<p>জীবন-জীবিকার অনিবার্য তাগিদে সবাই সম্পদ বৃদ্ধি করতে চায়। সম্পদ বাড়ানোর জন্য কৃষি, চাকরি, ব্যবসাসহ মানুষ বিভিন্ন কাজ করে। সম্পদ বৃদ্ধির আশায় মানুষ পরিবার ছেড়ে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় এবং এক দেশ থেকে অন্য দেশে চলে যায়। সম্পদ বৃদ্ধির লক্ষ্যে সব দেশের সরকার, মানবাধিকার সংস্থা ও বিভিন্ন এনজিও নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করে থাকে। ইসলাম এসব পদক্ষেপের যুক্তি অস্বীকার করে না। তবে ইসলাম এর সঙ্গে আরো কিছু অভ্যন্তরীণ উপায় সংযুক্ত করে। নিম্নে সেগুলো নিয়ে আলোচনা করা হলো—</p> <p><strong>সম্পদ বৃদ্ধির উপায় </strong></p> <p>হালাল পথে সম্পদ বৃদ্ধির বহু উপায় ইসলামে আছে। যেমন—</p> <p>১. তাকওয়া অবলম্বন করা : আল্লাহ বলেন, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহকে ভয় করে আল্লাহ তার পথ করে দেবেন। আর তাকে তার ধারণাতীত উৎস থেকে রিজিক দান করবেন। যে ব্যক্তি আল্লাহর ওপর নির্ভর করে তার জন্য আল্লাহই যথেষ্ট। আল্লাহ তার ইচ্ছা পূরণ করবেনই। আল্লাহ সব কিছুর জন্য স্থির করেছেন নির্দিষ্ট মাত্রা।’ (সুরা : তালাক, আয়াত : ২-৩)</p> <p>২. আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাওয়া : নুহ (আ.)-এর জবাবে পবিত্র কোরআনে এসেছে, ‘আমি বললাম, তোমাদের রবের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করো, তিনি তো মহাক্ষমাশীল। তিনি তোমাদের জন্য প্রচুর বৃষ্টি বর্ষণ করবেন, তিনি তোমাদের সমৃদ্ধ করবেন ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততিতে এবং তোমাদের জন্য স্থাপন করবেন উদ্যান ও প্রবাহিত করবেন নদীনালা।’</p> <p><strong>(সুরা : নুহ, আয়াত : ১০-১২)</strong></p> <p>৩. তাওবা করা : তাওবার অর্থ হচ্ছে পাপকে ঘৃণিত কর্ম জ্ঞান করে বর্জন করা। নিজ ভুলের জন্য লজ্জিত হওয়া এবং ভবিষ্যতে তা না করার দৃঢ় প্রতিজ্ঞা করা। হুদ (আ.)-এর ভাষায় কোরআনে এসেছে, ‘হে আমার জাতি! তোমরা তোমাদের রবের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করো, অতঃপর তাঁর দিকে নিবিষ্ট হও। তিনি তোমাদের ওপর প্রচুর বৃষ্টি বর্ষণ করবেন এবং তোমাদের শক্তি বর্ধিত করে দেবেন। আর তোমরা অপরাধী হয়ে মুখ ফিরিয়ে নিয়ো না।’ (সুরা : হুদ, আয়াত : ৫২)</p> <p>৪. তাওয়াক্কুল বা আল্লাহর ওপর ভরসা করা : শুধু আল্লাহর ওপর আন্তরিক নির্ভরতার নাম ভরসা। ওমর ইবনুল খাত্তাব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেছেন, তোমরা যদি আল্লাহর ওপর যথাযথ ভরসা করো তাহলে তোমাদের জীবিকা দেওয়া হবে সেভাবে যেভাবে পাখি রিজিকপ্র্রাপ্ত হয়। পাখি সকালে ক্ষুধার্ত অবস্থায় বের