<p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">আল্লামা আব্দুল লতিফ চৌধুরী ফুলতলী (রহ.) ছিলেন বহুমাত্রিক প্রতিভার অধিকারী এক ক্ষণজন্মা মনীষী। ইসলামের এই অকুতোভয় বীর ১৯১৩ সালে সিলেটের জকিগঞ্জের ফুলতলী গ্রামে সম্ভ্রান্ত পরিবারে জন্ম গ্রহণ করেন। তিনি সুলতানে সিলেট শাহজালালের (রহ.) অন্যতম সাথি শাহ কামালের (রহ.) বংশধর। যদিও তাঁর নাম আব্দুল লতিফ ফুলতলী, তবে ভক্ত-মুরিদদের কাছে তিনি </span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif""><span style="color:black">‘</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">সাহেব কেবলাহ</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif""><span style="color:black">’</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black"> নামেই বেশি পরিচিত ছিলেন।</span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">আল্লামা ফুলতলী (রহ.) ছিলেন বর্ণাঢ্য ও গৌরবময় রাজনৈতিক জীবনের অধিকারী। চল্লিশের দশকে উপমহাদেশের মুসলমানদের মধ্যে নবজাগরণের জোয়ার সৃষ্টি হয়। আল্লামা ফুলতলী (রহ.) সেখানেও প্রথম সাড়া দেওয়া ব্যক্তিদের অন্যতম। মুসলিম ভারতের যুগ সন্ধিক্ষণে </span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif""><span style="color:black">‘</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">জমিয়তে উলামায়ে হিন্দে</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif""><span style="color:black">’</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black"> যোগদানের মাধ্যমে তিনি রাজনৈতিক জীবনের সূচনা করেন। উপমহাদেশে ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে যে কয়টি সংগঠন মুখ্য ভূমিকা পালন করেছিল জমিয়তে উলামায়ে হিন্দ তার অন্যতম। ১৯৪২ সালে </span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif""><span style="color:black">‘</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">ইন্ডিয়া ত্যাগ কর</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif""><span style="color:black">’</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black"> আন্দোলনে তিনি অংশ গ্রহণ করেছিলেন। তিনি ইন্ডিয়া ইউনিয়নের সাবেক প্রেসিডেন্ট ফখরউদ্দিন আলী আহমদ, আসামের সাবেক মন্ত্রী আব্দুল মোতালিব মজুমদার, হুসাইন আহমদ মাদানী (রহ.), শ্রী অরুণকুমার চন্দন, রবীন্দ্র আদিত্য, কামেনী সেন, বীরেন্দ্র বাবু, যতীন্দ্র মোহন দেব, সুধীর কুমারসহ সমকালীন অন্য নেতাদের সংস্পর্শে এসেছিলেন। তা ছাড়া তিনি ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে মাওলানা মোহাম্মদ আলী, শওকত আলী, মহাত্মা গান্ধী ও সি আর দাশ প্রমুখ নেতার সঙ্গে সভায় মিলিত হন। পরে ফুলতলী (রহ.) জমিয়ত ত্যাগ করেন।</span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">ফুলতলী সাহেবের রাজনৈতিক আন্দোলন শুধু দেশের ভেতরেই সীমাবদ্ধ ছিল না। একবার ভারতের আসাম প্রাদেশিক সরকার </span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif""><span style="color:black">‘</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">মুসলিম এডুকেশন বোর্ড</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif""><span style="color:black">’</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black"> বাতিলের সিদ্ধান্ত নেয়। তখনকার সময়ের আলেমরা সরকারের এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানাতে সম্মত হলেও রাজপথে ভূমিকা নিতে কারো সাহস ছিল না। অবশেষে সবাই মিলে ফুলতলী সাহেব কেবলাকে এ ব্যাপারে অনুরোধ করলে তিনি পর পর দুটি জনসভা করে প্রতিবাদ জানান। তাঁর নেতৃত্বে আসামের নওয়াগাঁও জেলার ডবকা, লংকা এবং মুরাঝার জনসভা করেন। প্রতিবাদসভা শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই তাঁর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোওয়ানা জারি হয়। তারপর পুলিশ সদস্যরা তাঁকে খুঁজতে থাকে। এই সংকটময় অবস্থায়ও তাঁর নেতৃত্বে আসাম প্রদেশে একটি নয়, দুটি নয়, আরো বহু প্রতিবাদসভা অনুষ্ঠিত হলে আসাম সরকারের নির্দেশে প্রশাসন তাঁর বিরুদ্ধে শেষ পর্যন্ত দেখামাত্র গুলির অর্ডার দেয়। এতেও সাহেব কেবলা ফুলতলী (রহ.) দমে যাননি।