ঢাকা, সোমবার ২৮ এপ্রিল ২০২৫
১৪ বৈশাখ ১৪৩২, ২৮ শাওয়াল ১৪৪৬

ঢাকা, সোমবার ২৮ এপ্রিল ২০২৫
১৪ বৈশাখ ১৪৩২, ২৮ শাওয়াল ১৪৪৬
নৌপরিবহন উপদেষ্টা

ঈদে নৌপথের যাত্রা নির্বিঘ্ন করার আহ্বান

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
ঈদে নৌপথের যাত্রা নির্বিঘ্ন করার আহ্বান

আসন্ন ঈদুল ফিতর উপলক্ষে দেশের বিভিন্ন নৌপথের যাত্রীদের ঈদ যাত্রা নির্বিঘ্ন করতে সংশ্লিষ্ট সবাইকে আন্তরিকভাবে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছেন নৌপরিবহন এবং শ্রম ও কর্মসংস্থান উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. এম সাখাওয়াত হোসেন।

গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে দেশের বিভিন্ন নৌপথে জলযানগুলো সুষ্ঠুভাবে চলাচল এবং যাত্রীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করাসহ যথাযথ কর্মপন্থা গ্রহণের লক্ষ্যে আয়োজিত সভায় জুম প্ল্যাটফর্মে সংযুক্ত হয়ে এ আহ্বান জানান।

সভায় উপদেষ্টা বলেন, আসন্ন ঈদে দেশের বিভিন্ন নৌপথে জলযানগুলো সুষ্ঠুভাবে চলাচল এবং যাত্রীদের নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে বর্তমান সরকার আন্তরিকভাবে কাজ করছে। এর মধ্যে বিভিন্ন কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।

যাত্রীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে দূরপাল্লার লঞ্চগুলোতে সশস্ত্র আনসার সদস্য মোতায়েন করা হবে। নৌ পুলিশ, কোস্ট গার্ড ও বাংলাদেশ নৌবাহিনীকে নৌপথের বিশেষ অপরাধপ্রবণ জায়গাগুলোতে বিশেষ টহল কার্যক্রম পরিচালনা করার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

এ ছাড়া বিভিন্ন গন্তব্যের যাত্রী ও যানবাহনগুলোকে ফেরি ও যাত্রীবাহী জাহাজে সার্বক্ষণিক সেবা প্রদানের জন্য বিআইডব্লিউটিসির কন্ট্রোলরুম চালু করা হয়েছে। যাত্রী ও যানবাহনের লোকজনকে প্রয়োজনে ০২২২৩৩৬২৭৭৯ ও ০১৪০৪৪৪৩৭০৭ নম্বরে যোগাযোগ করে সেবা নিতে বলা হয়েছে।

নৌপরিবহন উপদেষ্টা নৌ-দুর্ঘটনা রোধে ঈদের আগের পাঁচ দিন ও পরের পাঁচ দিন দিনরাত মিলিয়ে সার্বক্ষণিক বাল্কহেড (বালুবাহী) চলাচল বন্ধ করার নির্দেশ দিয়েছেন।

 

 

মন্তব্য

সম্পর্কিত খবর

ব্রাহ্মণবাড়িয়া সীমান্তে আবার বিএসএফের গুলি বাংলাদেশি যুবক আহত

ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি
ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি
শেয়ার
ব্রাহ্মণবাড়িয়া সীমান্তে আবার বিএসএফের গুলি বাংলাদেশি যুবক আহত

ব্রাহ্মণবাড়িয়া সীমান্তে আবার গুলি ছুড়েছে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ)। এবার জেলার আখাউড়া উপজেলা সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে এক বাংলাদেশি নাগরিক আহত হয়েছেন। গতকাল শুক্রবার সকালে মনিয়ন্দ ইউনিয়নের ইটনা গ্রামসংলগ্ন সীমান্তে এ ঘটনা ঘটে।

