<p><span style="color:#e67e22"><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">চাঁপাইনবাবগঞ্জের জামতাড়া গ্রামে মতিউর রহমান ফল-ফসলের মিশ্র বাগান গড়ে সাড়া ফেলেছেন। মাল্টা চাষ করে সাফল্য পাওয়ায় তিনি </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">মাল্টা মতিউর</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"> হিসেবে পরিচিত। শুধু মাল্টা নয়, কমলা চাষ করেও পেয়েছেন অসাধারণ সাফল্য</span></span></span></span></span></p> <p> </p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">বছর দুই আগের কথা। অক্টোবরের মাঝামাঝি। বেশ উজ্জ্বল রোদের সকাল। চলছিলাম বরেন্দ্রের পথ ধরে, মহানন্দার তীর ঘেঁষে রাজশাহী-চাঁপাইনবাবগঞ্জ মহাসড়ক ধরে। মাঠের পর মাঠ সবুজ শস্যের ক্ষেত। উঁচুনিচু জমিতে যেন কেউ বিছিয়ে রেখেছে সবুজ কার্পেট। শরতের এই সময়টায় ক্ষেতে ক্ষেতে আমনের ফসল। আবার কোনো কোনো ক্ষেত ভরে আছে আগাম রবিশস্যে, নানা ফল-ফসলে। </span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">বছর বিশেক আগেও এমন সবুজ ছিল না বরেন্দ্র্র। বরেন্দ্র মানেই ছিলো খাঁ খাঁ বিরান ভূমি, অনুর্বর শক্ত মাটি, ফসলহীন মাঠ। কেবল একটি ফসল ফলাতে পারত এ অঞ্চলের মানুষ। আমনের ফসল ছাড়া আর কোনো ফলন ছিল না। আমও তখন এখনকার মতো অর্থকরী ফসল হয়ে ওঠেনি। ফলে অনাহার আর অভাব এ অঞ্চলের মানুষকে গ্রাস করে ফেলে। </span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">সেই আশির দশক থেকে এ অঞ্চলের কৃষি ও কৃষকের আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপট দেখার সুযোগ আমার হয়েছে। প্রতিবেদন তৈরির কাজে বহুবার বরেন্দ্র অঞ্চলে এসেছি। এ অঞ্চলের ঐতিহ্যবাহী খাবার কলাইয়ের রুটির স্বাদ এখনো মুখে লেগে আছে। মনে আছে, মাটির জৈব গুণ ফিরিয়ে আনতে ডালজাতীয় ফসল ফলানোর পরামর্শ দেওয়া হলো। কারণ ডালজাতীয় গাছের শিকড়ে নুডল থাকে, যা নাইট্রোজেন ফিক্সেশনের মাধ্যমে মাটিতে জৈব উপাদান যোগ হয়। ফলে এ অঞ্চল হয়ে ওঠে ডালজাতীয় শস্যের ভাণ্ডার। </span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">যাই হোক, মাঝ অক্টোবরের সকালে পৌঁছে যাই চাঁপাইনবাবগঞ্জের জামতাড়া গ্রামে মতিউর রহমানের বাগানে। বিভিন্ন ফল-ফসলের মিশ্র বাগান গড়ে তিনি সাড়া ফেলেছেন। মাল্টা চাষ করে সাফল্য পাওয়ায় তিনি </span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif""><span style="color:black">‘</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">মাল্টা মতিউর</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif""><span style="color:black">’</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black"> হিসেবে পরিচিত। শুধু মাল্টা নয়, কমলা চাষ করেও পেয়েছেন অসাধারণ সাফল্য। ১৬ বিঘার সমন্বিত কৃষি খামারে চাষ করেছেন তিন জাতের কমলা। একসময় আমরা জানতাম, কমলার চাষ হয় পাহাড়ি জমিতে। কিন্তু নতুন জাত উদ্ভাবনের মাধ্যমে ফল-ফসলের ভৌগোলিক সীমারেখার সঙ্গে সঙ্গে এখন আর ঋতুভিত্তিক বাঁধাধরাও আর নেই। মতিউরের বাগানে প্রবেশ করতেই মন ভরে যায় গাছ ভর্তি হলুদ মাল্টা আর কমলার ঝাড় দেখে। </span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">বাগানে হাঁটতে হাঁটতে কথা হয় মতিউরের সঙ্গে। বয়স পঞ্চাশ-পঞ্চান্নের কোঠায়। কিন্তু সাফল্য যেন বয়সকে হার মানিয়েছে, এক অন্য রকম তারুণ্য তাঁর ভেতর। উচ্ছল কণ্ঠে বলে চলেন তাঁর স্বপ্নের কথা</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif""><span style="color:black">—‘</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">স্যার, শুরু করেছিলাম সাত বিঘা জমি লিজ নিয়ে। গতবার যখন আসছিলেন, ছিল ৬১ বিঘায় ফল-ফসলের চাষ। এখন করছি ৭০ বিঘায়। ভালো ফলন পাচ্ছি স্যার। স্বপ্ন আমার চাষ আরো বাড়ানোর। নিজের জমি হয়েছে ১৫ বিঘা।</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif""><span style="color:black">’</span></span></span> </span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">নিশ্চয়ই স্বপ্নের পথে অনেকখানি এগিয়ে যাবেন মতিউর। সাড়ে পাঁচ শ কমলা গাছের প্রতিটিতে ফল ঝুলে আছে। রঙিন কমলা মানেই রঙিন টাকার স্বপ্ন। </span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">কমলাবাগানে কাজ করছিলেন পাঁচ-ছয় জন সাঁওতাল নারী। কথা বলি তাঁদের সঙ্গেও। এই বাগানে তাঁদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হয়েছে এতেই তাঁরা খুশি। </span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">কৃষিই পাল্টে দিয়েছে মতিউরের জীবন। চাকরির ফাঁকে অবসর সময়টাকে তিনি ভরে তুলেছেন ফল-ফসলে। শুধু যে নিজেই সমৃদ্ধ হয়েছেন তা নয়, সমৃদ্ধ করেছেন অন্যদের। তাঁর বাগানে কর্মসংস্থান হয়েছে অনেকের। বরেন্দ্রের জমিতে সোনার ফসল ফলিয়ে অনুপ্রাণিত করেছেন অন্য কৃষকদের। তাঁর এই কৃষি উদ্যোগের জন্য পেয়েছেন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে নানা সম্মাননা। সেরা কৃষক ক্যাটাগরিতে পেয়েছেন স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড-চ্যানেল আই কৃষি পদক।</span></span></span></span></span></p> <p> </p> <p> </p>