ইফতারের প্রয়োজনীয় কিছু বিধান

মাওলানা সাখাওয়াত উল্লাহ
মাওলানা সাখাওয়াত উল্লাহ
শেয়ার
ইফতারের প্রয়োজনীয় কিছু বিধান
ছবি : কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে তৈরি

ইফতারের সময় হালাল খাবার খাওয়ার প্রতি যত্নবান হওয়া উচিত। হারামের সন্দেহ থেকেও দূরে থাকা উচিত। কেননা ওই অবস্থায় রোজার কোনো অর্থ হয় না। হালাল খাবার ইবাদত কবুল হওয়ার পূর্বশর্ত।

যদি কোনো ব্যক্তি সারা দিন হালাল খাওয়া থেকে বিরত থাকার পর হারাম খাবার দিয়ে ইফতার করে সে ওই ব্যক্তির মতো, যে একটি প্রাসাদ নির্মাণ করল আর একটি শহর ধ্বংস করে দিল।

আবার হালাল খাবারও বেশি খাওয়া ক্ষতিকর। আর রোজা বেশি খাওয়ার শক্তিকে খতম করে দেয়। যে ব্যক্তি অনেক ওষুধ খাওয়ার ভয়ে বিষ খায়, তাহলে নিশ্চিতভাবেই তাকে নির্বোধ বলা যায়।

হারামও একটি বিষ। বিষ যেমন দেহের জন্য ক্ষতিকর, তেমনি হারাম জীবিকাও দ্বিনের জন্য ক্ষতিকর। আর হালাল খাওয়ার দৃষ্টান্ত একটি ওষুধের মতো। যার কম পরিমাণ খাওয়া উপকারী, আর বেশি পরিমাণ খাওয়া ক্ষতিকর।
রোজার উদ্দেশ্যহালাল খাবারও কম খেতে হবে, তাহলে উপকার হবে।

তাড়াতাড়ি ইফতার করা : রোজায় ইফতার করার ক্ষেত্রে তাড়াতাড়ি করা উচিত। ইফতারে তাড়াতাড়ি করা বান্দা আল্লাহর কাছে অনেক প্রিয়। এ ব্যাপারে মহানবী (সা.)-এর নির্দেশনা হলোইফতারে বিলম্ব করা যাবে না। তিনি বলেছেন, মানুষ যত দিন পর্যন্ত সময় হওয়ামাত্র ইফতার করবে, তত দিন কল্যাণের মধ্যে থাকবে।

(বুখারি, হাদিস : ২৮৫২)

ইফতার জলদি করার উদ্দেশ্য এটা নয়, সূর্যাস্তের আগেই রোজা ভেঙে ফেলবে বরং উদ্দেশ্য হলো, যখন সূর্য অস্তমিত হওয়া সম্পর্কে পুরোপুরি নিশ্চিত হওয়া, শুধুমাত্র ধারণার বশবর্তী হয়ে ইফতারে দেরি করা উচিত নয়।

ইফতারের সময় নির্ধারণে ঘড়ি বা অন্যান্য যন্ত্রের

ব্যবহার : যে যন্ত্র উদয় ও অস্তের সঠিক সংবাদ দেয় আর সেটা পরীক্ষিতও বটে; ভালো ঘড়ির দ্বারা ইফতার ও মাগরিবের নামাজের হুকুম দেওয়া যাবে। আর বেশির ভাগ যুগে চাক্ষুষ দর্শন ও নিদর্শনাবলির মাধ্যমেও জানা যায়। (ফাতাওয়া দারুল উলুম : ৬/৪৯৮)

মসজিদে সাহরি ও ইফতার করা : মসজিদে ইফতার ও সাহরি খাওয়া বৈধ। কিন্তু যতটুকু সম্ভব মসজিদকে অপরিচ্ছন্ন বানাবে না। (ফাতাওয়া রহিমিয়া : ১/৫০৮)