আহত মো. আসাদুল ইসলাম (২৮) ইটনা গ্রামের মো. ফেরদৌস মিয়ার ছেলে।

তিনি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বলে জানা গেছে। তবে জেলা সদর হাসপাতালে গিয়ে তাঁকে পাওয়া যায়নি।

বিজিবি ও স্থানীয় সূত্র জানায়, সকাল সাড়ে ১১টার দিকে ইটনাসংলগ্ন সীমান্তে আসাদুলকে দেখে তিন রাউন্ড গুলি করে বিএসএফ। এতে তিনি আহত হন।

স্থানীয় লোকজন তাঁকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যায়। খবর পেয়ে সেখানে বিজিবি যায়।

বিজিবি-৬০ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল জিয়াউর রহমান কালের কণ্ঠকে জানান, ভারত সীমান্ত এলাকায় ঘটনাটি ঘটে। ওই ব্যক্তি নদী পার হওয়ার সময় গুলি করে বিএসএফ।

আহত ব্যক্তির কাছ থেকে বিস্তারিত জানার চেষ্টা চলছে। পাশাপাশি বিএসএফের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। ঘটনাস্থলের কাছে সন্ধ্যায় পতাকা বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।

একটি সূত্র জানায়, আসাদুল ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের আগরতলায় পিকআপ ভ্যান চালাতেন। ১০ রমজানের দিন সর্বশেষ সেখানে যান তিনি।

ফেরার পথে তিনি গুলিবিদ্ধ হন। বিএসএফ তাঁকে লক্ষ্য করে ছররা গুলি ছোড়ে।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া সীমান্তে ৪০ দিনের ব্যবধানে দুজনকে গুলি করে হত্যা করে বিএসএফ। সর্বশেষ হত্যার ঘটনা ঘটে গত ৮ এপ্রিল জেলার বিজয়নগর উপজেলার পাহাড়পুর ইউনিয়নের সেজামুড়া সীমান্তে। এদিন বিকেলে বিএসএফের নির্যাতনের কয়েক ঘণ্টা পর মুরাদুর রহমান মুন্না (৩৬) নামের এক যুবক মারা যান বলে পরিবারের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়। এর আগে গত ১ মার্চ জেলার কসবা উপজেলার পুটিয়া সীমান্তে আল-আমীন নামের এক যুবককে গুলি করে হত্যা করে বিএসএফ। এসব ঘটনায় বিজিবির পক্ষ থেকে তীব্র প্রতিবাদ জানানো হয়।

মন্তব্য

কুয়েট ভিসি-প্রোভিসিকে অব্যাহতি দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
কুয়েট ভিসি-প্রোভিসিকে অব্যাহতি দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি
উপাচার্য মুহাম্মদ মাছুদ ও উপ-উপাচার্য শেখ শরীফুল আলম

খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) উপাচার্য মুহাম্মদ মাছুদ ও উপ-উপাচার্য শেখ শরীফুল আলমকে অব্যাহতি দিয়েছে সরকার। এখন তাঁরা নিজ নিজ বিভাগে ফিরে যাবেন।

রাষ্ট্রপতি ও চ্যান্সেলরের অনুমোদনে গতকাল শুক্রবার রাতে শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে এসংক্রান্ত পৃথক প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। এতে সই করেন মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সিনিয়র সহকারী সচিব এ এস এম কাসেম।

