ইসলামী শিক্ষার ৫ বৈশিষ্ট্য

সাইয়েদ আবুল হাসান আলী নদভি (রহ.)
সাইয়েদ আবুল হাসান আলী নদভি (রহ.)
শেয়ার
ইসলামী শিক্ষার ৫ বৈশিষ্ট্য

যুগে যুগে আলেমরা যে ইসলামী শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করেছেন তার পাঁচটি বৈশিষ্ট্য লক্ষ্য করা যায়। নিম্নে তা তুলে ধরা হলো—

১. বৈশ্বিক ও মানবিক :  ইসলামী শিক্ষা কার্যক্রমের প্রথম বৈশিষ্ট্য হলো তা বৈশ্বিক  ও মানবিক হবে। তার সঙ্গে সর্ব শ্রেণির মানুষের সম্পর্ক থাকবে। কেননা পৃথিবীর সব জাতি, গোষ্ঠী, সম্প্রদায় ও বংশধারা এবং সব ভূখণ্ডের জন্য ইসলাম আগমন করেছে।

ইসলাম বৈষম্যহীন অখণ্ড পৃথিবীর দাবিদার। এতে কোনো বিশেষ শ্রেণি বা গোষ্ঠীর বিশেষ কোনো অধিকার নেই। বিশ্বভ্রাতৃত্বের ক্ষেত্রেও ইসলাম পৃথিবীর কোনো শ্রেণি-গোষ্ঠীকে কারো ওপর অগ্রাধিকার দেয়নি; বরং বংশ পরিচয়ের চেয়ে আগ্রহ-উদ্দীপনা, সাড়া, অনুসন্ধান, মূল্যায়ন, প্রচেষ্টা ও গবেষণাকে বেশি মূল্য দেওয়া হয়েছে। ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল (রহ.) সূত্রে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যদি জ্ঞান সুরাইয়া নক্ষত্রের মধ্যে থাকত, তবে পারস্যের একদল মানুষ তা অনুসন্ধান করত।
’ আল্লামা ইবনে খালদুন (রহ.) এ বক্তব্যের সমর্থনে বলেন, ‘বিস্ময়কর ব্যাপার হলো মুসলিম উম্মাহর ইতিহাসে বেশির ভাগ জ্ঞানের ধারক অনারব। শরয়ি (বর্ণনানির্ভর) ও আকলি (যুক্তিনির্ভর) উভয় প্রকার জ্ঞানেই তারা অগ্রগামী। অথচ মুসলিম জাতির বিকাশ হয়েছে আরব থেকে এবং শরিয়ত প্রণেতাও (নবী সা.) আরব।’

 

২. ব্যাপক ও বিস্তৃত : ইসলামী শিক্ষা আন্দোলনের দ্বিতীয় বৈশিষ্ট্য হলো তা ব্যাপক ও বিস্তৃত।

কেননা ইসলামে জ্ঞানচর্চার ধারণাটিই ব্যাপক ও বিস্তৃত। মুসলমানের জন্য জ্ঞানচর্চার বাধ্য-বাধকতা, সমাজে জ্ঞানের মূল্য, কোরআন-সুন্নাহে জ্ঞানচর্চার প্রতি উৎসাহ প্রদান, মর্যাদা ও পুরস্কারের অঙ্গীকার, জ্ঞানবিমুখতার নিন্দা ইত্যাদি থেকে ইসলামে জ্ঞানচর্চার পরিধি সম্পর্কে ধারণা লাভ করা যায়। ইসলামের ইতিহাসের প্রতিটি স্তরে জ্ঞানচর্চার সোনালি অধ্যায় রচিত হয়েছে। মুসলিম রাষ্ট্র ও জনগণের সহযোগিতায় প্রত্যেক যুগেই অসংখ্য মাদরাসা ও শিক্ষাকেন্দ্র পরিচালিত হয়েছে। এ ক্ষেত্রে রাষ্ট্র বা রাষ্ট্রনায়কদের চেয়ে প্রত্যেক যুগের আলেমদের ভূমিকাই অগ্রগণ্য।
সরকারের প্রচেষ্টায় কিছু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান চললেও আলেমদের প্রচেষ্টা ও স্বেচ্ছাশ্রমে ঘরে ঘরে ইসলামের আলো ছড়িয়ে পড়েছে। যারা রাষ্ট্র, ক্ষমতা, শাসক, নেতা ও ধনীদের থেকে চূড়ান্ত পর্যায়ে অমুখাপেক্ষী ছিলেন। আল্লাহর ওপর আস্থা রেখে তারা অবিশ্বাস্য ও বিস্ময়কর সব কীর্তি গড়েছেন।

