<p>ঈমান অতি মূল্যবান জিনিস। এটি পাকাপোক্ত করা সবার জন্য জরুরি। ঈমানের অর্থ জ্ঞাপক দ্বিতীয় কালেমা শাহাদাত। এর দুটি অংশ। প্রথমাংশে আল্লাহর একত্ববাদের সাক্ষ্য এবং দ্বিতীয়াংশে নবী মুহাম্মাদ (সা.)-এর রিসালাতের সাক্ষ্য প্রদান করতে হয়। এই সাক্ষ্য প্রদানের মাধ্যমে সমস্ত কুফর, শিরক ও বিদআত মুক্ত জীবন গঠনের ঘোষণা দেওয়া হয়। কালেমা শাহাদাত ইসলামে প্রবেশের প্রথম ভিত্তি। ইবনে উমর (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেছেন, ইসলাম পাঁচটি বুনিয়াদের ওপর প্রতিষ্ঠিত। এই কথার সাক্ষ্য দেওয়া যে আল্লাহ ছাড়া কোনো ইলাহ নেই এবং মুহাম্মাদ (সা.) আল্লাহর রাসুল, নামাজ কায়েম করা, জাকাত প্রদান করা, রমজানের রোজা পালন করা, বাইতুল্লাহর হজ করা। (তিরমিজি, হাদিস : ২৬০৯)</p> <p>কালেমা শাহাদাতের ফজিলত<br /> অনেক হাদিসে কালেমা শাহাদাতের গুরুত্ব ও ফজিলত বর্ণনা করা হয়েছে। নিয়মিত এই কালেমা পাঠের ফলে কিয়ামতের ময়দানে মুক্তি পাওয়া যাবে। আব্দুল্লাহ ইবনে আমর ইবনে আস (রা.) বলেন, আমি রাসুল (সা.)-কে বলতে শুনেছি, আল্লাহ তাআলা কিয়ামতের দিন আমার উম্মতের এক ব্যক্তিকে সমস্ত সৃষ্টির সম্মুখীন আলাদা করে হাজির করবেন। তার সামনে ৯৯টি (আমলের) নিবন্ধন খাতা খুলে দেবেন। এক একটি নিবন্ধন খাতা হবে যত দূর দৃষ্টি যায় তত দূর পর্যন্ত বিস্তৃত। এরপর তিনি তাকে ববেন, এর একটি কিছুও কি অস্বীকার করতে পার? আমার সংরক্ষণকারী লিপিকাররা (কিরামান কাতিবিন) কি তোমার ওপর কোনো জুলুম করেছে? লোকটি বলবে, না। হে আমার পরওয়ারদিগার! আল্লাহ তাআলা বলবেন, তোমার কিছু বলার আছে কি? লোকটি বলবে, না। হে পরওয়ারদিগার! তিনি বলবেন, হ্যাঁ আমার কাছে তোমার একটি নেকি আছে। আজ তো তোমার ওপর কোনো জুলুম হবে না। তখন একটি ছোট্ট কাগজের টুকরা বের করা হবে। এতে আছে আশহাদু আল্লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়া আশহাদু আন্না মুহাম্মাদান আবদুহু ওয়া রাসুলুহু। অর্থাৎ আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে আল্লাহ ছাড়া কোনো ইলাহ নেই। আরো সাক্ষ্য দিচ্ছি যে মুহাম্মাদ (সা.) তাঁর বান্দা ও রাসুল।<br /> আল্লাহ তাআলা বলবেন, চলো এর ওজনের ক্ষেত্রে হাজির হও। লোকটি বলবে, ওহে আমার রব! এই একটি ছোট্ট টুকরা আর এতগুলো নিবন্ধন খাতা কোথায় কী? তিনি বলবেন, তোমার ওপর অবশ্যই কোনো জুলুম করা হবে না। অনন্তর সব নিবন্ধন খাতা এক পাল্লায় রাখা হবে। আর ছোট্ট সেই টুকরাটিকে আরেক পাল্লায় রাখা হবে। (আল্লাহর কি মহিমা) সব দপ্তর ওজনে হালকা হয়ে যাবে। আর ছোট টুকরাটি হয়ে পড়বে ভারী। আল্লাহর নামের মোকাবেলায় কোনো জিনিস ভারী হবে না। (তিরমিজি, হাদিস : ২৬৩৯; মুস্তাদরাক হাকেম, হাদিস : ১৯৭৩)</p> <p>কালেমা শাহাদাতের আমল<br /> নামাজ-কালাম শুদ্ধ হওয়ার জন্য অজু পূর্বশর্ত। অজু করার পর আকাশ বা ওপরের দিকে তাকিয়ে কালেমা শাহাদাত পাঠ করা মুস্তাহাব। উকবা ইবনে আমির (রা.) বলেন, আমাদের উট চরানোর দায়িত্ব নিজেদের ওপর ছিল। আমার পালা এলে আমি উট চরিয়ে বিকেলে ফিরিয়ে নিয়ে এলাম। তারপর রাসুল (সা.)-কে পেলাম। তিনি দাঁড়িয়ে লোকদের সঙ্গে কথা বলছেন। তখন আমি তাঁর এ কথা শুনতে পেলাম, যে মুসলমান সুন্দররূপে অজু করে তারপর দাঁড়িয়ে দেহ ও মনকে পুরোপুরি তাঁর প্রতি নিবদ্ধ রেখে দুই রাকাত নামাজ আদায় করে তার জন্য জান্নাত ওয়াজিব হয়ে যায়। উকবা বলেন, কথাটি শুনে আমি বলে উঠলাম ওহ, কথাটি কত উত্তম! তখন আমার সামনের একজন বলতে লাগলেন, আগের কথাটি আরো উত্তম। আমি সেদিকে তাকিয়ে দেখলাম তিনি উমর (রা.)। তিনি আমাকে বললেন, তোমাকে দেখেছি এইমাত্র এসেছ । রাসুল (সা.)-এর আগে বলেছেন, তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি কামিল বা পূর্ণরূপ অজু করে পাঠ করবে আশহাদু আল্লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়া আশহাদু আন্না মুহাম্মাদান আবদুহু ওয়া রাসুলুহু। তার জন্য জান্নাতের আটটি দরজা খুলে যাবে এবং যে দরজা দিয়ে ইচ্ছা সে জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে। (মুসলিম, হাদিস : ৪৪৬; ইবনে মাজাহ, হাদিস : ৪৪৬)</p>