ভিসিকে অব্যাহতি দেওয়ার প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, রাষ্ট্রপতি ও চ্যান্সেলরের অনুমোদনক্রমে খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় আইন, ২০০৩-এর ধারা ১০ (২) অনুযায়ী এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর পদে ইতঃপূর্বে নিয়োগকৃত অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ মাছুদকে তাঁর নিজ বিভাগে প্রত্যাবর্তনের নিমিত্ত ভাইস চ্যান্সেলর পদের আদেশ প্রত্যাহারপূর্বক তাঁকে ওই পদ থেকে অব্যাহতি প্রদান করা হলো। প্রোভিসিকে অব্যাহতি দেওয়ার অন্য প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, রাষ্ট্রপতি ও চ্যান্সেলরের অনুমোদনক্রমে খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় আইন, ২০০৩-এর ধারা ১২ (২) অনুযায়ী এই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর পদে ইতঃপূর্বে নিয়োগকৃত অধ্যাপক ড. শেখ শরীফুল আলমকে তাঁর নিজ বিভাগে প্রত্যাবর্তনের নিমিত্ত প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর পদের আদেশ প্রত্যাহারপূর্বক তাঁকে ওই পদ থেকে অব্যাহতি প্রদান করা হলো। প্রজ্ঞাপন দুটিতে উল্লেখ করা হয়, জনস্বার্থে এ আদেশ জারি করা হয়েছে।

এর আগে গত বুধবার দিবাগত রাতে কুয়েটের উপাচার্য ও উপ-উপাচার্যকে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি প্রদানের প্রক্রিয়া শুরু হয় বলে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. মামুন অর রশিদের সই করা বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বরাত দিয়ে ওই বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, অবিলম্বে একটি সার্চ কমিটি গঠনের মাধ্যমে এ দুটি পদে নতুন নিয়োগ প্রদান করা হবে। অন্তর্বর্তী সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মিত কার্যক্রম চালু রাখার স্বার্থে জ্যেষ্ঠ অধ্যাপকদের মধ্য থেকে একজনকে সাময়িকভাবে উপাচার্যের দায়িত্ব অর্পণ করা হবে।

খুলনা অফিস জানায়, কুয়েটের ভিসি ও প্রোভিসিকে অব্যাহতির খবর ক্যাম্পাসে পৌঁছানোর পর কোনো প্রতিক্রিয়া দেখা যায়নি। কুয়েটের শিক্ষার্থী রাহাতুল ইসলাম কালের কণ্ঠকে বলেন, বুধবার রাত ১টায় ইউজিসি সদস্য অধ্যাপক তানজীম উদ্দিন খান অনশনরত শিক্ষার্থীদের সামনে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের যে বার্তা পড়ে শোনান, সেখানেই ভিসি ও প্রোভিসিকে অব্যাহতির বিষয়টি উল্লেখ ছিল।

মন্তব্য
জুলাই সনদ প্রণয়ন

দলগুলো আন্তরিক, বাস্তবায়নে প্রতিশ্রুতি চায় ঐকমত্য কমিশন

নিখিল ভদ্র
নিখিল ভদ্র
শেয়ার
দলগুলো আন্তরিক, বাস্তবায়নে প্রতিশ্রুতি চায় ঐকমত্য কমিশন

রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সংলাপে সংস্কার প্রস্তাব নিয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণ চলছে। উভয় পক্ষই তাদের প্রস্তাবের পক্ষে যুক্তি-পাল্টাযুক্তি দেখিয়ে ঐকমত্যে পৌঁছানোর চেষ্টা করছে। এতে ইতিবাচক ফলও পাওয়া যাচ্ছে। সংলাপে জুলাই সনদ প্রণয়নের বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলো যথেষ্ট আন্তরিকতা দেখাচ্ছে।

আর জুলাই সনদ প্রণয়নের পাশাপাশি এর বাস্তবায়ন নিশ্চিতে রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতিশ্রুতি চায় জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। কমিশন আশা করছে, আগামী নির্বাচনে যে দলই বিজয়ী হোক, তারা জুলাই সনদ বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেবে।

রাষ্ট্র সংস্কারে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত সংস্কার কমিশনগুলোর করা সুপারিশের ভিত্তিতে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন ১৬৬টি প্রস্তাবের একটি তালিকা তৈরি করে ৩৯টি রাজনৈতিক দল ও জোটের মতামত আহবান করে। রাষ্ট্র সংস্কারে সমঝোতায় পৌঁছাতে লিখিত মতামত গ্রহণের পাশাপাশি গত ২০ মার্চ থেকে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ শুরু করে ঐকমত্য কমিশন।