জাকাতের পয়সায় মসজিদে ইফতার করানো : রমজানের ইফতারি অথবা সাহরির জন্য জাকাতের অর্থ দেওয়া এভাবে জায়েজ হবে যে ইফতারি যে খাবে সে এবং সাহরি যে খাবে সে মিসকিন হয় এবং তাকে মালিক বানিয়ে দেওয়া হয়। তাদের ইফতারি অথবা খাবার বণ্টন করে দেবে। সাহরি ও ইফতার গ্রহণকারী যদি ধনী-সম্পদশালী হয় তাহলে জায়েজ হবে না। (কিফায়াতুল

মুফতি : ৪/২৫৮, ফাতওয়া হিন্দিয়াহ : ২০১)

ইফতার কিসের দ্বারা হবে : খেজুর দ্বারা ইফতার করা শ্রেয়। (ফাতাওয়া দারুল উলুম : ৬/৪৯৪)

তাজা খেজুর দ্বারা ইফতার করা মুস্তাহাব, অন্যথায় শুকনা খেজুর দ্বারা; যদি তা-ও না হয়, তাহলে পানি দ্বারা ইফতার করা যাবে। (আহসানুল ফাতাওয়া : ৪/৪৩৬)

রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর ইফতারি : আনাস (রা.) বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) মাগরিবের আগে কিছু তাজা খেজুর দ্বারা ইফতারি করতেন। যদি তাজা খেজুর না হতো, তিনি শুষ্ক খেজুর দ্বারা ইফতার করতেন। আর যদি শুষ্ক খেজুরও না হতো, তবে তিন কোষ পানি পান করতেন।

ইফতারের কারণে জামাতে বিলম্ব করা : ইফতারের কারণে মাগরিবের নামাজে কিছুক্ষণ দেরি করা জায়েজ আছে। এতে কোনো অসুবিধা নেই। প্রশান্তির সঙ্গে পানি পান করে বা কোনো কিছু খেয়ে ইফতার করে নামাজ আদায় করে নেবে। আর যে বিলম্ব ইফতার করার কারণে হয় সেটাকে শরিয়তপরিপন্থী মনে করবে না; বরং এটাই হলো শরিয়তসম্মত বিধান। (ফাতাওয়া দারুল উলুম : ২/৪৫, আলমগিরি : ১/৪৯)

 

অমুসলিমের কিছু দ্বারা ইফতার করা

প্রশ্ন : একজন হিন্দু প্রতি রমজান মাসে দুধ, চিনি ও বরফ ক্রয় করে মুসলমানদের দেয়। তার দ্বারা ইফতার করায় কোনো অসুবিধা হবে কি?

উত্তর : এর দ্বারা ইফতার করায় কোনো অসুবিধা নেই। অমুসলিমের পাঠানো জিনিস গ্রহণ করে তার দ্বারা ইফতার করা জায়েজ। (ফাতাওয়ায়ে দারুল উলুম : ৬/৪৯৪; কিফায়াতুল মুফতি : ৪/২৩৪)

 

ওষুধ দ্বারা ইফতার করা

প্রশ্ন : যে ব্যক্তি অসুস্থ সে ওষুধ দ্বারা ইফতার করতে পারবে কি না?

উত্তর : ওই ব্যক্তি ওষুধ দ্বারা ইফতার করবে, এতে কোনো অসুবিধা নেই। (ফাতাওয়ায়ে দারুল উলুম : ৬/৪৯৫)