মুসলমানের শিক্ষা কার্যক্রম দ্বারা সব শ্রেণি ও স্তরের মানুষ উপকৃত হতে পারে। মুসলিম ইতিহাসে জ্ঞান এত ব্যাপক ও আগ্রহের বিষয়ে পরিণত হয়েছিল যে সর্বশ্রেণির মানুষ তা অর্জনে পরিতৃপ্তি লাভ করত। স্টেনলি লেন পুল বলেন, ‘খলিফা থেকে শুরু করে প্রতিটি মুসলিম জ্ঞান অর্জনের জন্য আগ্রহে ও তাতে অবগাহনে ব্যাকুল হয়েছিল। তাদের সবচেয়ে বড় সেবা ছিল বাগদাদের শিক্ষাকেন্দ্রগুলোতে সর্বশ্রেণির শিক্ষার্থীকে জায়গা দিয়েছিল। ইসলামী সভ্যতার ব্যাপকতার ধারণা থেকেই এটা হয়েছিল। একই অবস্থা ছিল বিশ্বের অন্যান্য জায়গার জ্ঞানকেন্দ্রগুলোর। আরো বিস্ময়কর বিষয় হলো, সমকালীন মসজিদগুলোতেও শিক্ষার্থীদের বিপুল সমাগম ছিল। তারা আলেমদের কাছে ধর্মীয় ও আধ্যাত্মিক জ্ঞানার্জন করত। বিশ্বাস, ভালোবাসা ও আগ্রহ থেকেই তারা একত্র হতো।’ আর তৃণমূলে বিস্তৃত সে শিক্ষা আন্দোলনের প্রাণসত্তা ছিল জ্ঞানচর্চাকে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের মাধ্যম ও ‘ইবাদত’ বলে বিশ্বাস করা।

 

৩. সক্রিয়তা :  সক্রিয়তা ইসলামী শিক্ষা কার্যক্রমের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। মুসলিম সমাজে জ্ঞানচর্চা ও জ্ঞানের ধারা কখনোই নিষ্ক্রীয় ছিল না। তা স্বল্প বা দীর্ঘ পরিসরে সক্রিয় ছিল। জ্ঞানার্জন, অধ্যয়ন, অনুসন্ধানের অনুষঙ্গ হিসেবে হাদিসের মর্যাদা, স্তর, মৌখিক বা লিখিত বিতর্ক, বিভিন্ন ভূখণ্ডে ধর্মীয় শিক্ষা ও জ্ঞানের বিস্তৃতির ধারা অব্যাহত ছিল। ইতিহাস গ্রন্থগুলোয় সক্রিয় জ্ঞানচর্চার চমৎকার সব দৃষ্টান্ত রয়েছে। আল্লামা ইবনে খালদুন (রহ.) জ্ঞানার্জনের জন্য দেশত্যাগ এবং সমকালীন প্রাজ্ঞ ব্যক্তিদের সঙ্গে সে উদ্দেশ্যে সাক্ষাৎ বিষয়ে লেখেন, ‘এর কারণ হলো মানুষ জ্ঞান, চরিত্র, মতাদর্শ ও মর্যাদা শিক্ষা-শিক্ষণের মাধ্যমে অর্জন করে। আবার কখনো কখনো তা সান্নিধ্য ও দীক্ষার মাধ্যমে অর্জন করে। সান্নিধ্য ও দীক্ষার মাধ্যমে অর্জিত বিষয়গুলো মানুষের ভেতর দৃঢ়ভাবে বসে যায়।’ ফলে মুসলিম সমাজে জ্ঞানচর্চায় প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার পাশাপাশি আধ্যাত্মিক সান্নিধ্য ও দীক্ষার ধারা সক্রিয় রয়েছে।

 

