মনিরুজ্জামান (২৪)। এঁদের মধ্যে মনিরুজ্জামান ছাড়া সবাই রোহিঙ্গা।

মনিরুজ্জামানের বাড়ি সিদ্ধিরগঞ্জের ভূমিপল্লী আবাসন এলাকায়।

নারায়ণগঞ্জ আদালতের সরকারি কৌঁসুলি খোরশেদ আলম মোল্লা জানান, আসামিরা নারায়ণগঞ্জ, ময়মনসিংহসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় আগে থেকেই বিভিন্ন সময়ে নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড সংঘটিত করার জন্য গোপন বৈঠক করতেন। গত সোমবার র‌্যাব গোপনে খবর পায় যে আসামিরা নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড সংঘটিত করার জন্য সিদ্ধিরগঞ্জের ভূমিপল্লী আবাসন এলাকার একটি বহুতল ভবনে গোপন বৈঠক করছেন। পরে র‌্যাব-১১-এর সদস্যরা পুলিশকে সঙ্গে নিয়ে অভিযান চালিয়ে ছয়জনকে গ্রেপ্তার করেন।

নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) প্রত্যুষ কুমার মজুমদার বলেন, গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে মায়ানমারের সশস্ত্র সংগঠন আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মির (আরসা) প্রধান আতাউল্লাহ আবু আম্মার জুনুনী রয়েছেন। তাঁর বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় অসংখ্য মামলা রয়েছে।

জুনুনীর গ্রেপ্তারের খবরে রোহিঙ্গারা খুশি : এদিকে বিশেষ প্রতিনিধি, কক্সবাজার জানান, আতাউল্লাহ আবু জুনুনীর গ্রেপ্তারের খবরে ক্যাম্পগুলোর সাধারণ রোহিঙ্গারা ব্যাপক খুশি। প্রতিনিয়ত আরসা সন্ত্রাসীদের হাতে হত্যার শিকার হওয়ার আতঙ্কে থাকা রোহিঙ্গাদের মধ্যে স্বস্তি ফিরেছে। অন্যদিকে কমান্ডারের গ্রেপ্তারে আরসা সন্ত্রাসীরা হতবাক হয়ে পড়েছে।

ক্যাম্পে এত দিন জুনুনীর শক্তি নিয়ে খুনখারাবিতে লিপ্ত আরসা সন্ত্রাসীদের অনেকেই গাঢাকা দিতেও শুরু করেছে।

আরসা কমান্ডার জুনুনীর গ্রেপ্তারের খবরে রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোর সাধারণ রোহিঙ্গাদের মধ্যে রীতিমতো আনন্দের বার্তা ছড়িয়ে পড়েছে। কেননা পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত রোহিঙ্গা আতাউল্লাহ আবু জুনুনী রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোসহ মায়ানমার সীমান্তে আসার পর থেকেই রক্তাক্ত পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। ক্যাম্পের রোহিঙ্গারা জানান, জুনুনীবিহীন রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলো ছিল অত্যন্ত শান্ত। এত খুনাখুনির ঘটনাও ছিল না। জুনুনী পাকিস্তান থেকে এসে আরসার নেতৃত্ব নেওয়ার পরই রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে শুরু হয় একের পর এক খুনাখুনির ঘটনা। জুনুনীর কারণেই ক্যাম্পগুলোতে অস্ত্রধারীরা বেপরোয়া হয়ে ওঠে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন রোহিঙ্গা নেতা বলেন, জুনুনী বাংলাদেশে বিচারের সম্মুখীন হওয়া থেকে রেহাই পেতে পাকিস্তানে পালিয়ে যাচ্ছিলেন।

আরসার সদস্যদের বিরুদ্ধে কোতোয়ালি থানায় র‌্যাবের মামলা : ময়মনসিংহ নগরীতে র‌্যাবের অভিযানে আটক আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মির (আরসা) সদস্যদের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার রাতে কোতোয়ালি থানায় বিশেষ ক্ষমতা আইনে মামলাটি করেন র‌্যাব-১১-এর নায়েক সুবেদার হারুনুর রশীদ।

এর আগে রবিবার রাতে নগরীর নতুনবাজার এলাকার গার্ডেন সিটি নামের একটি বহুতল ভবনে অভিযান চালিয়ে এদের গ্রেপ্তার করা হয়। উদ্ধার করা হয় বিপুল পরিমাণ টাকা। অভিযানে চারজনকে আটক করা হলেও মামলা করা হয়েছে মোট ১০ জনের নামে। আসামিরা হলো জুনুনী, মোস্তাক আহম্মেদ , মনিরুজ্জামান, সলিমুল্লাহ, হোসনা, হাসান-১, আসমত উল্লাহ, হাসান-২, শাহীনা ও ছিনুয়ারা।

