পঞ্চগড় সদর উপজেলার অমরখানা ইউনিয়নের ভিতরগড় সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে আল আমিন (৩২) নামের এক বাংলাদেশি যুবক নিহত হয়েছেন। গতকাল শনিবার ভোরে ওই সীমান্তের কাজীরহাট সুইডাঙ্গা এলাকার বিপরীতে সীমান্ত থেকে ১৬০ গজ ভারতের অভ্যন্তরে ভাটপাড়া এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। নিহত আল আমিনের বাড়ি উপজেলার হাড়িভাসা ইউনিয়নের জিন্নাতপাড়া এলাকায়। তিনি ওই এলাকার সুরুজ আলীর ছেলে।
পঞ্চগড়ে বিএসএফের গুলিতে বাংলাদেশি যুবক নিহত
পঞ্চগড় প্রতিনিধি

বিজিবি ও স্থানীয় লোকজন জানায়, আল আমিন সৌদিতে চার-পাঁচ বছর কাজ করার পর দেশে ফেরত আসেন। দেশে ফিরে তিনি গরু চোরাকারবারের সঙ্গে জড়িত হয়ে পড়েন। বাংলাদেশি নাগরিক হলেও মাঝেমধ্যেই তিনি ভারতে অবস্থান করেন। গতকাল রাত ৩টায় বাংলাদেশ ও ভারতের ১৫ থেকে ২০ জন চোরাকারবারি বাংলাদেশে গরুপাচারের চেষ্টার সময় ভাটপাড়া বিএসএফ ক্যাম্পের টহলরত সদস্যরা তাঁদের বাধা দেয়।
এদিকে আল আমিনের মরদেহের অপেক্ষায় তাঁর পরিবার।
স্থানীয় বাসিন্দা আয়নাল হক বলেন, ‘সাহরি খাওয়ার আগে আমরা সীমান্তে বিকট শব্দ শুনতে পাই। মাঝেমধ্যেই বিএসএফ সাউন্ড গ্রেনেড ছোড়ে। আমরা শুরুতে ভেবেছিলাম সাউন্ড গ্রেনেড, কিন্তু পর পর কয়েক রাউন্ড শব্দ হলে আমরা বুঝতে পারি এটি গুলির শব্দ। এ সময় সীমান্তে চিৎকার শোনা যাচ্ছিল। সকালে জানা যায়, সীমান্তে ভারতীয় অংশে একজন বাংলাদেশির গুলিবিদ্ধ মরদেহ পড়ে রয়েছে।’
দুলাল হোসেন নামে আল আমিনের এক প্রতিবেশী বলেন, ‘ভারতেও আল আমিনকে সবাই একনামে চেনে। তাকে সবাই পাগলা আল আমিন বলে জানে। সে দীর্ঘদিন ধরে চোরাকারবারের সঙ্গে জড়িত।’
সম্পর্কিত খবর

হঠাৎ বৃষ্টি

হঠাৎ করেই গতকাল দুপুরে শুরু হয় বৃষ্টি। এর মধ্যেই ছাতা মাথায় গন্তব্যের উদ্দেশে হেঁটে যাচ্ছেন দুই তরুণী। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা থেকে তোলা। ছবি : কালের কণ্ঠ
।
কারিগরি শিক্ষার্থীদের আন্দোলন
বৈঠকে সন্তুষ্ট নন আন্দোলন চলবে
নিজস্ব প্রতিবেদক

