<p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর দেশের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিস্থিতি এবং আগামী সংসদ নির্বাচন নিয়ে জনমনে নতুন নতুন প্রশ্ন দেখা দিচ্ছে। সার্বিক বিষয়ে কালের কণ্ঠের সঙ্গে কথা বলেছেন বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ও গণতন্ত্র মঞ্চের সমন্বয়ক <strong>সাইফুল হক।</strong> সাক্ষাৎকার নিয়েছেন জ্যেষ্ঠ   প্রতিবেদক<strong> নিখিল ভদ্র</strong></span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"> </p> <p style="text-align:left">কালের কণ্ঠ : গণ-অভ্যুত্থান পরবর্তী রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক পরিস্থিতি কিভাবে দেখছেন?</p> <p>সাইফুল হক : এই সময়ে নানা সংকট ও প্রতিবন্ধকতা মোকাবেলা করে সরকারকে চলতে হয়েছে। তার পরও সরকারের বেশ কিছু অর্জন ও সফলতা আছে। এরই মধ্যে তারা নির্বাচনের বিষয়ে একটি ধারণা দিয়েছে, যা ইতিবাচক। তবে তারা ভালোভাবে দেশ চালাতে পারছে না। গত সাড়ে চার মাসে দ্রব্যমূল্যসহ অর্থনৈতিক পরিস্থিতির উন্নতি হয়নি। আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি এখনো নিয়ন্ত্রণের বাইরে। রাজনৈতিক দল ও জনগণের সমর্থন পাওয়ার পরও সরকার বিশ্বাসযোগ্য ও দৃষ্টিগ্রাহ্যভাবে দেশ পরিচালনায়, বিশেষ করে জনজীবনে স্বস্তি দেওয়ার ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ নিতে পারেনি।</p> <p> </p> <p>কালের কণ্ঠ : এ পর্যন্ত নেওয়া সরকারের পদক্ষেপগুলো কতটা গণমুখী?</p> <p>সাইফুল হক : জনগণ সময় দিতে চায় বলে এখনো সরকারকে সহ্য করছে। কিন্তু অনির্দিষ্টকাল এভাবে চলবে না। অন্তর্বর্তী সরকারের মধ্যে অনেক সরকার কাজ করছে। প্রফেসর ইউনূসের নেতৃত্বে একটা সরকার, আমলাদের নেতৃত্বে একটা সরকার এবং ছাত্র-তরুণদের নেতৃত্বে আরেকটা সরকার পরিচালিত হচ্ছে। ফলে সরকারের দিক থেকে অনেক দোলাচল-দোটানা, সমন্বয়হীনতা, ঘাটতি, দুর্বলতা লক্ষ করা যাচ্ছে।</p> <p> </p> <p>কালের কণ্ঠ : মব সন্ত্রাস বন্ধসহ সার্বিক আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে আপনার মূল্যায়ন?</p> <p>সাইফুল হক : সামাজিক নৈরাজ্যের বহিঃপ্রকাশ মব সন্ত্রাস। রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী যথাযথভাবে কাজ না করায় সারা দেশে মব সন্ত্রাস ছড়িয়ে পড়ছে। ফলে নাগরিক হিসেবে উদ্বেগ-উত্কণ্ঠা বাড়ছে।</p> <p> </p> <p>কালের কণ্ঠ : সংখ্যালঘু ও আদিবাসী নিপীড়নের ঘটনাকে কিভাবে দেখছেন?</p> <p>সাইফুল হক : গণ-অভ্যুত্থান পরবর্তী সময় দেশে রক্তাক্ত একটি পরিস্থিতি সৃষ্টির আশঙ্কা থাকলেও তা হয়নি। এ ক্ষেত্রে অভ্যুত্থানকারী ছাত্ররা, রাজনৈতিক দল এমনকি সাধারণ মানুষ অসীম ধৈর্য ও ধর্মীয় সম্প্রীতির পরিচয় দিয়েছে। নানা উসকানি সত্ত্বেও জাতীয় ঐক্য ধরে রাখা সম্ভব হয়েছে। অভ্যুত্থানের পর জাতিগত ও ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ওপর বেশ কিছু হামলা ও নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে। তবে সব ঘটনা সাম্প্রদায়িক কারণে ঘটেনি।</p> <p>কালের কণ্ঠ : শ্রমিক ও পেশাজীবীদের আন্দোলন নিয়ে সরকারের ভূমিকাকে কিভাবে দেখছেন?</p> <p>সাইফুল হক : শ্রমজীবী ও পেশাজীবীদের আন্দোলনের সবই যে ফ্যাসিবাদের দোসররা করছে, এমন ঢালাও মন্তব্য করা সমীচীন হবে না। অনেকেই ১৬ বছরে যে দাবিগুলো উত্থাপন করতে পারেননি এখন অনুকূল পরিবেশে তাঁরা কথা বলছেন, দাবি উত্থাপন করছেন। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে সরকার বেশির ভাগ বিষয় আমলে নিচ্ছে না।