মানিকগঞ্জ

খননের দুই বছরেই পানিশূন্য ধলেশ্বরী

  • * পানির জন্য নদীর বুকে কুয়া * কারখানার বর্জ্যে দূষণ
সাব্বিরুল ইসলাম সাবু, মানিকগঞ্জ
সাব্বিরুল ইসলাম সাবু, মানিকগঞ্জ
শেয়ার
খননের দুই বছরেই পানিশূন্য ধলেশ্বরী
দেখে মনে হতে পারে কোনো মাঠ বা ফসলের ক্ষেত। আসলে এটি ধলেশ্বরী নদী। বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে কোনো পানি নেই, জেগে উঠেছে বালুচর। চরে গজিয়েছে ঘাস। সেই বালুচরে কুয়া খুঁড়ে পানি তুলে ব্যবহার করা হচ্ছে রান্নার কাজে। মানিকগঞ্জ থেকে তোলা। ছবি : সাব্বিরুল ইসলাম সাবু

মানিকগঞ্জের ধলেশ্বরী নদী প্রায় ৭৬ কোটি টাকা ব্যয়ে খননের দুই বছরের মাথায় পানিশূন্য হয়ে পড়েছে। নদীর বিস্তীর্ণ এলাকা শুকিয়ে জেগে উঠেছে বালুচর। চরে গজিয়েছে ঘাস। কুয়া খুঁড়ে সেই পানি ব্যবহার করা হচ্ছে রান্নার কাজে।

কোথাও কোথাও চাষ হচ্ছে ভুট্টা। নদীপারের লোকজনসহ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, খননে গভীরতা কাজের কিছুই হয়নি। পুরো টাকাটাই গচ্চা গেছে। লোক-দেখানো খননে লাভ হয়েছে ঠিকাদার আর পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের।

মানিকগঞ্জে ধলেশ্বরীর দৈর্ঘ্য ৪৫ কিলোমিটার। ২৫ বছর আগেও এই ধলেশ্বরীতে সারা বছর পানির প্রবাহ থাকত। কিন্তু ১৯৯৮ সালের ভয়াবহ বন্যার পর থেকে পলি পড়ে নদীটি দ্রুত ভরাট হতে থাকে। নদী খননের দাবিতে মানিকগঞ্জের সর্বস্তরের মানুষদের নিয়ে গঠিত হয় ধলেশ্বরী নদী বাঁচাও কমিটি।

সংগঠনটির দীর্ঘ আন্দোলন-সংগ্রামের ফলে অবশেষে পাউবো বদ্বীপ পরিকল্পনার আওতায় নদী খননের সিদ্ধান্ত নেয়। কালীগঙ্গা নদী থেকে ধলেশ্বরী নদীর উৎসমুখ সাটুরিয়া উপজেলার তিল্লি থেকে সিংগাইর উপজেলার ইসলামপুর পর্যন্ত ৪৫ কিলোমিটার খনন শুরু হয় ২০১৯ সালের নভেম্বর মাসে। পাঁচটি প্যাকেজে ৭৫ কোটি ৮৬ লাখ টাকা ব্যয়ে কাজ সমাপ্ত হয় ২০২১ সালের শেষ দিকে।

ধলেশ্বরী নদী বাঁচাও আন্দোলনের সদস্য জাহাঙ্গীর বিশ্বাস বলেন, পরিকল্পিতভাবে খনন না করায় ধলেশ্বরী নদীর অবস্থার উন্নতি হয়নি। আগের মতোই বেশির ভাগ সময় পানিশূন্য থাকে ধলেশ্বরী।

তিনি বলেন, কালীগঙ্গা থেকে ধলেশ্বরী নদীর উৎপত্তি হয়েছে। অথচ খননের এক বছর পরই সেই সংযোগস্থল পলিতে ভরাট হয়ে গেছে। ফলে বর্ষা মৌসুমের তিন মাস ছাড়া বাকি সময় কালীগঙ্গা থেকে ধলেশ্বরী নদীতে পানি ঢুকতে পারছে না। কালীগঙ্গা ও ধলেশ্বরীর সংযোগস্থলে নিয়মিতভাবে খনন করে পানিপ্রবাহ নিশ্চিত করতে না পারলে ধলেশ্বরীকে বাঁচানো যাবে না।