৪. সাহসিকতা : আলেমরা ভালো কাজের আদেশ, মন্দ কাজের নিষেধ এবং অত্যাচারী শাসকের সামনে সত্য উচ্চারণে সব সময় সাহসী। ইসলামী রাষ্ট্র ও মুসলিম সমাজের বিরুদ্ধে যেকোনো ধ্বংসাত্মক ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে তারা বুক পেতে দেন। প্রয়োজনে তারা জিহাদ, সংগ্রাম, স্বাধীনতা আন্দোলন, বিদেশি আগ্রাসন ও ইসলামবিরোধী শক্তির বিরুদ্ধে সোচ্চার হন। ইসলামের ইতিহাসের সূচনাকাল থেকে আজ পর্যন্ত সমাজ সংস্কারের জন্য যতবার জিহাদ (সংগ্রাম) ও ইজতিহাদ (জ্ঞানগত উদ্ভাবন)-এর প্রয়োজন হয়েছে, কোনো কোনো আলেম তার নেতৃত্বের জন্য এগিয়ে এসেছেন। তার চিন্তা ও দর্শন বৈপ্লবিক জাগরণ ও আন্দোলনের উৎস ও অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজ করেছে। হিজরি ১৩-১৪ শতক এবং খ্রিস্টীয় ১৯-২০ শতকে মরক্কো থেকে ইন্দোনেশিয়া-মালয়েশিয়া আর মিসর-সিরিয়া থেকে ভারতবর্ষ পর্যন্ত যত মুসলিম দেশে ঔপনিবেশিক শক্তির আগমন হয়েছে, সেসব দেশে বিদেশি শাসন ও নিয়ন্ত্রণের বিরুদ্ধে স্বাধীনতা আন্দোলনের সার্বিক নেতৃত্ব আলেমদের হাতে ছিল; কমপক্ষে তারা নেতৃত্ব দানকারীদের সম্মুখ সারিতে ছিল। আলজেরিয়া ও ভারতবর্ষ তার অন্যতম দৃষ্টান্ত।

 

৫. উপকারী বিষয়ে গুরুত্বারোপ : ইসলাম সব সময় এমন বিষয়ের পাঠদানে গুরুত্ব দেয়, যাতে সুপথ, মুক্তি, পরকালীন কল্যাণ নিহিত। তা এমন শিক্ষা, যার ওপর মানুষের সৌভাগ্য ও মুক্তি নির্ভরশীল, যার মাধ্যমে তার সৃষ্টিজগতের স্রষ্টা, জগত্গুলো পরিচালনাকারীর সত্তা ও গুণাবলি সম্পর্কে অবগত হবে। কোরআনে সেসব মানুষের নিন্দা করা হয়েছে তাদের জ্ঞানচর্চার পুরো পার্থিব জীবনকেন্দ্রিক। ইরশাদ হয়েছে, ‘বলুন, আমি কি তোমাদের সংবাদ দেব কর্মে বিশেষ ক্ষতিগ্রস্তদের? তারাই সেসব লোক, পার্থিব জীবনে যাদের প্রচেষ্টা পণ্ড হয়, যদিও তারা মনে করে যে তারা সৎকর্মই করছে। তারাই সেসব লোক, যারা অস্বীকার করে তাদের প্রতিপালকের নিদর্শনাবলি ও তাঁর সঙ্গে তাদের সাক্ষাতের বিষয়। ফলে তাদের কর্ম নিষ্ফল হয়ে যায; সুতরাং কিয়ামতের দিন তাদের জন্য ওজনের কোনো ব্যবস্থা রাখব না।’ (সুর কাহফ, আয়াত : ১০৩-১০৫)

তামিরে হায়াত থেকে

মো. আবদুল মজিদ মোল্লার ভাষান্তর।

 

মন্তব্য

সম্পর্কিত খবর

বুলগেরিয়ায় মুসলিম শাসনের স্মৃতি

রোজি আসলান
রোজি আসলান
শেয়ার
বুলগেরিয়ায় মুসলিম শাসনের স্মৃতি

কিসেলচোভ বুলগেরিয়ার রোডোপ অঞ্চলের একটি প্রত্যন্ত গ্রাম। এই গ্রামে পাহাড়ের চূড়ায় দাঁড়িয়ে আছে মিনারহীন একটি ছোট্ট মসজিদ। ছোট্ট মসজিদটি মুসলিম শাসনের সাক্ষী। বর্তমানে বুলগেরিয়া বললে কোনোভাবেই ইসলাম, মুসলমান ও মসজিদের কথা মনে আসে না, অথচ দেশটি ৫০০ বছর মুসলমানের শাসনাধীন ছিল।