মুয়াজ্জিন প্রথমে ইফতার করবেন নাকি আজান

দেবেন : সূর্যাস্তের পর মুয়াজ্জিন ইফতার করে আজান দেবেন।

ইফতার ও মাগরিবের নামাজের সময় : ইফতার ও মাগরিবের নামাজের সময় সূর্যাস্তের সঙ্গেই হয়ে যায়; দেরি করার প্রয়োজন নেই, যদিও পশ্চিম দিকে পাহাড় অবস্থিত হয়। কেননা সূর্যাস্তের অর্থ এই নয় যে দুনিয়ার কোথাও সূর্য দৃশ্যমান হবে না। এটা তো সম্ভব নয়, সূর্য কোথাও পুরোপুরি ডুবে যাবে আবার কোথাও পুরো উদিত হবে। বরং অস্তমিত হওয়া অর্থ হলো, সেটা আমাদের দিগন্ত থেকে অস্ত গিয়েছে এবং পূর্ব দিকটা অন্ধকারাচ্ছন্ন হয়েছে। অবশ্য যদি কোনো লোক পাহাড়ের ওপর দাঁড়িয়ে সূর্য দেখতে থাকে, তবে তার জন্য ইফতারি হালাল হবে না। কেননা তার দিগন্ত থেকে সূর্য অদৃশ্য হয়ে যায়নি। (ইমদাদুল ফাতাওয়া : ১/১৭০, শামি : ২/৮০)

শহরের মধ্যে সূর্যাস্তের আলামত হলো, পূর্ব দিকে ছায়া সম্প্রসারিত হওয়া অর্থাত্ যে পর্যন্ত সুবহে সাদিক প্রকাশিত হয় সে পর্যন্ত পৌঁছে যাবে। আসমানের ঠিক মধ্যিখানে ছায়া পৌঁছে যাওয়া শর্ত নয়।

ইফতারের কারণে জামাত বিলম্ব করার সুযোগ আছে। (ফাতাওয়ায়ে রাহিমিয়া : ২/৩৮)

লবণ দিয়ে ইফতার শুরু করা : লবণ দিয়ে ইফতার শুরু করা উত্তম’—এমন বিশ্বাস কুসংস্কার।

(আহকামে জিন্দেগি, পৃষ্ঠা-২৪৭)

ইফতারের দোয়া : ইফতারের সময় এই দোয়া পড়বে বিসমিল্লাহি আল্লাহুম্মা লাকা সুমতু ওয়াআলা রিজকিকা আফতারতু।

অর্থ : আল্লাহর নামে, হে আল্লাহ! আপনার সন্তুষ্টির জন্য রোজা রেখেছি এবং আপনার দেওয়া রিজিক দিয়ে ইফতার করছি। (আবু দাউদ, হাদিস : ২৩৫৮)

ইফতারের পর এই দোয়া পড়বে—‘জাহাবাজ্-জামাউ, ওয়াব্ তাল্লাতিল উরুকু, ওয়া ছাবাতাল আজরু ইন্শাআল্লাহু তাআলা।

অর্থ : পিপাসা নিবারিত হলো, শিরা-উপশিরা সিক্ত হলো এবং আল্লাহর ইচ্ছায় পুরস্কারও নির্ধারিত হলো।

(আবু দাউদ, হাদিস : ২৩৫৭)

রোজা রেখে প্লেনে সফরের কারণে দিন বড় হয়ে

গেলে : পশ্চিম দিকে প্লেনে সফর করার কারণে যদি দিন বড় হয়ে যায়, তাহলে সুবহে সাদিক থেকে নিয়ে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সূর্যাস্ত হলে সূর্যাস্ত পর্যন্ত ইফতার বিলম্ব করতে হবে। আর ২৪ ঘণ্টার মধ্যেও সূর্যাস্ত না হলে ২৪ ঘণ্টা পূর্ণ হওয়ার সামান্য কিছু আগে ইফতার করে নেবে।

(আহসানুল ফাতাওয়া, খণ্ড-৪, পৃষ্ঠা-৭০)

 