গত শনিবার কালীগঙ্গা ও ধলেশ্বরীর সংযোগস্থলে গিয়ে এর সত্যতা পাওয়া গেল। দেখা গেছে, সেখানে উঁচু চর পড়েছে। কালীগঙ্গায় পানির প্রবাহ থাকলেও চরের জন্য ধলেশ্বরীতে পানি ঢুকতে পারছে না। সংযোগস্থলের প্রায় আধাকিলোমিটার ভাটিতে ধলেশ্বরীর ওপর মাস্তানঘাট সেতু। নদী পারাপারের জন্যই বেশ বড়সড় সেতুটি নির্মাণ করা হয় প্রায় ১০ বছর আগে। কিন্তু এখন সেতুর নিচে শুকনো ঠনঠনে। সেখানে পড়ে আছে ভাঙাচোরা একটি নৌকা। স্থানীয়রা শুকাতে দিয়েছেন জ্বালানি হিসেবে ব্যবহারের জন্য গরুর গোবর।

এর কিছুটা ভাটিতে নদীর বুকে চার-পাঁচ ফুট গভীর করে খোঁড়া হয়েছে বেশ কয়েকটি কুয়া। একটিতে দড়ির সঙ্গে পাত্র ঝুলিয়ে পানি তুলতে দেখা গেল দুই কিশোরীকে। তারা জানাল, টিউবওয়েলের পানিতে আয়রন থাকায় রান্নার কাজ করা যায় না। তাই শুকনো নদীর বুকে কুয়া খুঁড়ে সেই পানি তারা ব্যবহার করে রান্নার কাজে।

নদীপারের বাসিন্দা চর তিল্লি গ্রামের ষাটোর্ধ্ব আবদুল বারি বলেন, খননে নদীতে পানিপ্রবাহ হয়নি। তবে লাভ হয়েছে মাটি ব্যবসায়ীদের। নদীর মূল প্রবাহ বাদ দিয়ে ঠিকাদারের পছন্দ অনুযায়ী জায়গা থেকে মাটি কাটা হয়েছে, যাতে ট্রাকে করে মাটি সরিয়ে নেওয়া যায়। হাজার হাজার ট্রাক মাটি সরিয়ে নেওয়া হলো, কিন্তু নদীর গভীরতা তাতে একটুও বাড়ল না। সিংগাইর উপজেলার তালেবপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. রমজান আলী বলেন, নদী খননের কোনো উপকারিতা পাওয়া যাচ্ছে না। তাঁর ইউনিয়নের অনেক স্থানে খনন হয়নি। কোথায় কোথায় হাঁটুপানি থাকলেও প্রবাহ নেই।

ধলেশ্বরী নদীতে পানি না থাকার কথা স্বীকার করলেন মানিকগঞ্জ পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী মাঈন উদ্দীন। তবে তিনি বলেন, মূল নদীর (কালীগঙ্গা) স্তর নেমে যাওয়ার কারণে ধলেশ্বরীতে পানি ঢুকতে পারছে না। তিনি দাবি করেন, এই অবস্থা সারা দেশের। শাখা নদীতে পানি রাখতে হলে মূল নদীতেও খনন করতে হবে। পাশাপাশি শাখা নদীগুলোতে অব্যাহতভাবে খননের প্রয়োজন। তিনি জানান, ধলেশ্বরী পুনরায় খননের জন্য প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। অনুমোদন পেলেই খননকাজ শুরু করা হবে।

[প্রতিবেদনে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন কালের কণ্ঠর সিংগাইর প্রতিনিধি মোবারক হোসেন]

মন্তব্য

সম্পর্কিত খবর

জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসের হাতে উপহার তুলে দেন পরিবেশ উপদেষ্টা

শেয়ার
জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসের হাতে উপহার তুলে দেন পরিবেশ উপদেষ্টা
শাহজালাল বিমানবন্দরে গতকাল জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসের হাতে উপহার তুলে দেন পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। ছবি : পিআইডি
মন্তব্য

