<p>প্রায় এক মাস ধরে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আব্দুল আজিজ (২২)।  ১১১ নম্বর ওয়ার্ডের ১৪ নম্বর শয্যায় আছেন তিনি। পেশায় তিনি হোটেলে রুটি তৈরির কারিগর। গত ১৯ জুলাই শুক্রবার বিকেলে রামপুরা টিভি সেন্টার এলাকায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশ ও বিজিবির সংষর্ঘ বাধলে তিনি গুলিবিদ্ধ হন।</p> <p>গত বৃহস্পতিবার দুপুরে হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, আহত আজিজের পাশে বসে মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে নীরবে কাঁদছেন এক নারী। এই প্রতিবেদক কাছে গেলে কাপড় দিয়ে চোখ মুছে দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলেন। পাশের বেডের একজন জানান, তিনি আজিজের বোন মরিয়ম।</p> <p>কী হয়েছে এমন প্রশ্নে প্রথমে চুপ থাকেন মরিয়ম। কিছুক্ষণ অপেক্ষার পর আজিজের হাত ও বুকে গুলির চিহ্নগুলো দেখান। বলেন, বাঁ বাহুতে গুলি লেগে বুকের একাংশ ভেদ করে আরেক পাশ দিয়ে বে রিয়ে গেছে। এ সময় আজিজ আস্তে আস্তে বলেন, ‘ভাই, গুলির বারুদে আমার ভেতরটা পুড়ে গেছে...।’ </p> <p>রামপুরা টিভি সেন্টারের পাশে হায়দার আলী রেস্টুরেন্টের কারিগর আব্দুল আজিজ। রেস্টুরেন্টের ওপরই একটি ছোট ঘরে থাকতেন। গ্রামের বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর উপজেলায়। চার বোন দুই ভাইয়ের মধ্যে তিনি সবার ছোট।</p> <p>বোন মরিয়ম জানান, সকালেই (বৃহস্পতিবার) অপারেশন হয়েছে। কবে সুস্থ হবেন, ডাক্তার কিছু বলেননি, শুধু দোয়া করতে বলেছেন। মরিয়ম জানান, ওই দিন রেস্টুরেন্ট বন্ধ ছিল। গ্রামের বাড়ি আসবে বলে দুপুরে চুল কাটাতে বের হয়েছিলেন আজিজ। তখন গুলি লাগলে রাস্তায় পড়ে যান। পরে কিছু মানুষ হাসপাতালে নিয়ে আসে তাঁকে। রেস্টুরেন্ট মালিকের ফোনকল পেয়ে পরিবারের সদস্যরা এই খবর জানতে পারে। মরিয়ম বলেন,  ‘হাসপাতাল থেকে কিছু ওষুধ দেয়, কিছু কিনতে হয়। ৫০ হাজার টাকা ঋণ করেছি। টাকা শেষ হয়ে যাচ্ছে পরীক্ষা করা, ওষুধ কেনা আর অপারেশন করতে। আমরা গরিব মানুষ। এত টাকা কই পাব? রেস্টুরেন্টের মালিক টাকা দিচ্ছে, ওষুধ দিচ্ছে। কিন্তু এভাবে কয়দিন?’</p> <p>রেস্ট্ররেন্ট মালিক মাসুদকে ফোন করা হলে তিনি বলেন, ‘ওই দিন আমি নামাজ পড়তে গিয়া মসজিদে আটকা পড়ি। বাইরে তখন প্রচণ্ড গোলাগুলি চলছে। মসজিদ থেকে বের হওয়ার অনেক পরে জানতে পারি আমার দুই কর্মচারী গুলিতে আহত হয়েছে। তাদের বেটার লাইফ হাসপাতালে নিয়ে গেছে স্থানীয় লোকজন। শুনে সঙ্গে সঙ্গে সেখানে যাই, ততক্ষণে এক কর্মচারী সারোয়ার হোসেন শাওন (১৭) মারা গেছে। আজিজের অবস্থাও তখন ভালো না থাকায় দ্রুত ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়া আসি।’ তিনি বলেন, ‘আত্মীয়-স্বজনের কাছ থেকে টাকা পয়সা নিয়ে আজিজের পরিবার চিকিৎসা চালিয়ে যাচ্ছে। আমিও যতটুকু পারছি দিচ্ছি। কিন্তু এভাবে আর বেশি দিন চিকিৎসা চালিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়।’</p> <p> </p> <p> </p>