</p> <p> </p> <p>কালের কণ্ঠ : গণ-অভ্যুত্থানের পর দেশে উগ্র সাম্প্রদায়িক শক্তির উত্থানের অভিযোগ কতটা সঠিক?</p> <p>সাইফুল হক : বেশকিছু ঘটনা ঘটেছে, আমরা যার নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছি। সারা দেশে ধর্মীয় চেতনা, ধ্যান-ধারণা, ধর্মীয় রাজনীতি ও সংস্কৃতির তৎপরতা দেখা যাচ্ছে। এসব তৎপরতার পেছনে অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে  যুক্ত ছাত্র-তরুণ ও বৈষম্যবিরোধীদের এক ধরনের প্রচ্ছন্ন মদদ কাজ করছে। কিছু নিষিদ্ধ সংগঠনেরও বেপরোয়া তৎপরতা আছে, যারা শুধু ধর্মবিশ্বাসের কারণে মানুষকে বিভক্ত ও সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা সৃষ্টি করতে চায়। এটা অব্যাহত থাকলে অভ্যুত্থান ব্যর্থ হবে।</p> <p> </p> <p>কালের কণ্ঠ : একাত্তর ও চব্বিশের সংগ্রামের মধ্যে কোনো বিরোধ আছে কি না?</p> <p>সাইফুল হক : একাত্তরের সঙ্গে চব্বিশের কোনো বিরোধ নেই। তবে অভ্যুত্থানের সঙ্গে যুক্ত ছাত্র-তরুণদের অতিকথন ও আবেগী কথনের কারণে মনে হয়েছে, চব্বিশের আগে আর কিছু নেই। সেটা নিয়ে আমরা প্রতিবাদ করেছি। আমরা কোনো ভুঁইফোড় জাতি না। ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন, ভাষা আন্দোলন, ৬৬ দফার আন্দোলন, উনসত্তরের গণ-অভ্যুত্থান, একাত্তরের সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধ, স্বৈরাচার ও সামরিক শাসনবিরোধী আন্দোলন, নব্বইয়ের গণ-অভ্যুত্থান—এগুলো আমাদের বড় অর্জন। এগুলো অস্বীকার করার কোনো অবকাশ নেই। একাত্তরের চেতনার ভিত্তিতে চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থানকে বিবেচনা করতে হবে।</p> <p> </p> <p>কালের কণ্ঠ : আগামী সংসদ নির্বাচনে আপনাদের প্রস্তুতি কেমন?</p> <p>সাইফুল হক : গণতান্ত্রিক পরিবেশ থাকলে নিবন্ধিত দল হিসেবে বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি তাদের দলীয় প্রতীক কোদাল মার্কা নিয়ে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে। গণতন্ত্র মঞ্চগতভাবে নির্বাচন করা যাবে কি না, সে বিষয়ে এখনো বিস্তারিত আলোচনা হয়নি। আরো বৃহত্তর পরিসরে নির্বাচনী ঐক্য হতে পারে। আমাদের জন্য সম্ভাবনাময় আসনগুলোতে এরই মধ্যে নির্বাচনী কাজ শুরু হয়েছে।</p> <p> </p> <p>কালের কণ্ঠ : পতিত স্বৈরাচার আওয়ামী লীগের বিচারের প্রশ্নে আপনাদের অবস্থান কী?</p> <p>সাইফুল হক : আমরা কোনো রাজনৈতিক দলকে নিষিদ্ধ করার পক্ষে নই। নিষিদ্ধ করলে তাদের অপরাধ ঢাকা পড়ে যেতে পারে। দলকে রাজনৈতিক ও আদর্শিকভাবে মোকাবেলা করতে হবে। তবে অভ্যুত্থানের সময় গণহত্যার জন্য দায়ীদের বিচারের প্রশ্ন আছে। এর সঙ্গে গত ১৬ বছরে হত্যা, গুম, খুন, রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস, দমন-পীড়ন, সীমাহীন লুণ্ঠন যারা করেছে, তাদের বিচারের মুখোমুখি করতে হবে। এ ক্ষেত্রে কোনো বিচার যেন প্রশ্নবিদ্ধ না হয়, সেটাও খেয়াল রাখতে হবে।</p> <p>কালের কণ্ঠ : বাহাত্তরের সংবিধান বাতিলের দাবি প্রশ্নে আপনাদের অবস্থান কী?</p> <p>সাইফুল হক : ছাত্ররা বাহাত্তরের সংবিধানকে মুজিববাদী সংবিধান আখ্যা দিয়ে তা বাতিলের ঘোষণা দিয়েছেন। তাঁদের এই তৎপরতা রাজনৈতিক শক্তির পাশাপাশি বৃহত্তর জনগণের মধ্যে বিভক্তি ও অনৈক্য বাড়াবে, যা দুশ্চিন্তার কারণ। এ বিষয়ে সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে।</p> <p> </p> <p>কালের কণ্ঠ : সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।</p> <p>সাইফুল হক : আপনাকেও ধন্যবাদ।</p> <p style="text-align:left"> </p>