সংলাপে এ পর্যন্ত ১৬টি রাজনৈতিক দল অংশ নিয়ে তাদের মতামত তুলে ধরেছে। দেশের অন্যতম বৃহৎ দল বিএনপি তিন দিনে প্রথম দফা সংলাপ শেষ করেছে। জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সঙ্গেও এক দিন সংলাপ হয়েছে। আগামী সপ্তাহে আবারও সংলাপ হবে।
আর জামায়াতে ইসলামী আজ শনিবার সংলাপে অংশ নেবে। রাজনৈতিক দলগুলোর পাশাপাশি অনলাইনে পর্যায়ক্রমে সাধারণ নাগরিকদের মতামতও নেওয়া হবে। সংলাপ ও অনলাইনে নেওয়া মতামতের ভিত্তিতে যেসব বিষয়ে ঐকমত্যে পৌঁছানো সম্ভব হবে, বাস্তবায়নের প্রতিশ্রুতিতে স্বাক্ষরিত হবে জুলাই সনদ। এই প্রক্রিয়া আগামী জুলাইয়ের মাঝামাঝি শেষ হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

ঐকমত্য কমিশনের মতে, জুলাই সনদ হবে নতুন করে রাষ্ট্র পরিচালনার গাইডলাইন বা নীতিমালা।

এর সাংবিধানিক কোনো ভিত্তি না থাকলেও এটি বাস্তবায়নে রাজনৈতিক দলগুলোর কাছ থেকে অঙ্গীকার চাইবে ঐকমত্য কমিশন। কারণ অতীত অভিজ্ঞতা সন্তোষজনক নয়। ১৯৯০ সালে অস্থায়ী সরকারের প্রধান বিচারপতি সাহাবুদ্দিন আহমদের সরকার ২৮টি সংস্কার কমিশন করেছিল। কিন্তু পরবর্তী সময়ে নির্বাচিত সরকার ওই সব সংস্কার কমিশনের তেমন কোনো সুপারিশ বাস্তবায়ন করেনি। একইভাবে ২০০৭ সালের তত্ত্বাবধায়ক সরকার ১২২টি অধ্যাদেশ করেছিল; কিন্তু পরে নির্বাচিত সরকার মাত্র ৪৬টি অধ্যাদেশ আইনে পরিণত করেছিল। বাকি ৭৮টি অধ্যাদেশ আইনে পরিণত করা হয়নি। ফলে ৭৮টি অধ্যাদেশ প্রণয়নে অযথা শ্রম ও বিপুল অর্থের অপচয় হয়েছিল।

তবে এবার জুলাই সনদ বাস্তবায়নে রাজনৈতিক দলগুলো উদ্যোগ নেবে বলে আশাবাদী জাতীয় ঐকমত্য কমিশনে সমন্বয়কের দায়িত্ব পালনকারী প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দার। কালের কণ্ঠকে তিনি বলেন, ১৯৯০ সালের গণ-অভ্যুত্থানের পর তিন জোটের রূপরেখা তৈরি হয়েছিল। তবে তা এত ব্যাপক আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে হয়নি। এর আগে এত ব্যাপকভাবে রাষ্ট্র সংস্কারের উদ্যোগও নেওয়া হয়নি। জাতীয় সনদ তৈরির উদ্যোগও দেশে এই প্রথম। রাজনৈতিক দলগুলোও সংস্কার কমিশনের সুপারিশগুলো নিয়ে যথেষ্ট আন্তরিকতার সঙ্গে আলোচনা করছে। ফলে তারা সুপারিশ বাস্তবায়নে আন্তরিক হবেনএটাই আশা করছি।

