ঢাকা, শুক্রবার ২৫ এপ্রিল ২০২৫
১১ বৈশাখ ১৪৩২, ২৫ শাওয়াল ১৪৪৬

ঢাকা, শুক্রবার ২৫ এপ্রিল ২০২৫
১১ বৈশাখ ১৪৩২, ২৫ শাওয়াল ১৪৪৬

আত্মশুদ্ধির বিকাশে ফকিহুল মিল্লাত (রহ.)-এর অবদান

  • মাও. রিজওয়ান রফীক জমীরাবাদী
notdefined
notdefined
শেয়ার
আত্মশুদ্ধির বিকাশে ফকিহুল মিল্লাত (রহ.)-এর অবদান

আত্মশুদ্ধি হলো আত্মাকে পরিচ্ছন্ন ও পবিত্র করা। বাহ্যিক বিষয়ের মতো আত্মিকভাবেও অসংখ্য পাপ-পঙ্কিলতা বিদ্যমান। বাহ্যিক বিষয়ে ব্যভিচার, সুদ-ঘুষ, মদ্যপান, চুরি, ডাকাতি, রাহাজানি, দুর্নীতি, খুনখারাবি, গিবত ইত্যাদি যেমন পাপকাজ, তেমনি আত্মিকভাবেও মানুষের অনেক হারাম বিষয় ও পাপ-পঙ্কিলতা রয়েছে। বাহ্যিক বিষয়ে যেগুলো পাপ, অন্তরে সেগুলোর চিন্তা করা, পরিকল্পনা করাও পাপ।

এর বাইরে অহংকার, লোক দেখানো ইবাদত, হিংসা, বিদ্বেষ, প্রবৃত্তির বিভিন্ন অবৈধ চাহিদা, ইত্যাদি অন্তরের পাপ। শরিয়তের বিধান ইমানদার ব্যক্তিকে পালন করতে হয়। তেমনি চিন্তাজগতের পাপ দূর করে সেখানে ইখলাস, তাকওয়া, সবর, শোকর ইত্যাদি অর্জনের জন্যও শরিয়তের রুহানি বিধান পালন করতে হয়। সেসব বিধানের চর্চা ও সে অনুযায়ী আমল করার নামই হলো আত্মশুদ্ধি।
নবী করিম (সা.)-কে দুনিয়ায় প্রেরণের অন্যতম উদ্দেশ্য হলো তাজকিয়ায়ে নফস বা আত্মশুদ্ধি। মহান আল্লাহ ইরশাদ করেন, ‘তিনি [মহানবী (সা.)] তাদের আল্লাহর কিতাব তেলাওয়াত করে শোনাবেন আর তাদের কিতাব ও হিকমত শিক্ষা দেবেন এবং তাদের তাজকিয়া তথা আত্মশুদ্ধি করবেন।’ (সুরা :  বাকারা, আয়াত : ১২৯)

কেউ যদি অন্তরে খারাপ নিয়ত রেখে বাহ্যিকভাবে কোনো ভালো কাজ করে, তাহলেও আল্লাহর কাছে তা গৃহীত হয় না। পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ ইরশাদ করেন, ‘নিশ্চয়ই সে সফলকাম, যে আত্মাকে পরিচ্ছন্ন করেছে।

’ (সুরা : শামস, আয়াত : ৯)

মানুষের সুপথ কিংবা বিপথগামী হওয়ার কেন্দ্রবিন্দু হলো তার অন্তর। পবিত্র কোরআনে এসেছে : ‘আল্লাহ যাকে পথপ্রদর্শন করতে চান, তার বুক ইসলামের জন্য উন্মুক্ত করে দেন এবং যাকে বিপথগামী করতে চান, তার বুক  অত্যধিক সংকীর্ণ করে দেন, তার কাছে ইসলাম অনুসরণ আকাশে আরোহণের মতোই দুঃসাধ্য হয়ে পড়ে। যারা বিশ্বাস করে না, আল্লাহ তাদের এভাবেই লাঞ্ছিত করেন।’ (সুরা : আনআম, আয়াত : ১২৫)

