<p>দেশের প্রকৃত দরিদ্র জনগোষ্ঠীর প্রায় ৭০ শতাংশ সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর বাইরে রয়েছে। দুর্নীতি, নজরদারি ও বরাদ্দের অভাবে তারা এই সুবিধা পাচ্ছে না। আবার প্রয়োজন নেই এমন মানুষও অনিয়ম করে এই বেষ্টনীর আওতায় ঢুকে পড়ছে।</p> <p>বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিং (সানেম) এ তথ্য দিয়েছে। ‘বাংলাদেশে সামাজিক নিরাপত্তা কৌশল ২০১৫’-এর তথ্য বিশ্লেষণ করে এক প্রতিবেদনে এ তথ্য তুলে ধরেছে সানেম। গতকাল বৃহস্পতিবার ‘সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী : বাংলাদেশ কোথায় দাঁড়িয়ে?’ শীর্ষক ওয়েবিনারে এসব তথ্য তুলে ধরা হয়। ওয়েবিনারে প্রতিবেদনে তুলে ধরেন সানেমের চেয়ারম্যান বজলুল হক খন্দকার।</p> <p>প্রতিবেদনে বলা হয়, বয়স্ক ভাতা, প্রতিবন্ধী ভাতা, বিধবা ভাতা, পেনশনসহ আরো কয়েকটি খাত মিলে ৩৫ শতাংশ জনগোষ্ঠীকে সামাজিক নিরাপত্তার আওতায় আনা সম্ভব হয়েছে। যদিও ২০১৬ সালের তথ্য অনুযায়ী দেশের দরিদ্রের সংখ্যা মোট জনগোষ্ঠীর ২৪ শতাংশ। তবু সামাজিক নিরাপত্তা সহায়তা যাদের প্রাপ্য, তাদের ৭০ শতাংশ এই সুবিধা পাচ্ছে না। কারণ যাদের এই সহায়তা প্রয়োজন নয়, তারাও এই কর্মসূচির আওতায় ঢুকে পড়ছে।</p> <p>ওয়েবিনারে সানেমের চেয়ারম্যান বলেন, সার্বিকভাবে বাংলাদেশে সামাজিক সুরক্ষা বিষয়ে সচেতনতার ঘাটতি রয়েছে, যার কারণে এই সহায়তাগুলো যাদের প্রাপ্য তারা অনেকে এ বিষয়ে জানে না। এ জন্য তদারকি বাড়ানো উচিত। সে ক্ষেত্রে এসব কর্মসূচি তদারকি বাড়ানোর জন্য প্রশাসনিক ব্যয় বাড়ানো দরকার. যাতে সারা বছর চলমান কর্মসূচিগুলো তদারকি করা সম্ভব হয়। তিনি আরো বলেন, সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচিগুলোর বেশির ভাগ খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি। এ ক্ষেত্রে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির পরিবর্তে নগদ অর্থ প্রদান করা হলে দরিদ্র জনগোষ্ঠী বেশি সুবিধা পাবে। কারণ মোবাইল ব্যাংকিং বা এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে নগদ অর্থ সরাসরি তাদের কাছে পৌঁছানো সম্ভব বলে মনে করেন সানেম চেয়ারম্যান।</p> <p>সানেমের প্রতিবেদনে বলা হয়, ভাতার পরিমাণও প্রয়োজনের তুলনায় যথেষ্ট নয়। সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতায় একজন বয়স্ক ব্যক্তির জন্য প্রতি মাসে গড়ে ৫৯৫ টাকা সহায়তা বরাদ্দ থাকে, যা তার চিকিৎসা, খাবার ও অন্যান্য খরচ বিবেচনায় নিতান্তই অপ্রতুল।</p> <p>২০১৯ সালের তথ্য অনুযায়ী গড়ে ৫৯৫ টাকা দেওয়া হয়। সে ক্ষেত্রে দেশের জিডিপির আড়াই থেকে ৩ শতাংশ ব্যয় করা হয়। সরকারি কর্মচারীদের পেনশন বাদ দিলে শুধু দরিদ্র ও ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীর জন্য ব্যয় হচ্ছে ১.৫ শতাংশ থেকে ২.৫ শতাংশ।</p> <p>বজলুল হক খন্দকার ওয়েবিনারে বলেন, সংকটকালীন সামাজিক সুরক্ষা নিশ্চিত করতে সামাজিক বীমা ব্যবস্থা চালু করার ওপর জোর দেওয়া দরকার। সামাজিক বীমা চালু করলে সংকটের সময়ে সমস্যাগ্রস্ত মধ্যবিত্ত ও নিম্নমধ্যবিত্ত মানুষ উপকার পাবে। সামাজিক বীমা অনুন্নত হওয়ার কারণে দেশের একটা বড় জনগোষ্ঠী সামাজিক নিরাপত্তার বাইরে থেকে যাচ্ছে।</p> <p> </p>