তিনি আরো বলেন, এ বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ অব্যাহত আছে। এটি বাস্তবায়নে দলগুলোর কাছ থেকে অঙ্গীকার চাওয়া হবে। জাতীয় সনদ বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে একাধিক ভাগ থাকবে। কিছু সুপারিশ আইনের মাধ্যমে বাস্তবায়ন করা যাবে। আবার কিছু বিষয় রয়েছে, সংবিধান সংশোধনের মাধ্যমে করতে হবে। সংবিধান সংশোধন গণপরিষদের মাধ্যমে হবে, নাকি জাতীয় সংসদের মাধ্যমে হবে, এ বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। যদি সিদ্ধান্ত হয় সংসদের মাধ্যমে সংবিধান সংশোধন করা হবে, তাহলে এ বিষয়ে দলগুলো অঙ্গীকার করবে, তারা নির্বাচিত হওয়ার পর সংসদে এগুলো পাস করবে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, সংস্কার প্রস্তাব নিয়ে বিএনপির সঙ্গে সংলাপ কতটা ফলপ্রসূ হবে তা নিয়ে অনেকে প্রশ্ন তুলেছেন। কিন্তু সেসব প্রশ্ন পেছনে রেখে সংস্কারের বিষয়ে সংলাপে বিএনপির যথেষ্ট আন্তরিকতা লক্ষ্য করা গেছে। দলটি প্রস্তাবের প্রতিটি দফা ধরে অনুপুঙ্খ আলোচনা করেছে। প্রস্তাবের পক্ষে-বিপক্ষে মতামত ও যুক্তি তুলে ধরেছে। বিকল্প প্রস্তাবও উত্থাপন করেছে। ফলে অনেক প্রস্তাবে উভয়পক্ষ সমঝোতায় পৌঁছাতে পেরেছে। এ কারণে উভয়পক্ষ দ্বিতীয় দফা সংলাপের বিষয়ে সম্মত হয়েছে। একই ধরনের আন্তরিকতা দেখিয়েছে এনসিপিসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দল। ফলে সব দল বা অধিকাংশ দল যেসব সংস্কার সুপারিশে একমত হবে সেগুলো নিয়েই জাতীয় সনদ বা জুলাই সনদ তৈরি হবে।

এ বিষয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য এবং সংলাপে অংশগ্রহণকারী প্রতিনিধি দলের প্রধান সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, সংস্কার প্রশ্নে আমরা সর্বোচ্চ আন্তরিক। রাষ্ট্র সংস্কারের কাজটি প্রথম শুরু করেন বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান। আর দলের বর্তমান ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান অনেক আগেই ৩১ দফা সংস্কার প্রস্তাব দিয়েছেন। তাই ঐকমত্য কমিশনের আলোচনা সময় নিয়ে করছি। কারণ এটা রাষ্ট্রের বিষয়, এটা রিপাবলিকের বিষয়, এটা সংবিধানের বিষয়। এতে তাড়াহুড়া করার সুযোগ নেই। এই আলোচনার মাধ্যমে জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে সুপারিশ গৃহীত হবে। সেটা জাতীয় জীবনে মহান ভূমিকা রাখবে। সুতরাং একটু সময় বেশি নিলেও প্রতিবেদনের বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। আগামীতে আরো আলোচনার সুযোগ রয়েছে।

রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপে নতুন নতুন প্রস্তাব এসেছে বলে জানিয়েছেন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ। তিনি বলেন, আলোচনায় নতুন প্রস্তাব এসেছে। সেগুলো নিয়ে সংশ্লিষ্ট কমিশনগুলোর সঙ্গে আলোচনা করতে হবে। কারণ এগুলো সংস্কার কমিশনগুলোর কাছ থেকে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের কাছে এসেছে।

তিনি আরো বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আমরা অনেক জায়গায়, ঐকমত্যের জায়গায় বা সামঞ্জস্যতার জায়গায় আসছি। কোথাও কোথাও ভিন্নমত আছে, সেটাই স্বাভাবিক। রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা অব্যাহত থাকবে।