যাদের অন্তর পরিশুদ্ধ নয় কিংবা পরিশুদ্ধ হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই, তাদের ব্যাপারে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, ‘আসলে চক্ষু তো অন্ধ হয় না, বস্তুত অন্তরই অন্ধ হয়।’ (সুরা : হজ, আয়াত : ৪৬)

অন্য আয়াতে এসেছে : ‘আল্লাহ মোহর এঁটে দিয়েছেন তাদের অন্তরে।

ফলে তারা বুঝতেও পারেনি।’ (সুরা : তাওবা, আয়াত : ৯৩)

হাদিস শরিফে আছে, ‘জেনে রেখো, মানুষের দেহের মধ্যে এক খণ্ড মাংসপিণ্ড আছে, যখন তা সংশোধিত হয়, তখন গোটা দেহ সংশোধিত হয়ে যায়। আর যখন তা দূষিত হয়, তখন পুরো দেহটাই দূষিত হয়ে যায়। মনে রেখো, সেটাই কলব।’  (বুখারি ও মুসলিম)

রাসুল (সা.) আরো ইরশাদ করেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদের শরীর বা আকৃতির দিকে তাকান না, বরং তিনি তোমাদের কলবের দিকেই তাকান।’ এরপর রাসুল (সা.) কলবকে দেখানোর জন্য নিজ আঙুল দিয়ে নিজের বুকের দিকে ইশারা করলেন। (মুসলিম শরিফ)

কলব বা অন্তর সম্পর্কে রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘কলব হলো সব অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের বাদশা।’ (মেরকাত)

অন্য হাদিসে এসেছে, ‘মানুষ যখন কোনো পাপ কাজ করে তখন তার কলবের মধ্যে কালি পড়ে যায়।’

আরেকটি হাদিসে আছে, ‘শয়তান প্রতিটি মানুষের কলবের মধ্যে হাঁটু গেড়ে বসে থাকে। যখন সে জিকির শুরু করে, তখন সে পালিয়ে যায়। আবার যখন আল্লাহর জিকির থেকে অমনোযোগী হয়, তখন শয়তান আবার কলবে ফিরে এসে ওয়াসওয়াসা তথা কুমন্ত্রণা দিতে থাকে।

উল্লিখিত কোরআনের আয়াত ও হাদিস থেকে বোঝা যায়, মানুষের কলবের পরিচ্ছন্নতা আল্লাহর নৈকট্য লাভের মোক্ষম পথ। অন্তরের অপরিচ্ছন্নতা মানুষকে কুফরি পর্যন্ত নিয়ে যায়। তাই উলামায়ে কেরাম তালিমের পাশাপাশি আত্মশুদ্ধির তাগিদ দিয়েছেন। জাহেরি শিক্ষার পাশাপাশি বাতেনি শিক্ষা তথা আত্মশুদ্ধির প্রতি অতীব গুরুত্বারোপ করেছেন। দারুল উলুম দেওবন্দের মূল শিক্ষানীতির সঙ্গেই আত্মশুদ্ধির বিষয়টি সন্নিবিষ্ট।

আত্মশুদ্ধি বা রুহানি শিক্ষার ব্যাপারে রাসুল (সা.), সাহাবায়ে কেরাম ও সলফে সালেহিনের বিশেষ শিক্ষা পদ্ধতি রয়েছে। উপমহাদেশের অন্যতম ইলমি ও রুহানি ব্যক্তিত্ব ফকিহুল মিল্লাত মুফতি আবদুর রহমান (রহ.) বসুন্ধরা, ঢাকায় ইসলামী উচ্চশিক্ষা ও আত্মশুদ্ধি কোর্সের সমন্বয়ে একটি প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন আজ থেকে প্রায় ২৬ বছর আগে। ‘মারকাযুল ফিকরিল ইসলামী বাংলাদেশ’ নামে এই প্রতিষ্ঠান অতি স্বল্প সময়েই ইসলামী জ্ঞান-বিজ্ঞানে মুসলিম বিশ্বে খ্যাতি ও প্রসিদ্ধি লাভ করেছে। ইসলামী উচ্চশিক্ষা বিষয়ে যেমন প্রতিষ্ঠানটি সবার কাছে সমাদৃত, তেমনি আধ্যাত্মিকতা ও আত্মশুদ্ধির  মেহনতের ক্ষেত্রেও এটি অনন্য হিসেবে সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সক্ষম হয়।