বর্তমানে বুলগেরিয়ায় মুসলমানের সংখ্যা ক্রমহ্রাসমান।

মূলত আমি বুলগেরিয়ায় গিয়েছিলাম গ্রীষ্মের ছুটি কাটাতে। ইস্তাম্বুল থেকে গ্রিক সীমান্তবর্তী রোডোপ এলাকায় যাই। সেখানে আমি তিন সপ্তাহ অবস্থান করি।

দিনের বেলা লেখালেখি করতাম এবং প্রতিদিন বিকেলে পাহাড়ি পথ ধরে ঘুরে বেড়াতাম। আমি পরিত্যক্ত ঘরবাড়ি ও স্থাপনাগুলো দেখে রোমাঞ্চিত হতাম। একসময় এখানে মানুষের কোলাহল ছিল, কিন্তু এখন সেগুলো পরিত্যক্ত। আগাছা গ্রামের পথ, বাগান ও ভবনগুলোর দখল নিয়েছে।
সূর্যাস্তের আগে নদীর তীরে বসে থাকতাম। সেখানে ধ্যান করতাম, দিনলিপি লিখতাম এবং রাতের আঁধারকে স্বাগত জানাতাম।

আমার অবস্থানের জায়গা থেকে কিসেলচোভ গ্রামটি বেশ দূরের। এবড়োখেবড়ো পথ ধরেই সেখানে যেতে হয়। একসময় পথটি পাকা ছিল।

এখন তা গর্ত ও আবর্জনায় পরিপূর্ণ। একসময় গ্রামে তিন শতাধিক বাসিন্দা ছিল। তারা ছিল পোমাক মুসলিম। এখন সেখানে মাত্র সাতজন ব্যক্তি সারা বছর বসবাস করে এবং তাদের সবাই বৃদ্ধ। গ্রামের অনেকেই আগে ইউরেনিয়াম খনিতে কাজ করত। এখন পেনশনের টাকায় তারা জীবিকা নির্বাহ করে। কমিউনিস্ট আমলে গ্রামের স্কুলসহ একাধিক সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যায়। ফলে গ্রামের বহু মানুষ অন্যত্র চলে যেতে বাধ্য হয়।

বুলগেরিয়ার জনসংখ্যার ১০ শতাংশের বেশি মুসলিম। রোডোপ মুসলিম অধ্যুষিত একটি অঞ্চল। শত শত বছর ধরে এখানে তুর্কি ও পোমাক মুসলিমরা বসবাস করে আসছে। ধারণা করা হয়, বুলগেরিয়ায় মুসলমানের আগমন ঘটে খ্রিস্টীয় অষ্টম ও নবম শতকে। তবে ইসলামের প্রসার ঘটে এই অঞ্চল উসমানীয় সাম্রাজ্যের শাসনাধীন হওয়ার পর। পোমাক হলো বুলগেরীয় বংশোদ্ভূত মুসলিম আদিবাসী। উসমানীয় সাম্রাজ্যের পতনের পর পোমাকরা বলকান অঞ্চলের বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়ে। বর্তমানে বুলগেরিয়ায় মাত্র দেড় থেকে দুই লাখ পোমাক বাস করে। তারা পোমাক ও বুলগেরিয়ান ভাষায় কথা বলে। পোমাক জনগোষ্ঠী বুলগেরিয়ান সংস্কৃতির গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার। আমি স্মোলিয়ান শহরের চারপাশের প্রায় প্রতিটি গ্রামে ভ্রমণ করেছি। প্রতিটি গ্রামের মধ্যভাগে একটি মসজিদ আছে, যা ইসলামের সঙ্গে পোমাক সম্প্রদায়ের গভীর সংযোগকে প্রতিভাত করে।