তিনি বলেন, ঐকমত্য কমিশনের মেয়াদ শেষ হবে চলতি বছরের ১৫ জুলাই। এই মেয়াদের মধ্যে কাজ শেষ করতে চায় কমিশন। আশা করা যাচ্ছে, এই সময়ের মধ্যে সব পক্ষের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে একটি জাতীয় সনদ তৈরি করতে পারব। জুলাই সনদ-এ উল্লিখিত সংস্কার সুপারিশগুলো বাস্তবায়নের প্রতিশ্রুতি দিয়ে রাজনৈতিক দলগুলো স্বাক্ষর করবে।

মন্তব্য
বিশ্ব মেধাসম্পদ দিবস আজ

স্বত্ব সুরক্ষায় নিবন্ধন সনদ নিয়েছে পাঁচ সহস্রাধিক গান

মিরাজ শামস
মিরাজ শামস
শেয়ার
স্বত্ব সুরক্ষায় নিবন্ধন সনদ নিয়েছে পাঁচ সহস্রাধিক গান

দেশে বিনামূল্যে গানের বাণিজ্যিক ব্যবহার রোধে সক্রিয় হয়েছেন সংগীতশিল্পীরা। এরই মধ্যে দেশের উদ্ভাবনী সংগীতশিল্পীদের আবেদন যাচাই-বাছাই করে স্বত্ব সুরক্ষার জন্য পাঁচ হাজার ৩৩৩টি গান নিবন্ধন সনদ দিয়েছে বাংলাদেশ কপিরাইট অফিস।

দেশের নামকরা গানের ব্যান্ডদলগুলো ট্রেডমার্ক নিবন্ধন নিয়েছে বলে জানিয়েছে পেটেন্ট, শিল্প-নকশা ও ট্রেডমার্ক অধিদপ্তর। তবে গানের স্বত্বাধিকারীদের প্রাপ্য রয়ালটি নিশ্চিত করতে কার্যকর পদক্ষেপ এখনো নেওয়া যায়নি।

শুধু যৎসামান্য কার্যক্রমে সীমাবদ্ধ কালেক্টিভ ম্যানেজমেন্ট অর্গানাইজেশন (সিএমও)। 

আজ ২৬ এপ্রিল বিশ্ব মেধাস্বত্ব দিবস। এ বছর দিবসটির প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে মেধাস্বত্ব এবং সংগীত : মেধাসম্পদের স্পন্দন অনুভব। বিশিষ্টজনদের মতে, গানের মেধাস্বত্ব সুরক্ষিত রাখতে না পারলে স্পন্দন অনুভব দুরূহ হবে।

শুধু গান নয়, দেশে সব ধরনের মেধাস্বত্ব সুরক্ষিত করতে না পারলে ব্যবসা-বাণিজ্য থেকে শুরু করে শিল্প-সাহিত্য, সংস্কৃতিসব কিছুই ক্ষতির সম্মুখীন হবে।

বাংলাদেশ কপিরাইট অফিস সূত্রে জানা গেছে, ক্রমেই বাড়ছে নিবন্ধন। ২০১৮ সাল পর্যন্ত গান নিবন্ধিত হয়েছে প্রায় দুই হাজারটি। ২০২১ সালেও ছিল তিন হাজার ২০৫টি।

২০২৫ সালে এখন পর্যন্ত নিবন্ধিত গানের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে পাঁচ হাজার ৩৩৩। 

উন্নয়নশীল দেশের কাতারে উন্নীত হলে মেধাস্বত্ব নিয়ে চাপে পড়বে বাংলাদেশ। স্বল্পোন্নত দেশ হিসেবে রয়ালটি ফি ছাড়াই পণ্য ও সেবা সব ক্ষেত্রেই সুবিধা মিলছে। উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে তখন এসব ফি পরিশোধ করতে হবে। আবার নিজস্ব পণ্য ও সেবাস্বত্ব সুরক্ষিত না করলে সে ক্ষেত্রে অন্য দেশ থেকে ফি পাওয়া যাবে না।