হজরত ফকিহুল মিল্লাত (রহ.) ছিলেন উপমহাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের পুরোধা আওলাদে রাসুল সায়্যিদ হুসাইন আহমদ মাদানি (রহ.)-এর সরাসরি ছাত্র। তিনি ছিলেন শায়খুল হাদিস হজরত জাকারিয়া (রহ.)-এর আধ্যাত্মিক দীক্ষাপ্রাপ্ত। তিনি ছিলেন হাকিমুল উম্মত হজরত আশরাফ আলী থানভি (রহ.)-এর খলিফায়ে আজল হজরত হারদুয়ী (রহ.)-এর খলিফা। তিনি আত্মশুদ্ধির বিশুদ্ধ চর্চার জন্য ‘মারকাযুল ইসলামী’তে প্রতিষ্ঠা করেন একটি ‘খানেকাহ’। যার নাম দেওয়া হয়—‘খানেকাহে এমদাদিয়া আশরাফিয়া আবরারিয়া।’ প্রতিদিন মারকাযে আত্মশুদ্ধির কোর্স হিসেবে, সাহরির সময় জিকির, সুন্নতি জিন্দেগি গড়ার প্রতি উৎসাহ প্রদান ও ছাত্রদের যাবতীয় তত্ত্বাবধান করা হয়। প্রতি আরবি মাসের শেষ বৃহস্পতিবার আত্মশুদ্ধিমূলক আলোচনার ব্যবস্থা করা হয়। এখানে প্রতিবছর রবিউল আওয়ালের প্রথম বৃহস্পতি ও শুক্রবার দুই দিনব্যাপী ‘এহইয়ায়ে সুন্নাত ইজতিমা’র আয়োজন করা হয়। এটি বিশেষভাবে আলেমদের জন্য আয়োজন করা হয়। এই ইজতিমায় দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে হজরতের খলিফা-মুরিদানসহ উলামায়ে কেরাম, মসজিদের খতিব ও ইমামগণ অংশগ্রহণ করেন। দুই দিনব্যাপী ইজতিমায় আগত শত শত উলামায়ে কেরামের জন্য এই প্রতিষ্ঠানে শবগুজারি, ইসলাহি বয়ান, দরুদ ও জিকির, সুন্নত মতে আমলের প্রশিক্ষণ ইত্যাদির নিয়মতান্ত্রিক কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়।

গত ১০-১১-২০১৫ হজরত ফকিহুল মিল্লাত (রহ.) জান্নাতবাসী হয়েছেন। তখন থেকে তাঁর সুযোগ্য সাহেবজাদা হজরত মাওলানা মুফতি আরশাদ রহমানি সাহেব হুজুরের অনুকরণেই সার্বিক কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। প্রত্যেকটি বিষয়ে তিনি সফল কাণ্ডারীর ভূমিকায় কাজগুলো এগিয়ে নিচ্ছেন। তিনিও পিতার মতো হজরত হারদুয়ী (রহ.)-এর অন্যতম খলিফা। রুহানি দীক্ষা ও আত্মশুদ্ধিবিষয়ক হজরত ফকিহুল মিল্লাত (রহ.)-এর মহান মিশনও সফলভাবে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন তিনি। হজরত ফকিহুল মিল্লাত (রহ.)-এর ইন্তিকালের পর ১৪৩৭ হিজরি ‘এহয়ায়ে সুন্নাত ইজতিমা’ অনুষ্ঠিত হয় অত্যন্ত সফলভাবে। এটি ছিল মুফতি আরশাদ রহমানি সাহেবের তত্ত্বাবধানে প্রথম ইজতিমা। ১৪৩৮ হিজরির ইজতিমাও গতকাল থেকে চলছে। প্রথম দিনেই উপস্থিত হয়েছেন দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের গণ্যমান্য ও বরেণ্য প্রায় ১৫০০ উলামায়ে কেরাম। মারকায কর্তৃপক্ষও দূর-দূরান্ত থেকে আগত মেহমান উলামায়ে কেরামের জন্য যথাসম্ভব উন্নত মেহমানদারি ও খেদমতের ব্যবস্থা করেছেন।