মন্তব্য

শিশু আছিয়ার বাবার চিকিৎসার ব্যবস্থা করলেন তারেক রহমান

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
শিশু আছিয়ার বাবার চিকিৎসার ব্যবস্থা করলেন তারেক রহমান
তারেক রহমান

মাগুরায় শিশু আছিয়ার মর্মান্তিক মৃত্যুর পর মানসিকভাবে ভারসাম্যহীন হয়ে পড়া বাবাকে চিকিৎসার ব্যবস্থা করলেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। বিএনপির স্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদক ডা. মো. রফিকুল ইসলামের তত্ত্বাবধানে ঢাকার একটি বিশেষায়িত হাসপাতালে আছিয়ার বাবাকে ভর্তি করা হয়েছে।

গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যায় এসব তথ্য জানিয়েছেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবদলের সদস্যসচিব রবিউল ইসলাম নয়ন।

রবিউল ইসলাম কালের কণ্ঠকে বলেন, সোমবার আমরা মাগুরায় ইফতার মাহফিলের আয়োজন করি।

তখন আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বললেন আছিয়ার বাবাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় নিয়ে যেতে। আমরা ওই দিন রাতেই মাগুরা থেকে তাঁকে ঢাকায় নিয়ে এসে একটি বিশেষায়িত হাসপাতালে ভর্তি করেছি। আছিয়াকে হারানোর কারণে তার বাবা মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছেন, এখন তাঁর চিকিৎসা চলছে।

উল্লেখ্য, গত ৫ মার্চ নিজ বোনের শ্বশুরবাড়িতে বেড়াতে গিয়ে ধর্ষণ ও শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয় আট বছরের শিশু আছিয়া।

পরদিন তার অবস্থার অবনতি হলে তাকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। অবস্থার উন্নতি না হওয়ায় পরে তাকে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে ১৩ মার্চ দুপুরে মারা যায় শিশু আছিয়া।

৫ মার্চের ঘটনার পর থেকেই আছিয়ার পরিবারের পাশে দাঁড়িয়েছেন তারেক রহমান।

আছিয়া হাসপাতালে থাকা অবস্থায় তার মায়ের সঙ্গে মোবাইল ফোনে কথা বলেন তিনি। এই পরিবারকে চিকিৎসা ও আইনি সহায়তা দেওয়ার জন্য স্বাস্থ্য ও আইনজীবী সেল গঠন করে দেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান।

 

 

মন্তব্য

যমুনা রেল সেতুর দুয়ার খুলল

টাঙ্গাইল ও ভূঞাপুর (টাঙ্গাইল) প্রতিনিধি
টাঙ্গাইল ও ভূঞাপুর (টাঙ্গাইল) প্রতিনিধি
শেয়ার
যমুনা রেল সেতুর দুয়ার খুলল
যমুনা সেতুর ওপর নির্মিত দেশের বৃহত্তম যমুনা রেল সেতু উদ্বোধন করা হয়েছে। নতুন সেতুর ওপর দিয়ে পারাপার হওয়া ট্রেন। গতকাল তোলা। ছবি : কালের কণ্ঠ

দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান ঘটিয়ে অবশেষে দেশের বৃহত্তম যমুনা রেল সেতুর উদ্বোধন করা হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার সকাল ১১টা ৪০ মিনিটে টাঙ্গাইলের ভূঞাপুর প্রান্তে ইব্রাহিমাবাদ স্টেশন থেকে স্পেশাল ট্রেন পশ্চিমে সিরাজগঞ্জের সয়দাবাদ স্টেশনে পারাপারের মধ্য দিয়ে সেতুটির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হয়। সেতুটি উদ্বোধনের ফলে রাজধানীর সঙ্গে দেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের যোগাযোগব্যবস্থায় নতুন সম্ভাবনার দ্বার খুলে গেল। ৪.৮ কিলোমিটার মূল সেতু পার হতে উদ্বোধনী ট্রেনটি ১২০ কিলোমিটার গতিতে সময় নেয় ৩ মিনিট ২১ সেকেন্ড।

গতকাল সকালে ইব্রাহিমাবাদ রেলস্টেশন চত্বরে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক মো. আফজাল হোসেনের সভপতিত্বে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন রেল মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. ফাহিমুল ইসলাম। বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশে নিযুক্ত জাপানের রাষ্ট্রদূত সাইদা সিনচি এবং জাইকার দক্ষিণ এশিয়া বিভাগের মহাপরিচালক ইতো তেরুয়াকি। পরে অতিথিরা পায়রা ও বেলুন উড়িয়ে রেল সেতুর উদ্বোধন ঘোষণা করেন।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ রেলওয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, জাইকার কর্মকর্তা এবং সিরাজগঞ্জ ও টাঙ্গাইলের জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপারসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। 