বর্তমানে ডিজিটাল সময়ে সৃষ্টিশীল উদ্ভাবন, বিশেষত সংগীতের নকল করে বা ফি ছাড়া ব্যবহার হচ্ছে যত্রতত্র। এখন যথাযথ অনুমোদন ছাড়া অন্যের গানের সুর কিংবা কথা হুবহু নকল করে গাওয়া বা বাণিজ্যিকভাবে পরিবেশন করার দিন শেষ হচ্ছে। এসব ক্ষেত্রে মিলছে আর্থিক সুবিধা।   

সরকারও এ ক্ষেত্রে সক্রিয় হয়ে বুদ্ধিবৃত্তিক সম্পত্তি অধিকার (আইপিআর) টাস্কফোর্স গঠন করেছে। আছে আধাবিচারিক ব্যবস্থা। এতে অর্থদণ্ডসহ বেশ কিছু শাস্তির নজির রয়েছে। এ বিষয়ে কণ্ঠশিল্পী, সুরকার, গীতিকারদের বেশ কিছু সংগঠন ও প্ল্যাটফর্মও উদ্যোগ নিয়েছে। 

দেশের সংগীতাঙ্গনে কপিরাইট আইনের যথাযথ বাস্তবায়ন বহু বছরেও হয়নি। বাউল শাহ আব্দুল করিমের মৃত্যুর পর পরিবারের অনুমতি ছাড়া তাঁর গান বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহার করা হয়েছে। এসব করে অনেকে কাঁড়ি কাঁড়ি অর্থ কামালেও কানাকড়িও পায়নি তাঁর পরিবার। বিষয়টি আমলে নিয়ে ২০২১ সালের ডিসেম্বরে তাঁর ৪৭২টি গানের মেধাস্বত্ব নিবন্ধন করে বাংলাদেশ কপিরাইট অফিসের মাধ্যমে সুরক্ষার আওতায় আনা হয়েছে।

গানগুলো পরে ‘shahabdulkarim.com’ নামের ওয়েবসাইটে সংরক্ষণ করা হয়েছে। এখন কেউ করিমের গান করতে চাইলে কিংবা কোথাও বাণিজ্যিকভাবে পরিবেশন করতে চাইলে তাঁর পরিবারের অনুমতি নিতে হচ্ছে। তাঁর সুর কিংবা গান ইউটিউব, ফেসবুকে ব্যবহার করলে আইন অনুযায়ী গানের গীতিকার ও সুরকার হিসেবে স্বত্ব বাবদ প্রাপ্য অর্থ আব্দুল করিমের পরিবারকে দেওয়া হচ্ছে। কনটেন্ট আইডি সিস্টেমে আব্দুল করিমের গানের কথা ও সুর ধারণ করা হয়েছে। অনুমতি ছাড়া কোনো ইউটিউব চ্যানেলে, ফেসবুকে করিমের সুর ও কথা পেলে তা শনাক্ত করে। পরে স্বয়ংক্রিয়ভাবে সেই গান থেকে স্বত্ব বাবদ নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ আব্দুল করিমের পরিবারের নামে খোলা ব্যাংক অ্যাকাউন্টে জমা হচ্ছে।

একই পথে হাঁটছে ব্যান্ড তারকা আইয়ুব বাচ্চুর পরিবার। এই গুণী শিল্পী নিজেই তাঁর গানের স্বত্ব সুরক্ষার জন্য নিবন্ধন করেছেন। এবার তাঁর পরিবারও স্বত্ব সুরক্ষায় সোচ্চার রয়েছে। 

শুরুতে বাংলাদেশ মিউজিক্যাল ব্যান্ডস অ্যাসোসিয়েশন ও মিউজিক ইন্ডাস্ট্রিজ ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (এমআইবি) মতো মাত্র দুটি সংগঠন বেসরকারিভাবে কপিরাইট অধিকার আদায়ে সক্রিয় ছিল। এখন অধিকার আদায়ের তাগিদে কণ্ঠশিল্পী, সুরকার, গীতিকাররা আগের চেয়ে অনেক বেশি সচেতন।