</span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">পঞ্চাশের দশকের মাঝামাঝি সময়ে সাহেব কেবলা </span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif""><span style="color:black">‘</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">নেজামে ইসলামে</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif""><span style="color:black">’</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black"> যোগদান করে ইসলামী রাজনীতিতে গঠনমূলক ভূমিকা পালন করেন। পরবর্তী সময়ে তিনি এ সংগঠনের সহসভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। নেজামে ইসলাম ছিল ইসলামী রাজনীতির পূর্ব পাকিস্তানের সম্মুখ সারির সংগঠন। আল্লামা ফুলতলী চট্টগ্রামের মাওলানা ছিদ্দিক আহমদ, ময়মনসিংহের মাওলানা আতহার আলী, ফরিদপুরে মাওলানা সামছুল হক এবং টাঙ্গাইলের মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাষানীর সমসাময়িক ছিলেন। সত্তর দশকের শেষ দিকে তিনি দেশের শীর্ষস্থানীয় উলামা-মাশায়েখদের সমন্বয়ে গণসংগঠন </span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif""><span style="color:black">‘</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">বাংলাদেশ আঞ্জুমানে আল ইসলাহ</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif""><span style="color:black">’</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black"> গঠন করেন। ব্যক্তি ও সমাজ সংশোধনের পাশাপাশি দেশ-জাতির ক্রান্তিলগ্নে এ সংগঠন জোরাল ভূমিকা পালন করে থাকে। দেশে ইসলামবিরোধীদের প্রতিহত করার আন্দোলন থেকে শুরু করে শিক্ষাব্যবস্থা, গণতন্ত্র রক্ষার আন্দোলন ও ধর্মের বিরুদ্ধে যেকোনো ষড়যন্ত্রের প্রতিবাদে সংগঠনটির ভূমিকা অতি উজ্জ্বল। নব্বইয়ের স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন, সালমান রুশদি কর্তৃক প্রকাশিত </span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif""><span style="color:black">‘</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">স্যাটানিক ভার্সেস</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif""><span style="color:black">’</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black"> ও ডেনমার্কে  প্রিয় নবীজির (সা.) ব্যঙ্গচিত্র প্রকাশের বিরুদ্ধে আন্দোলন, বাবরি মসজিদ ভেঙে রাম মন্দির প্রতিষ্ঠার প্রতিবাদ, চেচনিয়া-বসনিয়ায় মুসলিম নিধনের প্রতিবাদ, সভ্যতার চারণ ভূমি ফিলিস্তিনের অসহায় মুসলমানসহ ইরাক, ইরান, কাশ্মীর ও তাজাকিস্তান, সিরিয়া, বার্মা, আফগানিস্তান, ভারতের মুসলমানদের পক্ষে আন্দোলন, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের হল ও ভবনের বিতর্কিত নামকরণবিরোধী আন্দোলন, শাহজালালের (রহ.) মাজার প্রাঙ্গণে বোমা বিস্ফোরণের প্রতিবাদ, ফতোয়া বন্ধের পাঁয়তারার প্রতিবাদ, স্বতন্ত্র আরবি ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার দাবিতে ঐতিহাসিক লং মার্চসহ ধর্মীয় ও জাতীয় যেকোনো সংকট মুহূর্তে সংগঠনটি আপসহীন ভূমিকা পালন করে আসছে।</span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">আল্লামা ফুলতলী সাহেব  ২০০৮ সালের ১৫ জানুয়ারি দিবাগত রাত ২টায় সিলেট শহরের সুবহানীঘাটে তাঁর বাসভবনে ওফাত লাভ করেন। তাঁর জানাজায় ভক্ত-মুরিদানসহ লক্ষাধিক মানুষ জমায়েত হয়।</span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><strong><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">লেখক : মুফাসসিরে</span></span></span></strong><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black"> কোরআন এবং প্রিন্সিপাল</span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">আন-নূর মাদরাসা, বাসাবো, ঢাকা</span></span></span></span></span></p> <p> </p> <p> </p> <p> </p>