যমুনা রেল সেতু কর্তৃপক্ষ জানায়, জাপান ও বাংলাদেশ সরকারের যৌথ অর্থায়নে ৪.৮ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের সেতুর এই প্রকল্পে ব্যয় হয়েছে ১৬ হাজার ৭৮০ কোটি ৯৬ লাখ টাকা। এর মধ্যে ২৭.৬০ শতাংশ অর্থায়ন করা হয়েছে দেশীয় উৎস থেকে আর ৭২.৪০ শতাংশ ঋণ দিয়েছে জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি (জাইকা)। জাপানি পাঁচটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করে।

জাপান, ভিয়েতনাম, নেপাল, অস্ট্রেলিয়া, ফিলিপিন্স ও বাংলাদেশের সাত হাজারেরও বেশি কর্মীর টানা চার বছরের পরিশ্রমে সেতুটির নির্মাণকাজ শেষ হয়। সেতুটিতে ৫০টি পিলার এবং প্রতি দুই পিলারের মাঝে একটি করে মোট ৪৯টি স্প্যান রয়েছে। মূল সেতুর দৈর্ঘ্য ৪.৮ কিলোমিটার হলেও দুই দিকে ৭.৬৬৭ কিলোমিটার রেলওয়ে অ্যাপ্রোচ এমব্যাংকমেন্ট, লুপ, সাইডিংসহ মোট ৩০.৭৩ কিলোমিটার রেললাইন স্থাপন করা হয়েছে।

যমুনা রেল সেতু প্রকল্পের প্রধান প্রকৌশলী তানভীরুল ইসলাম জানান, সমান্তরাল ডুয়াল গেজ ডাবল ট্র্যাকের এই সেতুর প্রতিটি স্প্যানের ওপর জাপানি অত্যাধুনিক প্রযুক্তির রেললাইন বসানো হয়েছে। ফলে সেতুর ওপর দিয়ে ঘণ্টায় ১২০ কিলোমিটার বেগে ট্রেন চলাচল করতে পারবে।

তিনি আরো জানান, নির্মিত এই সেতু রাজধানীর সঙ্গে উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের রেল যোগাযোগে নতুন দিগন্তের সূচনা করবে। রাজধানীর সঙ্গে রাজশাহী, রংপুর ও খুলনা অঞ্চলের রেল যোগাযোগে বর্তমান যে বিড়ম্বনা রয়েছে সেটা আর থাকবে না। সেতুটি দিয়ে প্রতিদিন অন্তত ৮৮টি যাত্রীবাহী ও মালবাহী ট্রেন চলাচল করবে। এতে পরিবহন খরচও কমে যাবে। সেই সঙ্গে মহাসড়কের ওপর চাপও অনেকটা কমবে। উত্তরবঙ্গ থেকে বিভিন্ন পণ্য সহজে রাজধানীসহ সারা দেশে রপ্তানি করা সম্ভব হবে।

১৯৯৮ সালের ২৩ জুন যমুনা নদীর ওপর যমুনা বহুমুখী সেতু চালু হওয়ার পরই রাজধানীর সঙ্গে উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের রেল যোগাযোগ শুরু হয়। তবে ২০০৮ সালে সেতুতে ফাটল দেখা দেওয়ায় ট্রেনের গতি কমিয়ে দেওয়া হয়। এর পর থেকে সেতুর ওপর দিয়ে ঘণ্টায় ২০ কিলোমিটার গতিতে ট্রেন চলাচল করতে থাকে। গতি কমের কারণে সময়ের অপচয়ের পাশাপাশি ঘটছে শিডিউল বিপর্যয়। এসব সমস্যা সমাধানে সরকার যমুনা নদীর ওপর আলাদা রেলওয়ে সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেয়। ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে প্রকল্পের নকশা প্রণয়নসহ সেতুটির নির্মাণ ব্যয় প্রথমে ৯ হাজার ৭৩৪ কোটি সাত লাখ টাকা ধরা হয়েছিল। পরে প্রকল্পের ব্যয় বাড়িয়ে ১৬ হাজার ৭৮০ কোটি ৯৬ লাখ টাকা করা হয়। ২০২০ সালের ২৯ নভেম্বর রেলওয়ে সেতুর নির্মাণকাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়। জাপানের আইএইচআই, এসএমসিসি, ওবায়শি করপোরেশন, জেএফই ও টিওএ করপোরেশনএই পাঁচটি প্রতিষ্ঠান তিনটি প্যাকেজে সেতুর নির্মাণকাজ করে। অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্বে আসার পর সেতুটির নাম বঙ্গবন্ধু রেলওয়ে সেতু পরিবর্তন করে যমুনা রেল সেতু করা হয়।

মন্তব্য

সর্বশেষ সংবাদ