তুর্কি শাসনামলে মুসলিম ও খ্রিস্টান জনগোষ্ঠী শান্তিপূর্ণভাবে বসবাস করত। তখন স্থানীয় জনগণ তুর্কি ইসলামী সংস্কৃতিকে আপন করে নেয়। কিন্তু সোভিয়েত ইউনিয়ন নিয়ন্ত্রিত বুলগেরিয়ার কমিউনিস্ট শাসকরা দেশটি থেকে ইসলাম ও ইসলামী সংস্কৃতির শিকড় তুলে ফেলতে চেয়েছিল। তারা বহু ইসলামী প্রতিষ্ঠান ধ্বংস করে এবং মানুষকে ইসলামী বিশ্বাস ও সংস্কৃতি ত্যাগে বাধ্য করে। তার পরও বহু মানুষ সাংস্কৃতিক বিবেচনায় মুসলিম রয়ে গেছে। কমিউনিস্ট শাসন অবসানের পর অনেকেই প্রকাশ্যে ইসলামচর্চা শুরু করে।

আমি যে অঞ্চল ভ্রমণ করেছি তার বেশির ভাগ অধিবাসী মুসলিম। তবে ইসলাম সম্পর্কে তাদের জ্ঞান খুবই সীমিত। কমিউনিস্ট শাসকদের ইসলামবিরোধী কার্যক্রমের কারণে বুলগেরিয়ার মানুষ ধর্মীয় শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হয়েছে। আমি সেখানে বহু মসজিদ দেখেছি, যাতে কোনো মুসল্লি নেই। কিছু মসজিদে শুধু জুমার নামাজ হয়। শুধু একটি গ্রামে আমি আজান শুনতে পেয়েছি। যদিও বুলগেরিয়ার মুসলিমরা খুব বেশি ধর্মপরায়ণ নয়, তবু তারা রমজান ও ঈদসহ অন্যান্য ইসলামী দিবস উদযাপন করে।

কিসেলচোভের যে মসজিদের কথা আমি প্রথমে বলেছি সেটা সম্প্রতি সংস্কার করা হয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দা ও মসজিদের তত্ত্বাবধায়ক কোকারা আমাকে জানিয়েছেন, মসজিদটি ৩০০ বছরের পুরনো। তাঁর দাদা এই মসজিদের ইমাম ও মুয়াজ্জিন ছিলেন। প্রাচীন এই মসজিদের সঙ্গে তাঁর ও স্থানীয় মুসলমানের আবেগ-অনুভূতি জড়িয়ে আছে। কোকারার বয়স ৭৯ বছর। এই বয়সেও তিনি মসজিদটি সংস্কার করতে শত শত ঘণ্টা কাজ করেছেন এবং বহু অর্থ ব্যয় করেছেন। মসজিদের ছাদ ধসে পড়েছিল, তিনি তা ঠিক করেছেন। মসজিদটি এখন ব্যবহারের জন্য প্রস্তুত। কোকারা মসজিদটি রক্ষা করতে চান বুলগেরীয় মুসলমানের সোনালি দিনের স্মারক হিসেবে এবং তাঁর দাদার স্মৃতি হিসেবে। তিনি আশা করেন, এর বিনিময়ে আল্লাহ জান্নাতে তাঁকে ঘর দান করবেন।

 

সিক্রেড ফুটস্টেপস থেকে আবরার আবদুল্লাহর ছায়ানুবাদ

 

মন্তব্য

কখন আল্লাহর সাহায্য আসবে

মো. আলী এরশাদ হোসেন আজাদ
মো. আলী এরশাদ হোসেন আজাদ
শেয়ার
কখন আল্লাহর সাহায্য আসবে

বিশ্ব সন্ত্রাসী ইসরায়েলি হামলায় মসজিদে আকসা আজ ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে। পাখির মতো উড়ে যাচ্ছে গাজাবাসী। কাঁদছে নিষ্পাপ শিশুরাও। এক লাখ ১৭ হাজার মানুষের শহর রাফাহ, সেখানে হয়তো কেউ বেঁচে নেই।

এমন রূঢ় বাস্তবতায়ও মহান আল্লাহর অভয় বার্তায় আস্থা রাখতে চাই—‘তোমরা হীনবল হইয়ো না এবং দুঃখিতও হইয়ো না; তোমরাই বিজয়ী, যদি তোমরা মুমিন হও। (সুরা : আলে ইমরান, আয়াত : ১৩৯)