মন্তব্য

সম্পর্কিত খবর

কোরআন থেকে শিক্ষা

    পর্ব, ৭২৭
শেয়ার
কোরআন থেকে শিক্ষা

আয়াতের অর্থ : যদি তোমরা ঘরে কাউকেও না পাও তাহলে তাতে প্রবেশ করবে না, যতক্ষণ না তোমাদেরকে অনুমতি দেওয়া হয়। যদি তোমাদেরকে বলা হয়, ফিরে যাও, তবে তোমরা ফিরে যাবে। এটাই তোমাদের জন্য উত্তম। আর তোমরা যা করো সে সম্পর্কে আল্লাহ সবিশেষ অবহিত।

যে ঘরে কেউ বাস করে না তাতে তোমাদের জন্য দ্রব্যসামগ্রী থাকলে সেখানে তোমাদের প্রবেশে কোনো পাপ নেই।... (সুরা : নুর, আয়াত : ২৮-২৯)

আয়াতদ্বয়ে অন্যের ঘরে প্রবেশের বিধান বর্ণনা করা হয়েছে।

শিক্ষা ও বিধান

১. বসবাস করে এমন ঘরে যদি কেউ না থাকে তবু তাতে অনুমতি ছাড়া প্রবেশ করা যাবে না। আর যে ঘর মানুষের বসবাসের জন্য নয় একান্ত প্রয়োজনে তাতে অনুমতি ছাড়াও প্রবেশ করা যায়।

২. ঘরের দরজা বন্ধ থাকুক বা খোলা তাতে প্রবেশের আগে অনুমতি গ্রহণ করা আবশ্যক।

৩. ঘরের সাবালক বাসিন্দার মতো নাবালক বাসিন্দাও ঘরে প্রবেশের অনুমতি দিতে পারে।

৪. বিরান ও পরিত্যক্ত বাড়িতে প্রবেশের জন্য অনুমতি গ্রহণের প্রয়োজন নেই। কেননা এর সঙ্গে মানুষের আব্রু ও ব্যক্তিগত জীবনের গোপনীয়তা রক্ষার প্রশ্ন জড়িত নয়।

৫. ওমর (রা.) বলেন, যে ব্যক্তি দরজার ছিদ্র দিয়ে উঁকি দিল সে ফিসকে (প্রকাশ্য পাপাচার) লিপ্ত হলো।

(তাফসিরে কুরতুবি : ১৫/১৯৮)

 

 

মন্তব্য
দেশে-বিদেশে

ইফতারের বড় পাঁচ আয়োজন

    ইবাদতের পাশাপাশি বর্তমানে ইফতার হয়ে উঠেছে মুসলিম বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ সামাজিক অনুষঙ্গ। ধর্মীয়, সামাজিক ও রাজনৈতিক মেলবন্ধনকে শক্তিশালী করতে মুসলিম বিশ্বের বহু স্থানে ইফতারের নানা আয়োজন করা হয়। মুসলিম বিশ্বের বড় পাঁচ ইফতার আয়োজন নিয়ে লিখেছেন আবরার আবদুল্লাহ
শেয়ার
ইফতারের বড় পাঁচ আয়োজন

১. মক্কা ও মদিনায় : পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ইফতারের আয়োজন হয় মক্কার মসজিদুল হারামে। তারপরই রয়েছে মসজিদে নববীর স্থান। প্রতিদিন কয়েক লাখ ওমরাহ প্রার্থী এখানে ইফতার আয়োজনে অংশগ্রহণ করে। গত ১৭ মার্চ প্রকাশিত এক বিবৃতিতে পবিত্র দুই মসজিদের পরিচালনা পর্ষদ জানিয়েছে, ১৭ রমজান পর্যন্ত তারা পবিত্র দুই মসজিদে ১১ মিলিয়ন (এক কোটি ১০ লাখ) ইফতারের প্যাকেট বিতরণ করেছে এবং সমপরিমাণ খেজুরের প্যাকেটও বিতরণ করেছে।

তারা আরো বলেছে, প্রতিবছর রমজানে ওমরাহ পালনকারীর সংখ্যা বাড়ছে। তবু তারা চেষ্টা করছে সবাইকে যেন মানসম্মত খাবার পরিবেশন করা যায়।

