প্রায় ১০ বছর আগে মাদকের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করে তৎকালীন সরকার। এর ধারাবাহিকতায় ২০১৮ সালের ৪ মে ‘চলো যাই যুদ্ধে, মাদকের বিরুদ্ধে’ প্রতিপাদ্যে কঠোর অভিযান শুরু করে র্যাব। এরপর পুলিশসহ অন্য বাহিনীর সদস্যরাও দেশজুড়ে অভিযান শুরু করেন। অভিযানের প্রথম তিন সপ্তাহে কথিত ক্রসফায়ারে নিহত হন অন্তত ৪০ জন।
১৬ বছরে মামলা সাড়ে ১১ লাখ
মোবারক আজাদ

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর (ডিএনসি), পুলিশ, র্যাব, বিজিবি ও কোস্ট গার্ড—এই পাঁচ সংস্থার তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, গত ১৬ বছরে (২০০৯-২০২৪) ১১ লাখ ৫২ হাজার ৫৯৫টি মাদক মামলা হয় এবং গ্রেপ্তার করা হয় ১৪ লাখ ৬২ হাজার ৭৭৯ জনকে। এ সময় উল্লেখযোগ্য জব্দের মধ্যে ছিল ৩৮ কোটি ৭৮ লাখ ৫১ হাজার ৩৯৫ পিস ইয়াবা, হেরোইন চার হাজার ৫২৮ কেজি, কোকেন ১৯৫ কেজি, আফিম ৩৬৯ কেজি, গাঁজা ৯ লাখ ৮৫ হাজার ৪৫৯ কেজি, এক কোটি ৩২ লাখ ৮১ হাজার ৫৪৮ বোতল ও ২২ হাজার ৯৪৬ লিটার ফেনসিডিল), ৩২ লাখ আট হাজার ৪২৭ বোতল বিদেশি মদ, ৪৮ হাজার ৭৬৮ লিটার বিদেশি মদ ও ১৩ লাখ ৯৬ হাজার ৬২৩ ক্যান বিয়ার। আর ওই ১৬ বছরের ব্যবধানে ইয়াবা জব্দ বেড়েছে ১৭৩ গুণ, হেরোইনে বেড়েছে তিন গুণেরও বেশি, গাঁজা চার গুণ ও বিদেশি মদ আট গুণের বেশি।
আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর তথ্য বলছে, প্রতিদিনই বাস, প্রাইভেট কার, ট্রেন কিংবা জরুরি পণ্যের ট্রাক, জ্বালানি তেলের লরি, অ্যাম্বুল্যান্স ও পিকআপসহ বিভিন্ন মাধ্যমে অভিনব কায়দায় এক স্থান থেকে অন্য স্থানে মাদক সরবরাহ করছে কারবারিরা। এসবের মধ্যে রয়েছে ইয়াবা, হেরোইন, মদ, বিয়ার, গাঁজা, ফেনসিডিল ও আইসসহ অনন্ত ২৫ ধরনের মাদকদ্রব্য। সরবরাহ বেড়ে যাওয়ায় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী প্রতিদিন জব্দ করছে বিপুল পরিমাণ মাদকদ্রব্য। এসব ঘটনায় জড়িদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। মামলাও হচ্ছে ।
পাঁচটি সংস্থার তথ্য বলছে—চলতি বছরে ইয়াবা, ফেনসিডিল, বিদেশি মদ ও ইনজেকটিং ড্রাগ জব্দের পরিমাণ গত বছরের তুলনায় ব্যাপক বেড়েছে। যেখানে গত বছর প্রতি মাসে গড়ে ১৯ লাখ চার হাজার ৮১৩ পিস ইয়াবা জব্দ করা হয়, সেখানে চলতি বছরে প্রথম জানুয়ারি মাসেই দ্গুিণের বেশি (৩৯ লাখ ৮৫ হাজার ২০৫ পিস) ইয়াবা জব্দ করা হয়। গত বছর প্রতি মাসে গড়ে ৪৭ হাজার ৭৩৯ বোতল ফেনসিডিল জব্দ করা হলেও এ বছরের জানুয়ারিতে ৫৮ হাজার ৯৮৫ বোতল জব্দ করা হয়। এ ছাড়া গত বছর যেখানে প্রতি মাসে গড়ে তিন লিটার নেসিডিল জব্দ হয়, সেখানে চলতি বছরের জানুয়ারিতে ৬৮ লিটার ফেনসিডিল জব্দ করা হয়। গত বছরে প্রতি মাসে গড়ে মাদকের মামলা হয়েছে পাঁচ হাজার ৭০৫টি, এ বছরের জানুয়ারিতে হয়েছে ছয় হাজার ১৬৬টি। গত বছর গ্রেপ্তার হয়েছে সাত হাজার ৭১ জন। সে তুলনায় গত জানুয়ারিতে এক মাসেই গ্রেপ্তার হয় সাত হাজার ৫০৫ জন।
