<p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">পবিত্র কোরআন হলো মহান আল্লাহ তাআলার বাণী ও ইসলামী শরিয়তের মূল উৎস। এটা মানুষের হেদায়াত, ধর্মীয় উপদেশ ও আসমানি শিক্ষা-দীক্ষার প্রধান ভিত্তি ও মৌলিক স্তম্ভ। মানুষের দুনিয়াবি কল্যাণ, আখিরাতের মুক্তি ও কামিয়াবির শ্রেষ্ঠ উপাদান হলো কোরআন অধ্যয়ন করা এবং কোরআনি শিক্ষা ও হেদায়াতের দ্বারা জীবনকে আলোকিত করা। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">এই পবিত্র কোরআনে আল্লাহপ্রদত্ত সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আদেশ ও তাৎপর্যপূর্ণ বিধান হলো নামাজের আদেশ। এ কথা সবাই জানে-বুঝে, ঈমানের পর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত ও ইসলামী বিধান হচ্ছে নামাজ। ইসলামের পঞ্চ স্তম্ভের দ্বিতীয়টি হলো নামাজ পড়া। আল্লাহ তাআলা পবিত্র কোরআনে এই নামাজের ব্যাপারে বিভিন্নভাবে গুরুত্বারোপ করেছেন এবং বিচিত্ররূপে নামাজের তাগিদ করেছেন। যথাযথ গুরুত্বের সঙ্গে সময়মতো নামাজ পড়ার আদেশ করেছেন। নিম্নে এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">—</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">পবিত্র কোরআনে কোনো বিষয়ে গুরুত্বারোপের সহজ-সরল পন্থা এবং নারী-পুরুষ উভয়কে সম্বোধনের স্বাভাবিক বর্ণনাভঙ্গি হলো আদেশ করা। নামাজের প্রতি তাগিদ ও বেশি গুরুত্বারোপের জন্য এ পদ্ধতিটি পবিত্র কোরআনে অনেক ব্যবহৃত হয়েছে এবং বারবার বিভিন্নভাবে করা হয়েছে। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">পবিত্র কোরআনে কখনো কখনো একবচনের শব্দে নবী (সা.)-কে সম্বোধন করে এই নামাজের আদেশ করা হয়েছে। আল্লাহ তাআলা তাঁর নবী (সা.)-কে সম্বোধন করে বলেন, </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">তুমি সূর্য হেলার সময় থেকে রাতের অন্ধকার পর্যন্ত নামাজ কায়েম করো এবং ফজরের নামাজ (কায়েম করো)। নিশ্চয়ই ফজরের নামাজে সমাবেশ ঘটে।</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"> (সুরা বনি ইসরাঈল, আয়াত : ৭৮)</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">সূর্য হেলে পড়ার পর থেকে রাতের অন্ধকার পর্যন্ত জোহর, আসর, মাগরিব ও এশার নামাজের কথা বলা হয়েছে। আর ফজরের নামাজকে আলাদাভাবে উল্লেখ করা হয়েছে, যা এর বিশেষ মর্যাদা ও গুরুত্ব নির্দেশ করে। এই নামাজের বিশেষত্বের আরেকটি দিক হলো, এ নামাজের সময় ফেরেশতাদের সমাবেশ ঘটে। যারা আল্লাহর দরবারে বান্দার নামাজের ব্যাপারে সাক্ষ্য প্রদান করে। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">এ প্রসঙ্গে অন্য আয়াতে ইরশাদ হয়েছে, </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">এবং তুমি নামাজ কায়েম করো দিনের দুই প্রান্তে ও রাতের কিছু অংশে। নিশ্চয়ই নেক আমল মন্দ কর্মগুলোকে দূর করে দেয়। স্মরণকারীদের জন্য এটি একটি স্মারক।</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"> (সুরা হুদ, আয়াত : ১১৪) </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">এই আয়াতে বর্ণিত দিনের দুই প্রান্ত ও রাতের কিছু অংশের নামাজ হলো ফজর, জোহর, আসর, মাগরিব ও এশা। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">পবিত্র কোরআনে নামাজের আদেশ করা হয়েছে কখনো বহুবচনের শব্দে। যেমন</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">—</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">পবিত্র কোরআনের সুরা বাকারায় ইরশাদ হয়েছে, </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">এবং তোমরা নামাজ কায়েম করো এবং রুকুকারীদের সঙ্গে রুকু করো।