 

লেখক : নির্বাহী সম্পাদক, মাসিক আল-আবরার

মন্তব্য

সম্পর্কিত খবর

কোরআন থেকে শিক্ষা

    পর্ব, ৭৫৭
শেয়ার
কোরআন থেকে শিক্ষা

আয়াতের অর্থ : ‘তারা আল্লাহর পরিবর্তে এমন কিছুর ইবাদত করে, যা তাদেরকে উপকার করতে পারে না এবং তাদের অপকারও করতে পারে না, কাফির তো স্বীয় প্রতিপালকের বিরোধী। আমি তোমাকে কেবল সুসংবাদদাতা ও সতর্ককারীরূপেই প্রেরণ করেছি। বলো, আমি তোমাদের কাছে এর জন্য কোনো প্রতিদান চাই না, তবে যে ইচ্ছা করে সে তার প্রতিপালকের দিকের পথ অবলম্বন করুক। তুমি নির্ভর করো তাঁর ওপর, যিনি চিরঞ্জীব, যিনি মরবেন না এবং তাঁর সপ্রশংস পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করো...।

’ (সুরা : ফোরকান, আয়াত : ৫৫-৫৮)

আয়াতগুলোতে দ্বিনি কাজের প্রতিদান ও তাওয়াক্কুলের আলোচনা করা হয়েছে।

শিক্ষা ও বিধান

১.  আয়াত দ্বারা বোঝা যায়, মুমিনের জন্য উপকার লাভের মতো ক্ষতি থেকে আত্মরক্ষা করা আবশ্যক।

২.  মানুষের সুপথপ্রাপ্তিতে দ্বিনের পথে আহ্বানকারী এত খুশি হয়, যেন এটাই তার আত্মত্যাগের প্রতিদান।

৩.  তাওয়াক্কুল হলো দ্বিধাহীন আস্থার সঙ্গে নিজের সব বিষয় আল্লাহর ওপর ন্যস্ত করা।

৪.  তাওয়াক্কুলের নির্দেশ দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে হামদ ও তাসবিহ পাঠের নির্দেশ দেওয়া হয়ছে। এতে ইঙ্গিত মেলে জিকির আল্লাহর প্রতি বান্দার আস্থা দৃঢ় করে।

৫.  আস্থা ও ভরসার প্রকৃত স্থল কেবল আল্লাহ তাআলা, কেননা তিনি ছাড়া অন্য সব কিছু ধ্বংসশীল ও দুর্বল এবং তাঁর করুণার মুখাপেক্ষী।

  (আত-তাহরির ওয়াত-তানভির : ১৯/৫৬)

 

প্রাসঙ্গিক
মন্তব্য

যে দোয়ায় অগণিত গুনাহ মাফ হয়

শেয়ার
যে দোয়ায় অগণিত গুনাহ মাফ হয়

উচ্চারণ : লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবার, ওয়া লা-হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ।

অর্থ : আল্লাহ তাআলা ছাড়া কোনো উপাস্য নেই, আল্লাহ সুমহান, আল্লাহর সাহায্য ছাড়া পাপ মুক্তির কোনো পথ নেই, আল্লাহর সাহায্য ছাড়া ইবাদতের কোনো শক্তি নেই।

সূত্র : আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুল (সা.) বলেছেন, পৃথিবীর বুকে যে ব্যক্তি বলে, ‘লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবার, ওয়া লা-হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ’ তার অপরাধগুলো ক্ষমা করে দেওয়া হয়, যদিও তা সাগরের ফেনারাশির মতো (বেশি পরিমাণ) হয়। (তিরমিজি, হাদিস : ৩৪৬০)

 

প্রাসঙ্গিক
মন্তব্য

মনীষীর কথা

শেয়ার
মনীষীর কথা

এমন ব্যক্তিকে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ কোরো, যে ক্ষুব্ধ হলেও তোমার দুর্নাম বলে না।

সুফিয়ান সাওরি (রহ.)