দেশজুড়ে একযোগে মশাল মিছিলে নেমেছেন কারিগরি শিক্ষার্থীরা। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে বৈঠক ফলপ্রসূ না হওয়া এবং কুমিল্লায় কারিগরি শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার প্রতিবাদে এই কর্মসূচি পালন করছেন তাঁরা। গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় কারিগরি ছাত্র আন্দোলন বাংলাদেশ ব্যানারে ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট ক্যাম্পাস থেকে এই মিছিল শুরু করেন শিক্ষার্থীরা।
আল ইমরান নামের এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘আমাদের ছয় দফা দাবি মেনে নেওয়ার কথা বলা হলেও আজ পর্যন্ত তার বাস্তবায়ন দেখা যায়নি।
শিক্ষার্থীরা জানান, এর আগে সকাল ১১টায় দেশব্যাপী মিছিলের ঘোষণা দিয়েছিল কারিগরি ছাত্র আন্দোলন বাংলাদেশ।
গতকাল সচিবালয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে কারিগরি ও মাদরাসা শিক্ষা বিভাগের অতিরিক্ত সচিবের সঙ্গে বৈঠক শেষে বিকেল ৩টার দিকে বেরিয়ে শিক্ষার্থীরা এই ঘোষণা দেন। শিক্ষার্থীদের পক্ষে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন মাশফিক ইসলাম ও আল ইমরান।
শিক্ষার্থীরা বলেন, ‘আমাদের সঙ্গে প্রতারণা করা হয়েছে। আজকে শিক্ষা উপদেষ্টার সঙ্গে আমাদের বৈঠক করার জন্য ডেকে আনা হয়েছিল। কিন্তু একজন অতিরিক্ত সচিব বৈঠক করেছেন। আমাদের দাবিদাওয়া লিখে নিয়ে সচিবের কাছে উপস্থাপন করবেন, তারপর উপদেষ্টার কাছে দেবেন। আমরা চেয়েছিলাম উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক করতে।
এরপর গতকাল বিকেল সোয়া ৫টার দিকে ‘কারিগরি ছাত্র আন্দোলন, বাংলাদেশ’ নামের ফেসবুক পেজে বলা হয়, ‘নাটকীয় বৈঠক এবং বুধবার কুমিল্লা বিভাগীয় পলিটেকনিকসমূহে আক্রমণের প্রতিবাদে আজ (গতকাল বৃহস্পতিবার) সন্ধ্যা ৭টা ৩০ মিনিটে সব পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটকে একযোগে মশাল মিছিল কর্মসূচি পালন করার জন্য আহবান করা হলো।’
ছয় দফা দাবি আদায়ে আন্দোলনের অংশ হিসেবে গতকাল ঢাকাসহ সারা দেশে রেলপথ অবরোধ করার ঘোষণা দিয়েছিলেন শিক্ষার্থীরা। তবে সচিবালয়ে বৈঠকের আহ্বানের পরিপ্রেক্ষিতে শিক্ষার্থীরা ‘রেলপথ ব্লকেড’ কর্মসূচি শিথিল করেন। এরপর গতকাল সকাল সাড়ে ১১টার দিকে সচিবালয়ে আসেন শিক্ষার্থীরা। দুপুর ১২টার দিকে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কারিগরি ও মাদরাসা শিক্ষা বিভাগের সম্মেলনকক্ষে অতিরিক্ত সচিব (কারিগরি অনুবিভাগ) রেহানা ইয়াছমিনের সঙ্গে বৈঠকে বসে ‘কারিগরি ছাত্র আন্দোলন, বাংলাদেশ’-এর ১৮ সদস্যের প্রতিনিধিদল।
শিক্ষার্থীদের ছয় দফা দাবি হলো—জুনিয়র ইনস্ট্রাক্টর পদে ক্রাফট ইনস্ট্রাক্টরদের জন্য নির্ধারিত ৩০ শতাংশ পদোন্নতির কোটা বাতিল, জুনিয়র ইনস্ট্রাক্টর (টেক) পদের জন্য ডিপ্লোমা প্রকৌশল ডিগ্রি বাধ্যতামূলক করা, সব কারিগরি পদে শুধু কারিগরি শিক্ষায় শিক্ষিত জনবল নিয়োগ, প্রতিটি বিভাগীয় শহরে একটি করে কারিগরি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন, মাধ্যমিক পর্যায়ে কারিগরি শিক্ষা চালু ও ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের শিক্ষক পদে আবেদনের সুযোগ নিশ্চিত করা এবং বেসরকারি খাতে ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের জন্য ন্যূনতম বেতনকাঠামো নির্ধারণ।
গত বুধবার দাবি আদায়ে শিক্ষার্থীরা দিনভর রাজধানীর তেজগাঁওয়ের সাতরাস্তা মোড় অবরোধ করেন। ঢাকার বাইরেও শিক্ষার্থীরা যাঁর যাঁর পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের সামনের সড়কে অবস্থান নেন। শিক্ষার্থীরা ঢাকা-চট্টগ্রাম, ঢাকা-ময়মনসিংহ সড়কও অবরোধ করেছিলেন।

