<p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">ছাত্র-গণ-অভ্যুত্থানের পর দেশ এক অস্থির সময় পার করছে। অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কার কর্মসূচি এবং আগামী সংসদ নির্বাচন নিয়ে জনমনে নানা প্রশ্ন দেখা দিচ্ছে। সার্বিক বিষয়ে কালের কণ্ঠের সঙ্গে কথা বলেছেন বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল বাসদ সাধারণ সম্পাদক ও বাম গণতান্ত্রিক জোটের অন্যতম শীর্ষ নেতা <strong>বজলুর রশীদ ফিরোজ।</strong> সাক্ষাৎকার নিয়েছেন কালের কণ্ঠের সিনিয়র রিপোর্টার<strong> নিখিল ভদ্র</strong></span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"> </p> <p style="text-align:left">কালের কণ্ঠ : ছাত্র-গণ-অভ্যুত্থান-পরবর্তী সার্বিক পরিস্থিতি কিভাবে দেখছেন?</p> <p>বজলুর রশীদ ফিরোজ : বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্ল্রাটফরমে সব রাজনৈতিক দল, সংগঠন ও শ্রেণি-পেশার মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণে ৫ আগস্ট গণ-অভ্যুত্থান হয়েছে। এর পর হত্যা-নির্যাতন-নিপীড়ন, লুটপাটসহ নানা ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু ৮ আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর জনগণের আশা ছিল, অবস্থার উন্নতি হবে। জুলাই-আগস্টের হত্যাকাণ্ডের বিচারের উদ্যোগ, আহত-নিহতদের ক্ষতিপূরণ ও পুনর্বাসনের উদ্যোগ নেওয়া হবে। দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে কার্যকর পদক্ষেপ, আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি উন্নয়নের মাধ্যমে জনজীবনে স্বস্তি ফিরিয়ে আনা হবে। কিন্তু দৃশ্যমান অগ্রগতি হয়নি। জনমনে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে, এই অভ্যুত্থানও কি ব্যর্থ হবে?</p> <p>কালের কণ্ঠ : সরকারের কার্যক্রমে রাজনৈতিক দল ও জনগণ কতটা ইতিবাচক বলে মনে করেন?</p> <p>বজলুর রশীদ ফিরোজ : সরকার সার্বিক পরিস্থিতি উন্নয়নের চেষ্টা করলেও সামর্থ্য না থাকায় ইতিবাচক ফল পাওয়া যাচ্ছে না। তাই আমরা বলেছিলাম, কর্মপরিধি সীমিত করেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য যা করণীয় সেগুলো করে নির্বাচন দিন। এরপর সরকারের দায়িত্ব নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের হাতে দিন। কিন্তু সরকারের মধ্যে ব্যাপক সমন্বয়হীনতা কাজ করছে। কোনো কাজ সুষ্ঠুভাবে হচ্ছে না। একেকজন উপদেষ্টা একেক কথা বলছেন।</p> <p> </p> <p>কালের কণ্ঠ : গণ-অভ্যুত্থানের পর দেশে উগ্র সাম্প্রদায়িক শক্তির উত্থানের অভিযোগ কতটা সঠিক?</p> <p>বজলুর রশীদ ফিরোজ : আমরা বিস্ময়ের সঙ্গে লক্ষ্য করছি, জনগণ যে শক্তিকে পরাজিত করে, শাসক শ্রেণি সেই শক্তিকে আশ্রয়-প্রশ্রয় দিয়ে পুনর্বাসন করে। ১৯৭১ সালে মৌলবাদী-সাম্প্রদায়িক শক্তি জামায়াতে ইসলামীসহ অন্যদের সশস্ত্র লড়াইয়ের মাধ্যমে পরাজিত করা হলেও তাদের শাসক শ্রেণি আশ্রয়-প্রশ্রয় দিয়ে পুনর্বাসন করেছে। আবার ১৯৯০ সালে পরাজিত স্বৈরশাসককেও শাসকরা পুনর্বাসিত করেছে। এবারও রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার অনুপস্থিতিতে উগ্র সাম্প্রদায়িক শক্তির আস্ফাালন শুরু হয়েছে। তারা মহান মুক্তিযুদ্ধ, সংবিধানসহ অন্যান্য বিষয়ে বিতর্কিত বক্তব্য দিয়ে উত্তেজনা সৃষ্টি করছে। এটা জনগণ কোনোভাবেই সহ্য করবে না। সরকারকে এগুলো কঠোর হস্তে দমন ও নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।</p> <p> </p> <p>কালের কণ্ঠ : শ্রমিক ও পেশাজীবীদের আন্দোলন নিয়ে সরকারের ভূমিকাকে কিভাবে দেখছেন?