 

জানা যায়, ২০২১ সালে বাংলাদেশ কপিরাইট অফিসের মধ্যস্থতায় ফিডব্যাকের গানগুলোর বাণিজ্যিক স্বার্থ সুরক্ষার পাশাপাশি রয়ালটির সুষম বণ্টন নিশ্চিতে ফিডব্যাক ও মাকসুদের মধ্যে সমঝোতা হয়। একইভাবে মাইলস, শিরোনামহীন, ওয়ারফেজ, সরলপুর ব্যান্ড পরিবেশিত বিভিন্ন গানের স্বীকৃতি সনদ পেয়েছে। 

কপিরাইট নিবন্ধক মো. মিজানুর রহমান কালের কণ্ঠকে বলেন, মেধাস্বত্ব সুরক্ষায় সচেতনতা বাড়াতে কপিরাইট অফিস রাজশাহী, চট্টগ্রাম, খুলনা ও বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুষ্ঠান আয়োজন করেছে। আমরা সাহিত্য, সংগীত, সফটওয়ারসহ ৯টি কর্মের ওপর অগ্রাধিকার দিয়ে কাজ করছি। গীতিকার, সুরকার, গায়ক ও পরিবেশকের অধিকার সুরক্ষায় কপিরাইট বোর্ডে আপিল করার সুযোগ আছে। উভয় পক্ষের শুনানির মাধ্যমে সমাধান হচ্ছে।

জানা যায়, নিবন্ধন করা প্রতিটি গানের গীতিকার লাইফ টাইম ও পরিবার ৬০ বছর রয়ালটি সুবিধা পাবে। গায়ক ও মিউজিশিয়ান ৫০ বছর এবং ব্রডকাস্টার বা পরিবেশক ২৫ বছর রয়ালটি পাবে।      

শিল্পীদের গানের স্বত্বাধিকারীদের প্রাপ্য রয়ালটি বাস্তবায়নে সরকার অনুমোদিত সিএমও হিসেবে কাজ করছে বাংলাদেশ লিরিসিস্টস, কম্পোজার্স অ্যান্ড পারফর্মারস সোসাইটি (বিএলসিপিএস)। এটি ২০১৩ সালে যাত্রা শুরু করলেও ২০১৪ সালে সরকারের কাছ থেকে প্রথম সিএমও হিসেবে অনুমোদন পায়। ওই সময়ে সংস্থাটির সভাপতি সংগীতশিল্পী সাবিনা ইয়াসমিন জানিয়েছিলেন, সংগীতশিল্পীদের অর্থনৈতিক ও নৈতিক অধিকার নিশ্চিত করার জন্য আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান সিসাক ও ওয়াইপোর কনভেনশন অনুযায়ী পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে কপিরাইট সোসাইটিগুলো সংগীত স্রষ্টাদের প্রাপ্য রয়ালটি নিশ্চিতকরণে কাজ করছে।

১৯২৬ সাল থেকে বিশ্বজুড়ে গীতিকার ও সুরকারসহ সৃজনশীল ব্যক্তিদের স্বার্থ সংরক্ষণে কাজ করে ইন্টারন্যাশনাল কনফেডারেশন অব সোসাইটিজ অব অথরস অ্যান্ড কম্পোজারস (সিসাক)। এটি একটি আন্তর্জাতিক কনফেডারেশন। এতে যুক্ত রয়েছেন ১১৬ দেশের ২২৭ সিএমও এবং ৫০ লাখের মতো স্বত্বাধিকারী। সিসাকের সদস্য পদ পেলে বাংলাদেশে সিসাকের প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করবে বিএলসিপিএস।

মন্তব্য

সর্বশেষ সংবাদ