(অ্যারাব নিউজ)

২. শেখ জায়েদ গ্র্যান্ড মসজিদ : সংযুক্ত আরব আমিরাতের অন্যতম নান্দনিক স্থাপনা আবুধাবির শেখ জায়েদ গ্র্যান্ড মসজিদ। প্রতিদিন হাজার হাজার মুসল্লির ইফতারের ব্যবস্থা থাকে এখানে।

শেখ জায়েদ গ্র্যান্ড মসজিদ সেন্টারের তত্ত্বাবধানে ‘আওয়ার ফাস্টিং ইনিশিয়েটিভ’-এর আওতায় রমজান মাসজুড়ে ২১ লাখের বেশি ইফতার বিতরণ করা হয়। এর মধ্যে মসজিদ প্রাঙ্গণে সাড়ে ছয় লাখ এবং সাড়ে ১০ লাখ ইফতার আবুধাবির বিভিন্ন স্থানে বিতরণ করা হয়। তা ছাড়া রমজানের শেষ ১০ রাতে ৩০ হাজার সাহরি বিতরণ করা হয়। (কালের কণ্ঠ)

৩. ইসতিকলাল মসজিদ : ইন্দোনেশিয়ার ইসতিকলাল মসজিদে হয় দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সর্ববৃহত্ ইফতার আয়োজন।

এখানে প্রতিদিন কয়েক হাজার রোজাদার ইফতার করে থাকে। তাদের সংখ্যা সর্বনিম্ন পাঁচ হাজার থেকে সর্বোচ্চ ১০ হাজারে উন্নীত হয়। মসজিদ কমিটি স্থানীয় দানশীল ব্যক্তিদের সহযোগিতায় এই আয়োজন করে থাকে। (এপি নিউজ)

৪. মিসরে গণ-ইফতার : প্রতিবছর রমজান মাসের ১৫ তারিখ মিসরের রাজধানী কায়রোতে আয়োজন করা হয় একটি গণ-ইফতারের। এতে কয়েক হাজার মানুষ অংশ নেয়।

২০১৩ সালে শুরু হওয়া এই সামাজিক সম্প্রীতিমূলক আয়োজন এরই মধ্যে এক যুগ পার করেছে। বর্তমানে সরকারের শীর্ষ ব্যক্তি থেকে শুরু করে প্রতিটি অঙ্গনের খ্যাতিমান ব্যক্তিরা এই আয়োজনে অংশ নেন। গণ-ইফতার মুসলিম ও অমুসলিম সবার জন্য উন্মুক্ত। বহু পর্যটকও এই ইফতার আয়োজনে অংশ নিয়ে থাকেন। গতবছর গণ-ইফতারে অংশ নিয়েছিল ৩০ হাজার ব্যক্তি। আর তাদের জন্য প্রস্তুত করা হয়েছিল ৭০০ টেবিল। এ বছর প্রায় ৫০ হাজার ব্যক্তি তাতে অংশ নেয়। (এসআইএস ডটগভ ডটইজি ও সিবিসি নিউজ)

৫. জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররম : বাংলাদেশের জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে প্রতিদিন প্রায় পাঁচ হাজার মানুষের ইফতারের আয়োজন করা হয়। এতে অংশ নিতে পারে যেকোনো মানুষ। বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্যানুসারে বায়তুল মোকাররম মার্কেটের ব্যবসায়ী, তাবলিগ জামাত, মুসল্লি ও বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের সহযোগিতায় এই গণ-ইফতারের আয়োজন করা হয়। বহু বছর  ধরে বায়তুল মোকাররমের এই জনসেবামূলক কার্যক্রমটি চলছে।

 

 