অচিরেই অলৌকিক সাহায্য ও নিরাপত্তার পরিবেশ তৈরি হবে। কেননা, মজলুম জনগণের হাহাকার আল-কোরআনের শাশ্বত আবেদন : আর তোমাদের কী হলো যে দুর্বল পুরুষ, নারী ও শিশুদের পক্ষেযারা বলে : হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদের অত্যাচারীদের এ জনপদ থেকে উদ্ধার করো। তোমার পক্ষ থেকে আমাদের জন্য অভিভাবক পাঠাও এবং তোমার পক্ষ থেকে আমাদের জন্য সাহায্যকারী পাঠাও।

(সুরা : নিসা, আয়াত : ৭৫)

মুসলমানদের বিপদ-বিপর্যয়ের কারণ

অত্যাধুনিক সমরাস্ত্রসমৃদ্ধ সম্মিলিত মুসলিম বাহিনী না থাকা

ইস্পাতকঠিন একক মুসলিম নেতৃত্ব না থাকা

তাওবা, তাকওয়া ও দোয়ার পথ ছেড়ে দেওয়া

ইলম আমলের ত্রুটি ও প্রযুক্তিবিমুখিতা

অনৈক্য, বিলাসিতা ও বিধর্মীদের সঙ্গে সখ্য ইত্যাদি।

দুঃখজনক সত্যইরান, ইরাক, পাকিস্তান, তুরস্ক প্রভৃতি পারমাণবিক শক্তিধর মুসলিম দেশ গাজার মুসলমানদের রক্ষার্থে একটি বোমাও ফাটায়নি। সৌদি আরব ও আরব আমিরাতের রয়েছে বিপুল তেল সম্পদ। কিন্তু গাজার অ্যাম্বুল্যান্সগুলো দাঁড়িয়ে থাকল নিরূপায় নীরব আর্তনাদে।

তবু তেল দিয়ে কেউ সহযোগিতা করেনি।

জাতিসংঘ মিশনে শান্তিরক্ষা বাহিনী প্রেরণে শীর্ষস্থানের অধিকারী বাংলাদেশ; গোটা বিশ্বের মুসলমানদের ৫০ লাখ সৈন্য, অসংখ্য ট্যাংক, ক্ষেপণাস্ত্র, যুদ্ধবিমান, স্যাটেলাইট এবং ঈমানি শক্তি নিয়ে গাজার দিকে কেউ হাঁটেনি। বিশ্ব মুসলমান ও তাদের বিবেক নিশ্চুপ... অথচ সুরা সাফের ১৩ নম্বর আয়াত নাসরুম মিনাল্লাহি ওয়া ফাতহুন কারিব। (আল্লাহর সাহায্য ও বিজয় নিকটবর্তী)!

মহান আল্লাহর প্রতিশ্রুতি মিথ্যা নয় ...দুঃখ-দারিদ্র্য ও রোগবালা তাদের স্পর্শ করেছিল এবং তারা ভীত-কম্পিত হয়েছিল। তারা এত দূর বিচলিত হয়েছিল যে রাসুল ও তাঁর প্রতি বিশ্বাস স্থাপনকারীরা বলে উঠেছিল, আল্লাহর সাহায্য কখন আসবে? জেনে রাখো, নিশ্চয়ই আল্লাহর সাহায্য নিকটবর্তী।

(সুরা : বাকারাহ, আয়াত : ২১৪)।

বর্তমান বিশ্বপ্রেক্ষাপটে আয়াতটির সামঞ্জস্যতা লক্ষণীয়। মদিনায় হিজরতের পর মুসলিমরা যখন ইহুদি, মুনাফিক ও আরবের মুশরিকদের পক্ষ থেকে বিভিন্ন পীড়া ও কষ্ট পেতে লাগল, তখন কোনো কোনো মুসলিম নবী করিম (সা.)-এর কাছে অভিযোগ করলে, মুসলিমদের সান্ত্বনা দেওয়ার জন্য এ আয়াত নাজিল হয় এবং রাসুল (সা.)ও বললেন যে তোমাদের আগের লোকদের তাদের মাথা থেকে পা পর্যন্ত করাত দিয়ে চেরা হতো এবং লোহার চিরুনি দিয়ে তাদের গোশত ও চামড়া ছিন্নবিচ্ছিন্ন করা হতো। কিন্তু এ অকথ্য জুলুম-নির্যাতন তাদেরকে তাদের দ্বিন থেকে ফেরাতে পারেনি। অতঃপর বলেন, আল্লাহর শপথ! মহান আল্লাহ এই দ্বিনকে এমনভাবে জয়যুক্ত করবেন যে, ...আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো ভয় থাকবে না। (বুখারি)