সংস্কারে ১১ দল মতামত দিয়েছে

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
সংস্কারে ১১ দল মতামত দিয়েছে

সংস্কার কমিশনের সুপারিশের ব্যাপারে আরো চারটি রাজনৈতিক দল তাদের মতামত জানিয়েছে। এ নিয়ে এখন পর্যন্ত ১১টি দল তাদের মতামত জমা দিয়েছে। এ দলগুলোকে নিয়ে আগামীকাল মঙ্গলবার ও পরদিন বুধবার নাগাদ আলোচনা শুরু করা হতে পারে। দলগুলোর সঙ্গে আলাদাভাবে এসব আলোচনা জাতীয় সংসদ ভবনে করা হবে।

এর বাইরেও ১৮টি রাজনৈতিক দল পূর্ণাঙ্গ মতামতের জন্য অতিরিক্ত কিছুদিন সময় চেয়েছে সংস্কার কমিশনের কাছে।

গতকাল রবিবার জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের এক বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়েছে। জাতীয় ঐকমত্য কমিশন জানায়, মতামতের বিষয়ে কোনো কিছু না জানানো দলগুলোর সঙ্গে কমিশন পুনরায় যোগাযোগ করছে। এর আগে ৩৮টি রাজনৈতিক দলের কাছে মতামত চেয়েছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন।

সুপারিশগুলো স্প্রেডশিট আকারে ১৩ মার্চের মধ্যে মতামত পাঠানোর অনুরোধ করা হয়েছিল।

মন্তব্য

জুলাই আন্দোলনে আহতদের পুনাকের আর্থিক সহায়তা

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
জুলাই আন্দোলনে আহতদের পুনাকের আর্থিক সহায়তা

বাংলাদেশ পুলিশ নারী কল্যাণ সমিতি (পুনাক) বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে আহতদের আর্থিক সহায়তা দিয়েছে। গতকাল রবিবার বিকেলে পুনাক সভানেত্রী আফরোজা হেলেন জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউট হাসপাতাল ও জাতীয় অর্থোপেডিক ইনস্টিটিউট হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ২৫০ জনকে দেখতে যান। এ সময় তিনি তাঁদের হাতে আর্থিক সহায়তার অর্থ তুলে দেন। তিনি তাঁদের খোঁজখবর নেন এবং চিকিৎসা সম্পর্কে কর্তব্যরত চিকিৎসকদের সঙ্গে আলাপ করেন।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন পুনাকের সহসভানেত্রী আইরিন রহমান, সাধারণ সম্পাদিকা কানিজ ফাতেমা, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদিকা তৌহিদা নূপুর।

মন্তব্য
পিলখানা হত্যাকাণ্ড

২৩৯ বিডিআর জওয়ানের জামিনের বিষয়ে আদেশ আজ

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
২৩৯ বিডিআর জওয়ানের জামিনের বিষয়ে আদেশ আজ

পিলখানা হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় বিস্ফোরক আইনে করা মামলায় কারাগারে থাকা ২৩৯ বিডিআর জওয়ানের জামিনের বিষয়ে আদেশের জন্য আজ সোমবার দিন ধার্য করেছেন আদালত। গতকাল রবিবার ঢাকার বিশেষ ট্রাইব্যুনাল-২-এর বিচারক মো. ইব্রাহিম মিয়ার আদালত এ দিন ধার্য করেন। এর আগে বৃহস্পতিবার জামিনের বিষয়ে শুনানি হয়েছিল। ওই দিন শুনানি শেষে আদালত এ বিষয়ে আদেশের জন্য রবিবার দিন ধার্য করেন।

২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি ঢাকার পিলখানায় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর সদর দপ্তরে বিদ্রোহের ঘটনায় ৫৭ জন সেনা কর্মকর্তাসহ ৭৪ জন নিহত হন। সে ঘটনায় হত্যা ও বিস্ফোরক আইনে দুটি মামলা হয়। হত্যা মামলায় ৮৫০ জনের বিচার শেষ হয় ২০১৩ সালের ৫ নভেম্বর।

মন্তব্য

সর্বশেষ সংবাদ