মন্তব্য

রমজানের শেষ দশকে ইবাদতের গুরুত্ব

মাইমুনা আক্তার
মাইমুনা আক্তার
শেয়ার
রমজানের শেষ দশকে ইবাদতের গুরুত্ব

রহমত ও মাগফিরাতের দশক শেষ হওয়ার পর আমাদের মধ্যে হাজির হলো নাজাতের দশক। পবিত্র রমজানের এই দশক খুবই গুরুত্বপূর্ণ। নির্ভরযোগ্য মতানুযায়ী রমজানের শেষ দশকে শান্তির বার্তা নিয়ে অবতীর্ণ হয়েছে মহাগ্রন্থ আল-কোরআন। যে রাতকে মহান আল্লাহ লাইলাতুল কদর আখ্যা দিয়েছেন।

মোবারক এই রাতকে হাজার মাসের চেয়ে উত্তম করেছেন। মহান আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেন, নিশ্চয়ই আমি একে নাজিল করেছি মহিমান্বিত রাতে (লাইলাতুল কদর)। আপনি কি জানেন মহিমান্বিত রাত কী? মহিমান্বিত রাত হাজার মাসের চেয়েও শ্রেষ্ঠ। সেই রাতে প্রতিটি কাজের জন্য ফেরেশতারা এবং রুহ তাদের প্রতিপালকের আদেশক্রমে অবতীর্ণ হয়।
সেই রাতে শান্তিই শান্তি, ফজর হওয়া পর্যন্ত।

(সুরা : কদর, আয়াত : ১-৫)

বিভিন্ন হাদিস দ্বারা বোঝা যায়, উল্লিখিত আয়াতে মহিমান্বিত যে রাতের কথা বলা হয়েছে, তা এই শেষ দশকেই লুকিয়ে আছে। কেননা রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, তোমরা শেষ দশকের বিজোড় রাতে লাইলাতুল কদরের অনুসন্ধান করো। (বুখারি, হাদিস : ২০১৭)

আমাদের নবীজি (সা.) নিজেও শেষ দশকে ইবাদতের মাত্রা বাড়িয়ে দিতেন।

এ সময় তিনি যেভাবে ইবাদত করতেন, যা অন্য যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি হতো। এমনকি ইবাদতের মাধ্যমে পূর্ণ সময় কাটানোর আশায় তিনি প্রতিবছর শেষ দশকে ইতিকাফ করতেন। হজরত আয়েশা (রা.) বলেন, ইন্তেকাল পর্যন্ত রাসুলুল্লাহ (সা.) রমজানের শেষ দশকে ইতিকাফ করেছেন। এরপর তাঁর স্ত্রীরাও ইতিকাফ করেছেন। (বুখারি, হাদিস : ১৮৬৮; মুসলিম, হাদিস : ২০০৬)

শেষ দশকে অধিক ইবাদতের পাশাপাশি অধিক পরিমাণে দোয়াও করতে হবে।

কেননা নবীজি (সা.) রমজানের শেষ দশকে বেশি বেশি দোয়া করতেন। উম্মতকে শেষ দশকে বেশি বেশি দোয়া করার পরামর্শ দিতেন। আয়েশা (রা.) বলেন, আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসুল, যদি আমি লাইলাতুল কদর জানতে পারি, তাহলে সে রাতে কী বলব? তিনি বলেন, তুমি বোলো, (উচ্চারণ) আল্লাহুম্মা ইন্নাকা আফুউন, তুহিব্বুল আফওয়া, ফাফু আন্নি। (অর্থ) হে আল্লাহ, আপনি সম্মানিত ক্ষমাকারী, আপনি ক্ষমা করতে পছন্দ করেন। অতএব, আপনি আমাকে ক্ষমা করে দিন। (তিরমিজি, হাদিস : ৩৫১৩)