মদিনার মুসলমানরা যখন রাতে ঘুমাতে গেলে সকালে নিরাপদে জাগবে কিএমন আতঙ্কগ্রস্ত, তখন ঘোষিত হলো মহান আল্লাহর আশ্বাসবাণী—‘তোমাদের যারা ঈমান এনেছে ও সৎকর্ম করেছে আল্লাহ তাদের প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন, তিনি তাদের পৃথিবীর কর্তৃত্ব প্রদান করবেন; যেমন তিনি তাদের পূর্ববর্তীদের দিয়েছেন। তিনি তাদের দ্বিন প্রতিষ্ঠিত করবেন, যে দ্বিন তিনি তাদের জন্য মনোনীত করেছেন। আর ভয়ভীতির পরিবর্তে তাদের নিরাপত্তার ব্যবস্থা করবেন...। (সুরা : নুর, আয়াত : ৫৫)

পরিশেষে প্রিয় নবী (সা.)-এর একটি হাদিস উদ্ধৃত করছিখাদ্য গ্রহণকারীরা যেভাবে খাবারের পাত্রের চতুর্দিকে একত্র হয়, অচিরেই বিজাতিরা তোমাদের বিরুদ্ধে সেভাবেই একত্র হবে। এক ব্যক্তি বলল, সেদিন আমাদের সংখ্যা কম হওয়ার কারণে কি এরূপ হবে? তিনি বলেন, তোমরা বরং সেদিন সংখ্যাগরিষ্ঠ হবে; কিন্তু তোমরা হবে প্লাবনের স্রোতে ভেসে যাওয়া আবর্জনার মতো। আর আল্লাহ তোমাদের শত্রুদের অন্তর থেকে তোমাদের পক্ষ থেকে আতঙ্ক দূর করে দেবেন, তিনি তোমাদের অন্তরে ভীরুতা ভরে দেবেন। আরেক ব্যক্তি বলল, হে আল্লাহর রাসুল! আল-ওয়াহন ভীরুতা কী? তিনি বলেন, দুনিয়ার মোহ ও মৃত্যুকে অপছন্দ করা। (আবু দাউদ)

লেখক : সহকারী অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান

ইসলামিক স্টাডিজ, কাপাসিয়া ডিগ্রি কলেজ

কাপাসিয়া, গাজীপুর

 

 

মন্তব্য

গিবত করাও পাপ, শোনাও পাপ

মাইমুনা আক্তার
মাইমুনা আক্তার
শেয়ার
গিবত করাও পাপ, শোনাও পাপ

গিবত বা পরনিন্দা ইসলামের দৃষ্টিতে অত্যন্ত ঘৃণিত কাজ। তাই কেউ কেউ গিবত থেকে বিরত থাকার ব্যাপারে সতর্ক থাকলেও গিবত শোনাও যে একটি বড় পাপ, সে বিষয়ে আমরা উদাসীন। তাই নিজে গিবত করার ব্যাপারে সতর্ক থাকলেও অসতর্কতাবশত গিবতকারীদের গিবত শুনে পাপে লিপ্ত হয়। অথচ মহান আল্লাহ তাঁর বান্দাদের অনর্থক কথাবার্তা শোনা থেকে বিরত থাকার ব্যাপারে নির্দেশ দিয়েছেন।

পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ বলেন, আর যখন তুমি তাদেরকে দেখো, যারা আমার আয়াতগুলোর ব্যাপারে উপহাসমূলক সমালোচনায় রত আছে, তুমি তাদের থেকে মুখ ফিরিয়ে নাও, যতক্ষণ না তারা অন্য কথাবার্তায় লিপ্ত হয়। আর যদি শয়তান তোমাকে ভুলিয়ে দেয়, তবে স্মরণের পর জালিম সম্প্রদায়ের সঙ্গে বোসো না।

