বাংলাদেশে ‘ধর্মীয় সংখ্যালঘু নির্যাতন হচ্ছে এবং তাতে যুক্তরাষ্ট্রের উদ্বেগ’ নিয়ে দেশটির গোয়েন্দাপ্রধান তুলসী গ্যাবার্ড যে মন্তব্য করেছেন, তাতে দুই দেশের অর্থনৈতিক সম্পর্কে ‘কোনো সমস্যা হবে না’ বলে জানিয়েছেন অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, ‘আমাদের অর্থনীতিতে বহুপক্ষীয় বা দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কে প্রভাব পড়বে না।’
গতকাল মঙ্গলবার অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত ও সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন তিনি।
সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, মার্কিন গোয়েন্দাপ্রধান তুলসী গ্যাবার্ডের মন্তব্যে বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক সম্পর্কে কোনো সমস্যা হবে না।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি ওয়ার্ল্ডকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তুলসী গ্যাবার্ড বলেন, হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান ও অন্যান্য ধর্মীয় সংখ্যালঘুর ওপর দীর্ঘদিনের দুর্ভাগ্যজনক নির্যাতন, হত্যা ও নিপীড়নের ঘটনা মার্কিন সরকার এবং ডোনাল্ড ট্রাম্প ও তাঁর প্রশাসনের একটা বড় উদ্বেগের জায়গা।
গ্যাবার্ডের ওই মন্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় গভীর উদ্বেগ ও হতাশা প্রকাশ করেছে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়।
গার্ডিয়ান পত্রিকার সাংবাদিক হান্না বাংলাদেশ সফর করে গিয়ে লিখেছেন, বাংলাদেশ খাদের কিনারায় আছে, উনি কেন এটা বললেন বলে আপনাদের মনে হয়? এমন প্রশ্নের জবাবে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, ‘খাদের কিনারায় ছিল। এখন খাদের কিনারা থেকে আমরা রিটার্ন করে চলে আসছি।
উনারা কত কিছু লেখেন। অর্থনীতির বিষয় তো আমি জানি, ভেতরে কী হচ্ছে। কে কী লিখেছেন, এতে হতাশ হওয়ার কোনো কারণ নেই।’
দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের আন্তরিক প্রচেষ্টায় গেল আট মাসে বাংলাদেশের অর্থনীতি খাদের কিনারা থেকে ঘুরে দাঁড়াতে সক্ষম হয়েছে।
অর্থ উপদেষ্টা বলেন, ‘বাইরের সবাই কি সব কিছু জেনেশুনে লেখেন! তাঁরা মনের মাধুরী মিশিয়ে অনেক কিছু লেখেন। এ ছাড়া তুলসী গ্যাবার্ডের মন্তব্যে আমাদের অর্থনীতিতে বহুপক্ষীয় বা দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কে প্রভাব পড়বে না।’ তিনি বলেন, বাংলাদেশের দিকে অনেকেই তাকিয়ে আছে। কিছু ভুলত্রুটি থাকলেও অবস্থা সন্তোষজনক।
২০২৬ সালে এলডিসি গ্র্যাজুয়েশনের ক্ষেত্রে অনেক চ্যালেঞ্জ থাকলেও সরকারের প্রচেষ্টায় ত্রুটি নেই জানিয়ে উপদেষ্টা বলেন, ‘উন্নয়নশীল দেশগুলোর তালিকায় প্রবেশ বা এলডিসি উত্তরণ গৌরবের।