ডিএনসির একাধিক কর্মকর্তা জানান, তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে মাদকপাচারের বিষয়টি বেলুনের মতো। এক দিক দিয়ে কমলে অন্যদিক দিয়ে বাড়ে। হেরোইনের চালান বেড়েছে। গত বছর এই মাদকদ্রব্য যে পরিমাণ জব্দ হয়েছে, চলতি বছরেও যে পরিমাণ জব্দ করা হচ্ছে। এতে বলা যায় পরিস্থিতি ভয়াবহ। ডিএনসির পরিচালক (অপারেশনস অ্যান্ড গোয়েন্দা) তানভীর মমতাজ কালের কণ্ঠকে বলেন, গত দেড়-দুই বছরে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর বেশি দৃষ্টি ছিল ইয়াবা ও আইসে। এর মধ্যে হঠাৎ হেরোইন-কোকেন আসা বেড়েছে। অন্যান্য মাদকদ্রব্যের সঙ্গে এসব মাদকদ্রব্যও জব্দ করতে অভিযান জোরদার করা হচ্ছে। র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক লে. কর্নেল আশিকুর রহমান কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘মাদক কারবারিদের সম্ভাব্য গতিবিধির ওপর সব সময় র্যাবের গোয়েন্দা নজরদারি রয়েছে। কারবারিরা যেমন নতুন নতুন কৌশল অবলম্বন করছে. আমরাও সেভাবে অভিযান পরিচালনা করছি। এতে বিভিন্ন অপকৌশল করেও মাদক কারবারিরা রেহাই পাচ্ছে না। প্রতিদিনই মাদক কারবারি ও সরবরাহকারীদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে।
অপরাধ বিশ্লেষকরা বলছেন, প্রতিবছরের মাদক উদ্ধারের পরিসংখ্যানের চিত্রই বলে দিচ্ছে সার্বিকভাবে মাদকের বিস্তার দিন দিন বাড়ছে। কারণ আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী যে পরিমাণ মাদক জব্দ করে তার চেয়ে কয়েক গুণ বেশি তাদের চোখ ফাঁকি দিয়ে সেবীদের কাছে চলে যায়। মাদক নির্মূল করে দেশের তরুণদের সুস্থ জীবনে ফিরিয়ে আনতে মাদক কারবারের মূল হোতাদের আইনের আওতায় আনতে হবে। একই সঙ্গে পারিবারিক ও সামাজিকভাবে গড়ে তুলতে হবে সচেতনতা।
আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর একাধিক সূত্র বলছে, বেশির ভাগ অপরাধের পেছনে কোনো না কোনোভাবে রয়েছে মাদক। পারিবারিক নৃশংসতা, চুরি-ছিনতাইসহ ধর্ষণের মতো ঘটনার পেছনেও রয়েছে মাদক। আর মাদকসেবীদের বেশির ভাগই তরুণ। মাদকের বিরুদ্ধে যেভাবে গণসচেতনতা ও সামাজিক আন্দোলন দরকার তা হচ্ছে না।
টাঙ্গাইলের মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রিমিনোলজি অ্যান্ড পুলিশ সায়েন্স বিভাগের অধ্যাপক মুহাম্মদ উমর ফারুক কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘মাদকের চাহিদা থাকার কারণে বাড়ছে জোগান। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর দায়িত্বে যাঁরা আছেন তাঁরা নিজেরাই যদি এর সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন, তাহলে মাদকের জোগান বন্ধ করা কঠিন। তাই জিরো টলারেন্স নীতি বাস্তবায়নে অর্থনৈতিক প্রলোভন, রাজনৈতিক চাপ এড়িয়ে দায়িত্ব পালনে আরো কঠোর হতে হবে। একই সঙ্গে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীসহ সংশ্লিষ্ট সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থার উদ্যোগে মাদক উৎপাদন, বিক্রয় ও সরবরাহকারী— এই জায়গাগুলো বন্ধ না করা না গেলে মাদকের বিস্তার কমানো যাবে না।’
সম্পর্কিত খবর

ঢাকায় মার্কিন কর্মকর্তার সঙ্গে বৈঠক
শুল্ক নিয়ে আলোচনার জন্য যুক্তরাষ্ট্রে যাচ্ছেন বিশেষ দূত
নিজস্ব প্রতিবেদক

যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের দক্ষিণ এশিয়াবিষয়ক ডেপুটি অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি নিকোল চুলিক গতকাল মঙ্গলবার বাংলাদেশ সফর করেছেন। প্রথম দিনই তিনি প্রধান উপদেষ্টার আন্তর্জাতিকবিষয়ক বিশেষ দূত লুেফ সিদ্দিকীর সঙ্গে বৈঠক করেছেন। ওই বৈঠকের পর গতরাতে লুেফ সিদ্দিকী ফেসবুকে জানান, আগামী সপ্তাহে তিনি যুক্তরাষ্ট্রে যাচ্ছেন। লুেফ সিদ্দিকী লিখেছেন, ‘আজ আমার দপ্তরে উপসহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিকোল চুলিক এবং তাঁর প্রতিনিধিদলকে স্বাগত জানাই।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গত ২ এপ্রিল বিশ্বের প্রায় ৬০টি দেশ ও অঞ্চলের পণ্যের ওপর পাল্টা শুল্ক আরোপ করেন। তিনি অনেক দেশের ওপর উচ্চ হারে শুল্ক আরোপ করেছিলেন।
বাংলাদেশের পক্ষ থেকে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস ৭ এপ্রিল প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে চিঠি পাঠিয়ে পাল্টা শুল্ক তিন মাস স্থগিত রাখার অনুরোধ করেছিলেন। বাণিজ্য উপদেষ্টা সেখ বশির উদ্দিনও সেদিন যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য প্রতিনিধি (ইউএসটিআর) জেমিসন গ্রিয়ারের কাছে চিঠি পাঠান।
বাংলাদেশের চিঠি দুটি পাঠানোর দুই দিন পর, অর্থাৎ ৯ এপ্রিল ইউএসটিআরের সঙ্গে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের মধ্যে অনলাইন বৈঠক হয়। বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে বাংলাদেশে পণ্য আমদানিতে শুল্ক ও অশুল্ক বাধা দূর করা এবং বাণিজ্যঘাটতি কমাতে বাংলাদেশ পরিকল্পনার বিষয়ে ইউএসটিআর জানতে চায়।
ডেপুটি অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি নিকোল চুলিকের সহকর্মী যুক্তরাষ্ট্রের পূর্ব এশীয় ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলবিষয়ক ডেপুটি অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি অ্যান্ড্রু হেরাপের আজ বুধবার ভোরে ঢাকায় আসার কথা। বাংলাদেশে অ্যান্ড্রু হেরাপের সফরসঙ্গী হিসেবে মায়ানমারে ভারপ্রাপ্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত সুসান স্টিভেনসনও আসছেন।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলেন, গত জানুয়ারিতে যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প দায়িত্ব নেওয়ার পর ওই জ্যেষ্ঠ মার্কিন কর্মকর্তার এটিই প্রথম ঢাকা সফর। এ সফরে বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতি, সংস্কার ও গণতান্ত্রিক উত্তরণ, ট্রাম্পের পাল্টা শুল্ক আরোপ, রোহিঙ্গা সংকটে সহায়তা ও মায়ানমার পরিস্থিতিসহ ঢাকা-ওয়াশিংটন সম্পর্কের নানা বিষয়ে আলোচনা হবে।

লন্ডনে খালেদা জিয়ার সঙ্গে জামায়াত আমিরের সাক্ষাৎ
নিজস্ব প্রতিবেদক

লন্ডনে সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন জামায়াতের আমির ডা. শফিকুর রহমান ও নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের। রবিবার স্থানীয় সময় সকাল ১০টায় তারেক রহমানের লন্ডনের বাসায় এই সাক্ষাৎ হয়েছে বলে জানা গেছে। এ সময় তারেক রহমানও উপস্থিত ছিলেন।
বিএনপি ও জামায়াতের মধ্যে শীতল সম্পর্কের মধ্যে এই বৈঠক খুবই তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করে হচ্ছে।
প্রায় দুই সপ্তাহের সফর শেষে সোমবার সকালে জামায়াতের আমির শফিকুর রহমান দেশে ফিরেছেন। আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের এখনো দেশে ফেরেননি।
লন্ডনে খালেদা জিয়ার বড় ছেলে ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বাসায় আছেন খালেদা জিয়া।
খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাতের বিষয়ে জানতে চাইলে জামায়াত আমির গণমাধ্যমকে বলেন, বেগম জিয়ার সঙ্গে তাঁর সাক্ষাৎ হয়েছে।
তারেক রহমানের সঙ্গে কোনো কথা হয়েছে কি না, জানতে চাইলে জামায়াতের আমির বলেন, দুজন মানুষ একসঙ্গে হলে তো অনেক কথাই হয়। অনেক কথাই হয়েছে। তবে তিনি এর বেশি কিছু আর বলতে চাননি।
ধারণা করা হচ্ছে, স্বাভাবিকভাবেই বৈঠকে আগামী নির্বাচন নিয়ে আলোচনা হয়েছে। নির্বাচন কবে হবে, তা নিয়ে দুই দলের মধ্যে যে দূরত্ব এই বৈঠকের মাধ্যমে তা নিরসন হতে পারে।
তবে বিএনপির স্থায়ী কমিটি একাধিক নেতার কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলেও তাঁরা কিছু বলতে পারেননি।
জামায়াতের আমির শফিকুর রহমান গত ৪ এপ্রিল ব্রাসেলস সফরে যান। এই সফরে তাঁর সঙ্গে ছিলেন দলের নায়েবে আমির আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের ও আমিরের আন্তর্জাতিক বিষয়ক উপদেষ্টা মাহমুদুল হাসান।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদর দপ্তরে একাধিক বৈঠক ও সাক্ষাৎ কর্মসূচি ছিল জামায়াত আমিরের। সফরকালে ইউরোপীয় পার্লামেন্টের সাউথ এশিয়ান ককাসের এমপিদের সঙ্গে বৈঠক, ইইউয়ের ইন্টারন্যাশনাল অ্যাফেয়ার্সের সাউথ এশিয়া ডেস্কের কর্মকর্তাদের সঙ্গে পৃথক বৈঠক হয় জামায়াত প্রতিনিধিদলের।
ব্রাসেলস থেকে জামায়াতের আমির শফিকুর রহমান ও নায়েবে আমির আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের লন্ডনে যান।
এদিকে খালেদা জিয়ার সঙ্গে জামায়াত আমির সাক্ষাৎ নিয়ে বিএনপির চেয়ারপারসনের সাবেক প্রেসসচিব মারুফ কামাল খান গত রাতে তাঁর ফেসবুকে একটি পোস্ট দেন। পোস্টে তিনি বলেন, ‘বেগম জিয়ার সঙ্গে জামায়াতের দুই শীর্ষ নেতার সাক্ষাতে কী কী বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে, তা জানা যায়নি। দুই ডাক্তারের (শফিকুর রহমান ও সৈয়দ আবদুল্লাহ আবু তাহের) এই সাক্ষাৎ রাজনীতির রসায়নে নতুন কোনো ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করবে, নাকি নিছক সৌজন্য সাক্ষাৎ হয়েই থাকবে, তা বুঝতে হলে আমাদের চোখ রাখতে হবে সামনের দিকে।’
মারুফ কামাল খান আরো লেখেন, বেগম জিয়া উন্নত চিকিৎসার জন্য বিলেত যাওয়ার আগে সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামানও সস্ত্রীক তাঁর বাসায় গিয়ে দেখা করেছিলেন। সেই সাক্ষাৎকার নিয়েও বিশদ কিছু জানা যায়নি।

প্রথমবারের মতো ছোট হচ্ছে বাজেট
নিজস্ব প্রতিবেদক

স্বাধীনতার পর এবারই প্রথম আগের বছরের তুলনায় নতুন বাজেটের আকার কমছে। উচ্চাভিলাষী বাজেটের ধারাবাহিকতা থেকে সরে এই পরিকল্পনা করতে যাচ্ছে অন্তর্বর্তী সরকার। আগামী অর্থবছরের বাজেট ব্যয়ের আকার চলতি অর্থবছরের চেয়ে ছোট হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, আগামী অর্থবছরের ব্যয়ের পরিমাণ কমিয়ে ৭.৯০ লাখ কোটি টাকা নির্ধারণ করতে যাচ্ছে অর্থ মন্ত্রণালয়, যা চলতি অর্থবছরের মূল বাজেটের তুলনায় সাত হাজার কোটি টাকা কম।
গতকাল মঙ্গলবার অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত আর্থিক, মুদ্রা ও বিনিময় হার সংক্রান্ত কো-অর্ডিনেশন কাউন্সিলের সভায় আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটের আকার ৭.৯০ লাখ কোটি টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। চলতি অর্থবছরের মূল বাজেটের আকার ছিল ৭.৯৭ লাখ কোটি টাকা।
ভার্চুয়ালি অনুষ্ঠিত সভায় পরিকল্পনা, বাণিজ্য, খাদ্য উপদেষ্টাসহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সচিব, এনবিআর চেয়ারম্যানসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা যোগ দেন।
অর্থ মন্ত্রাণলয় সূত্র জানায়, নতুন বাজেটের আকার কমলেও পরিচালন বা অনুন্নয়ন খাতে বরাদ্দ বেড়ে দাঁড়াচ্ছে পাঁচ লাখ ৪৫ হাজার কোটি টাকা। চলতি বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ আছে পাঁচ লাখ ছয় হাজার ৯৭১ কোটি টাকা।
অর্থ বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, বাজেটের আকার কমানো হয়েছে মূলত উন্নয়ন খাতে।
আওয়ামী লীগ সরকারের সময় নেওয়া বেশির ভাগ মেগাপ্রকল্পের বাস্তবায়ন সম্পন্ন হয়েছে এবং বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার মেগাপ্রকল্প গ্রহণ না করার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
এ ছাড়া আওয়ামী লীগ সরকারের সময় রাজনৈতিক বিবেচনায় নেওয়া প্রকল্পগুলো বাতিল করায় আগামী অর্থবছর প্রকল্পের সংখ্যা কমে যাচ্ছে। ফলে নতুন অর্থবছর উন্নয়ন প্রকল্পে ব্যয় কমবে।
চলতি অর্থবছরের বাজেটে এনবিআরের রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪.৮০ লাখ কোটি টাকা। তবে লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় রাজস্ব আহরণ অনেক কম হওয়ায় সংশোধিত বাজেটে লক্ষ্যমাত্রা প্রায় ৫০ হাজার কোটি টাকা কমানো হয়েছে।
আগামী অর্থবছরের বাজেটে ঘাটতি প্রাক্কলন করা হয়েছে ২.২৬ লাখ কোটি টাকা। মূলত চড়া সুদে অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে ঋণ গ্রহণ কমাতে ঘাটতির লক্ষ্যমাত্রা সীমিত রাখার চেষ্টা করছে অর্থ বিভাগ। এর মধ্যে অর্ধেকেরও বেশি বিদেশি উৎস থেকে এবং বাকিটা ব্যাংক ও সঞ্চয়পত্র থেকে ঋণ করবে সরকার।
নতুন অর্থবছরের বাজেটে জিডিপির প্রবৃদ্ধি ৫.৫% এবং মূল্যস্ফীতির হার ৬.৫% প্রাক্কলন করছে অর্থ বিভাগ। চলতি অর্থবছরের বাজেটে জিডিপির প্রবৃদ্ধি ৬.৫% এবং মূল্যস্ফীতি ৬% প্রাক্কলন করা হয়েছিল। অবশ্য সংশোধিত বাজেটে জিডিপির প্রবৃদ্ধি ৫.২৫% ও মূল্যস্ফীতি ৮.৫% প্রাক্কলন করেছে অর্থ বিভাগ।
জানা গেছে, মূলত মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সংকুচিত মুদ্রানীতির সঙ্গে সমন্বয় করে সরকারি ব্যয় কমানো এবং বাজেট ‘বাস্তবায়নযোগ্য’ করতেই আকার কমানো হচ্ছে। কর্মকর্তারা আরো বলেন, বাজেটের আকার কমানো হলেও সমাজে বৈষম্য কমানোর পাশাপাশি মূল্যস্ফীতির চাপে নিম্ন আয়ের মানুষদের স্বস্তি দিতে সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচিতে উপকারভোগী ও কিছু ক্ষেত্রে ভাতার পরিমাণ বাড়ানোর উদ্যোগ থাকছে। একই সঙ্গে কৃষি, স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও প্রযুক্তি খাতকে অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে।
চলতি বাজেটে ঘাটতি ছিল দুই লাখ ৫৬ হাজার কোটি টাকা।

এনবিআরের প্রজ্ঞাপন
ভারত থেকে সুতা, গুঁড়া দুধসহ একাধিক পণ্য আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা
নিজস্ব প্রতিবেদক