রাজশাহীতে মেয়েকে উত্ত্যক্তের প্রতিবাদ করায় বাবা খুন
নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী

রাজশাহীর তালাইমারীতে গত বুধবার রাতের অন্ধকারে ঘটে গেল এক হৃদয়বিদারক ঘটনা। নিজ মেয়ের সম্মান রক্ষায় দাঁড়ানো এক বাবা নির্মমভাবে প্রাণ হারালেন। তিনি মেয়েকে ইভ টিজিংয়ের প্রতিবাদ করেছিলেন। এ কারণে মাথায় ইট দিয়ে আঘাত করে তাঁকে হত্যা করা হয়।
নিহতের নাম আকরাম হোসেন (৪৫)। তিনি পেশায় একজন বাসচালক এবং রাজশাহী জেলা মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের সদস্য। শহরের তালাইমারী এলাকার বাসিন্দা ছিলেন তিনি। স্ত্রী, দুই ছেলে ও এক মেয়েকে নিয়ে চলছিল তাঁর ছোট্ট সংসার।
আকরামের মেয়ে আলফি খাতুন এবার এসএসসি পরীক্ষার্থী। গত বুধবার সকালে প্রাইভেট পড়ে ফিরছিল সে। তালাইমারী শহীদ মিনার মোড়ে অটোরিকশা থেকে নামতেই তাকে উদ্দেশ করে অশালীন মন্তব্য ছুড়ে দেয় এলাকার বখাটে নান্টু (২৮)।
লজ্জা, অপমান আর ভয় নিয়ে দৌড়ে বাড়ি ফিরে যায় আলফি। কাঁদতে কাঁদতে জানায় মা-বাবা আর ভাইকে। আলফির কথায়, “আমি শুধু বলেছিলাম, রাস্তা দিয়ে আসার সময় ওই লোকটা খারাপ কথা বলেছে। বাবা তখন নাট্টুর বাবাকে গিয়ে বলেছিলেন, ‘আপনার ছেলে মেয়েদের বিরক্ত করে, ওকে বুঝিয়ে বলুন।’ তাতেই ক্ষিপ্ত হয়ে যায় তারা।
ওই রাতেই তালাইমারী শহীদ মিনার মোড়ের রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিলেন আকরামের ছেলে ইমাম হাসান অনন্ত। তাঁকে একা পেয়ে নাট্টু ও তাঁর কয়েকজন সহযোগী বিশাল, খোকন, তাসিন, অমি, নাহিদ ও শিশির রড, লাঠি ও ইট দিয়ে মারতে শুরু করে। চিৎকার শুনে ছুটে যান বাবা আকরাম। ছেলেকে বাঁচাতে ঝাঁপিয়ে পড়েন। তবে দুর্বৃত্তরা থামেনি। উল্টো আকরামকে মেরেই ফেলে তারা। ইট দিয়ে মাথায় আঘাত করলে তিনি মাটিতে লুটিয়ে পড়েন।
স্থানীয় লোকজন আকরাম হোসেনকে উদ্ধার করে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়। কিন্তু চিকিৎসকরা জানান, হাসপাতালে আনার আগেই তিনি মারা গেছেন।
ইমাম হাসান বলেন, ‘আমি বোনের অপমানের প্রতিবাদ করেছিলাম। আর বাবা আমার পাশে দাঁড়িয়েছিলেন। এটাই ছিল আমাদের অপরাধ।’ তিনি আরো বলেন, ‘আমি বাবাকে বাঁচাতে পারিনি। তারা তাঁকে এমনভাবে মেরেছে, আমি চোখের সামনে সব দেখেছি। এটা কোনো মানুষ করতে পারে?’
আকরামের স্ত্রী নাজমা বেগম বারবার মূর্ছা যাচ্ছিলেন। চোখ মেলে বললেন, “সে তো কিছুই করেনি। মেয়েকে বাঁচাতে গিয়েছিল। এত বড় শাস্তি পাবে? এখন আমি কী করে আমার মেয়েকে পরীক্ষা দিতে পাঠাব?”
এদিকে বৃহস্পতিবার বিকেলে তালাইমারী শহীদ মিনার মোড়ে নিহত আকরামের মরদেহ সামনে রেখে বিক্ষোভ করে এলাকাবাসী। লাঠি-ইট হাতে যারা একজন বাবাকে হত্যা করেছে, তাদের গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছে তারা।
মানববন্ধনে উপস্থিত ছিল শ্রমিক, শিক্ষার্থী, গৃহবধূ, স্থানীয় শিক্ষকসহ নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ। তাদের প্ল্যাকার্ডে লেখা ছিল ‘একজন বাবার রক্তে রঞ্জিত রাজপথ’, ‘আমার বাবার খুনি কবে ধরা পড়বে?’
একজন প্রবীণ শিক্ষক বলেন, ‘এই সমাজে এখন একজন বাবাও যদি মেয়ের সম্মান রক্ষার জন্য প্রাণ হারান, তাহলে আমরা কোথায় দাঁড়িয়ে আছি?’
এ বিষয়ে বোয়ালিয়া থানার ওসি মোস্তাক আহমেদ বলনে, ইমাম হাসান বাদী হয়ে সাতজনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতপরিচয় আরো পাঁচজনকে আসামি করে মামলা করেছেন। তবে গতকাল (বৃহস্পতিবার) বিকেল পর্যন্ত কাউকে গ্রেপ্তার করা যায়নি।