এ ছাড়া যেহেতু এটি নাজাতের দশক, এই দশকে জাহান্নামের আগুন থেকে নাজাত পাওয়ার জন্য আমরা বেশি বেশি তাওবা করতে পারি। কেননা এই মাস মহান আল্লাহর কাছে গুনাহ মাফ করিয়ে নিজেকে পরিশুদ্ধ করার মাস। কোনো ব্যক্তি যদি রমজানে তার গুনাহ ক্ষমা করাতে ব্যর্থ হয়, তবে তার প্রতি রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর হুঁশিয়ারি আছে। তিনি বলেছেন, ওই ব্যক্তির নাক ধুলিধূসরিত হোক, যে রমজান পেল এবং তার গুনাহ মাফ করার আগেই তা বিদায় নিল। (তিরমিজি, হাদিস : ৩৫৪৫)

মহান আল্লাহ আমাদের সবাইকে রমজানের শেষ দশকে ইবাদতের মাত্রা বাড়িয়ে দেওয়ার তাওফিক দান করুন। আমিন।

 

 

মন্তব্য
পর্ব : ২০

তারাবিতে কোরআনের বার্তা

সুরা কাসাস
সুরা কাসাস
শেয়ার
তারাবিতে কোরআনের বার্তা

এই সুরায় ফেরাউনের শক্তিমত্তা, ঔদ্ধত্য ও রাজত্ব সম্পর্কে বর্ণনা করা হয়েছে। সে বনি ইসরাঈলে নারীদের দাসী বানিয়ে পুরুষদের হত্যা করত। সেই দিনগুলোতে মুসা (আ.)-এর জন্ম হয়। ফেরাউনের বাহিনীর ভয়ে মুসা (আ.)-এর মা তাঁকে সাগরে ভাসিয়ে দেন।

ফেরাউনের পরিবার এই বাচ্চাটি পেয়ে রাজপ্রাসাদে আদর-যত্নে লালন-পালন করতে থাকে। অতঃপর তিনি মিসর থেকে মাদায়ান চলে যান। সেখানে গিয়ে শোয়াইব (আ.)-এর মেয়েকে বিয়ে করেন। ১০ বছর তাঁর রাখাল হিসেবে জীবন পার করেছেন।
এই ঘোষণার মাধ্যমে সুরা শেষ করা হয়েছে যে জান্নাত তাদের জন্য, যারা দুনিয়ার জীবনে উদ্ধত হয় না এবং কোনো ফিতনা-ফ্যাসাদে লিপ্ত হয় না।

 

আদেশ-নিষেধ-হিদায়াত

১. বিভক্তি জাতিসত্তা দুর্বল করে দেয় এবং অন্য জাতিকে কর্তৃত্ব স্থাপনের সুযোগ করে দেয়। (আয়াত : ৪)

২. আল্লাহ চাইলে নিপীড়িত জনগোষ্ঠীকেও শাসকের মর্যাদা দেন। (আয়াত : ৫-৬)

৩. সন্তানের জন্য মায়ের ভালোবাসা আল্লাহ প্রদত্ত।

(আয়াত : ১০)

৪. সন্তানকে মা থেকে দূরে সরিয়ে দেওয়া নিন্দনীয়। (আয়াত : ১৩)

৫. বয়সের সঙ্গে সঙ্গে জ্ঞানেও পরিপক্বতা আসে। (আয়াত : ১৪)

৬. অপরাধকারীকে সাহায্য করাও অপরাধ। (আয়াত : ১৭)

৭. চলাফেরার শালীনতা নারী জীবনের সৌন্দর্য। (আয়াত : ২৫)

৮. শ্রমিক হবে শক্তিশালী ও বিশ্বাসযোগ্য।

(আয়াত : ২৬)

৯. যোগ্য লোকের সহযোগিতা গ্রহণ করো। (আয়াত : ৩৪)

১০. জয় ও পরাজয় আল্লাহ নির্ধারণ করেন। (আয়াত : ৩৫)

১১. মুমিন সত্য গ্রহণে দেরি করে না।

(আয়াত : ৫৩)