(সুরা : আনআম, আয়াত : ৬৮)

যারা এ ধরনের কথাবার্তা শোনা থেকেও নিজেদের বিরত রাখে পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ তাদের সুনাম করেছেন। ইরশাদ হয়েছে, আর তারা যখন অনর্থক কথাবার্তা শুনে তখন তা থেকে বিমুখ হয়।

(সুরা : কাসাস, আয়াত : ৫৫)

অর্থাৎ অর্থহীন ও অসার কাজএটি এমন সব কথা ও কাজকে বোঝায়, যা অপ্রয়োজনীয়, অনৈতিক কিংবা গুনাহের অন্তর্ভুক্ত। মুমিন কখনো এ ধরনের কাজে লিপ্ত হতে পারে না। পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ মুমিনের পরিচয় দিতে গিয়ে বলেছেন, যারা অহেতুক বিষয় পরিহার করে। (সুরা : মুমিনুন, আয়াত : ৩)

তাই কেউ আমাদের সামনে এসে কোনো গুনাহের কথা কিংবা পরনিন্দা ইত্যাদি করলে, আমাদের উচিত তাদের এড়িয়ে চলা।

আমাদের প্রিয় নবীজি (সা.)-এর সামনে কেউ কারো ব্যাপারে অনাকাঙ্ক্ষিত কিছু বলতে চাইলে তিনি প্রসঙ্গ ঘুরিয়ে দিতেন। এবং ওই ভাইয়ের সম্মান বাঁচানোর চেষ্টা করতেন। ইতিবাচক কথা বলতেন। ইতবান ইবনে মালিক (রা.) বলেন, একবার রাসুল (সা.) সকালে আমার কাছে এলেন। তখন এক লোক বলল, মালিক ইবনে দুখশুন কোথায়? আমাদের এক ব্যক্তি বলল, সে তো মুনাফিক; সে আল্লাহ ও তাঁর রাসুলকে ভালোবাসে না।

তা শুনে রাসুল (সা.) বলেন, তোমরা কি এ কথা বলোনি যে, সে আল্লাহর সন্তুষ্টি চেয়ে লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ বলে। তারা বলেন, হ্যাঁ। তিনি বলেন, যেকোনো বান্দা কিয়ামতের দিন ওই কথা নিয়ে উপস্থিত হবে, আল্লাহ তার ওপর জাহান্নাম হারাম করে দেবেন।

(বুখারি, হাদিস : ৬৯৩৮)

তা ছাড়া পরনিন্দা করার মাধ্যমে নিন্দিত ব্যক্তির সম্মানহানি করা হয়, তাকে খাটো করার চেষ্টা করা হয়, যে ব্যক্তি পরনিন্দাকারীকে যেকোনোভাবে তা থেকে বিরত করবে এবং যার নিন্দা করা হচ্ছিল তার সম্মান রক্ষার্থে ইতিবাচক কথা বলে তার সম্মান রক্ষার চেষ্টা করবে, কিয়ামতের দিন মহান আল্লাহ তাকে পুরস্কৃত করবেন। আবুদ দারদা (রা.) থেকে বর্ণিত, মহানবী (সা.) বলেছেন, যে লোক তার কোনো ভাইয়ের মানসম্মানের ওপর আঘাত প্রতিরোধ করে, কিয়ামত দিবসে আল্লাহ তাআলা তার মুখমণ্ডল থেকে জাহান্নামের আগুন প্রতিরোধ করবেন। তিরমিজি, হাদিস : ১৯৩১)

আমাদের সবার উচিত পরনিন্দা থেকে বিরত থাকা, কেউ অন্যের পরনিন্দা করলে তা শোনা থেকেও বিরত থাকা।

 

 

প্রাসঙ্গিক
মন্তব্য

মনীষীর কথা

শেয়ার
মনীষীর কথা

আমি ইমাম মালিক (রহ.) থেকে মহান কোনো ব্যক্তিকে দেখিনি। তিনি অনেক বেশি নামাজ ও রোজা আদায় করতেন, তবে তাঁর গোপন বহু আমল ছিল।

আবদুল্লাহ ইবনে মোবারক (রহ.)

 

 

 

প্রাসঙ্গিক
মন্তব্য

সর্বশেষ সংবাদ