<p>খুলনার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে গত বছর ৩ সেপ্টেম্বর একটি মামলা দায়ের করা হয়। মামলা নং ৭৯৪/২৪। মামলার বাদী শেখ শহিদুল ইসলাম। আর বিবাদী সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চাচাতো ভাই শেখ সোহেল এবং এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী আনিসুজ্জামান। মামলাটি তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয় সোনাডাঙ্গা থানার তৎকালীন এসআই মোল্যা আব্দুল হাইকে। গত বছর ২১ নভেম্বর মামলাটির তদন্ত প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করা হয়।</p> <p>আদালতে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের পর বাদী কিংবা বিবাদীপক্ষ থেকে আদালতে নারাজি দেওয়া হলে আদালত মামলাটির পুনঃ তদন্তের নির্দেশ দিতে পারেন। এর বাইরে থানা থেকে  পুনঃ তদন্তের নামে কোনো নোটিশ ইস্যু করার এখতিয়ার কারো নেই বলে জানিয়েছেন খুলনা জজকোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট এস এম মাসুদুর রহমান এবং খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-পুলিশ কমিশনার (দক্ষিণ) মনিরুজ্জামান মিঠু।</p> <p>কিন্তু আইন আমান্য করে গত ২৪ ডিসেম্বর কেএমপির সোনাডাঙ্গা থানার অফিসার ইনচার্জ (তদন্ত) হাওঃ সানওয়ার হুসাইন মাসুম এক নোটিশে আগামী ১০ জানুয়ারি মামলার উভয়পক্ষের জবানবন্দি নেওয়ার দিন ধার্য করেছেন। বিষয়টিকে শেখ পরিবারের এক সদস্যকে রক্ষার অপচেষ্টা বলে দাবি করেছেন মামলার বাদী শেখ শহিদুল ইসলাম।</p> <p>তিনি বলেন, ‘দায়ের করা চাঁদাবাজি মামলার আসামি পতিত প্রধানমন্ত্রীর চাচাতো ভাই ও কথিত টেন্ডারবাজ শেখ সোহেল এবং এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী আনিসুজ্জামান।’</p> <p>গত ২১ নভেম্বর খুলনার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে (সোনাডাঙ্গা থানা) ৮২১৭ নম্বর স্মারকে দেওয়া তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, শেখ শহিদুল ইসলামের দায়ের করা মামলাটি প্রাথমিকভাবে সত্য বলে প্রমাণিত হয়েছে। সুতরাং বিচার প্রক্রিয়া শুরু করা যায়। কিন্তু সোনাডাঙ্গা মডেল থানার ওসি (তদন্ত) স্বাক্ষরিত নোটিশটি নিয়ে দেখা দিয়েছে নানা প্রশ্ন।</p> <p>খুলনার স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের ঠিকাদার শেখ শহিদুল ইসলামের দায়ের করা মামলায় উল্লেখ করা হয়, শেখ সোহেলকে তিনি ৬০ লাখ টাকা চাঁদা দিয়েছেন। ওই মামলায় এলজিইডির তৎকালীন নির্বাহী প্রকৌশলী আবুল কালাম মুহাম্মদ আনিসুজ্জামানকেও আসামি করা হয়। মামলায় উল্লেখ করা হয়, গত বছর (২০২৪) ২৩ এপ্রিল কিছু লোক বাদীর নগরীর কেডিএ এভিনিউয়ের ট্রিবিউন টাওয়ারের অফিসে গিয়ে যুবলীগের পরিচয় দিয়ে ‘শেখ সোহেল এখনি দেখা করতে বলেছেন’ বলে জানান। পরে তিনি নগরীর শেরেবাংলা রোডের আলোচিত শেখ বাড়িতে গেলে এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী আবুল কালাম মুহাম্মদ আনিসুজ্জামানকে দেখতে পান। এর আগে তিনি ওই নির্বাহী প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে পৃথক আরেকটি মামলা দায়ের করেছিলেন। শেখ সোহেল ওই মামলাটি তুলে নিতে বলেন এবং মামলাটি মেটাতে এক কোটি টাকা প্রয়োজন জানিয়ে শহিদুল ইসলামের কাছে ৬০ লাখ টাকা দাবি করেন। তা না হলে তাঁকে হত্যা এবং অস্ত্র মামলার হুমকি দেওয়া হয়। ভয়ে তিনি ওই দিনই ব্যাংক থেকে তুলে শেখ সোহেলকে ৬০ লাখ টাকা দিয়ে আসেন।</p> <p>মামলাটির তদন্তে গিয়ে ব্যাংক থেকে সমপারিমাণ টাকা তোলার প্রমাণও পান তদন্তকারী কর্মকর্তা। এ অবস্থায় শেখ সোহেল ও এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী আনিসুজ্জামান ৩৮৫/৩৮৬/৩৮৭/৫০৬ পেনাল কোডের অপরাধ করেছেন বলে তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।</p> <p>খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-পুলিশ কমিশনার (দক্ষিণ) মনিরুজ্জামান মিঠু বলেন, ‘কোনো মামলার তদন্ত প্রতিবেদন আদালতে জমা দেওয়ার পর বাদী নারাজি না দিলে পুনঃ তদন্তের সুযোগ নেই।’</p> <p>কিন্তু সোনাডাঙ্গা মডেল থানার ওসি (তদন্ত) হাওঃ সানওয়ার হুসাইন মাসুম এক নোটিশে আগামী ১০ জানুয়ারি মামলার<br /> উভয়পক্ষের জবানবন্দি নেওয়ার দিন ধার্য করেছেন। নম্বর কেএমপি-দক্ষিণ/অপরাধ/১৮-২০২৪/৬০৯৫, তারিখ-২৩/১২/২০২৪। নোটিশে এ ছাড়া বাদী বা বিবাদী নিজেরা উপস্থিত না থাকতে পারলেও আইনজীবীর মাধ্যমে বক্তব্য তুলে ধরতে পারবেন বলেও উল্লেখ করা হয়।</p> <p>এটিকে আসামিদের রক্ষার কৌশল হিসেবে দেখছেন অনেকে। কারণ জুলাই-আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর থেকে শেখ পরিবারের সবাই আত্মগোপনে। এই মামলার প্রধান আসামি শেখ সোহেলও পলাতক। এ অবস্থায় তিনি যে উপস্থিত থাকতে পারবেন না সেটি ওই নোটিশে স্পষ্ট। তাঁর বক্তব্য আইনজীবীর মাধ্যমে দেওয়ার অর্থই তাঁকে রক্ষা করা।</p> <p>মামলাটির আইনজীবী অ্যাডভোকেট এস এম মাসুদুর রহমান বলেন, ‘মামলাটি পুনঃ তদন্তের আদালতের কোনো নির্দেশনা নেই। পুলিশ কিভাবে এমন নোটিশ দেয় সেটি বোধগম্য নয়।’</p> <p>মামলার বাদী শেখ শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘মামলার বিবাদীর অবর্তমানে পুনঃ তদন্তের মাধ্যমে শেখ পরিবারকে রক্ষার যে অপচেষ্টা চলছে তা স্পষ্ট। আমি আইনি লড়াই চালিয়ে যাব।’</p> <p>সোনাডাঙ্গা মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘এটি আদালতের কোনো বিষয় না। ওই মামলার একজন আসামি কেএমপি কমিশনার বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়ে দাবি করেছেন, তাঁর বিরুদ্ধে মিথ্যা রিপোর্ট দেওয়া হয়েছে। এ জন্য এটি আমাদের ইন্টারনাল তদন্ত। বাদী-বিবাদীকে নিয়ে বসে উভয়পক্ষের বক্তব্য শুনে একটা প্রতিবেদন দেওয়া হবে।’</p> <p> </p>