ভারত, নেপাল ও ভুটান থেকে সুতাসহ বেশ কয়েকটি পণ্যের ওপর আমদানি নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। ফলে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা ও বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুবিধা আর থাকছে না। এনবিআরের প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী সুতা, গুঁড়া দুধ, টোব্যাকো, নিউজপ্রিন্ট, বিভিন্ন ধরনের কাগজ, কাগজের বোর্ডসহ একাধিক পণ্য আমদানিতে এ নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। এনবিআরের প্রকাশিত প্রজ্ঞাপনটি অবিলম্বে কার্যকর হবে বলে জানানো হয়েছে।
প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, ভারত থেকে ডুপ্লেক্স বোর্ড, নিউজপ্রিন্ট, ক্রাফট পেপার, সিগারেট পেপার, মাছ, সুতা, আলু, গুঁড়া দুধ, টোব্যাকো, রেডিও-টিভির পার্টস, সাইকেল ও মোটর পার্টস, ফরমিকা শিট, সিরামিকওয়্যার, স্যানিটারিওয়্যার, স্টেইনলেস স্টিলওয়্যার, মার্বেল স্ল্যাব ও টাইলস এবং মিক্সড ফ্যাব্রিকস—এই পণ্যগুলো আমদানি নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
তবে নেপাল ও ভুটানে উৎপাদিত এবং প্রক্রিয়াজাত সুতা ও আলু ছাড়া অন্য সব পণ্য আমদানি করা যাবে। ভ্যাট নিবন্ধিত বিড়ি উৎপাদনকারী শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলো কাঁচামাল হিসেবে তামাক ডাঁটা আমদানি করতে পারবে বলে প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ রয়েছে।
এনবিআর সূত্রে জানা গেছে, স্থানীয় শিল্পকে সুরক্ষা এবং অবৈধ রি-এক্সপোর্ট বা রিরাউটিং রোধ করতেই এই নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে।
এর আগে গত ফেব্রুয়ারি মাসে দেশে স্থলবন্দর দিয়ে ভারত থেকে বস্ত্র খাতের অন্যতম কাঁচামাল সুতা আমদানি বন্ধের দাবি জানায় বস্ত্রশিল্প মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশন (বিটিএমএ)। এরপর গত মার্চ মাসে এক চিঠিতে পোশাকশিল্পে দেশে তৈরি সুতার ব্যবহার বাড়াতে স্থলবন্দর দিয়ে পোশাকশিল্পের সুতা আমদানি বন্ধ করার জন্য এনবিআরকে ব্যবস্থা নিতে বলেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন।
তখন ট্যারিফ কমিশন থেকে এনবিআর চেয়ারম্যানকে পাঠানো চিঠিতে দেশীয় টেক্সটাইল শিল্পের স্বার্থ সংরক্ষণে সব সীমান্তসংলগ্ন সড়ক ও রেলপথ এবং স্থলবন্দর ও কাস্টম হাউসের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুসারে সুতা কাউন্ট নির্ণয়ে যথাযথ অবকাঠামো প্রস্তুত না হওয়া পর্যন্ত আগের মতো সমুদ্রবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুপারিশ করা হয়।
এর পরিপ্রেক্ষিতে এনবিআর চেয়ারম্যান আবদুর রহমান খান এসংক্রান্ত আদেশ জারি করেন। তবে স্থলপথ ছাড়া সমুদ্রপথে বা অন্য কোনো পথে সুতা আমদানি করা যাবে।
জানা গেছে, ভারতের উত্তর ও দক্ষিণ অঞ্চলে উৎপাদিত সুতা কলকাতায় গুদামজাত করা হয়। এরপর সেখান থেকে সুতা বাংলাদেশে পাঠানো হয়। এসব সুতা তুলনামূলক কম দামে বাংলাদেশে প্রবেশ করছে।
এ ছাড়া চীন, তুরস্ক, উজবেকিস্তান এবং দেশে উৎপাদিত সুতার দাম প্রায় একই রকম হলেও স্থলবন্দর দিয়ে আসা ভারতীয় সুতার দাম অনেক কম থাকে। অর্থাৎ স্থলবন্দর দিয়ে আমদানি করা সুতা চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসে ঘোষিত দামের চেয়ে অনেক কম দামে আসে। এতে দেশের সুতা উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো প্রতিযোগিতায় টিকতে পারছে না।