 

 

মন্তব্য

যে কারণে অন্যায়ের প্রতিবাদ করা গুরুত্বপূর্ণ

সাআদ তাশফিন
সাআদ তাশফিন
শেয়ার
যে কারণে অন্যায়ের প্রতিবাদ করা গুরুত্বপূর্ণ

সৎকাজে আদেশ ও অসৎ কাজে নিষেধএটি উম্মতের দায়িত্ব। এই দায়িত্বের মাধ্যমেই মহান আল্লাহ উম্মতকে শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছেন। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, তোমরাই হলে সর্বোত্তম উম্মত, যাদেরকে মানুষের জন্য বের করা হয়েছে। তোমরা ভালো কাজের আদেশ দেবে এবং মন্দ কাজ থেকে বারণ করবে, আর আল্লাহর প্রতি ঈমান পোষণ করবে।

(সুরা : আলে ইমরান, আয়াত : ১১০)

সাধ্যমতো অন্যায়ের প্রতিবাদ করা প্রত্যেক মুসলমানের ঈমানি দায়িত্ব। রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, তোমাদের মধ্যে যেকোনো অন্যায়কারীকে দমনে সে যেন হাত দিয়ে প্রতিরোধ করে, যদি তা করতে না পারে তবে সে যেন মুখ দিয়ে প্রতিহত করে। যদি সে মুখ দিয়েও না পারে তাহলে যেন অন্তর দিয়ে ঘৃণা পোষণ করে; আর এটাই দুর্বল ঈমানের পরিচয়। (বুখারি)

সময়মতো যদি অন্যায়ের প্রতিবাদ করা না হয়, তাহলে এর ফল গোটা জাতিকে ভোগ করতে হয়।

তাই সমাজে কোনো অন্যায়-অনাচার দেখা দিলে সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে তা প্রতিহত করা আবশ্যক।

কিন্তু আমাদের সমাজে এখন আর অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে অনেকে আগ্রহ দেখায় না। চোখের সামনে ঘটে যাওয়া হাজারো অন্যায়কে ঠাণ্ডা মাথায় এড়িয়ে চলে। অন্যায়ের প্রতিবাদকে তারা অযথা ঝামেলায় জড়ানোই মনে করে।

এতে মানুষ নিজেদের অজান্তেই গোটা জাতির ওপর আরো বড় বিপদ ডেকে আনে।

রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, মানুষ যখন কোনো অত্যাচারীকে দেখেও অন্যায় থেকে তার হাতকে প্রতিরোধ করবে না, শিগগিরই আল্লাহ তাদের সবার ওপর ব্যাপক আজাব নাজিল করবেন। (তিরমিজি ও আবু দাউদ)

সমাজ থেকে অপরাধ নির্মূল করতে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করার কোনো বিকল্প নেই। একটা সমাজে অপরাধ তখনই বেড়ে যায়, যখন অপরাধী বারবার অপরাধ করে পার পেয়ে যায়। তাই মহান আল্লাহ সমাজে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার প্রতি অধিক গুরুত্ব দিয়েছেন।

পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, হে ঈমানদারগণ! ন্যায়বিচারে তোমরা অটল থেকো, আল্লাহর পক্ষে সাক্ষ্য প্রদানকারীরূপে যদিও নিজেদের প্রতিকূলে যায় অথবা পিতা-মাতা ও নিকটাত্মীয়দের, সে ধনী বা গরিব হোক, আল্লাহই উভয়ের জন্য উত্তম অভিভাবক। সুতরাং তোমরা ন্যায়বিচার করতে নিজ নিজ খেয়ালখুশির (পক্ষপাতিত্বের) বশীভূত হয়ো না। (সুরা : আন-নিসা, আয়াত : ১৩৫)

এই আয়াতে মহান আল্লাহ তাআলা তাঁর প্রিয় বান্দাদের বিচারের ক্ষেত্রে কোনো ধরনের আত্মীয়তা, ধন-সম্পদ কিংবা ব্যক্তিগত স্বার্থের প্রভাব থেকে মুক্ত থাকতে নির্দেশ দিয়েছেন। কারণ এগুলোও অন্যায়কে প্রশ্রয় দিতে প্রলুব্ধ করে।

 

 

মন্তব্য

সর্বশেষ সংবাদ