</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"> (সুরা বাকারা, আয়াত : ৪৩) </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">একই সুরার অন্যত্র ইরশাদ হয়েছে, </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">এবং তোমরা নামাজ কায়েম করো ও জাকাত আদায় করো এবং (স্মরণ রেখো) তোমরা যেকোনো সৎকর্ম নিজেদের কল্যাণার্থে সম্মুখে প্রেরণ করবে, আল্লাহর কাছে তা পাবে। নিশ্চয়ই তোমরা যেকোনো কাজ করো আল্লাহ তা দেখছেন।</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"> (সুরা বাকারা, আয়াত : ১১০) </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">নবী (সা.)-কে সম্বোধন করে আল্লাহ তাআলা অন্য আয়াতে ইরশাদ করেছেন, </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">ওহির মাধ্যমে তোমার প্রতি যে কিতাব অবতীর্ণ করা হয়েছে, তা তিলাওয়াত করো ও নামাজ কায়েম করো। নিশ্চয়ই নামাজ অশ্লীল ও অন্যায় কাজ থেকে বিরত রাখে আর আল্লাহর জিকিরই সবচেয়ে বড়। আর তোমরা যা করো, আল্লাহ তা জানেন।</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"> (সুরা আনকাবুত, আয়াত : ৪৫)</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">লোকমান হাকিম (রহ.) তাঁর সন্তানকে নানা বিষয়ের উপদেশ দানের কথা আল্লাহ তাআলা পবিত্র কোরআনে উল্লেখ করেছেন। প্রিয় সন্তানকে প্রদত্ত অন্যতম একটি গুরুত্বপূর্ণ উপদেশ ছিল নামাজের ব্যাপারে। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেন, </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">হে বৎস, নামাজ কায়েম করো, মানুষকে সৎ কাজের আদেশ করো, মন্দ কাজে বাধা দাও এবং তোমার যে কষ্ট দেখা দেয়, তাতে সবর করো। নিশ্চয়ই এটা অত্যন্ত হিম্মতের কাজ।</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"> (সুরা লুকমান, আয়াত : ১৭) </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">এই আয়াতেও নামাজের আদেশ করা হয়েছে। </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">নিশ্চয় এটা অত্যন্ত হিম্মতের কাজ।</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"> কেউ কেউ এই আয়াতের অর্থ করেছেন, </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">এগুলো বাধ্যতামূলক বিষয়াবলির অন্তর্ভুক্ত। অর্থাৎ এ বিষয় তিনটি তোমাদের প্রতি অবধারিত করে দেওয়া হয়েছে। এগুলো ঐচ্ছিক ব্যাপার নয় যে পালন না করলেও চলবে। বরং এগুলো নিজের দ্বিন ও মানবিক পূর্ণতা বিধানের জন্য অবশ্য পালনীয় হুকুম।  </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">কোরআন-হাদিসে ইসলামী বিধান বর্ণনার ক্ষেত্রে সাধারণত পুরুষদের সম্বোধন করেই আদেশ করা হয়। যাতে পুরুষের পাশাপাশি নারীরাও সেই সব বিধানের অন্তর্ভুক্ত থাকে। এতদসত্ত্বেও পবিত্র কোরআনে নারীদের সম্বোধন করে নামাজ কায়েম করা এবং জাকাত প্রদান করার আদেশ করা হয়েছে। নবীপত্নীদের বিশেষভাবে সম্বোধন করে সব নারীর উদ্দেশে আল্লাহ তাআলা বলেছেন, </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">হে নবী পত্নীরা, তোমরা সাধারণ কোনো নারীর মতো নও। যদি তোমরা তাকওয়া অবলম্বন করো, তাহলে তোমরা কোমলভাবে কথা বলো না, অন্যথায় যার অন্তরে ব্যাধি আছে, সে লালসায় পড়বে। আর তোমরা ন্যায়সংগত কথা বলো এবং তোমাদের ঘরে অবস্থান করো। প্রাচীন জাহিলিয়াতের মতো সৌন্দর্য প্রদর্শন করে বেড়িও না। এবং নামাজ কায়েম ও জাকাত আদায় করো। আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের আনুগত্য করো। হে নবী পরিবার, আল্লাহ তো চান তোমাদের থেকে অপবিত্রতা দূর করতে এবং তোমাদের উত্তমভাবে পবিত্র করতে।</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"> (সুরা আহজাব, আয়াত : ৩২-৩৩)  </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">আল্লাহ তাআলা সবাইকে যথাযথ গুরুত্বের সঙ্গে আল্লাহর আদেশ তথা নামাজ পড়ার তাওফিক দান করুন। আমিন </span></span></span></span></p> <p> </p>