<p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">সম্প্রতি রাজশাহীর বাঘা ও পবা উপজেলায় মাটির পিএইচ বা ক্ষারত্ব পরীক্ষা করান স্থানীয় দুই কৃষক। তাদের জমিতে কয়েক বছর ধরে ভালো ফলন না পাওয়ার কারণে রাজশাহীর মৃত্তিকা সম্পদ গবেষণা ইনস্টিটিউটের (এসআরডিআই) বিভাগীয় গবেষণাগারে তারা মাটি দেন। গবেষণায় উঠে এসেছে এই দুই কৃষকের জমিতে অস্বাভাবিক ক্ষার রয়েছে। পিএইচের মান ৭ থাকলে সেই মাটি স্বাভাবিক। কিন্তু দুই উপজেলার মাটিতে প্রায় ৯ মাত্রায় ক্ষার মিলেছে।</span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">চলতি বছরের জানুয়ারিতে কুষ্টিয়ার ২০টি অঞ্চলের মাটির ফসফরাসের পরিমাণ পরীক্ষা করা হয়েছে এসআরডিআইয়ের কুষ্টিয়ার আঞ্চলিত গবেষণাগারে। এই ২০টির মধ্যে ১৮টি অঞ্চলের মাটিতে অতি উচ্চমাত্রায় ফসফরাস মিলেছে। জমিতে ফসফরাস বেশি হলে ফলন কমে।</span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">এসআরডিআইয়ের তথ্য মতে, উদ্ভিদের জন্য আবশ্যকীয় পুষ্টি উপাদান ১৬টি। ফসফরাস, নাইট্রোজেন, পটাশিয়াম, সালফার, বোরন কিংবা জিংক মাটির অন্যতম পুষ্টি উপাদান। হাইড্রোজেন, অক্সিজেন ও কার্বন ছাড়া সব অন্য পুষ্টি উপাদান মাটি থেকে গ্রহণ করে। সম্প্রতি প্রকাশিত </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">সয়েল ফার্টিলিটি ট্রেন্ডস ইন বাংলাদেশ ২০১০ টু ২০২০</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"> শীর্ষক গবেষণায় বলা হয়েছে, মাটিতে ফসফরাস, সালফার, পটাশিয়াম, বোরন ও জিংকের পরিমাণ বা মাটিতে পুষ্টি উপাদানের ঘাটতিযুক্ত এলাকা অস্বাভাবিক বেড়েছে। এর মধ্যে ১০ বছরের ব্যবধানে সবচেয়ে বেশি কমেছে জিংকের পরিমাণ। ২০১০ সালে আবাদি জমির ২৮.৭১ শতাংশে জিংকের অবস্থা ছিল অতিনিম্ন থেকে নিম্নস্তরে। ২০২০ সালে এমন জমির পরিমাণ বেড়ে দাঁড়ায় ৭৮.৮৪ শতাংশে। এমন পরিস্থিতিতে আজ বিশ্বব্যাপী পালিত হচ্ছে বিশ্ব মৃত্তিকা দিবস। এবারের দিবসের প্রতিপাদ্য </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">মাটির পরিচর্যা : পরিমাপ, পরীক্ষণ ও পরিচলনা</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">। বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিলে একটি জাতীয় সেমিনার আয়োজন করেছে কৃষি মন্ত্রণালয়।</span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">এসআরডিআইয়ের গবেষণায় দেখা যায়, দেশের সব ধরনের মাটিতে ফসফরাস ঘাটতিযুক্ত এলাকার পরিমাণ ৬৬ লাখ হেক্টর, যা মোট জমির প্রায় ৪৫ শতাংশ। অন্যদিকে পটাশিয়াম ঘাটতিযুক্ত এলাকা ৫২.৭ লাখ হেক্টর বা ৩৫.৭ শতাংশ, সালফারের ঘাটতি ৬৫ লাখ ৩০ হাজার হেক্টর বা ৪৪.২ শতাংশ এবং বোরন ঘাটতি ৫১.১ লাখ হেক্টর বা মোট জমির ৩৪.৬ শতাংশ। দেশের বেশির ভাগ মাটিতে নেই প্রয়োজনীয় জৈব পদার্থ। নাইট্রোজেনের অভাব সব জমিতেই। </span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">বিশ্লেষকরা বলছেন, উচ্চ ফলনশীল অথবা হাইব্রিড জাতের ফসল মাটি থেকে শোষণ করছে বিপুল পরিমাণ পুষ্টি উপাদান। ফলে জমি হারাচ্ছে স্বাভাবিক উৎপাদন ক্ষমতা। কাজের অঞ্চল ও ফসলভেদে বর্তমানে অনেক অনুপুষ্টি উপাদানের ঘাটতি দেখা দিচ্ছে। ফলে আবাদযোগ্য মাটিকে যথাযথ ব্যবহার না করার কারণে উর্বরতা শক্তি নষ্ট হচ্ছে। মাত্রাতিরিক্ত রাসায়নিক সারের ব্যবহার, অপরিকল্পিত চাষাবাদ, অপরিকল্পিত নগরায়ণ, শিল্পায়ন, দূষণ, ব্যাপক হারে বনভূমি ধ্বংস এবং মাত্রাহীনভাবে সারের ব্যবহারের কারণে মাটির উর্বরাশক্তি কমছে। মাটির পুষ্টি উপাদান ঠিক রাখা গেলে ৫০ লাখ টন বাড়তি ফসল ফলানো সম্ভব।</span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">এ বিষয়ে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা প্রতিষ্ঠান (বারি) ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন কালের কণ্ঠকে বলেন, অপরিকল্পিত চাষ, মাটিতে বালাইনাশক (আগাছানাশক ও দানাদার) ব্যবহার, ভূগর্ভস্থ পানির অপরিণামদর্শী ব্যবহার মাটির জৈব পদার্থ হ্রাস প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করছে। মাটির উর্বরাশক্তি ধরে রাখা কিংবা বাড়ানোর ক্ষেত্রে নীতির ক্ষেত্রে বেশ দুর্বলতা রয়েছে। দেশের মোট জমির ৭০ শতাংশের বেশি জমিতে জৈব পদার্থের পরিমাণ এক শতাংশের নিচে। এই জৈব পদার্থের আদর্শমান ২.৫-৩.০ শতাংশ। কিন্তু এই জৈব উপাদান বাড়ানোর ক্ষেত্রে নীতি ঠিক নেই। মাটিতে ১৭টি পুষ্টি উপাদান থাকে, কিন্তু দেশে তিন ধরনের পুষ্টি উপাদান (নাইট্রোজেন, ফসফরাস, পটাশিয়াম) কেন্দ্রিক রাসায়নিক সার ব্যবহারে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। ছয় দশক আগে ফসলি জমিতে হেক্টরপ্রতি মাত্র ৯ কেজি রাসায়নিক সার প্রয়োগ করা হতো। এখন তা ৭৫ গুণ বেড়ে প্রতি হেক্টর জমিতে প্রায় ৭০০ কেজিতে উন্নীত হয়েছে। </span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, জৈব সার উৎপাদন ও বিপণনের কোনো স্থায়ী কাঠামো নেই। জৈব সার উৎপাদনে ও বিপণনে বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। তা না হলে একসময় মরা মাটিতে ভরে যাবে দেশ।</span></span></span></span></span></p>