<p>সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট অনেক পণ্য আছে যেগুলোর জিআই (ভৌগোলিক নির্দেশক) ভারত নিজেদের করে নিয়েছে। এর মধ্যে সুন্দরবনের মধু, জামদানি, টাঙ্গাইলের শাড়ি অন্যতম। এভাবে বাংলাদেশের পণ্য ভারত তাদের হিসেবে তালিকাভুক্ত করার কারণ, দেশের দায়িত্বশীলদের গাফিলতি, অবহেলা, অবজ্ঞা ও আমলাতান্ত্রিক জটিলতা। গতকাল বুধবার সকালে রাজধানীর ধানমণ্ডিতে সিপিডি কার্যালয়ে ‘সুন্দরবনের মধু এখন ভারতের জিআই পণ্য’ শীর্ষক এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। সংবাদ সম্মেলনে সিপিডির সম্মাননীয় ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, ‘গত মে মাসে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বন বিভাগের পেজ থেকে একটি টুইট করা হয়। সেখানে বলা হয়, সুন্দরবনের মধুর একক ও অদ্বিতীয় প্রতিনিধি হলো ভারত। অথচ সুন্দরবনের মধুর বেশি অংশ বাংলাদেশে উৎপাদিত হয়। ওদের চেয়ে দুই থেকে তিন গুণ বেশি মধু আমাদের দেশে উৎপাদিত হয়। তাহলে কিভাবে অন্য প্রতিবেশী সুন্দরবনের মধুকে একক প্রতিনিধি হিসেবে আন্তর্জাতিক প্ল্যাটফরমে প্রচার করার সুযোগ পেল? ২০১৭ সালে বাগেরহাটের জেলা প্রশাসক সুন্দরবনের মধুকে জিআই হিসেবে তালিকাভুক্ত করার জন্য আবেদন করেন। সাত বছর হয়ে গেলেও জিআই হিসেবে নিবন্ধন করা হয়নি। এ জন্য কাকে দোষ দেবেন? ভারত ২০২১ সালে আবেদন করে জিআই হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করেছে। দ্রুততার সঙ্গে তারা করেছে বলে তাদের দোষ দেবেন? নাকি আমাদের করা হয়নি সেটাকে দোষ দেবেন? এটা চিন্তার বিষয়।’</p> <p>তিনি বলেন, ‘এটা আমাদের প্রশাসনিক অবহেলা, অবজ্ঞা, অন্যায় ঘটল। আমাদের আবেদন করা হয়েছিল ভারতেরও চার বছর আগে। অথচ জিআই করা হয়নি। এই ধরনের প্রশাসনিক আমলাতান্ত্রিক অবহেলার দায় কে নেবে? ভারতে অনেক পণ্য আছে যেগুলো তাদের জিআই হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করেছে। কিন্তু সেখানে বাংলাদেশের স্বার্থ জড়িত আছে। সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, ‘সুন্দরবনের মধুর জিআই হিসেবে যখন ভারতে ঘোষণা হয়েছে, তখন সময় ছিল আপত্তি জানানোর। কিন্তু আমাদের দেশের পক্ষ থেকে আপত্তি দেওয়া হয়নি। আমরা যে নিজেদেরটা করিনি তা নয়, ওদের ওখানে যে বাগড়া দেব তা-ও করা হয়নি।’ সংবাদ সম্মেলনে একটি প্রেজেন্টেশন তুলে ধরা হয়, সেখানে দেখানো হয়, এখন পর্যন্ত দুই দেশই জিআই স্বীকৃতি দিয়েছে এমন পণ্যের নাম প্রায় একই। যেমন জামালপুরের নকশি কাঁথা, সেটা ভারত নিয়েছে শুধু ‘নকশি কাঁথা’ নামে। একইভাবে ‘চাঁপাইনবাবগঞ্জের ক্ষীরশাপাতি আম’ তারা নিয়েছে ‘মালদা ক্ষীরশাপাতি আম’ হিসেবে, ফজলি আমের জিআই নিয়েছে মালদা ফজলি আম, ঢাকাই মুসলিন নিয়েছে বেঙ্গল মুসলিম নামে, জামদানি শাড়ি নিয়েছে উপ্পাদা জামদানি শাড়ি হিসেবে, গোপালগঞ্জের রসগোল্লা নিয়েছে বাংলার রসগোল্লা হিসেবে, টাঙ্গাইলের শাড়ির জিআই নিয়েছে বাংলার টাঙ্গাইল শাড়ি। সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন বলেন, ‘নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে খুব একটা গুরুত্ব না দেওয়ায় ভারত টাঙ্গাইলের শাড়ি তাদের জিআই হিসেবে রেজিস্ট্রেশন করেছে। এখন আবার সুন্দরবনের মধুকে তারা করেছে। এর একটাই তাৎপর্য, আমাদের দেশের যেগুলো ঐতিহ্যবাহী পণ্য আছে, সেগুলো যদি ভৌগোলিক নির্দেশকের আওতায় না আনি, তাহলে আমাদের নিজেদের পণ্য, নিজেদের বলে দাবি করতে পারব না।’</p>