২০২৬ সালেই এলডিসি উত্তরণের লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে এগোচ্ছে অন্তর্বর্তী সরকার। এলডিসির একটা স্মুথ ট্রানজিশন স্ট্র্যাটেজি নিয়েছি। স্মুথ মানে ধুম করে নামে না, প্লেন যেমন ধীরে ধীরে নামে। আমরা এটা অলরেডি করছি। এর মধ্যে কোনো সমস্যা হলে পরিস্থিতি বিবেচনা করে তা সমাধানের চেষ্টা করা হবে। আমাদের বলা হয়েছে, তোমরা যদি উত্তরণ ঘটাও, অন্যান্য দেশ সাহস পাবে। এতে দেশ হিসেবে আমাদের গৌরব একটু বাড়বে। সে জন্য কিছু প্রস্তুতি লাগবে, আমরা সেই প্রস্তুতি নিচ্ছি।’
এপ্রিলে দুই কার্গো এলএনজি কেনা হবে
গতকাল সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত কমিটির বৈঠকে ২ এপ্রিল ও ১২ এপ্রিল দুই কার্গো এলএনজি কেনার প্রস্তাব অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। যুক্তরাজ্যের টোটাল এনার্জিসের কাছ থেকে প্রতি ইউনিট ১৪.২২ ডলারে এবং একই প্রতিষ্ঠান থেকে অন্য কার্গো ১৪.৪৮ ডলারে কেনার অনুমোদন দেওয়া হয়। এই দুই কার্গো এলএনজি আনতে ব্যয় হবে এক হাজার ৩৭৬ কোটি ৪৭ লাখ তিন হাজার ৬৮০ টাকা।
খাদ্য অধিদপ্তরের জন্য ভারত থেকে ৫০ হাজার টন নন-বাসমতী চাল কেনার অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। প্রতি টন চালের দাম ধরা হয়েছে ৪২৯.৫৫ ডলার।
স্থানীয়ভাবে উন্মুক্ত দরপত্র পদ্ধতিতে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) জন্য ৯৪ টাকা ২৩ পয়সা দরে ১০ হাজার টন মসুর ডাল কেনার প্রস্তাব অনুমোদন করা হয়েছে। একই সঙ্গে প্রতি লিটার ১৬২ টাকা ৫০ পয়সা দরে কেনা হচ্ছে এক লাখ ১০ হাজার লিটার রাইস ব্র্যান তেল। এতে ব্যয় হবে ২৭২ কোটি ৯৮ লাখ টাকা।
গ্রিন অয়েল অ্যান্ড পোলট্রি ফিড ইন্ডাস্ট্রিজ, মজুমদার প্রডাক্টস লিমিটেড ও মজুমদার ব্র্যান অয়েল মিলস লিমিটেড থেকে এই তেল কেনা হবে। মেসার্স মদিনা ট্রেডিং করপোরেশন ও মেসার্স পায়েল ট্রেডার্স থেকে মসুর ডাল কেনা হবে।
সায়েদাবাদ পানি শোধনাগারের ব্যয় ১,৫১৩ কোটি টাকা
স্থানীয় সরকার বিভাগের অধীন সায়েদাবাদ পানি শোধনাগার নির্মাণ প্রকল্পের ট্রিটেড ওয়াটার প্রাইমারি ডিস্ট্রিবিউশন পাইপলাইনস স্থাপনের দুটি প্রস্তাব অনুমোদন দিয়েছে ক্রয় কমিটি। দুই প্রকল্পে মোট ব্যয় হবে এক হাজার ৫১৩ কোটি ২৪ লাখ ১১ হাজার ৯২২ টাকা।
এর মধ্যে এক হাজার ৩৯ কোটি ৫৫ লাখ ১২ হাজার ৪৪৭ টাকা ব্যয়ের একটি প্রকল্পে ট্রিটেড ওয়াটার প্রাইমারি ডিস্ট্রিবিউশন পাইপলাইনস স্থাপনের পূর্ত কাজ চায়না পেট্রোলিয়াম পাইপলাইন ইঞ্জিনিয়ারিং কো. বাস্তবায়ন করবে। ৪৭৩ কোটি ৬৮ লাখ ৯৯ হাজার ৪৬৪ টাকা ব্যয়ে অন্য প্রকল্পের কাজ যৌথভাবে হুবেই ইন্ডাস্ট্রিয়াল কনস্ট্রাকশন গ্রুপ (এইচআইসিসি) ও এসআর করপোরেশন (এসআরসি) বাস্তবায়ন করবে।
নবায়নযোগ্য জ্বালানি প্রস্তাব নীতিগত অনুমোদন
ফেনী জেলার সোনাগাজী উপজেলায় প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের অধীন বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের (বেজা) মালিকানাধীন ৬০০ একর জমিতে গ্রাউন্ড মাউন্টেড সোলার ভিপি (১০০-২০০ মেগাওয়াট) নবায়নযোগ্য জ্বালানি উৎপাদনের একটি প্রস্তাব নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটি। গতকাল সভায় জানানো হয় অর্থনৈতিক অঞ্চলের জমিতে এখন প্রকল্পটি পিপিপির অধীনে বাস্তবায়ন করা হবে।