১২. ধৈর্যশীলদের জন্য রয়েছে দ্বিগুণ প্রতিদান। (আয়াত : ৫৪)

১৩. অর্থহীন কাজ পরিহার করো।

(আয়াত : ৫৫)

১৪. পরকালের পাথেয় সংগ্রহ করো।

(আয়াত : ৭৭)

১৫. পৃথিবীতে বিপর্যয় সৃষ্টি কোরো না।

(আয়াত : ৭৭)

 

সুরা আনকাবুত

আলোচ্য সুরা আনকাবুতে যুগে যুগে কিভাবে সত্য ও মিথ্যার মধ্যে দ্বন্দ্ব হয়, তার চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। দুর্বল-সবল ও বিশ্বাসী-অবিশ্বাসীর দ্বন্দ্ব চিরন্তন। এই সুরায় ঈমানদারদের পার্থিব জীবনে কঠিন পরীক্ষার সম্মুখীন হওয়ার কথা বলা হয়েছে। সবর ও ধৈর্যের সঙ্গে পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে বলা হয়েছে। কোরআনের অলৌকিকতা উল্লেখ করে মহানবী (সা.)-এর নবুয়ত সপ্রমাণ করা হয়েছে। নির্যাতিত ঈমানদারদের হিজরতের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। হারাম শরিফকে নিরাপদ নগরী ঘোষণা করা হয়েছে। এবং সবশেষে এই চিরন্তন রীতি উল্লেখ করা হয়েছে যে যারাই পরিশ্রম করবে, অব্যাহত প্রচেষ্টা চালাবে, তারা সফলতা পাবে।

আদেশ-নিষেধ-হিদায়াত

১. পরকালীন মুক্তির জন্য ঈমানের ঘোষণাই যথেষ্ট নয়। (আয়াত : ২)

২. পাপীদের বাড়বাড়ন্তে হতাশার কিছু নেই। কেননা পাপীরা আল্লাহর আয়ত্তের বাইরে নয়। (আয়াত : ৪)

৩. মা-বাবার সঙ্গে সদ্ব্যবহার করো।

(আয়াত : ৮)

৪. দ্বিন পালনের কষ্টকে শাস্তি মনে কোরো না। (আয়াত : ১০)

৫. মুনাফিকের পরিচয় গোপন থাকে না। (আয়াত : ১১)

৬. আল্লাহভীতি মুমিনের জীবনে উত্তম পাথেয়। (আয়াত : ১৬)

৭. পৃথিবীতে ভ্রমণ কোরো। কেননা তা জ্ঞান ও অভিজ্ঞতাকে সমৃদ্ধ করে। (আয়াত : ২০)

৮. সৃষ্টিজগতে আল্লাহর নির্দেশ অপরিহার্য। (আয়াত : ২২)

৯. আল্লাহর অনুগ্রহ থেকে নিরাশ হয়ো না। (আয়াত : ২৩)

১০. বিপর্যয়কারীদের ব্যাপারে আল্লাহর সাহায্য চাও। (আয়াত : ৩০)

১১. আল্লাহ ছাড়া সব শক্তিই ক্ষণস্থায়ী। (আয়াত : ৪১)

১২. নামাজ মন্দ কাজ থেকে বিরত রাখে। (আয়াত : ৪৫)

১৩. আল্লাহর স্মরণ সবচেয়ে বড় এবং তা ইবাদতের প্রাণ। (আয়াত : ৪৫)

১৪. বিতর্কে শিষ্টাচার রক্ষা করো।

(আয়াত : ৪৬)

১৫. প্রত্যেক প্রাণী মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করবে। (আয়াত : ৫৭)

১৬. জীবিক আল্লাহ কর্তৃক নির্ধারিত।

(আয়াত : ৬২)      

গ্রন্থনা : মুফতি আতাউর রহমান

 

 

মন্তব্য

সর্বশেষ সংবাদ