হয় এবং পেট পূরণ করে সন্ধ্যায় বাসায় ফেরে। (তিরমিজি, হাদিস : ২৩৪৪)</p> <p>৫. যথাযথভাবে আল্লাহর ইবাদত করা : ইবাদত রিজিকে বরকত আনে। মহান আল্লাহ বলেন, ‘আর যদি তারা তাওরাত ও ইঞ্জিলের এবং যে কিতাব (কোরআন) তাদের রবের পক্ষ থেকে তাদের প্রতি অবতীর্ণ হয়েছে তার যথারীতি আমলকারী হতো, তাহলে তারা ওপর (আকাশ) থেকে এবং পায়ের নিচ (জমিন) থেকে প্রাচুর্যের সঙ্গে ভক্ষণ করত। তাদের একদল তো সরল পথের পথিক; আর তাদের বেশির ভাগ এমন যে তাদের কার্যকলাপ অতি জঘন্য।’ (সুরা : মায়েদা, আয়াত : ৬৬)</p> <p>৬. শুকরিয়া জ্ঞাপন করা : কৃতজ্ঞতা সম্পদ বৃদ্ধি করে। পবিত্র কোরআনে এসেছে, ‘স্মরণ করো সেই সময়ের কথা, যখন তোমাদের রব ঘোষণা করেন, তোমরা কৃতজ্ঞ হলে তোমাদের অবশ্যই বাড়িয়ে দেব, আর অকৃতজ্ঞ হলে অবশ্যই আমার শাস্তি বড় কঠোর।’</p> <p><strong>(সুরা : ইবরাহিম, আয়াত : ৭)</strong></p> <p>৭. কর্জে হাসানা প্রদান করা : আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘দানশীল পুরুষ ও দানশীল নারী এবং যারা আল্লাহকে উত্তম ঋণ দান করে তাদের দেওয়া হবে বহুগুণ বেশি এবং তাদের জন্য আছে মহা পুরস্কার।’ (সুরা : হাদিদ, আয়াত : ১৮)</p> <p>৮. আল্লাহর রাস্তায় ব্যয় করা : আল্লাহর রাস্তায় ব্যয় করলে আল্লাহ সম্পদ বাড়িয়ে দেন। এই মর্মে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘বলে দাও, আমার রব তাঁর বান্দাদের মধ্যে যাকে ইচ্ছা তার রিজিক বাড়িয়ে দেন এবং যাকে ইচ্ছা সীমিত পরিমাণে দেন। তোমরা যা ব্যয় করবে তিনি তার প্রতিদান দেবেন। তিনি শ্রেষ্ঠ রিজিকদাতা।’</p> <p><strong>(সুরা : সাবা, আয়াত : ৩৯)</strong></p> <p>৯. বিবাহ করা : বিবাহ সম্পদ বৃদ্ধিতে সহায়ক। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘তোমাদের মধ্যে যারা বিপত্নীক পুরুষ বা বিধবা স্ত্রী—তাদের বিবাহ সম্পাদন করো এবং তোমাদের দাস ও দাসীদের মধ্যে যারা সৎ তাদেরও। তারা অভাবগ্রস্ত হলে আল্লাহ নিজ অনুগ্রহে তাদের অভাবমুক্ত করে দেবেন; আল্লাহ তো প্রাচুর্যময়, সর্বজ্ঞ।’ (সুরা : নুর, আয়াত : ৩২)</p> <p>১০. সম্পদ বৃদ্ধির জন্য দোয়া করা : ঈসা ইবনে মারইয়াম (আ.) সম্পদ বৃদ্ধির জন্য এই মর্মে দোয়া করেন, ‘হে আল্লাহ! হে আমাদের রব! আমাদের প্রতি আকাশ থেকে খাদ্য অবতীর্ণ করুন, যেন ওটা আমাদের জন্য অর্থাৎ আমাদের মধ্যে যারা প্রথমে এবং যারা পরে, সবার একটা আনন্দের বিষয় হয় এবং আপনার পক্ষ থেকে এক নিদর্শন হয়ে থাকে। আর আমাদের খাদ্য প্রদান করুন। আপনি তো সর্বোত্তম খাদ্য প্রদানকারী।’ (সুরা : মায়েদা, আয়াত : ১১৪)</p> <p>মহান আল্লাহ আমাদের রিজিকে প্রশস্ততা দান করুন।</p> <p> </p>