</p> <p>বজলুর রশীদ ফিরোজ : যেকোনো আন্দোলনের পেছনে চক্রান্ত ও ষড়যন্ত্রের গন্ধ খোঁজা ন্যায়সংগত নয়। গত ১৬ বছর শ্রমিক ও পেশাজীবী জনগণ বঞ্চিত ও নির্যাতিত ছিল বলেই তারা এখন মাঠে নামছে। তাই সরকারের যথাযথ গুরুত্ব দিয়ে তাদের দাবির যৌক্তিকতা বিবেচনায় নিয়ে এটা ফয়সালা করতে হবে।</p> <p> </p> <p>কালের কণ্ঠ : ফ্যাসিবাদ ও স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে বামপন্থীদের ভূমিকা কতটা ছিল?</p> <p>বজলুর রশীদ ফিরোজ : আমরা গত ১৬ বছর আন্দোলনের মাঠে ছিলাম। ২৬টি পাটকল যখন বন্ধ হলো, তখন বাসদ-সিপিবিসহ বামপন্থীরাই তার বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছে। ছয়টি চিনিকল বন্ধ, চা শ্রমিকদের মজুরির দাবিতে আন্দোলনও বামপন্থীরা গড়ে তুলেছে। ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্টের বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছে এই বামপন্থীরা। তিস্তার পানির ন্যায্য হিস্যার দাবিতে ১২ বছর ধরে আমাদের আন্দোলন চলছে। ২০১৪ ও ২০২৪ সালের নির্বাচন আমরা বর্জন করেছি। ২০১৮ সালের নির্বাচনে দিনের ভোট রাতে করার প্রতিবাদে আমরাই প্রথম মুখে কালো কাপড় বেঁধে রাজপথে দাঁড়িয়েছি।</p> <p> </p> <p>কালের কণ্ঠ : দেশ কি মহান মুক্তিযুদ্ধের পথে চলছে?</p> <p>বজলুর রশীদ ফিরোজ : আমরা মুক্তিযুদ্ধের আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়নের পথে ছিলাম না বলেই চব্বিশের গণ-আন্দোলন হয়েছে। বৈষম্য বিলোপের যে লড়াই হয়েছে, সেটা ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের যে চেতনা সাম্য, সামাজিক ন্যায়বিচার ও মানবিক মর্যাদা, গত ৫৩ বছরে শাসক শ্রেণি পূরণ করেনি বলেই হয়েছে। আমরা একটি দীর্ঘ স্থায়ী লড়াই করছি, যে লড়াইয়ের মাধ্যমে ব্যবস্থা বদল করে বৈষম্যবিরোধী সমাজ প্রতিষ্ঠা করতে চাই।</p> <p> </p> <p>কালের কণ্ঠ : পতিত স্বৈরাচারের বিচারের প্রশ্নে আপনাদের অবস্থান কী?</p> <p>বজলুর রশীদ ফিরোজ : গণ-অভ্যুত্থানের পর থেকেই আমরা দাবি তুলেছি, আন্দোলন চলাকালে যারা হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে এবং যারা হুকুমদাতা, তাদের বিচারের আওতায় আনতে হবে। এ জন্য একটি বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠনের জন্য বলেছিলাম, যাতে বিচার নিয়ে কোনো প্রশ্ন তোলার সুযোগ না থাকে। কিন্তু সেই পদক্ষেপ না নিয়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ দমন ট্রাইব্যুনালে বিচারকাজ শুরু হয়েছে, চিফ প্রসিকিউটর নিয়োগ দেওয়া হয়েছে একজন বিতর্কিত ব্যক্তিকে। অপরাধীর বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্টভাবে অভিযোগ না এনে, ঢালাওভাবে গায়েবি মামলা দেওয়া হচ্ছে। প্রকৃত হত্যাকারীদের সঙ্গে অর্থ পাচারকারী, ব্যাংক লুটের সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধেও খুনের মামলা দেওয়া হচ্ছে। এতে প্রকৃত অপরাধীরা ছাড়া পাওয়ার আশঙ্কা থেকে যাচ্ছে। তাই আন্তর্জাতিকভাবে গ্রহণযোগ্য ও স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় বিচারকাজ করতে হবে।</p> <p> </p> <p>কালের কণ্ঠ : আগামী সংসদ নির্বাচনে আপনাদের প্রস্তুতি কেমন?</p> <p>বজলুর রশীদ ফিরোজ : আমরা বামপন্থীরা নির্বাচন করি আন্দোলনের অংশ হিসেবে। আমাদের আন্দোলনের প্রস্তুতি সব সময়ই থাকে। সেই আন্দোলনের অংশ হিসেবে নির্বাচন করতে চাই। বাম গণতান্ত্রিক জোটগতভাবে আমাদের নির্বাচনের প্রস্তুতি আছে। তবে বাম জোটের বাইরে আরো বৃহত্তর বলয় করার চেষ্টাও আছে। বিশেষ করে অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরীর নেতৃত্বে যুক্তফ্রন্ট গঠনের একটি উদ্যোগ আছে। সেটা কতটা সম্ভব হবে, সময়ই বলে দেবে।</p> <p style="text-align:left"> </p>