আইএসপিআর
দুই মাসে ৩২০টি অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার করেছে সেনাবাহিনী
নিজস্ব প্রতিবেদক

দেশের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় গত দুই মাসে ৩২০টি অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার করেছে সেনাবাহিনী। একই সময়ে ৫৬৪টি গোলাবারুদ্ধ উদ্ধার করে তারা। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুর ২টায় ঢাকা সেনানিবাসে সেনা সদরে এক সংবাদ সম্মেলনে এই তথ্য জানান কর্নেল মো. শফিকুল ইসলাম।
তিনি জানান, দেশের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা এবং সেনাবাহিনীর সমসাময়িক কর্মকাণ্ড সম্পর্কে ধারণা দিতে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, গত দুই মাসে সেনাবাহিনী ২৩২টি বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করেছে। এর মধ্যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসংশ্লিষ্ট ৩৭টি, সরকারি সংস্থা বা অফিসসংক্রান্ত ২৪টি, রানৈতিক কোন্দল ৭৬টি এবং অন্যান্য ধরনের ঘটনা ছিল ৯৫টি। এই সময় যৌথ বাহিনীর অভিযানে দুই হাজার ৪৫৭ জনকে বিভিন্ন অপরাধে সংশ্লিষ্ট থাকার অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয়।
শফিকুল ইসলাম জানান, গত দুই মাসে দেশের যেসব স্থানে বৃহত্ভাবে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে, দ্রুততার সঙ্গে সেখানে আগুন নেভাতে কাজ করেছেন সেনাবাহিনীর সদস্যরা।
তিনি আরো জানান, সম্প্রতি মায়ানমার ও থাইল্যান্ডে ভূমিকম্পের আঘাতের পর বাংলাদেশ সরকার জরুরি উদ্ধার, ত্রাণ ও চিকিৎসা সহায়তা দিয়েছে। এই কার্যক্রমে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী।